জীবন বিনিময় কবিতা- গোলাম মোস্তফা। বাংলা ১ম পত্র

জীবন বিনিময় কবিতা- গোলাম মোস্তফা

এই পোস্টে জীবন বিনিময় কবিতা দেওয়া হয়েছে। জীবন বিনিময়’ কবিতাটি গোলাম মোস্তফার বুলবুলিস্তান কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে। কবিতাটিতে পিতৃস্নেহের একটি মহৎ দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে। পিতার স্নেহ-বাৎসল্যের কাছে মৃত্যুর পরাজয় এই কবিতার প্রতিপাদ্য বিষয়। মোগল সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ুন কঠিন রোগে আক্রান্ত । বিজ্ঞ চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাঁর জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

এক দরবেশ এসে জানালেন যে, সম্রাট যদি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ধন দান করেন তবেই তাঁর পুত্র জীবন লাভ করতে পারেন। সম্রাট বাবর উপলব্ধি করলেন, নিজের প্রাণের চেয়ে আর বেশি প্রিয় কিছু নেই। তিনি বিধাতার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ সে ধনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন ভিক্ষা চাইলেন। আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। এভাবে পিতৃস্নেহের কাছে মরণের পরাজয় ঘটল । অর্থাৎ সন্তানের প্রতি পিতার অপরিসীম ভালোবাসা ও অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে কবিতাটিতে।

জীবন বিনিময় কবিতা

কবিতা টি লিখেছেন গোলাম মোস্তফা। নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের কবিতা এটি। নিচে সম্পূর্ণ কবিতা দেওয়া আছে। যারা যারা এই কবিতা টি পড়তে চান, তারা নিচে থেকে কবিতা পড়তে পারবেন। পোস্টের শেষে পিডিএফ ফাইলে কবিতা টি শেয়ার করা হয়েছে। যারা পিডিএফ সংগ্রহ করতে চান সেখান থেকে সংগ্রহ করেবেন।

জীবন বিনিময়
– গোলাম মোস্তফা 

বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর-
পুত্র তাঁহার হুনায়ন বুঝি বাঁচে না এবার আর!
চারিধারে তার ঘনায়ে আসিছে মরন-অন্ধকার।

রাজ্যের যত বিজ্ঞ হেকিম কবিরাজ দরবেশ
এসেছে সবাই, দিতেছে বসিয়া ব্যবস্থা সবিশেষ,
সেবাযত্নের বিধিবিধানের ত্রুটি নাহি এক লেশ।

তবু তাঁর সেই দুরন্ত রোগ হটিতেসে নাকো হায়,
যত দিন যায়, দুর্ভোগ তার ততই বারিয়া যায়—
জীবন-প্রদীপ নিভিয়া আসিছে অস্তরবির প্রায়।

শুধাল বাবর ব্যগ্রকন্ঠে ভিষকব্রিন্দে ডাকি,
‘বলো বলো আজি সত্যি করিয়া, দিও নাকো মোরে ফাঁকি,
এই রোগ হতে বাদশাজাদার মুক্তি মিলিবে নাকি?”

নতমস্তকে রহিল সবাই, কহিল না কোনো কথা,
মুখর হইয়া উঠিল তাঁদের সে নিষ্ঠুর নীরবতা
শেলসম আসি বাবরের বুকে বিঁধিল কিসের ব্যাথা!

হেনকালে এক দরবেশ উঠি কহিলেন—‘সুলতান,
সবচেয়ে তব শ্রেষ্ট যে-ধন দিতে যদি পার দান,
খুশি হয়ে তবে বাঁচাবে আল্লা বাদশাজাদার প্রান।’

শুনিয়া সে কথা কহিল বাবর শঙ্কা নাহিক মানি-
‘তাই যদি হয়, প্রস্তুত আমি দিতে সেই কোরবানি,
সবচেয়ে মোর শ্রেষ্ঠ যে ধন জানি তাহা আমি জানি।’
এতেক বলিয়া আসন পাতিয়া নিরিবিলি গৃহতল
গভীর ধেয়ানে বসিল বাবর শান্ত অচঞ্চল,
প্রার্থনারত হাতদুটি তাঁর, নয়নে অশ্রু জল।

কহিল কাঁদিয়া- ‘হে দয়াল খোদা, হে রহিম রহমান,
মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আমারি আপন প্রাণ,
তাই নিয়ে প্রভু পুত্রের প্রান কর মোরে প্রতিদান।’

স্তব্ধ-নীরব গৃহতল, মুখে নাহি তার বাণী,
গভীর রজনী, সুপ্তি-মগন নিখিল বিশ্বরাণী,
আকাশে বাতাসে ধ্বনিতেছে যেন গোপন কী কানাকানি।

সহসা বাবর ফুকারি উঠিল—’নাহি ভয় নাহি ভয়,
প্রার্থনা মোর কবুল করেছে আল্লাহ হে দয়াময়,
পুত্র আমার বাঁচিয়া উঠিবে—মরিবে না নিশ্চয়।’

ঘুরিতে লাগিল পুলকে বাবর পুত্রের চারিপাশ
নিরাশ হৃদয় সে যেন আশায় দৃপ্ত জয়োল্লাস,
তিমির রাতের তোরণে তোরণে ঊষার পূর্বাভাস।

সেইদিন হতে রোগ-লক্ষণ দেখা দিলে বাবরের,
হৃষ্টচিত্তে গ্রহন করিল শয্যা সে মরণের,
নতুন জীবন হুমায়ুন ধিরে বাঁচিয়া উঠিল ফের।

মরিল বাবর – না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়?
মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়,
পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরনের পরাজয়

জীবন বিনিময় কবিতার কবি পরিচিতি

গোলাম মোস্তফা যশোর জেলার শৈলকুপা থানার মনোহরপুর গ্রামে ১৮৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৮ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। কাব্য, উপন্যাস, জীবনী, অনুবাদ ইত্যাদি সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তাঁর স্বচ্ছন্দ পদচারণা ছিল । কাব্যচর্চার ক্ষেত্রেই ইসলামি ঐতিহ্য থেকে তিনি প্রেরণা লাভ করেছিলেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্য: রক্তরাগ, খোশরোজ, কাব্যকাহিনী, সাহারা, হাস্নাহেনা, বুলবুলিস্তান, বনি আদম, উপন্যাস: ভাঙ্গাবুক, রূপের নেশা, এক মন এক প্রাণ; জীবনী : বিশ্বনবী, মরুদুলাল; অনুবাদ : কালামে ইকবাল, আল কুরআন, শিকওয়া ও জওয়াবে শিকওয়া ইত্যাদি। তিনি ১৯৬৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

জীবন বিনিময় কবিতার শব্দার্থ

এই কবিতায় কিছু জটিল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেগুলো আপনাদের বুঝতে সমস্যা হয়েছে। সেই শব্দার্থ গুলো এখানে বিশ্লেষণ করে দেওয়া হয়েছে। নিচে থেকে জীবন বিনিময় কবিতার শব্দার্থ  গুলো জেনেনিন।

  • বিনিময়– বদল ।
  • নিদ– ঘুম। 
  • ভিষকবৃন্দ– চিকিৎসকগণ ।
  • বাদশাজাদা– সম্রাটের পুত্র, এখানে হুমায়ুন।
  • শেলসম– তীক্ষ্ণ অস্ত্রের মতো। শঙ্কা– ভয়। 
  • অস্তরবি-অস্তগামী সূর্য।
  • দৃপ্ত- উদ্ধত (এখানে উদ্দীপিত অর্থে ব্যবহৃত)। সবচেয়ে যে শ্রেষ্ঠধন – প্রত্যেক মানুষের কাছে নিজের জীবনই শ্রেষ্ঠ ধন হিসেবে বিবেচ্য।
  • ধেয়ানে– ধ্যানে।
    সুপ্তিমগ্ন– ঘুমে অচেতন।
  • ফুকারি– চিৎকার করে ।
  • কবুল– স্বীকার, গৃহীত।
    তিমির রাতের তোরণে ঊষার পূর্বাভাস – ভোরের আগমন আঁধার রাতের অবসান ঘোষণা করে।
    এখানে হুমায়ুনের মুমূর্ষু অবস্থা তিমির রাত এবং রোগমুক্তির লক্ষণকে ঊষার পূর্বাভাস বলা হয়েছে ।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে । আশা করছি এই পোস্ট থেকে জীবন বিনিময় কবিতা সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়। আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

ছায়াবাজি কবিতা- সুকুমার রায়। বাংলা ১ম পত্র এস এস সি

ঝর্ণার গান কবিতার MCQ ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর PDF

PDF ঝর্ণার গান কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর এস এস সি

ঝর্ণার গান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর-PDF

ঝর্নার গান কবিতা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। এস এস সি বাংলা ১ম পত্র

জুতা আবিষ্কার কবিতার mcq প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ

জুতা আবিষ্কার কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর