ছায়াবাজি কবিতা- সুকুমার রায়। বাংলা ১ম পত্র এস এস সি

ছায়াবাজি কবিতা

ছায়াবাজি কবিতা এই পোস্টে দেওয়া হয়েছে। কবি বলছেন, আজগুবি নয়- তবু কবির কথা বিশ্বাস হতে চায় না। সত্যি, ছায়ার সঙ্গে কি কুস্তি করা যায়? কবি বলছেন, রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, বকের ছায়া, চিলের ছায়া, হাল্কা মেঘের পান্সে ছায়া, শুকনো ছায়া, ভেজা ছায়া- এ রকম অসংখ্য ছায়া ধরে তিনি ব্যবসা ফেঁদেছেন। এই ছায়াবাজি বা ছায়ার ব্যবসা অবাস্তব নিশ্চয়।

এই ছায়াগুলো অসুখেরও মহৌষধ! অনিদ্রা দূর করতে নিম ও ঝিঙের ছায়া; সর্দিকাশি সারাতে চাঁদের আলোয় পেঁপের ছায়া; পঙ্গুলোকের নতুন করে পা জন্মাতে আমড়ার নোংরা ছায়া যদি খাওয়া যায় তা হলে এর কোনো তুলনা নেই! লেখক তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছায়া যত্নের সঙ্গে তুলে রাখেন; কিছু সর্বসাধারণের কল্যাণার্থে নির্ধারিত মূল্যে বিতরণের জন্য রাখেন। আসলে এটি একটি রূপক কবিতা। ছায়া এখানে শিল্পের অমরাত্মা হিসেবে বিবেচিত।

ছায়াবাজি কবিতা

এখানে কবিতাটি দিয়েছি। কবিতাটি লিখেছেন সুকুমার রায়। অনেকে কবিতাটি পড়ার জন্য গুগলে সার্চ করতেছিলেন। তারা এই পোস্ট টি সম্পূর্ণ দেখুন। এখানে এই কবিতাটি সম্পূর্ণ দেওয়া আছে। পোস্টের শেষে পিডিএফ ফাইলে কবিয়াতি শেয়ার করা হয়েছে।

ছায়াবাজি কবিতা
সুকুমার রায়

আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা-
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্র হ’ল ব্যথা!
ছায়া ধরার ব্যাবসা করি তাও জানোনা বুঝি?
রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, হরেক রকম পুঁজি!

শিশির ভেজা সদ্য ছায়া, সকাল বেলায় তাজা,
গ্রীষ্মকালে শুক্‌‌নো ছায়া ভীষন রোদে ভাজা।
চিলগুলো যায় দুপুর বেলায় আকাশ পথে ঘুরে
ফাঁদ ফেলে তার ছায়ার উপর খাঁচায় রাখি পুরে।

কাগের ছায়া বগের ছায়া দেখ্‌‌ছি কত ঘেঁটে-
হাল্কা মেঘের পান্‌‌সে ছায়া তাও দেখেছি চেটে।
কেউ জানেনা এসব কথা কেউ বোঝে না কিছু,
কেউ ঘোরে না আমার মত ছায়ার পিছু পিছু।

তোমরা ভাবো গাছের ছায়া অম্‌‌নি লুটায় ভূঁয়ে,
অম্‌‌নি শুধু ঘুমায় বুঝি শান্তা মতন শুয়ে;
আসল ব্যাপার জান্‌‌বে যদি আমার কথা শোনো,
বলছি যা তা সত্যি কথা, সন্দেহ নাই কোনো।

কেউ যবে তার রয় না কাছে, দেখতে নাহি পায়,
গাছের ছায়া ফুটফুটিয়ে এদিক ওদিক চায়।
সেই সময়ে গুড়গুড়িয়ে পিছন হ’তে এসে
ধামায় চেপে ধপাস্‌ করে ধরবে তারে ঠেসে।

পাৎলা ছায়া, ফোক্‌লা ছায়া, ছায়া গভীর কালো-
গাছের চেয়ে গাছের ছায়া সব রকমেই ভালো।
গাছ গাছালি শেকড় বাকল মিথ্যে সবাই গেলে,
বাপ্‌রে বলে পালায় ব্যামো ছায়ার ওষুধ খেলে।

নিমের ছায়া ঝিঙের ছায়া তিক্ত ছায়ার পাক
যেই খাবে ভাই অঘোর ঘুমে ডাকবে তাহার নাক।
চাঁদের আলোয় পেঁপের ছায়া ধরতে যদি পার,
শুঁকলে পরে সর্দিকাশি থাকবে না আর কারো।

আম্‌ড়া গাছের নোংরা ছায়া কাম্‌‌ড়ে যদি খায়
ল্যাংড়া লোকের ঠ্যাং গজাবে সন্দেহ নাই তায়।
আষাঢ় মাসের বাদ্‌লা দিনে বাঁচতে যদি চাও,
তেঁতুল তলার তপ্ত ছায়া হপ্তা তিনেক খাও।

মৌয়া গাছের মিষ্টি ছায়া ‘ব্লটিং’ দিয়ে শুষে
ধুয়ে মুছে সাবধানেতে রাখ্‌‌ছি ঘরে পুষে!
পাক্কা নতুন টাট্‌কা ওষুধ এক্কেবারে দিশি-
দাম রেখেছি সস্তা বড়, চোদ্দ আনা শিশি।

ছায়াবাজি কবিতার কবি পরিচিতি

এখানে এই কবিতার কবি পরিচিতি দেওয়া আছে। আপনারা অনেকে সুকুমার রায় কে চিনেন না। তারা এই অংশ তুতকু পড়ুন। এখানে তার লেখা সকল বিখ্যাত কবিতা ও গল্পের নাম সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়া তার জীবন কাহিনী এখানে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। নিচে থেকে ছায়াবাজি কবিতা কবি পরিচিতি জেনেনিন।

শিশু কিশোর পাঠকদের কাছে সুকুমার রায় একটি প্রিয় নাম। তাঁর ‘আবোল-তাবোল’, ‘হ-য-ব-র-ল’ ও অন্যান্য অতুলীয় লেখার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সুকুমার রায় বিখ্যাত শিশু-সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও শিশু সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পিতা। সুকুমার রায়ের জন্ম ময়মনসিংহ জেলার মাশুয়া গ্রামে ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর। সুকুমার ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি এক দিকে বিজ্ঞান, ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণ প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষা নিয়েছিলেন, অন্য দিকে ছড়া রচনা ও ছবি আঁকায় মৌলিক প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে ‘গোড়ায় গলদ’ নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক অদ্ভুত ক্লাব। নাম ‘ননসেন্স ক্লাব’। এই ক্লাবের পত্রিকার নাম ছিল ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’। আর তাঁর রচনাগুলোও অদ্ভুত ও মজাদার। হাঁসজারু, বকচ্ছপ, সিংহরিণ, হাতিমি ইত্যাদি কাল্পনিক প্রাণির নাম তাঁরই সৃষ্টি। বিখ্যাত ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি বেশ কয়েক বার সম্পাদনা করেছেন সুকুমার রায়। আর একে কেন্দ্র করেই ঐ সময় সুকুমার রায়ের সাহিত্য প্রতিভা পূর্ণ বিকশিত হয়েছিল। সুকুমার রায় বাঙলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন, প্রধানত খেয়াল রসের কবিতা, হাসির গল্প, নাটক ইত্যাদি শিশুতোষ রচনার জন্য। ছেলেবুড়ো সবাই তাঁর লেখা পড়ে আনন্দ পায়। সুকুমার রায়ের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর।

ছায়াবাজি কবিতার শব্দার্থ

  • আজগুবি – অদ্ভূত, অপূর্ব, অবিশ্বাস্য, বানানো;
  • গাত্রে – গায়ে, শরীরে;
  • ভূঁয়ে – ভূমিতে, মাটিতে;
  • অঘোর – অচেতন, বেহুশ;
  • হপ্তা – সপ্তাহ;
  • মৌয়া – মহুয়া গাছ।
  • ব্লটিং – চোষ কাগজ

ছায়াবাজি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন

এখানে ছায়াবাজি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া আছে। এই প্রশ্ন গুলো নিজেরা অনুশীলন করার চেষ্টা করবেন। এজন্য সম্পূর্ণ কবিতাটি পড়বেন। কবিতার ব্যাখ্যা টি বুঝার চেষ্টা করবেন। নিচে থেকে অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো দেখেনিন।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ঃ 
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,
আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,

ক. ‘শ্রাবণে’ কবিতাটি কোন কাব্যের অন্তর্গত?
খ. ‘ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ’— পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘শ্রাবণে’ কবিতার যেদিক ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘শ্রাবণে’ কবিতার সামগ্রিক ভাব ফুটে উঠেছে কী? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও ৷

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ঃ 
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।

ক. ধারাপাত কী?
খ. শ্রাবণের প্রকৃতিতে কীভাবে প্রাণের সঞ্চার ঘটে?
গ. উদ্দীপক ও ‘শ্রাবণে’ কবিতার অন্তর্নিহিত সাদৃশ্যসূত্র চিহ্নিত করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার সম্পূর্ণ অংশকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে কি?— মতামত দাও।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ঃ
এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,
চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।
কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে
নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;
কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে।
ঠিক বলেছে, চিল তবে কি নয়কো কানের যম?
বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হল শ্রম।

ক. চিল কখন আকাশ পথে ঘোরে?
খ. ছায়ার সাথে কুস্তি করে গা ব্যাথা হল কেন?
গ. উদ্দীপকে চিলের পেছনে ছোটার সাথে ‘ছায়াবাজি’ কবিতার সাদৃশ্য পূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি পণ্ড হল শ্রম।’-এ বক্তব্যের মাঝেই ‘ছায়ারাজি’ কবিতার মূলভাব নিহিত – যুক্তিসহ প্রমাণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন  ৪ঃ 
কাঠফাটা গ্রীষ্মের পর বর্ষা সবার কাছেই সমাদরের। এখন সেই বর্ষা কৈশোরে পড়েছে। আষাড়ের ১৮ দিন পেরিয়ে গেছে। এই সময়টা প্রকৃতি যেন সারাবেলা জীবনানন্দের পঙক্তি মেনে এগোয়, ‘কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়।’ সকাল কিংবা ক্লান্ত দুপুর, বিকেল কিংবা সন্ধ্যাবেলা। প্রহরে প্রহরে পাল্টে যায় দৃশ্য।

ক. ‘জর্জর’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কেন বর্ষার বৃষ্টিকে বাদলের ধারাপাত বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার কোন দিকটির প্রতিফলন ঘটিয়েছে? বর্ণনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার সমগ্র বিষয়কে প্রকাশ করতে পারেনি।” – মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

শেষ কথা

 আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভাললেগেছে। আশা করছি এই পোস্ট থেকে সুকুমার রায়ের ছায়াবাজি কবিতা সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়। আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

ঝর্ণার গান কবিতার MCQ ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর PDF

PDF ঝর্ণার গান কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর এস এস সি

ঝর্ণার গান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর-PDF

ঝর্নার গান কবিতা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। এস এস সি বাংলা ১ম পত্র

জুতা আবিষ্কার কবিতার mcq প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ

জুতা আবিষ্কার কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর