কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর PDF-suggestionbd.top

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আজকের পোস্টে দেওয়া আছে। এই পোস্টে আমরা একটি বিশেষ উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করেছি। কাকতাড়ুয়া একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। যেমন এর জনপ্রিয়তা রয়েছে, ঠিক তেমনি এর বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষার্থীরা নবম-দশম বাংলা ১ম পত্রের কাকতাড়ুয়া উপন্যাস থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন পড়তে চায়।

আবার অনেকের কাছে এই গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর গুলো সংগ্রহ করা নেই। তাই গুগল থেকে সংগ্রহ করতে চায়। আজকের পোস্ট থেকে আপনারা বাংলা ১ম পত্রের কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সকল ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন সংগ্রহ করতে পারবেন। এর পাশা-পাশি প্রশ্নের উত্তর গুলোও পেয়ে যাবেন। আর আপনি এগুলো পিডিএফ আকারে সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। তাহলে চলুন আজকের পোস্ট টি শুরু করা যাক।

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর 

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের  সারাংশ

বাংলাদেশের কোনাে একটি গ্রাম। এই গ্রামেরই এক কিশাের বুধা। এক চাচি আর চাচাতাে ভাই-বােন ছাড়া তিন কুলে আপন বলতে কেউ নেই। তবে আজ না থাকলেও একদিন ছিল। সেটা বছর দুয়েক আগের কথা। বাবা-মা ছাড়াও ছিল দুই বােন আর দুই ভাই। সবচেয়ে ছােট বােন তিনুর বয়স ছিল দেড় বছর। বিনু ছিল ওর পিঠাপিঠি বােন। তালেব আর শিলু ছিল পিঠাপিঠি ভাই-বােন। বাবা-মা, ভাই-বােনদের নিয়ে ভালােই কাটছিল তার দিন। কিন্তু এক রাতে কলেরায় মারা গেল সবাই। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেল বুধা। চাচির বাড়িতে প্রথমে আশ্রয় মিলেছিল। কিন্তু দারিদ্র্যের কথা তুললে বুধা সেই বাড়ি ত্যাগ করে। সেই থেকে বুধা একা। রাত-পােহালে দিনের আলাে, সূয্যি ডুবলে আঁধার। ওর কাছে দুটোই সমান। হাটে-মাঠে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরতে ঘুরতে যে কোথায় যায় সে হিসাব সে রাখে না। ওর কাছে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব সমান।

ঘুমানাের জায়গা নিয়ে ওর মাথাব্যথা নেই। দোকানের বারান্দা আছে, গাছতলা আছে, হাটের চালা আছে, ঘাটে বাঁধা নৌকা আছে; আছে গৃহস্থ বাড়ির কাছারির বারান্দা, টেকিঘর বা খড়ের গাদা। খাওয়া নিয়েও বুধা খুব একটা চিন্তা করে না। কারণ বন-বাদাড়ে ফলপাকুড় আছে, নদীর পানি আছে, মােলক বুয়ার মুড়িভাজা আছে। চায়ের দোকানে কাজ করে দিলে চা-বিস্কুট জোটে। কখনাে-সখনাে গৃহস্থ বাড়িতে ছােটখাটো কাজের বিনিময়ে অড়হর ডালের সঙ্গে ভাত জোটে।

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন

এই উপন্যাসের অনেক ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন রয়েছে। আজকের পোস্টে তার মধ্যে থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া আছে। এই সৃজনশীল গুলো আপনারা পরীক্ষার জন্য অনুশীলন করতে পারবেন। তো নিচে থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো সংগ্রহ করেনিন।

সৃজনশীল ১ঃ 
পাকসেনারা থানায় ঘাঁটি স্থাপন করলে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। সবাই পালাতে শুরু করলে কলিমদ্দি দফাদার ভিন্ন পরিকল্পনা করেন। তিনি পাকসেনাদের ঘায়েল করার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। আর গোপনে সব খবর পৌঁছে দেন, প্রস্তুত থাকতে বলেন। একদিন সুযোগমতো পাকসেনাদের গ্রামে এনে ভাঙা পুলের গোড়ায় দাঁড় করিয়ে কলিমদ্দি দফাদার তা পার হতে গিয়ে পরিকল্পনামাফিক জলে পড়ে যান। সাথে সাথে গর্জে ওঠে ওৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র। আর খতম হয় সব কজন পাকসেনা।
ক. বুধা প্রায়ই কী সাজত?
খ. ‘আধা-পোড়া বাজারটার দিকে তাকিয়ে ওর চোখ লাল হতে থাকে’ কেন?
গ. উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদারের সাথে ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে কি? যুক্তিসহ প্রমাণ করো।

সৃজনশীল ২: 
এই মার্চের ভাষণ শুনে গর্জে ওঠে কলেজ পড়ুয়া ছাত্র সাঈদ। ঝাঁপিয়ে গড়ে মুক্তিযুদ্ধে। তার নেতৃত্বে একের পর এক গেরিলা আক্রমণে অতিষ্ঠ পাকসেনারা। অপারেশন গ্রামে আন্রমণ করে। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। আর যাকে যেখানে পেয়েছে, তাকেই সেখানেই নির্মমভাবে হত্যা করে। এক সময় আবু সাঈদ জানতে পারে স্বজন হারানোর খবর। কিন্তু সে আপসহীন। তার একটাই প্রতিজ্ঞা, এ দেশের মাটি থেকে ওদের তাড়াতেই হবে।

ক. কে বুধাকে ‘মানিকরতন” বলে ডাকতেন?
খ. এবার মৃত্যুর উৎপাত শুরু করেছে ভিন্ন রকমের মানুষ” – এ কথা বলার কারণ কি?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কাহিনী “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের ঘে বিশেষ দিকটির ইঙ্গিত করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আবু সাঈদের মনোভাবই যেন “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের মূল বক্তব্য।” যুক্তিসহ প্রমাণ কর।

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

আপনারা অনেকে হয়তো উপরক্ত সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন না। তাই আপনাদের জন্য এখানে সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো উত্তর দেওয়া আছে। নিচে থেকে কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর গুলো দেখেনিন।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ এর উত্তরঃ 

ক. বুধা প্রায়ই কাকতাড়ুয়া সাজত।

খ. ‘আধা-পোড়া বাজারটার দিকে তাকিয়ে ওর চোখ লাল হতে থাকে।” কারণ সেদিকে তাকিয়ে হানাদার বাহিনীর প্রতি বুধার ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহা বাড়তে থাকে। অন্যায় কিছু দেখলেই বুধার খুব রাগ হয়। আর রাগ হলে তার চোখ লাল হতে থাকে।

হানাদাররা হঠাৎ করে একদিন বুধাদের গ্রামে এলো। বাজারের অনেক মানুষকে গুলি করে মারলো। অবশেষে আগুন দিয়ে বাজারটা পুড়িয়ে দিল। তারা যাওয়ার পরে গ্রামের মানুষেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলো। বুধা নিজেও মাটির হাড়িতে করে ডোবা থেকে পানি নিয়ে আসে। পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতি ওর রাগ বাড়তে থাকে। ও মনে মনে ফুঁসতে থাকে। প্রতিশোধ নেয়ার কথা ওর মনের ভেতর ঢুপকঢাপ শব্দ তোলে। এক সময় আগুন নিভে গেলে আধা-পোড়া বাজারটার দিকে তাকিয়ে ওর চোখ লাল হতে থাকে।

গ. কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে বুধা অত্যন্ত কৌশলী কিশোর। তার এ চরিত্রের সাথে উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদারের সাদৃশ্য রয়েছে। শক্তি দিয়ে সবকিছু হয় না।

পৃথিবীতে শক্তির চেয়ে বুদ্ধির মূল্য অনেক বেশি। শক্তি দিয়ে যে কাজ সাধন করা অসম্ভব, বুদ্ধি দিয়ে সে কাজ করা খুবই সহজ। বুদ্ধিমত্তার কারণেই মানুষ পৃথিবীর সেরা জীব। যারা বোকা, তারা শক্তি দিয়ে সব কাজ সাধনের চেষ্টা করে।

উদ্দীপকে কলিমদ্দি দফাদারের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ পাওয়া ঘায়। পাকসেনার থানায় ঘাটি স্থাপন করে। ফলে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। সবাই পালাতে শুরু করে। তখন কলিমদ্দি দফাদার ভিন্ন পরিকল্পনা করেন। পাক হানাদারদের বুঝতে না দিয়ে তিনি তাদের দলের লোক হিসেবে অভিনয় করেন। এমন ভাব করেন, যেন মনে হয় তিনি রাজাকার দলে যোগ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, গোপনে তিনি যোগাযোগ রাখেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। একদিন তিনি মিলিটারিদের ভাঙা পুলের সামনে নিয়ে আসেন। পুলে উঠে তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন।

আর সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে পাকবাহিনী ধ্বংস হয়ে ঘায়। কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসেও এমন কৌশল লক্ষ্য করা যায় বুধার চরিত্রে। বুধা শ্রমিকদের সঙ্গে বাঙ্কার বানাতে যায়। বাঙ্কার তৈরি করা মানে হানাদারদের শক্তি বেড়ে যাওয়া। বুধা সবার শাহাবুদ্দিনের কথা মত সে বাঙ্কারের তলায় মাইন পুঁতে দিয়ে আসে। হানাদার বাঙ্কারে ঢুকে মাইনে পা দিতেই সব ধ্বংস হয়ে ঘায়।

এভাবেই উদ্দীপকের কলিমদ্দি দফাদারের সাথে বুধার চরিত্রের মিল পাওয়া যায়।

ঘ. না, উদ্দীপকটি “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না। কারণ উদ্দীপকের দিকটিই কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের একমাত্র দিক নয়। যুক্তিসহ প্রমাণ করা হলোঃ

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এদেশের বুকে তা-ব চালিয়েছিল, অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছিল। তারা ভেবেছিল ংলার মানুষ ভিতু। অন্দ্রের মুখে এরা পিছু হটবে। বাঙালী তাদের চিন্তাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিল। বাঙালিরা মহা প্রতিরোধ গড়ে তোলে হানাদারের বিরুদ্ধে। অবশেষে ত্রিশ লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অজিত হয় কাঙ্খিত স্বাধীনাতা। দেশপ্রেম। পাকসেনার থানায় ঘাটি স্থাপন করে। ফলে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। সবাই পালাতে শুরু করে। তখন কলিমদ্দি দফাদার ভিন্ন পরিকল্পনা করেন। পাক হানাদারদের বুঝতে না দিয়ে তিনি তাদের দলের লোক হিসেবে অভিনয় করেন।

এমন ভাব করেন, যেন মনে হয় তিনি রাজাকার দলে যোগ দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, গোপনে তিনি যোগাযোগ রাখেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। একদিন তিনি মিলিটারিদের ভাঙা পুলের সামনে নিয়ে আসেন। পুলে উঠে তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন। আর সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে পাকবাহিনী ধংস হয়ে যায়। “কাকতাড়ুয়া উপন্যাসেও এমন চরিত্রের খোঁজ পাওয়া ঘায়। সেই চরিত্রটির নাম হচ্ছে বুধা। সে পাগলের মত আচরণ করে, যাতে কেউ তাকে সন্দেহ করতে না পারে। সে রাজাকার কমান্ডার আর চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন লাগায়। হানাদারদের খবর সংগ্রহ করে, কাজের সুযোগে বাঙ্কারে মাইন পুতে পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করে।

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসে বুধার পেয়েছে। রাজাকারদের তা-বে মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠে। হানাদাররা বুধার গ্রামে ঢুকে হত্যাযজ্ঞ চালায়। জ্বালিয়ে দেয় গ্রামের পরে গ্রাম। অসংখ্য মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এছাড়াও বুধার প্রতি মানুষের ভীষণ ভালোবাসা ও বুধার কর্মঠ জীবন “কাকতাড়ুয়া, উপন্যাসে ফুটে উঠেছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।

তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ এর উত্তরঃ  

ক. হরিকাকু বুধাকে “মানিকরতন” বলে ভাকতেন।

খ. এবার মৃত্যুর উৎপাত শুরু করেছে ভিন্ন রকমের মানুষ।” “কাকতাড়ুয়া, উপন্যাসে এ কথাটি বলেছে বুধা, পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গে। “কাকতাড়ুয়া উপন্যাসে বুধার মাধ্যমে কিশোর মানসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরা হয়েছে। কিশোর বুধার মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসার দিকটি এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। গ্রামে কলেরার আক্রমণে বুধার মা-বাবা, ভাইবোন সবাই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। সে সময় যে মৃত্যু বুধা দেখেছিল, তা ঘটেছিল একটি বিশেষ রোগের কারণে। আর যুদ্ধের সময়ে এখন যে মৃত্যু বুধা দেখছে তা ভিন্ন রকম মানুষের নির্মমতায় শুরু হয়েছে। বুধার চিরচেনা পথ ধরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে জিপে করে পাকিস্তানী সেনারা তার গ্রামে প্রবেশ করে। বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। তাদের নৃশংসতা ও হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা প্রসঙ্গে বুধা এ মন্তব্যটি করে।

গ. উদ্দীপকের কাহিনী “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের বুধার অমিত সাহস ও স্বদেশপ্রেমের দিকটি ইঙ্গিত করে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলোঃ

মাতৃভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা থাকে। অনেক সময় সেই ভালোবাসা সাধারণ্যে প্রকাশ পায় না। দেশ যখন শত্রু “কবলিত হয়। আর তা প্রকাশ পায় বৈশাখি ঝড়ের মত। ১৯১ সালে পাকিস্তানি হানাদারের সামনেও বাঙালি এমনই ঝড়ের মত ঝাপিয়ে পড়েছিল। দেশকে শত্র“মুক্ত করেছিল প্রবল বীব্রমে। পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এঁতিহাসিক এই মারের ভাষণ শুনে তার মনে দেশকে শন্রু “মুক্ত ও স্বাধীন করার বাসনা জাগে। সেই লক্ষ্যে সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। একের পর এক নেতৃত্ব দেয় গেরিলা আন্রমণের। সফলভাবে শেষ করে অপারেশন জ্যাকপট। পাকসেনারা আবু সাঈদের গ্রামে হামলা চালায়। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়।

আর যাকে যেখানে পেয়েছে, তাকেই সেখানেই নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের এত অত্যাচারেও সে থামে না। বরং শপথ করে দেশকে শক্রু “মুক্ত করার। এ রকমের মানসিকতা “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের বুধার মধ্যেও পাওয়া যায়। বুধা কিশোর। কেউ তাকে মুক্তিযোদ্ধ মনে করে না। এ সুযোগ সে পুরোপুরি কাজে লাগায়। রাজাকার কমান্ডার আর শান্তি কমিটির চেয়্যারম্যানের বাড়িতে সে আগুন দেয়। মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেয় শত্র“র বাঙ্কার। দেশকে শত্র“মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা তার মনেও কাজ করে।

এভাবেই উদ্দীপকের সাইদের মুক্তিযুদ্ধের কার্যন্রম “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসের বুধার দেশপ্রেমের দিকটি ইঙ্গিত করে।

ঘ. “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে বুধার মাধ্যমে কিশোর মানসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরা হয়েছে। যা উদ্দীপকের আবু সাঈদের মানসিকতায়ও পাওয়া যায়। তা যুক্তি সহ ব্যাখ্যা করা হলোঃ

১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের আদেশে হানাদার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা বাংলার বুকে চালায় তাণুব। নির্বিচারে হত্যা করে অসংখ্য মানুষ। মা-বোনের দেয়। বাংলার মানুষ মুখ বুজে এ অন্যায় অত্যাচার সহ্য করেনি। যুদ্ধের মাধ্যমে এর উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। হানাদার পরাজিত করে অর্জন করেছে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। উদ্দীপকে আবু সাঈদের সাহসিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। সাঈদ কলেজে পড়ে। সে দেশকে শক্ত “মুক্ত করার শপথ নেয়।

সেই লক্ষ্যে সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। একের পর এক নেতৃত্ব দেয় গেরিলা আক্রমণের। সফলভাবে শেষ করে অপারেশন জ্যাকপট। পাকসেনারা আবু সাঈদের গ্রামে হামলা চালায়। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। আর যাকে যেখানে পেয়েছে, তাকেই সেখানেই নির্মমভাবে হত্যা করে। এক পর্যায়ে সে স্বজন হারানোর সংবাদ পায়। কিন্তু সে দমে যায় না। “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে বুধাও সমান সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। সে অনাথ কিশোর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সে কৌশলে যুদ্ধে অংশগ্রহণ । সবাই ভাবে বুধা পাগল।

কিন্তু বুধা আসলে দেশের জন্য জীবন বাজি রাখতে সদা প্রস্তুত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে মূল বক্তব্য হল কিশোর মানসিকতায় দেশপ্রেম ও ত্যাগী মনোভাব। বুধা জীবনের প্রতি টান প্রায় হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধের কারণে তার ভেতর আবার জীবনবোধ জেগে ওঠে। দেশকে শন্রু “মুক্ত করার দারুণ নেশা তার মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে। প্রাণের মায়া ত্যাগ করে বারবার শত্রুর সাথে মরণখেলায় মেতে ওঠে।

এই দেশত্মবোধই “কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে মূল বিষয়। উদ্দীপকের আবু সাঈদের চরিত্রেও এই একই বিষয় প্রকটিত।

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

এখানে আপনাদে৫র জন্য আরও কিছু কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া আছে। আপনারা চাইলে এগুলো পড়ে নিতে পারেন। সেরা প্রস্তুতুতির জন্য নিচের দেওয়া সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর গুলো দেখুন।

***মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারিয়ে কিশাের অন্তু আশ্রয় পায় দূরসম্পর্কের এক চাচার বাসায়। কিছুদিন পর চাচা তাকে গাড়ির হেলপার হিসেবে কাজ করে রােজগার করার তাগাদা দেয়। অসহায় অন্তু চোখের জলে ভেসে কাজে লেগে যায়।।

ক. বুধাকে গােবররাজা বলে ডাকে কে?
খ. ‘কিছু হলেই তাের চোখ লাল হয়ে যায়’- কে, কেন বলেছে?
গ. উদ্দীপকে কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের কোন বিষয়টি উঠে এসেছে? আলােচনা কর।
ঘ. ‘এতিম শিশু-কিশােররা চরম অবহেলায় পৃথিবীতে বড় হয়’- উদ্দীপক ও ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের আলােকে তােমার মূতামত দাও।

ক উত্তরঃ গাঁয়ের গােবর কুড়ানি বুড়ি বুধাকে গােবররাজা বলে ডাকে।

খ উত্তরঃ ‘কিছু হলে তাের চোখ লাল হয়ে যায়’- এ কথা বুধাকে তার চাচি বলেছে।

কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বুধা। সে কিশাের কিন্তু ভীষণ সাহসী। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে এক রাতেই বুধার মা-বাবা, ভাইবােন সবাই মারা যায়। এরপর বুধা চাচার সংসারে বেড়ে ওঠে। চাচার রােজগার নেই। সংসারে আটজন ছেলে-মেয়ে, তার ওপর আবার বুধার খরচ। তাই চাচি একদিন বুধাকে রােজগার করে নিজের খরচ নিজেকে চালাতে বলে। এতে বুধার চোখ লাল হয়ে ওঠে।খাওয়ায় সময় এই কথা বলায় বুধার গলায় ভাত আটকে যায়। তখন চাচি তাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে। ছােটবেলায় বুধা খুব লক্ষ্মী ছেলে ছিল। মা-বাবা, ভাই-বােন মারা যাওয়ার পরই তার মেজাজ এমন হয়ে গেছে। তাই কিছু হলেই তার চোখ লাল হয়ে যায়।

গ উত্তরঃ উদ্দীপকে কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের চাচার সংসারে বুধার বেড়ে ওঠা এবং সেখানে বুধাকে আয়-রােজগার করে খাওয়ার জন্য চাচির নির্দেশের বিষয়টি উঠে এসেছে। নিচে আলোচনা করা হলোঃ

প্রত্যেক সন্তানই মা-বাবাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। মা-বাবা সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। বাবা-মা হারা সন্তানের ব্যথা-যন্ত্রণা অবর্ণনীয়। সে সবার কাছে একটু স্নেহ-মমতা আশা করে। অসহায় জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করে।

উদ্দীপকে সড়ক দুর্ঘটনায় পিতৃমাতৃহীন এক কিশােরের কষ্ট-যন্ত্রণার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। কিশাের অন্তু মা-বাবাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। অসহায় অবস্থায় দূরসম্পর্কের এক চাচার বাসায় সে আশ্রয় লাভ করে। সেখানে অল্পদিনের মধ্যে সেই চাচা অন্তুকে গাড়ির হেলপার হিসেবে কাজ করে রােজগার করতে তাগাদা দিতে থাকে। অন্তু তখন আরও অসহায় বােধ করে।

উদ্দীপকের অন্তর এই অসহায় অবস্থা কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধার অসহায় অবস্থার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে বুধার বাবা-মা, ভাই-বােন সবার মৃত্যু হলে সে চাচার বাড়িতে আশ্রয় লাভ করে। সেখানে তার চাচি তাকে আয়-রােজগার করে নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে বলে। তার খাওয়া-পরা আশ্রয়ের ভার থেকে চাচিকে মুক্তি দিতে বলে। বুধাও তখন অসহায় বােধ করে।

ঘ উত্তরঃ এতিম শিশু-কিশােররা চরম অবহেলায় পৃথিবীতে বড় হয়’- মন্তব্যটি যথার্থ ।

পৃথিবীতে যাদের বাবা-মা কেউ নেই, তারা বড়ই অসহায়। নিজের জীবনের সমস্ত দায়িত্ব তাদের একার ! তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার কেউ থাকে না। নিকট আত্মীয় কেউ থাকলেও তাদের প্রতি বিশেষ কোনাে সহায়নুভূতি দেখায় না। বহু কষ্টে তাদের বাচার পথ তৈরি করে নিতে হয়।উদ্দীপকে একজন এতিম কিশােরের কথা বলা হয়েছে। এই কিশাের দূরসম্পর্কের চাচার আশ্রয় লাভ করলেও সেখানে সে আদরে থাকেনি। প্রতিনিয়তই তার চাচা তাকে উপার্জন করার কথা বলেছে। গাড়ির হেলপারের কাজ করতে বলেছে।

কাকতাড়ুয়া উপন্যাসেও বুধা মা-বাবা, ভাই-বােন সবাইকে হারিয়ে অসহায় অবস্থায় চাচার বাড়িতে আশ্রয় লাভ করেছে। সেখানে সে বেশি দিন আদরে থাকেনি। একটু বড় হলে চাচি তাকে আয়-রােজগার করে খেতে বলে, তাকে মুক্তি দিতে বলে। বুধা তখন নিজের দায়িত্ব নিজে নেওয়ার কথা বলে চাচার সংসার থেকে বের হয়ে আসে। তখন তার আর দুঃখের অন্ত থাকে না।

‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে বুধা’ মাঠের মাঝখানে কাকতাড়ুয়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই সে মানুষের আদর পেতে চায়। গাঁয়ের ললাকেরা তাকে আদর করে নাম দেয় কাকতাড়ুয়া। নােলক বুয়া বুধাকে ছন্নছাড়া’ বলে ডাকে। উদ্দীপকের অন্তর অবস্থাও তাই। সে দূরসম্পর্কের চাচার কথা শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে।

বুধাকে কাজ দিলে করে দেয়, খাবার দিলে খায়, না দিলে পানি খেয়ে দিন পার করে দেয়। তার কোনাে আশ্রয় নেই, ঠিকানা নেই, পুরাে গ্রামেই সে ঘুরে বেড়ায়। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

শেষ কথা

আজকের মত এখানেই শেষ। আশা করছি এই পোস্ট থেকে কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই পোস্ট টি ভালোলেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন।  এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। নিচে আপনাদের জন্য শিক্ষামূলক কিছু পোস্ট দেওয়া আছে দেখেনিতে পারেন। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ