বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব কি? বিদ্রোহী কবিতার ব্যাখ্যা -suggestionbd.top

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব কি

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব কি?  আপনারা অনেকে জানে না। কাজী নজরুল ইসলামের সকল কবিতার মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিবাদী কবিতা হচ্ছে বিদ্রোহী। এই কবিতায় কবি মানুষের অধিকার রক্ষার্থে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। এর আগের পোস্টে আমাদের ওয়েবসাইটে বিদ্রোহী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন গুলো পাবলিশ করা হয়েছে। এই কবিতার মূলভাব জানার পাশাপাশি আপনারা প্রশ্ন গুলো দেখেনিতে পারেন। নিচে পোস্ট গুলোর লিঙ্ক দেওয়া আছে।

তো আপনারা অনেকে কবিতাটি পরেছেন কিন্তু এর ব্যাখ্যা বা মূলভাব জানে না। তাই আমরা এই পোস্টে কবিতাটি বিশ্লেষণ করার পাশা-পাশি কবিতার মূলভাব গুলো ফুটিয়ে তুলেছি। এই পোস্ট টি সম্পূর্ণ পরলে বিদ্রোহী কবিতার ব্যাখ্যা,  বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব কি তা জানতে পারবেন। তো আজকের পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকুন। তাহলে আজকের পোস্ট টি শুরু করা যাক।

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব কি

সকল কবিতাই একটি মূলভাব নিয়ে শুরু হয়। এক এক টি কবিতার মধ্যে এক এক ধরনের লক্ষ্য থাকে। থিকা তেমনি এই কবিতাটি এক ধরনের মূলভাব নিয়ে গঠিত। কবিতার মূলভাব টি নিচে দেওয়া আছে।  বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব কি দেখেনিন।

কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি পূর্বের তুলনায় অনেক গুন বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বিদ্রোহী কবিতাটি পাঠকের মনে উৎসাহ, উদ্দীপনা জাগায়। বিদ্রোহী কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে এরকম আর কোনে প্রতিবাদমূখর কবিতা প্রকাশিত হয় নি। এই কবিতাটির মাধ্যমে কবি তৎকালীন শাসকের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তুলে ধরেছেন এবং ভারতবর্ষের মানুষদের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলেছেন।

এই কবিতায় তিনি নিজেকে বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে, পৌরাণিক বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে নিজেকে বীর বা সাহসী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই কবিতায় বার বার ‘আমি’ শব্দটি ব্যবহার করে প্রত্যেকের মধ্যে যে আমিত্বের শক্তি রয়েছে তা বের করার চেষ্টা করেছেন। এই কবিতাটি প্রকাশিত হলে তৎকালীন ইংরেজ শাসকের টনক নড়ে চড়ে বসে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ একজন এত প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারে তা তারা কল্পনাও করতে পারে নি।

বিদ্রোহী কবিতা

আপনারা অনেকে বিদ্রোহী কবিতা পড়েন নি। চাইলে এই পোস্ট থেকে পড়ে নিতে পারেবেন। আমাদের ওয়েবসাইটে এই জনপ্রিয় কবিতাটি অনেক আগেই পাবলিশ করা হয়েছে। কবিতার ব্যাখ্যা গুলো দেখার আগে কবিতাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। কবিতাটি নিচের দিকে দেওয়া আছে। কবিতা পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

বিদ্রোহী
কাজী নজরুল ইসলাম

বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি,
নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!

বল বীর –
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

বল বীর –
আমি চির-উন্নত শির!
আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!

আমি দুর্ব্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
আমি মানি নাকো কোনো আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম,

ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!

বল বীর –
চির উন্নত মম শির!
আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণী,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণী!
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠুমকি’ ছমকি’
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দিই তিন দোল্!
আমি চপলা-চপল হিন্দোল!

বিদ্রোহী কবিতা

আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা’,
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরিত্রীর।
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির-অধীর।

বল বীর –
আমি চির-উন্নত শির!
আমি চির-দুরন্ত-দুর্ম্মদ,
আমি দুর্দ্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দ্দম্ হ্যায়্ হর্দ্দম ভরপুর মদ।
আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক, জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি!
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ইন্দ্রাণি-সূত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য্য,
মম এক হাতে-বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য্য।
আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।

বল বীর –
চির উন্নত মম শির।
আমি সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক!
আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনা ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
আমি ইস্ত্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু-ত্রিশূল, ধর্ম্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ-প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব!
আমি প্রাণ-খোলা-হাসি উল্লাস, – আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি মহা-প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, – কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্প-হারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল্ দোল!

বিদ্রোহী কবিতা

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম-উদ্দাম, আমি ধন্যি।
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত-চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!

আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা’র কাঁকন-চুড়ির কন্-কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাসী পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীনে গান গাওয়া!
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি! –
আমি তুরিয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!
আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব বিজয় কেতন!

ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া স্বর্গ-মর্ত্ত্য করতলে,
তাজি বোরবাক্ আর উচ্চৈস্রবা বাহন আমার হিম্মত-হ্রেস্বা হেঁকে চলে!

বিদ্রোহী কবিতা

আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথর-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া, দিয়া লম্ফ,
আমি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চরি’ ভূমি-কম্প!
ধরি বাসুকির ফনা জাপটি’, –
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি’!
আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!

আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা-সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্ ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম্
মম বাঁশরী তানে পাশরি’
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠে’ যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হারিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

আমি শ্রাবণ প্লাবন- বন্যা, কভু ধরণীরে করি বরণিয়া, কভু বিপুল ধ্বংস-ধন্যা –
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণি!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

বিদ্রোহী কবিতা

আমি মৃণ্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির দুর্জ্জয়, জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ-পাতাল-মর্ত্ত্য
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!!
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।

মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি চির-বিদ্রোহী বীর –
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!

বিদ্রোহী কবিতার ব্যাখ্যা

আশা করছি আপনারা বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব ও কবিতা দেখেছেন। এখন আপনারা কবিতার ব্যাখ্যা পড়তে চাইলে নিচে থেকে পড়ে নিতে পারবেন। আমরা বিদ্রোহী কবিতাটি ব্যাখ্যা করে দিয়েছি। নিচে সেই ব্যাখ্যা গুলো দেওয়া আছে দেখেনিন।

ব্যাখ্যা ১ঃ 

 কবি বলছেন যে ‘আমার (কবির)’ মাথা অনেক উচুতে বা উন্নত। কবির শির এতটাই উচুতে যে হিমালয় পর্বতও তার সামনে দাড়ালে মাথা নত করে। তিনি বলেন যে আমাকে (কবি) দমন করা কঠিন, আমি কারো কাছে মাথা নত করি না (স্রষ্ঠা ব্যাতিত), আমি শত্রুর জন্য প্রয়োজনে হিংস্র হতে পারি। তিনি আরও বলেন যে প্রয়োজনে তিনি দিবতা শিবের মত ভয়ংকর হতে পারেন। তিনি আরও বলেন যে তিনি কোনো নিয়ম মানেন না, কোনো আইন মানেন না এবং তিনি প্রয়োজনে সকল বন্ধন ভুলে সব ভেঙ্গে চুরমার করতে পারেন।

শিবকে কেন নটরাজ বলা হয়?

উঃ হিন্দুদের বেদ অনুযায়ি শিব গজাসুর ও কালাসুরকে বধ করে এক তান্ডব নৃত্য নেচেছিলেন যা দেখে পৃথিবীর প্রায় সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এই তান্ডব নৃত্যকলার উদ্ভাবক হিসেবে তাকে নটরাজ ডাকা হয়।

পৃথু কে?

উঃ পৃথু ছিলেন অত্রি বংশের অত্যাচারী রাজা বেন এর পুত্র। রাজা বেন এর মৃত্যুর পর তার ডান বাহু থেকে পৃথুর জন্ম । প্রজা কল্যানার্থে পৃথু পৃথিবীকে বশ করেন। তার রাজত্বকে বলা হয় পৃথু।

ব্যাখ্যা ২ঃ 

 কবি বলছেন যে আমি (কবি) টর্পেডোর মত তিমিকেও শিকার করতে পারি, মাইনের মত ভাসমান জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারি। আমি শিবের মত, কাল বৈশাখি ঝরের মত সব ধ্বংস করে দিতে পারি। আমি শোষিতদের লোকালয়, অত্যাচারীদের শ্মশানে পাঠিয়ে দিতে পারি। আমি ইন্দ্রাণরি পুত্র জয়ন্তের মত হাতে চাঁদ ও কপালে সূর্য। আমি এক হাতে থাকে প্রেমের বাঁশি ও অন্য হাতে যুদ্ধের ঘণ্টা। আমি যাযাবর জাতি ও চেঙ্গিস এর মত শত্রুর সামনে মাথা নত করি না। আমি শিবের প্রলয় বাঁশির ধ্বনি বা ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা গর্জন। ভীম পাঁচ পান্ডবদের একজন। কুন্তির গর্ভে এবং বায়ুর ঔরসে এর জন্ম। দুর্যোধন তাকে হত্যার জন্য তার খাবারে বিষ মিশিয়ে অজ্ঞান করে পানিতে ফেলে দেন। পানিতে নাগরাজ বাসুকীর কৃপায় ভীম বেঁচে যান এবং আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসেন। কবি ‘ভাসমান মাইনে’র সাথে ভীম বিশেষন সম্ভবত একারনের এনেছেন।

ব্যাখ্যা ৩ঃ   

 কবি বলছেন যে আমি শিবের হাতের বাদ্যযন্ত্র ও ত্রিশুল এবং যমরাজ। আমি দেবতা বিষ্ণুর হাতের অস্ত্র ও যুদ্ধের দামামা। আমি প্রচন্ড ক্রোধের অধিকারী দূর্বাসা ও প্রচন্ড অধ্যবসায়ী পৌরাণিক মুণিঋষি বিশ্বমিত্র। আমি দাবানলের আগুন যা পুরো পৃথিবীকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিতে পারি।

ব্যাখ্যা ৪ঃ  

 কবি বলেন, ‘আমি উন্মান ব্যক্তির উদাসীনতার কারণ অনুভব করতে পারি। আমি বিধবার কষ্ট ও হতাশাগ্রস্থ ব্যাক্তির দুঃখ অনুভব করতে পারি। যারা গৃহহারা হয়েছেন, অপমানিত হয়েছেন, অপমানিত হয়েছেন কবি তাদের কষ্ট অনুভব করেন এবং কবি তাদের বুকে আবারো গতি ফিরে দিতে চান অর্থাৎ তাদের অধিকার আদায় করতে চান।

ব্যাখ্যা ৫ঃ  

 কবি বলেছেন, ‘আমি মলয় পর্বতের বায়ু ও পূরবী হাওয়া। আমি পথিক কবির গভীর অনুরাগের গান। কবি আরও বলেছেন আমি প্রচন্ড তৃষ্ণায় প্রচন্ড সূর্যের তাপ। আমি মরুভুমির বুকে প্রাণ জুরানো ঝরনা ও সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। কবি বোঝাতে চেয়েছেন তার মনে যেমন প্রচন্ড ভালোবাসা রয়েছে আবার বিদ্রোহও রয়েছে।

ব্যাখ্যা ৬ঃ 

কবি বলেছেন, ‘আমি দেবতা বিষ্ণুর মত; বিষ্ণু যেমন পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অনেকবার পৃথিবীতে অবতরন করেছিলেন প্রয়োজনে আমিও বার বার পৃথিবীতে আগমন করে শত্রুমুক্ত করব (কবির মতে, আমার মতে নয়)।’ আমি (কবি) বলরামের মত প্রয়োজনে কাধে লাঙ্গল নিয়ে তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এই সমাজের অত্যাচারিদের নিমূল করব এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করে নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠব। আমি মহা বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহ করতে করতে আজ ক্লান্ত কিন্তু শান্ত হয়ে যাই নি। যেদিন শোষিত মানুষের কান্না থেমে যাবে, ভীমের মত শাসকদের অত্যাচার থেকে যেদিন মানুষ রক্ষা পাবে আমি সেদিন আমার বিদ্রোহ থামিয়ে দিব।

পরশুরাম জমদগ্নি ও রেনুকার পঞ্চম পুত্র। কুঠার ছিল তার প্রিয় অস্ত্র। একবার ক্ষত্রিয়রাজ কার্তবীর্য জমদগ্নির আশ্রমে এসে আশোভন আচরন করেন। পরশুরাম তখন আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন না। ফিরে এসে ঘটনা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি কার্তবীর্যকে ধাওয়া করেন, এবং পরে হত্যা করেন। এতে কার্তবীর্যের পুত্ররা জমদগ্নিকে হত্যা করে পিতৃহত্যার শোধ নেন। এবার পরশুরাম পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে সারা পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়দের নিঃশ্চিহ্ন করতে পন করেন এবং পরপর একুশ বার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করে তবে থামেন। বলরাম ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই। গদা যুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তার প্রিয় অস্ত্র ছিল হল বা লাঙ্গল, তাই তাকে হলধরও বলে। কুরুক্ষত্রের যুদ্ধে ইনি নিরপেক্ষ থাকলেও, কংস হত্যায় তিনি কৃষ্ণ কে সহায়তা করেছিলেন। দুর্যোধন ও ভীমের গদাযুদ্ধে ভীম অন্যায়ভাবে দুর্যোধনের উরু ভেঙ্গে দিলে বলরাম যারপরনাই ক্ষিপ্ত হয়ে পান্ডবদের আক্রমন করতে উদ্যত হলে কৃষ্ণ তাকে শান্ত করেছিলেন।

ব্যাখ্যা ৭ঃ 

কবি বলেছেন যে তিনি সেরা বিদ্রোহী এবং তিনি বিদ্রোহ করতে করতে ক্লান্ত হলেও বিদ্রোহ থামাবেন না যতদিন পর্যন্ত এ সমাজ থেকে অন্যায় অত্যাচার নির্মূল হয়। সবশেষে তিনি সারাজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উচু করে প্রতিবাদ করবেন এই প্রত্যাশা করেছেন।

শেষ কথা

আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আশা করছি এই পোস্ট থেকে বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব কি তা জানতে পেরেছেন ও কবিতার ব্যাখ্যা  সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই পোস্ট টি ভালোলেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন।  এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। নিচে আপনাদের জন্য শিক্ষামূলক কিছু পোস্ট দেওয়া আছে দেখেনিতে পারেন। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।