আশা কবিতা সিকান্দার আবু জাফর পিডিএফ- এস এস সি

আশা কবিতা

আশা কবিতা টি সিকান্দার আবু জাফর লিখেছেন। সিকানদার আবু জাফরের ‘মালবকৌশিক’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতাটি সংকলিত হয়েছে। জাগতিক এই পৃথিবী ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। মানুষ ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের বাড়ছে ব্যবধান। বিত্ত-বৈভব অর্জন করা আর সুখের দুর্ভাবনায় তাদের আয়ু কমে যাচ্ছে। মনুষ্যত্বের আলো যারা জ্বালিয়ে রেখেছেন। দরিদ্র হলেও এই মানুষ বিত্তের পেছনে ছোটে না। তুচ্ছ, ছোট ছোট আনন্দ অবগাহনেই কাটে তাদের দিন।

সারাদিন তারা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে, তাতে হয়তো একটি দিনের আহার্যও জোটে না। কোন দীনতা বা সংশয়ে তাদের জীবন ক্লিষ্ট নয়। কবি মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষে সান্নিধ্য পেতে চাইছেন, হারিয়ে যেতে চাইছেন তাদের মাঝে। তিনি মনে করেন, এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মানুষ। নিচে সিকান্দার আবু জাফর এর আশা কবিতা টি পিডিএফ ফাইলে দেওয়া আছে।

আশা কবিতা

কে কীভাবে সুখী হবে তা নির্ধারিত নয়। মানুষ গতানুগতিক যেভাবে সুখী হয় কবি সেভাবে সুখী হওয়ার কথা এখানে বলেন নি। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ টাকা-পয়সা ও সম্পদের লোভে দিনাতিপাত করে। এতে তাদের দীর্ঘ জীবন না হয়ে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। কবিতা টি দ্বারা মানুষের সমাজ জীবনের লোভ লালসা ও হিংসা করাকে বোঝানো হয়েছে। আপনাদের জন্য এই কবিতা টি এখানে সম্পূর্ণ দেওয়া আছে। যারা পড়তে চান, নিচে থেকে পড়ে নিবেন।

আশা
সিকানদার আবু জাফর 

আমি সেই জগতে হারিয়ে যেতে চাই,
যেথায় গভীর-নিশুত রাতে
জীর্ণ বেড়ার ঘরে
নির্ভাবনায় মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে ভাই ॥

যেথায় লোকে সোনা-রূপায়
পাহাড় জমায় না,
বিত্ত-সুখের দুর্ভাবনায়
আয়ু কমায় না;

যেথায় লোকে তুচ্ছ নিয়ে
তুষ্ট থাকে ভাই ॥
সারাদিনের পরিশ্রমেও
পায় না যারা খুঁজে

একটি দিনের আহার্য-সঞ্চয়,
তবু যাদের মনের কোণে
নেই দুরাশা গ্লানি,
নেই দীনতা, নেই কোনো সংশয়।

যেথায় মানুষ মানুষেরে
বাসতে পারে ভালো
প্রতিবেশীর আঁধার ঘরে
জ্বালতে পারে আলো,

সেই জগতের কান্না-হাসির
অন্তরালে ভাই
আমি হারিয়ে যেতে চাই

আশা কবিতার মূলভাব

মানুষ স্বভাবতই ভাবনাহীন সুখী জীবন প্রত্যাশা করে। কবিও এর ব্যতিক্রম নন। তিনি অর্থবিত্তের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছেন। তাদের মতােই নির্ভাবনাময় জীবনের প্রত্যাশা করেছেন। না পাওয়ার বেদনায় সেই জীবন ভারাক্রান্ত নয়। কবি তাঁর গতানুগতিক জীবনের বাইরে এসে নিরন্ন মানুষের জীর্ণ জীবনেও যে সুখ থাকে তাতে শরিক হতে চেয়েছেন।

যারা সারাদিন কাজের পর ঘরে ফিরেই শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারে, যাদের ধন সম্পদের লােভ নেই, যারা সােনা-রুপার পাহাড় গড়ার কথা ভাবে না, এমনকি বিত্ত-বৈভব অর্জনের জন্য দুর্ভাবনায় নিজের আয়ু কমায় না, বরং যারা তুচ্ছ বিষয়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দানুভূতিকে বাঁচার অবলম্বন করে সুখ অনুভব করে, যারা কস্টের মধ্যে হাসতে পারে, দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও মানুষকে ভালােবাসতে পারে কবি মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষের সান্নিধ্যে যেতে চেয়েছেন।

আশা কবিতার কবি পরিচিতি

খুলনা জেলার তেতুলিয়া গ্রামে ১৯১৯ সালে সিকানদার আবু জাফর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেমী পেশায় ছিলেন কৃষিজীবী ও ব্যবসায়ী। সিকানদার আবু জাফর ১৯৩৬ সালে তালা বি.দে. ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। অতঃপর কিছুকাল কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন সাংবাদিক। দেশ বিভাগের পরে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করেন। এ সময় তিনি রেডিও পাকিস্তানে চাকরি থেকে শুরু করে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল প্রভৃতি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা আন্দোলন বেগবান করে তোলার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সংস্কৃতিক কর্মী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর লেখা ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই চলবে’ গানটি স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতিকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর গণসঙ্গীত ও কবিতা মেহনতী মানুষের মুক্তির প্রেরণায় সমৃদ্ধ। সিকানদার আবু জাফরের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : প্রসন্ন প্রহর, বৈরী বৃষ্টিতে, তিমিরান্তক, লগ্ন, মালব কৌশিক ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন। ৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে সিকানদার আবু জাফর মৃত্যুবরণ করেন।

আশা কবিতার ব্যাখ্যা

আশা কবিতা টি দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে টা অনেকের জানা নেই। এজন্য এই অংশে এই কবিতা বিশ্লেষণ করে দিয়েছি। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে আশা কবিতার ব্যাখ্যা  করে দিয়েছি। যারা কবিতা টি সমরকে বুঝতে চান, তারা এখান থেকে ব্যাখ্যা টি পড়ে নিন।

গতানুগতিক জীবনের বাইরে এসে যারা সুখ প্রত্যাশা করে কবি তাদের কথা বলতে গিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তিনি নির্ভাবনাময় সুখের জীবন প্রত্যাশা করেছেন। জগতের অনেক মানুষ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও রাতে ঘুমাতে পারে না। আবার ভাঙা বেড়ার জীর্ণ ঘরেও অনেকে নির্বিঘ্নে ঘুমিয়ে পড়ে। কবিও তাদের মতাে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে যেতে চান, তাদের মতাে সুখী হতে চান।

কবি প্রকৃত সুখের সন্ধানে সেখানে যেতে চান, যেখানে মানুষ বিত্ত-বৈভব অর্জন এবং অর্থ-সুখের দুর্ভাবনায় তাদের আয়ু ক্ষয় করে না। সেখানে অতি সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যেও তারা তুষ্ট থাকে। তারা অর্থ-বিত্তের শিকলে বাঁধা পড়তে চায়। দরিদ্র হলেও তারা বিত্তের পেছনে ছােটে না।

সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে যারা একটি দিনের খাবারও জোটাতে পারে না তারাও জীবনের পথে চলতে গিয়ে থেমে যায়, হতাশ হয় না। তাদের কোনাে সংকীর্ণতা নেই। কোনাে দীনতা বা সংশয়ে তাদের জীবন ক্লিষ্ট নয়। কবি এমন মানুষের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান। তার এ চাওয়ায় দরিদ্রশ্রেণির মানুষের জীবনবােধের প্রতি কবির সমবেদনা, শ্রদ্ধা, ভালােবাসা প্রকাশ পায়। কারণ এমন দুঃখ-দারিদ্র্যের মধ্যে তারা একে অন্যের প্রতি গভীর অনুরাগী, মানবিক এবং সহানুভূতিশীল।

কবি প্রকৃত মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষের সান্নিধ্য পেতে চান। তিনি তাদের মধ্যে হারিয়ে যেতে চান। কবির কাছে এসব মানুষই সত্যিকারের মানুষ। কারণ তারা পরস্পর পরস্পরকে ভালােবাসতে পারে। অতি সামান্যে তুষ্ট থাকতে পারে। অর্থবিত্তের মিথ্যা মােহে তারা জীবনের আয়ু ক্ষয় করে না ।

আশা কবিতার  শব্দার্থ

এই কবিতায় কিছু জটিল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই শব্দের অর্থ হয়তো অনেকে জানেন না। তাই এখানেই শব্দের অর্থ গুলো ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে। নিচে থেকে আশা কবিতার  শব্দার্থ গুলো জেনেনিন।

আমি সেই জগতে … ঘুমিয়ে থাকে ভাই – কে কীভাবে সুখী হবে তা নির্ধারিত নয়। মানুষ গতানুগতিক যেভাবে সুখী হয় কবি সেভাবে সুখী হওয়ার কথা এখানে বলেন নি। সুখের চিন্তায় মানুষের রাতে ঘুম হয় না। কিন্তু সুখী মানুষের ঘুমের সমস্যা হয় না। সারাদিন কাজের পর বিছানায় গেলেই শান্তির ঘুম তাকে তৃপ্তি দেয়। কবিও তেমনি সে রকম এক জীবন-যাপনের মাঝে যেতে চায় যেখানে ভাঙা বেড়ার ঘরেও মানুষ নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে থাকে; ঘুমিয়ে যেতে পারে।
বিত্ত-সুখের … সমায় না – সমাজের বেশির ভাগ মানুষ টাকা-পয়সা ও সম্পদের লোভে দিনাতিপাত করে; এতে সুখ হারাম হয়ে যায়; জীবন হয় যন্ত্রণাময়। এতে তাদের দীর্ঘ জীবন না হয়ে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। বিত্ত-সুখের দুর্ভাবনা মানুষকে সুখ তো দেয়ই না বরং তাদের আয়ু আরও কমে যায়।
যেথায় মানুষ … জ্বালতে পারে আলো – জীবনের সার্থকতা কোথায় এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের উপকার ও মঙ্গলের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে বা জীবনে কর্ম-পরিকল্পনাকে গ্রহণ করে। মানব প্রেম বা মানুষকে ভালোবাসতে পারার মাঝে জীবনের মহত্ব থাকে। প্রতিবেশির দুঃখে এগিয়ে আসা তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার মাঝেও এক ধরণের তৃপ্তি আছে। কবি তাই বলেছেন যে, যেখানে মানুষকে ভালোবাসা যায় প্রতিবেশির দুঃখ-কষ্ট দূর করে আলো জ্বালানো যায়-সেখানেই তিনি থাকতে চান।

শেষ কথা

এই পোস্টে আশা কবিতার সকল বিষয় বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছি।  আশা করছি এই পোস্ট থেকে আশা কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়।  আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

আমার দেশ কবিতা- সুফিয়া কামাল। বাংলা ১ম পত্র নবম-দশম শ্রেণি

একটি কাফি কবিতা-বিষ্ণু দে বাংলা ১ম পত্র এস এস সি- পিডিএফ

PDF-পল্লিজননী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 

পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ

পল্লিজননী কবিতা-জসীম উদ্‌দীন। বাংলা ১ম পত্র PDF

সেই দিন এই মাঠ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ