পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ- SSC

পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

পল্লিজননী’ কবিতায় কবি রুগ্ণ পরিবেশে অসুস্থ সন্তানের শিয়রে এক পল্লিজননীর সন্তান হারানাের শঙ্কা তুলে ধরেছেন। কবিতায় পল্লি প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গে একটি দরিদ্র পরিবারের করুণ কাহিনি স্থান পেয়েছে। পুত্রের রােগশয্যার পাশে নিবু নিবু প্রদীপ, চারদিকে বুনাে মশার ভিড়, ডােবার পচা পাতার গন্ধ, ঠান্ডা হাওয়া ইত্যাদি নানা কিছু পল্লিজননীর অসুস্থ পুত্রের ঘুম কেড়ে নেয়। মা রুগ্ণ সন্তানকে চুমাে খায়, সারা গায়ে হাত বুলায়, তার বুকের সমস্ত স্নেহ ঢেলে দিয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়াতে চায়। ছেলের সুস্থতার জন্য মানত করে। নিচের অংশে পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ দেওয়া আছে সংগ্রহ করেনিন।

পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

এখানে পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর দেওয়া আছে। এই প্রশ্ন গুলো এই কবিতা অনুসারে তৈরি করা হয়েছে। আপনাদের পাঠ্য বইয়ে এই সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া নেই। তাই এখান থেকে প্রশ্ন গুলো সংগ্রহ করে নিবেন।

 সৃজনশীল ১ঃ  জ্যোতির  বয়স এবার বারো পেরোল। বড় দুরন্ত ছেলে। রোজ বিকেলে দূরের মাঠে খেলতে যায় সে। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। একাকী বাসায় এ সময়টা বড় দুশ্চিন্তায় কাটে তাসমিনা আফরোজের। ছেলেকে নিয়ে নানা আশা ও আশঙ্কায় জায়নামাজে বসে একনাগাড়ে দোয়া পড়তে থাকেন তিনি।

ক. ঘরের চালে কী ডাকে?
খ. ‘তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটির মূলভাব ‘পল্লিজননী’ কবিতার পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না। উক্তিটি মূল্যায়ন করো।

 প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. ঘরের চালে হুতুম ডাকছে।

খ. সন্তানের অসুস্থতায় বিচলিত হয়ে পল্লিজননীর মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে- এই চিত্র প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।পল্লিজননী সন্তানের প্রতি অত্যন্ত মমতাময়ী। তার মাঝে সন্তানবাৎসল্যের চিরন্তন রূপ লক্ষ করা যায়। তিনি সন্তানের শিয়রে বসে নিদারুণ মনঃকষ্টে ভোগেন। সে সময় তাঁর মাথায় নানা রকম দুশ্চিন্তা খেলা করে। তার মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে।

গ.

উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার সন্তানের প্রতি অজানা আশঙ্কার দিকটি ফুটে উঠেছে।

প্রত্যেক মায়েরই সন্তানের প্রতি অনিবার্য ভালোবাসা থাকে। সন্তানের সুখে মা খুশি হন, আবার সন্তানের অসুখে মা ব্যথিত হন। অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণে প্রত্যেক জননীই চান তার সন্তান ভালো থাকুক। সন্তানের কোনো বিপদে মায়ের মন সর্বদাই আতঙ্কিত থাকে। এক মুহূর্ত মায়ের সামনে সন্তানের অনুপস্থিতি মাকে অজানা আশঙ্কায় ভাবিয়ে তোলে।

উদ্দীপকে সন্তানের অনুপস্থিতিতে মায়ের মনের অজানা আশঙ্কা ফুটে উঠেছে। ছেলে দূরের মাঠে খেলতে গিয়ে ফিরতে দেরি হওয়ায় মায়ের মনে নানা দুশ্চিন্তা ভর করে। উদ্দীপকের জননীর এই দিকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতায়ও প্রকাশ পেয়েছে। ছেলের প্রতি নিবিড় ভালোবাসাই উদ্দীপকের তাসমিনা আফরোজ এবং কবিতায় বর্ণিত পল্লিজননীর অজানা আশঙ্কার কারণ।

ঘ.

মায়ের সন্তানবাৎসল্য প্রকাশ পেলেও অনুভূতির গভীরতা এবং অবস্থানগত পার্থক্যের বিবেচনায় উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতাকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিনিধিত্ব করে না।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় রুগ্ণ পুত্রের শিয়রে বসা এক দরিদ্র পল্লিজননীর অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণের কথা বর্ণিত হয়েছে। পল্লিজননী পুত্রের চাঞ্চলতা স্মরণ আর দারিদ্র্যের কারণে পুত্রের নানা আবদার মেটাতে না পারার ব্যর্থতায় কাতর। তিনি অসুস্থ পুত্রের সুস্থতার জন্য মানত করেন। এর মাধ্যমে পল্লিজননীর সন্তানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা গভীরভাবে প্রকাশ পায়।

উদ্দীপকেও তাসমিনা আফরোজের সন্তানবাৎসল্য প্রকাশ পেয়েছে। সন্তানের জন্য তাঁর দুশ্চিন্তার শেষ নেই। পুত্রের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনায় রত হন তিনি। কিন্তু ‘পল্লিজননী’ কবিতায় এক দরিদ্র মায়ের সন্তানপ্রীতির চিত্র আঁকতে গিয়ে কবি পল্লি অঞ্চলের এক সার্থক সমাজচিত্রও অঙ্কন করেছেন। উদ্দীপকে কবিতার এ সকল দিক অনুপস্থিত।

‘পল্লিজননী’ কবিতা এবং উদ্দীপক উভয়ের মূলকথা সন্তানবাৎসল্য হলেও এদের উপস্থাপনগত ভিন্নতা রয়েছে। কবিতার পল্লিজননীর পুত্র মৃত্যুমুখে পতিত। দরিদ্র মা তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্য জোগাড় করে দিতে পারেননি। তাই সন্তানকে চিরতরে হারানোর শঙ্কা তাঁকে ব্যাকুল করে তোলে। কিন্তু উদ্দীপকের মায়ের ছেলেটি এমন ঘোর বিপদের মুখোমুখি নয়। তাছাড়া কবিতায় পল্লিজননীর সন্তানবাৎসল্যের আড়ালে পল্লিগ্রামের এক নিবিড় সমাজচিত্র অঙ্কিত হলেও উদ্দীপকে শুধু সন্তানের প্রতি ভালোবাসাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। তাই উদ্দীপকটির মূলভাব ‘পল্লিজননী’ কবিতার পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না।

 সৃজনশীল ২ঃ

ছেলেটার বয়স হবে বছর দশেক, পরের ঘরে মানুষ
যেমন ভাঙা বেড়ার ধারে আগাছা, মালীর যত্ন নেই
ছেলেটা ফুল পাড়তে গিয়ে গাছের থেকে পড়ে
হাড় ভাঙে, বুনো বিষফল খেয়ে ও ভিরমি লাগে
কিছুতেই কিছু হয় না, আধমরা হয়েও বাঁচে
গেরেস্ত ঘরে ঢুকলেই সবাই তাকে দূর দূর করে
কেবল তাকে ডেকে এনে দুধ খাওয়ায় সিধু গোয়ালিনী
তার উপদ্রবে গোয়ালিনীর স্নেহ ওঠে ঢেউ খেলিয়ে
তার হয়ে কেউ শাসন করতে এলে, পক্ষ নেয় ওই ছেলেটারই।

ক. বাঁশবনে ডাকে কে?
খ. মায়ের প্রাণ শঙ্কায় ভরে উঠেছে কেন?
গ. উদ্দীপকের ছেলেটার সাথে ‘পল্লিজননী’ কবিতার ছেলেটার পার্থক্য কোথায়?- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে করো সিধু গোয়ালিনী পল্লিজননীরই প্রতিরূপ? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

 প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. বাঁশবনে কানা কুয়ো ডাকে।

খ. সন্তানের অসুস্থতায় মা অত্যন্ত বিচলিত। তাই পুত্র হারানোর শঙ্কায় তার মন ভরে উঠেছে।‘পল্লিজননী’ কবিতায় পল্লিজননী একজন মমতাময়ী মা। রুগ্ণ সন্তানের শিয়রে বসে তিনি দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন। সামর্থ্যের অভাবে ছেলের জন্য ওষুধ পথ্য জোগাড় করতে পারেননি তিনি। অসহায় মায়ের প্রাণ তাই সন্তানের মৃত্যু শঙ্কায় ভরে উঠেছে।

গ.

‘পল্লিজননী’ কবিতার ছেলেটি মাতৃস্নেহে লালিত। আর উদ্দীপকের ছেলেটি মাতৃস্নেহ বঞ্চিত, বেড়ে উঠেছে অনাদর অবহেলায়।

মাতৃস্নেহের এক অনুপম নিদর্শন ‘পল্লিজননী’ কবিতা। পল্লিজননীর বুকের মানিক ছেলেটি তার মায়ের কোলেই বড় হয়েছে। তার দিন কাটে খেলাধুলা আর ঘুড়ি লাটাই নিয়ে। মায়ের কাছে তার আবদারের শেষ নেই। ঢাঁপের মোয়া, গুড়ের পাটালি আরো কত কী? মায়ের আদরে বড় হওয়া ছেলেটি যখন রোগশয্যায় তখন স্নেহময়ী মা ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তার অসুখ সারিয়ে তোলার জন্য তার শিয়রে বসে থাকেন।

উদ্দীপকের ছেলেটি পরের ঘরে মানুষ হয়েছে। যত্নহীনভাব আগাছার মতো সে বড় হচ্ছে। সবাই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তার অসহায়ত্বের কথা কেউ ভাবে না। কিন্তু ‘পল্লিজননী’ কবিতার ছেলেটি অভাবী হলেও মায়ের স্নেহধন্য।

ঘ.

সন্তানবাৎসলের দিক দিয়ে সিধু গোয়ালিনী পল্লিজননীর প্রতিরূপ।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় আমরা দেখি একজন স্নেহময়ী মা কীভাবে তাঁর রুগ্ণ শিশুর জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। দারিদ্র্যের কারণে এই মা সন্তানকে ওষুধ পথ্য দিতে পারেননি বলে তাঁর উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ আরো বেড়ে গিয়েছে। তাই মসজিদ ও মাজারে মোমবাতি মানত করেন, আল্লাহ, রাসুল ও পীরকে মনে মনে স্মরণ করে সারা রাত সন্তানের শিয়রে পাশে বসে থাকেন। সন্তানের রোগ সারিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান এই মা।

উদ্দীপকে বর্ণিত দুরন্ত ছেলেটিকে সবাই দেখে অবজ্ঞার চোখে। পিতৃ-মাতৃহীন ছেলেটির দিকে কেউই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয় না। সবাই তাকে আপদ ও উপদ্রপ মনে করে। যে বাড়িতেই যায় সেখানেই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সিধু গোয়ালিনী তাকে ডেকে আদর করে দুধ খাওয়ায়। তার উপদ্রবে গোয়ালিনীর স্নেহ-মমতা আরো বেশি জেগে ওঠে। ছেলেটির দুরন্তপনায় কেউ তাকে শাসন করতে এলে গোয়ালিনী তার হয়ে প্রতিবাদ করে। তার পক্ষ নেয়। কারণ ছেলেটিকে দেখলে গোয়ালিনীর মাতৃত্ব ও সন্তান বাৎসল্য জেগে ওঠে।

সন্তানবাৎসল্যই একজন মায়ের চিরকালীন বৈশিষ্ট্য। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় আমরা সে সন্তানবাৎসল্যের চরম পরাকাষ্ঠা লক্ষ করি। একজন দরিদ্র অসহায় মায়ের পক্ষে যা করণীয় তাই আমরা প্রত্যক্ষ করি। আবার উদ্দীপকের ছেলেটি গোয়ালিনীর নিজের সন্তান না হলেও তার প্রতি সে যে মমত্ববোধ দেখিয়েছে তা আমাদের মুগ্ধ করে। সন্তানের মতোই তাকে আপন করে নেয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, সিধু গোয়ালিনী পল্লিজননীর সার্থক প্রতিরূপ।

পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনশীল ১ঃ 

বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর
পুত্র তাঁহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর।
চারিধারে তাঁর ঘনায়ে আসিছে মরণ অন্ধকার।

ক. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় ছেলে মাকে কী যত্ন করে রাখার কথা বলেছে?
খ. ‘আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি’ – পথ্য না জোটার কারণ কী?
গ. উদ্দীপক কবিতাংশে ‘পল্লিজননী’ কবিতার যে দিকটি প্রতিফলিত তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রতিফলিত দিকটিই ‘পল্লিজননী’ কবিতার সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে কি ? যুক্তিসহ প্রমাণ করো।

উত্তরঃ 

ক. পল্লিজননী’ কবিতায় ছেলে মাকে তার লাটাই যত্ন করে রাখার কথা বলেছে।

খ .

দারিদ্র্যের কারণে মা তার রুগ্ণ ছেলের পথ্য জোটাতে পারেনি।
‘পল্লিজননী’ কবিতায় গ্রামের দুরন্ত ছেলেটি অসুস্থ হয়ে বিছানায় ছটফট করছে। তার মা দারিদ্র্যপীড়িত এক গ্রামীণ নারী। সামর্থ্য না থাকায় অসহায় মা আনন্দ আয়োজন দূরে থাক ওষুধ-পথ্য পর্যন্ত জোটাতে পারেনি।

 গ.

পল্লিজননী’ কবিতায় বর্ণিত মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানের জন্য করুণ অভিব্যক্তির দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

কবি জসীমউদ্দীনের ‘পল্লিজননী’ কবিতায় এক রুগ্ণ সন্তানের শিয়রে বসা মমতাময়ী মায়ের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ ও পথ্য জোগাড় করতে না পারার গভীর মনঃকষ্ট কবিতায় উল্লেখ করা হয়েছে। মা পুত্রকে আদর করে আর সান্ত্বনা দিতে থাকে। রোগমুক্তির জন্য মানত করে। মায়ের মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে।

উদ্দীপকে উল্লিখিত বাদশা বাবর তাঁর অসুস্থ পুত্রের জন্য ব্যগ্র ব্যাকুল। সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তায় তাঁর চোখে ঘুম নেই। পুত্র হুমায়ুন বুঝি আর বাঁচবে না। মরণ অন্ধকার তাকে ঘিরে ধরেছে। বাদশা বাবর কেঁদে ফিরছেন কীভাবে পুত্রকে ভালো করা যায়। সন্তানের কষ্টে কোনো পিতা-মাতাই স্থির থাকতে পারে না। উদ্দীপকের কবিতাংশে সেই মনঃকষ্টই ব্যক্ত হয়েছে ‘পল্লিজননী’ কবিতায়।

ঘ.

অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য বিবেচনায় উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে না।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় রুগ্ণ শিশুর শিয়রে বসে থাকা এক মায়ের মনঃকষ্ট ও গভীর মর্মবেদনা প্রকাশ পেয়েছে। দারিদ্র্যের কারণে মমতাময়ী মা তার সন্তানের জন্য ওষুধ-পথ্য জোগাড় করতে পারেনি। সারা রাত জেগে বুকের মানিককে আদর আর প্রবোধ দেন। পুত্র হারানোর শঙ্কায় আতঙ্কিত মা দরগায় মানত করে। আল্লাহ রসুল ও পীরের কাছে সন্তানকে ভালো করে দেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করে। মাটির প্রদীপের মতো তার জীবন প্রদীপও যেন নিভে যাচ্ছে। অসহায় মায়ের হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে রুগ্ণ ছেলের জন্য।

উদ্দীপকে একজন পরাক্রমশালী বাদশাহ বাবর তাঁর ভীষণ অসুস্থ সন্তান হুমায়ুনের জন্য কাতর হয়ে পড়েছেন। মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানের করুণ অবস্থা দেখে পিতার অন্তর গুমরে কেঁদে উঠেছে। সন্তানের জীবনে যেন মরণ অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। পুত্র হুমায়ুনকে বুঝি আর বাঁচানো যাচ্ছে না। সন্তানের জীবন বাঁচাতে বাদশা বাবরের মনঃকষ্ট ও তীব্র ব্যাকুলতাই প্রকাশ পেয়েছে। ‘পল্লিজননী’ কবিতায়ও এ বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু উদ্দীপক ও কবিতার মাঝে পারিপার্শ্বিতার ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় রুগ্ণ শিশুর জীবন বাঁচতে দরিদ্র অসহায় দুঃখিনী মায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকেও মৃত্যুপথযাত্রী পুত্রের জীবন বাঁচাতে এক পিতা ব্যগ্র ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কবিতার পল্লিজননী আর উদ্দীপকের বাদশাহ বাবরের আর্থিক অবস্থার চিত্র সম্পূর্ণই বিপরীত। পল্লিজননীর পুত্র সুচিকিৎসা পায়নি হতদরিদ্র হওয়ায়। কিন্তু উদ্দীপকের বাদশাহপুত্র হুমায়ুনের ক্ষেত্রে এটি ঘটার সুযোগ নেই। আবার ‘পল্লিজননী’ কবিতার প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে গ্রামীণ পরিবেশে। প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের বর্ণনায় কবিতাটি নিবিড়তা লাভ করেছে। উদ্দীপক কবিতাংশটিতে এ বিষয়গুলো পাওয়া যায় না। তাই উদ্দীপকটি কবিতার মূলভাব ধারণে সক্ষম হলেও সমগ্র অংশের ধারক নয়।

সৃজনশীল ২ঃ

স্বামীহারা রাহেলা বানু নির্মাণশ্রমিক হিসেবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে একমাত্র সন্তান শিপুকে লেখাপড়া শেখান। স্নেহবাৎসল্য থাকলেও তা অন্তরে ধারণ করে তিনি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ক. রুগ্ণ ছেলের শিয়রে কে জাগছে?
খ. শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপের সাথে বিরহী মায়ের পরাণ দোলে কেন?
গ. উদ্দীপকের রাহেলা বানুর মধ্যে পল্লিজননীর যে গুণের আভাস দেওয়া হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার মমতাময়ী মায়ের চেতনার সামগ্রিক দিক ফুটে ওঠেনি- মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।

প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. রুগ্ণ ছেলের শিয়রে পল্লিজননী জাগছে।

খ. সন্তানের অমঙ্গল আশঙ্কায় তার শিয়রের কাছে বসে পল্লিজননীর পরাণ দোলে।রুগ্ণ ছেলের শিয়রে বসে আছেন অসহায় মা। সন্তান রোগযন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। জননী তাকে দরকারমতো ওষুধ জোগাড় করে দিতে পারেননি। সন্তানের মৃত্যুশঙ্কা মায়ের মনকে আকুল করে। একলা বসে তাই পল্লিজননী বারবার শিউরে ওঠেন।

গ.

উদ্দীপকের রাহেলা বানুর মধ্যে পল্লিজননীর সন্তানবাৎসল্য গুণটির আভাস দেওয়া হয়েছে।

মায়ের মতো মমতাময়ী আর কেউ নেই। প্রতিটি মা-ই চান তার সন্তান ভালো থাকুক। সন্তানের কোনো বিপদে মা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান। সন্তানের ভালো করার জন্য প্রত্যেক মা সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় কবি জসীমউদ্দীন এমন মমতাময়ী এক পল্লিমায়ের সুনিপুণ চিত্র অঙ্কন করেছেন।

উদ্দীপকের রাহেলা বানু পল্লিজননীর মতোই একজন স্নেহবৎসল মা। তিনি সন্তানের মঙ্গল কামনায় কঠোর পরিশ্রম করেন। সন্তানের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে তিনি সন্তানকে লেখাপড়া শেখানোর ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী। এজন্য তিনি নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেও দ্বিধা করেন না। রাহেলা বানুর স্নেহময়তার এই দিকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার পল্লিমায়ের সন্তানবাৎসল্যকে প্রতিফলিত করেছে।

ঘ.

স্নেহময়তাকে ধারণ করলেও ‘পল্লিজননী’র অসহায়ত্বের তীব্রতাকে ধারণ না করায় উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার সামগ্রিক ভাব তুলে ধরতে পারেনি।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার গভীর মমতাময়ী দিক সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন কবি জসীমউদ্দীন। কবিতায় পল্লিজননী সন্তানের অসুস্থতায় যেমন উদ্বিগ্ন তেমনি দারিদ্র্যের কারণে ওষুধ না কিনতে পেরে অসহায়। ফলে সন্তানবাৎসল্যের পাশাপাশি কবিতায় পল্লিজননীর অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকের রাহেলা বানু কঠোর পরিশ্রম করে ছেলেকে লেখাপড়া করানোর সংগ্রাম করে চলেছেন। এক্ষেত্রে রাহেলা বানুর সন্তানের আকাক্সক্ষা পূরণের অসহায়ত্ব নেই। কিন্তু ‘পল্লিজননী’ কবিতায় পল্লিজননীর মাঝে সন্তানের জন্য ভালোবাসা আছে, সন্তান হারানোর শঙ্কা আছে, অসহায়ত্ব আছে।

প্রতিটি মায়ের মনেই অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণ রয়েছে। সন্তানের সুখে মা হাসেন, আবার সন্তানের দুঃখে মা কাঁদেন। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় অপত্যস্নেহের আকর্ষণে মা অসুস্থ সন্তানের শিয়রে বসে আতঙ্কিত হয়েছেন। উদ্দীপকে এ ধরনের কোনো বিষয় লক্ষ করা যায় না।  কিন্তু উদ্দীপকে শুধু স্নেহবাৎসল্যের দিকটিই প্রস্ফুটিত। সন্তান হারানোর আশঙ্কা কিংবা তার আবদার পূরণের অসামর্থ্যরে যন্ত্রণার বিষয়গুলো এখানে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার মমতাময়ী মায়ের চেতনার সামগ্রিক দিক ফুটে ওঠেনি।

পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন

এখানে আরও কিছুপল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া আছে। এই প্রশ্ন উত্তর গুলো নিজেরা বের করার চেষ্টা করবেন। নিচে থেকে এই কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্নের উত্তর গুলো দেখেনিন।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ঃ 
বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর
পুত্র তাঁহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর।
চারিধারে তাঁর ঘনায়ে আসিছে মরণ অন্ধকার।

ক. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় ছেলে মাকে কী যত্ন করে রাখার কথা বলেছেন?
খ. ‘আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি’- পথ্য না জোটার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার যে দিকটি প্রতিফলিত তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রতিফলিত দিকটিই ‘পল্লিজননী’ কবিতার সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে কি? যুক্তিসহ প্রমাণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ঃ 
স্বামীহারা রাহেলা বানু নিমার্ণ শ্রমিক হিসেবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে একমাত্র সন্তান শিপুকে লেখাপড়া শেখান। তিনি স্নেহবাৎসল্য থাকলেও তা অন্তরে ধারণ করে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ক. ঘরের চালে কী ডাকে?
খ. মা নামাজের ঘরে মোমবাতি আর দরগায় দান মানেন কেন?
গ. উদ্দীপকের রাহেলা বানুর মধ্যে পল্লীজননীর যে গুণের প্রতিফলিত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘পল্লীজননী’ কবিতার মমতাময়ী মায়ের চেতনার সামগ্রীক দিক ফুটে ওঠেনি-উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন  ৩ঃ 
কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা
সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা
আর আমি ডালের ভরি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা তুই কবে আসবি? কবে ছুটি?

ক. পচান পাতার ঘ্রাণ কোথা থেকে আসে?
খ. ‘মোসলমানের আড়ং দেখতে নাই’-মা এ কথা কেন বলেছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘পল্লীজননী’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছেব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক এবং ‘পল্লীজননী’ কবিতার বিষয়বস্তু এক নয়-উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

শেষ কথা

এই পোস্টের সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গুলো শেয়ার করা হয়েছে। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। আশা করছি এই পোস্ট থেকে পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়।  আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

পল্লিজননী কবিতা-জসীম উদ্‌দীন। বাংলা ১ম পত্র PDF

সেই দিন এই মাঠ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

সেই দিন এই মাঠ কবিতা ও কবিতার ব্যাখ্যা পিডিএফ- SSC

উমর ফারুক কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম। পিডিএফ

সেই দিন এই মাঠ সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ- SSC

মানুষ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ