পদার্থের প্রকৃতি, ধর্ম এবং তাদের পরিবর্তন রসায়ন পাঠের মূল বিষয়। আমাদের চারপাশে বিভিন্ন পদার্থ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। ভিন্ন অবস্থায় পরিণত হওয়াকে ভৌত পরিবর্তন এবং সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থে পরিণত হওয়াকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। এই পরিবর্তনগুলো ঘটে নানা ধরনের ভৌত পরিবর্তন ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে। নিচে রাসায়নিক বিক্রিয়া কাকে বলে? ও কত প্রকার এবং কি কি এই বিষয়ে বিস্তারিত দেওয়া আছে।
রাসায়নিক বিক্রিয়া কাকে বলে
রাসায়নিক বিক্রিয়া হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে এক বা একাধিক পদার্থ (যাদেরকে বিক্রিয়ক বলা হয়) একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থ (যাদেরকে উৎপাদ বলা হয়) গঠন করে। যখন দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগ রাসায়নিকভাবে মিলিত হয়ে এক বা একাধিক ভিন্ন যৌগ উৎপন্ন করে তাকে বিক্রিয়া বা রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে। রসায়নের পরিভাষায় দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগের পরস্পর যুক্ত হওয়ার পদ্ধতিকে বিক্রিয়া বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলোর সাথে উৎপাদ পদার্থের ধর্মগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলোর পরমাণুগুলোর মধ্যে বন্ধন ভেঙে নতুন বন্ধন সৃষ্টি হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ, আলো, শব্দ বা অন্যান্য শক্তি উৎপন্ন বা শোষিত হতে পারে।রাসায়নিক বিক্রিয়া সাধারণত অপরিবর্তনীয় হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়া কত প্রকার
সাধারণত রাসায়নিক বিক্রিয়া ৪ প্রকার। সংযোজন বিক্রিয়া, বিয়োজন বিক্রিয়া, প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া ও দহন বিক্রিয়া। এই বিক্রিয়া গুলো বিভিন্ন ভাবে কাজ করে। এবং এদের রাসায়নিক বিক্রিয়া সিস্টেমও আলাদা।
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একের অধিক পদার্থ একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে তখন তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। যেমনঃ C2+2O2=2CO2
কোন যৌগকে ভেঙে একাধিক যৌগ বা মৌলে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বিয়োজন বিক্রিয়া বলে।
PCl5 (l) +(তাপ) = PCl3 (l) + Cl2 (g)
কোনো অধিক সক্রিয় মৌল বা যৌগমুলক অপর কোনো কম সক্রিয় মৌলে বা যৌগমুলক কে প্রতিস্থাপন করে নতুন যৌগ উৎপন্ন করার প্রক্রিয়াকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে। Zn(s) + H2SO4 (aq) = ZnSO4 (aq) + H2 (g)
কোনো মৌল বা যৌগ বিক্রিয়া করে যদি তাপ উৎপন্ন করে তাহলে সেই বিক্রিয়া কে দহন বিক্রিয়া বলে। এতে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয় ।H₂+O₂=H₂O
CH4 (g) + 2O2 (g) = CO2 (g) +2H2O (g)
2Mg + O2 = 2MgO
এছাড়া আরও কিছু বিক্রিয়া আছে যা বর্ণিত শ্রেণিবিভাগের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন: (ক) আর্দ্রবিশ্লেষণ (Hydrolysis), (খ) জলযোজন (Hydration), (গ) সমাণুকরণ বিক্রিয়া (Isomerisatio) ইত্যাদি।
রাসায়নিক বিক্রিয়া কিভাবে কাজ করে
রাসায়নিক বিক্রিয়া পরমাণু স্তরে ঘটে। পরমাণু হলো পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায়, এই বন্ধন ভেঙে বা গঠিত হয়ে নতুন পদার্থ তৈরি হয়।
বিক্রিয়ার প্রক্রিয়া:
- সংঘর্ষ: বিক্রিয়াশীল পদার্থের পরমাণু বা অণুগুলোর মধ্যে প্রথমে সংঘর্ষ ঘটতে হবে।
- সক্রিয়করণ শক্তি: সংঘর্ষ যথেষ্ট শক্তিশালী না হলে বিক্রিয়া ঘটবে না। এই ন্যূনতম শক্তিকে সক্রিয়করণ শক্তি বলা হয়।
- বন্ধন ভাঙ্গা: পর্যাপ্ত সক্রিয়করণ শক্তি থাকলে, বিক্রিয়াশীল পদার্থের পরমাণু বা অণুর মধ্যকার পুরোনো বন্ধন ভেঙে যায়।
- নতুন বন্ধন গঠন: ভাঙা বন্ধন থেকে মুক্ত ইলেকট্রন নতুন বন্ধন গঠনের জন্য অন্যান্য পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়।
- উৎপাদ তৈরি: নতুন বন্ধন গঠিত হলে, নতুন পদার্থ (উৎপাদ) তৈরি হয়।
শেষ কথা
রাসায়নিক বিক্রিয়া আমাদের চারপাশের জগতের অনেক ঘটনার জন্য দায়ী। আমাদের শরীরের ভেতরেও অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা আমাদের জীবনধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরমাণু স্তরে ঘটে, সংঘর্ষ, সক্রিয়করণ শক্তি, বন্ধন ভাঙ্গা, নতুন বন্ধন গঠন, উৎপাদ তৈরি। রাসায়নিক বিক্রিয়া বিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা যা আমাদের চারপাশের জগতকে বুঝতে সাহায্য করে। রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ঔষধ, প্রকৌশল এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও দেখুনঃ
রাসায়নিক বিক্রিয়া অষ্টম শ্রেণি ৮ম অধ্যায়