পল্লিজননী কবিতা-জসীম উদ্‌দীন। বাংলা ১ম পত্র PDF

পল্লিজননী কবিতা

পল্লিজননী কবিতা লিখেছেন কবি জসীম উদ্‌দীন। গভীর রাত। কবিতাটি দ্বারা গ্রাম বাংলাকে তুলে ধরা হয়েছে।  কবি দেশে কে ভালোবাসেন। এর সাথে তিনি তার গ্রাম, ছোটবেলা এসবকেও ভালোবাসেন। গ্রামের রাতের  ঘন অন্ধকার,কোথাও একটু আলাে নেই, শব্দ নেই এমন পরিবেশ কবির খুব ভালো লাগে। কবুতা টি দ্বারা মা- ছেলের অসুস্থতার কাহিনী তুলে ধরেছে, যা আমাদের পল্লি মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য করে থাকে।

বনের ঝােপঝাড় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা আসছে, তাদের ভন ভন শব্দ সে শুনতে পাচ্ছে, পচা ডােবা থেকে পচা পাতার গন্ধ ভেসে আসছে। দরিদ্র মায়ের ছােট কুঁড়েঘরের। বেড়ার ফাক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। এমনই পরিবেশে। শীতের রাতে মা মনে মনে ছেলের আয়ু গুনে যাচ্ছে। নিচে সম্পূর্ণ কবিতা দেওয়া আছে। পল্লিজননী কবিতা PDF সংগ্রহ করুন।

পল্লিজননী কবিতা

এখানে পল্লিজননী কবিতা টি দেওয়া হয়েছে। এটি নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেকে কবিতাটি খুজতেছিলেন, তাদের জন্য সম্পূর্ণ কবিতা টি পিডিএফ ফাইলে শেয়ার করেছি। নিচে থেকে কবিতা পড়ুন অথবা সংগ্রহ করে রাখুন।

পল্লী জননী
– জসীম উদ্‌দীন 

রাত থম থম স্তব্ধ, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বিসয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।

ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান,
এঁদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ?
ছোট কুঁড়ে ঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,
শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।

ছেলে কয়, “মারে, কত রাত আছে? কখন সকাল হবে,
ভাল যে লাগে না, এমনি করিয়া কেবা শুয়ে থাকে কবে?”
মা কয়“বাছারে ! চুপটি করিয়া ঘুমা ত একটি বার, ”
ছেলে রেগে কয় “ঘুম যে আসে না কি করিব আমি তার ?”
পান্ডুর গালে চুমো খায় মাতা, সারা গায়ে দেয় হাত,

পারে যদি বুকে যত স্নেহ আছে ঢেলে দেয় তারি সাথ।
নামাজের ঘরে মোমবাতি মানে, দরগায় মানে দান,
ছেলেরে তাহার ভাল কোরে দাও, কাঁদে জননীর প্রাণ।
ভাল করে দাও আল্লা রছুল। ভাল কোরে দাও পীর।
কহিতে কহিতে মুখখানি ভাসে বহিয়া নয়ন নীর।

বাঁশবনে বসি ডাকে কানা কুয়ো, রাতের আঁধার ঠেলি,
বাদুড় পাখার বাতাসেতে পড়ে সুপারীর বন হেলি।
চলে বুনোপথে জোনাকী মেয়েরা কুয়াশা কাফন ধরি,

দুর ছাই। কিবা শঙ্কায় মার পরাণ উঠিছে ভরি।
যে কথা ভাবিতে পরাণ শিহরে তাই ভাসে হিয়া কোণে,
বালাই, বালাই, ভালো হবে যাদু মনে মনে জাল বোনে।
ছেলে কয়, “মাগো! পায়ে পড়ি বলো ভাল যদি হই কাল,

করিমের সাথে খেলিবারে গেলে দিবে না ত তুমি গাল?
আচ্ছা মা বলো, এমন হয় না রহিম চাচার ঝাড়া
এখনি আমারে এত রোগ হোতে করিতে পারি ত খাড়া ?”
মা কেবল বসি রুগ্ন ছেলের মুখ পানে আঁখি মেলে,
ভাসা ভাসা তার যত কথা যেন সারা প্রাণ দিয়ে গেলে।

“শোন মা! আমার লাটাই কিন্তু রাখিও যতন করে,
রাখিও ঢ্যাঁপের মোয়া বেঁধে তুমি সাত-নরি শিকা পরে।
খেজুরে-গুড়ের নয়া পাটালিতে হুড়ুমের কোলা ভরে,

ফুলঝুরি সিকা সাজাইয়া রেখো আমার সমুখ পরে।”
ছেলে চুপ করে, মাও ধীরে ধীরে মাথায় বুলায় হাত,
বাহিরেতে নাচে জোনাকী আলোয় থম থম কাল রাত।

রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া কত কথা পড়ে মনে,
কোন দিন সে যে মায়েরে না বলে গিয়াছিল দুর বনে।
সাঁঝ হোয়ে গেল আসেনাকো আই-ঢাই মার প্রাণ,

হঠাৎ শুনিল আসিতেছে ছেলে হর্ষে করিয়া গান।
এক কোঁচ ভরা বেথুল তাহার ঝামুর ঝুমুর বাজে,
ওরে মুখপোড়া কোথা গিয়াছিলি এমনি এ কালি-সাঁঝে?

কত কথা আজ মনে পড়ে মার, গরীবের ঘর তার,
ছোট খাট কত বায়না ছেলের পারে নাই মিটাবার।
আড়ঙের দিনে পুতুল কিনিতে পয়সা জোটেনি তাই,
বলেছে আমরা মুসলমানের আড়ঙ দেখিতে নাই।

করিম যে গেল? রহিম চলিল? এমনি প্রশ্ন-মালা;
উত্তর দিতে দুখিনী মায়ের দ্বিগুণ বাড়িত জ্বালা।
আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি, ওষুধ হয়নি আনা,
ঝড়ে কাঁপে যেন নীড়ের পাখিটি জড়ায়ে মায়ের ডানা।

ঘরের চালেতে ভুতুম ডাকিছে, অকল্যাণ এ সুর,
মরণের দুত এল বুঝি হায়। হাঁকে মায়, দুর-দুর।
পচা ডোবা হতে বিরহিনী ডা’ক ডাকিতেছে ঝুরি ঝুরি,
কৃষাণ ছেলেরা কালকে তাহার বাচ্চা করেছে চুরি।

ফেরে ভন্ ভন্ মশা দলে দলে বুড়ো পাতা ঝরে বনে,
ফোঁটায় ফোঁটায় পাতা-চোঁয়া জল গড়াইছে তার সনে।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা।

সম্মুখে তার ঘোর কুজঝটি মহা-কাল-রাত পাতা।
পার্শ্বে জ্বলিয়া মাটির প্রদীপ বাতাসে জমায় খেলা,
আঁধারের সাথে যুঝিয়া তাহার ফুরায়ে এসেছে তেল।

পল্লিজননী কবিতা ব্যাখ্যা

এই কবিতায় অনেক জটিল কথা লেখা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। শুধু কবিতা পরলেই হবে, এর পিছনের কারণ বা ব্যাখ্যা অবশ্যই জানতে হবে। কিন্তু শুধু কবিতা পড়ে সবাইক ব্যাখ্যা গুলো বুঝতে পারে না। তাই এখানে তাদের জন্য পল্লিজননী কবিতার ব্যাখ্যা টি শেয়ার করেছি। নিচে অংশে কবিতা টি বিশ্লেষণ করে দিয়েছি।

গভীর রাত। ঘন অন্ধকার। কোথাও একটু আলাে নেই, শব্দ নেই। থমথমে পরিবেশ, নিশ্বাস ছাড়লে তার প্রতিধ্বনিও শােনা যায়। তা ছাড়া অন্য কোনাে শব্দ শােনা যায় না, কোথাও কারও সাড়া পাওয়া যায় না ।

অসুস্থ ছেলের মাথার কাছে দুখিনী মা জেগে আছে। তার ঘুম ঘুম চোখের করুণ চাহনি সেই পরিবেশকে আরও ভারী করে তুলেছে। ছেলের মাথার কাছে সামান্য দীপশিখা নিবু নিবু করে ঘুরে ঘুরে জ্বলছে। যেকোনাে সময় তা নিভে যাবে। এই অবস্থায় মায়ের হৃদয় সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠছে, গভীর বেদনাবােধে দুলে উঠছে।

রুগণ ছেলের শিয়রে বসে পল্লিজননী রুগ্ণ পরিবেশটিও অবলােকন করছে। বনের ঝােপঝাড় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা আসছে, তাদের ভন ভন শব্দ সে শুনতে পাচ্ছে, পচা ডােবা থেকে পচা পাতার গন্ধ ভেসে আসছে। দরিদ্র মায়ের ছােট কুঁড়েঘরের। বেড়ার ফাক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। এমনই পরিবেশে। শীতের রাতে মা মনে মনে ছেলের আয়ু গুনে যাচ্ছে।

অসুস্থ ছেলে মাকে ডেকে জানতে চায়– রাত আর কতটুকু বাকি, কখন সকাল হবে, তার আর শুয়ে থাকতে ভালাে লাগে না। ছেলেকে আদর করে মা তাকে ঘুমাতে বলে। কিন্তু ছেলে ঘুমায় না। ঘুম না এলে সে কীভাবে ঘুমাবে?

মা অসুস্থ ছেলের গালে চুমাে খায়। সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। ছেলের সেবা-যত্নে মাতৃহৃদয়ের সমস্ত স্নেহ-মমতা ঢেলে দেয়। রােগাক্রান্ত ছেলের আরােগ্য কামনায় মা নামাজের ঘরে মােমবাতি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। আল্লাহ, রসুল, পীরকে ডেকে তার সন্তানকে সুস্থ করে দিতে বলে। ছেলের রােগমুক্তির প্রার্থনা করে তার চোখ জলে ভেসে যায় ।

গভীর রাতের ঘন অন্ধকার ভেদ করে বাঁশবাগান থেকে কানা কুয়াের ডাক ভেসে আসে, সুপারির বনে বাদুড় পাখা ঝাপটায়, কুয়াশার মধ্যে বনের পথে জোনাকি পােকা উড়ে যায়। এসব দেখে-শুনে মায়ের মন শঙ্কায় ভরে ওঠে। সে কথা ভাবতে গেলে মায়ের হৃদয় কাঁপে। সে কথাই তার মনের কোণে বারবার জেগে ওঠে। মা বালাই বালাই বলে সেব অমঙ্গল তাড়াতে চায়। তার সােনামণি, জাদুমণি ভালাে হয়ে যাবে মনে মনে সে স্বপ্নের জাল বােনে।

ছেলের চোখে ঘুম নেই, সে মাকে বলে কাল যদি সে ভালাে, হয়ে যায় তাহলে করিমের সঙ্গে খেলতে গেলে মা যেন তাকে আর বারণ না করে। আবার বলে– এখনই সে সব রােগ থেকে মুক্ত হয়ে, সুস্থ হয়ে যেতে পারে, উঠে দাড়াতে পারে, এমন ঝাড়া কি রহিম চাচা দিতে পারে না? ছেলের কোনাে কথার উত্তর না দিয়ে কেবল তাকিয়ে থাকে। ভাসা ভাসা কথাগুলাে মা অন্তর দিয়ে অনুভব করে।

মাকে তার লাটাই’ যত্ন করে রেখে দিতে বলে। সাত নরি সিকা ভরে ঢ্যাপের মােয়া বেঁধে রাখতে বলে। হুজুমের কোলা ভরে খেজুরের পাটালি গুড় রাখতে বলে। তার সামনে ফুলঝুরি শিকায় সেগুলাে সাজিয়ে রাখতে বলে। বলতে বলতে ছেলে চুপ হয়ে যায়। মা ছেলের মাথায় হাত বুলায় । কুঁড়েঘরের বাইরে জোনাকির আলােতে স্তব্ধ রাত চলতে থাকে।

অসুস্থ ছেলের মাথার কাছে বসে মায়ের নানা কথা মনে পড়ে। মাকে না বলে ছেলে দূর বনে গিয়েছিল, সঁঝ হয়ে এলাে কিন্তু ছেলে এলাে না। মায়ের মন তখন অস্থির। হঠাৎ সে শুনল ছেলে মনের আনন্দে গান গাইতে গাইতে ঘরে ফিরছে। তার কেঁচর ভর্তি বেথুল, তাই ঝামুর ঝুমুর করে বেজে চলছে। ছেলেকে সে কাছে পেয়ে মুখপােড়া’ বলে কালি সাঝে কোথায় গিয়েছিল তা জানতে চেয়ে আদর মাখানাে শাসন করেছিল।

কত কথা আজ মায়ের মনে উদয় হচ্ছে। অভাবের সপােরে। সে যে ছেলের ছােটখাটো আবদারও রক্ষা করতে পারেনি সে কথাও তার মনে পড়ছে। মেলার সময় ছেলে পুতুল কিনতে পয়সা চেয়েছিল, মা দিতে পারেনি। উল্টো তাকে বুঝিয়েছিল। আমরা মুসলমান, আমাদের মেলায় যেতে নেই।

মায়ের কথায় ছেলে যুক্তি দেখায়, করিম গিয়েছে, আজিজ যাচ্ছে। তা হলে সে যেতে পারবে না কেন? ছেলের প্রশ্নের উত্তর দিতে মায়ের মনে অভাবের যন্ত্রণার জ্বালা ধরে যেত । আজও সে অসুস্থ ছেলের জন্য পথ্য জোটাতে পারেনি, ওষুধ আনতে পারেনি। ঝড়ের সময় পাখির বাসায় কাঁপতে থাকা পাখিটির মতাে ছেলেটি মায়ের বুকে কাঁপছে। ঘরের চালে হুতুম পাখি অকল্যাণ সুরে ডাকছে। মা সেটিকে দূর দূর তাড়াতে চাইছে।

পচা ডােবা থেকে ডাহুক ডাকছে। কৃষাণ ছেলেরা গতকাল তার বাচ্চা চুরি করেছে। আবার সেই বুননা মশা ভনভন করছে। গাছ থেকে বুড়াে পাতা ঝরে পড়ছে। সেই সঙ্গে পাতা-ছুঁয়ে ফোটায় ফোটায় পড়ছে কুয়াশায় জমা জল। অসুস্থ ছেলের মাথার কাছে বসে দুখিনী মা জেগে আছে। তার সামনে অন্ধকার গভীর রাত মহাকাল হয়ে পড়ে আছে। দীর্ঘ রাতের গভীর অন্ধকারে আলাে ছড়াতে ছড়াতে প্রদীপের তেল ফুরিয়ে এসেছে। মায়ের মনে ছেলেকে ঘিরে দুর্ভাবনার শেষ নেই।

পল্লিজননী কবিতার মূলভাব

অনেকে এই কবিতার মূলভাব জানতে চান। এই কবিতার একটি মূলভাব রয়েছে। যেকোনো এক বিষয় কে ক্রেন্দ্র করে কবিতা টি লেখা হয়েছে। এখানে পল্লিজননী কবিতার মূল কথা কি তা শেয়ার করা হয়েছে। যারা যারা পল্লিজননী কবিতার মূলভাব জানতে চান, এই অংশ টি পড়ে নিবেন।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় কবি রুগ্ণ পরিবেশে অসুস্থ সন্তানের শিয়রে এক পল্লিজননীর সন্তান হারানাের শঙ্কা তুলে ধরেছেন। কবিতায় পল্লি প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গে একটি দরিদ্র পরিবারের করুণ কাহিনি স্থান পেয়েছে। পুত্রের রােগশয্যার পাশে নিবু নিবু প্রদীপ, চারদিকে বুনাে মশার ভিড়, ডােবার পচা পাতার গন্ধ, ঠান্ডা হাওয়া ইত্যাদি নানা কিছু পল্লিজননীর অসুস্থ পুত্রের ঘুম কেড়ে নেয়। মা রুগ্ণ সন্তানকে চুমাে খায়, সারা গায়ে হাত বুলায়, তার বুকের সমস্ত স্নেহ ঢেলে দিয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়াতে চায়। ছেলের সুস্থতার জন্য মানত করে।

আল্লাহ, রসুল, পীরের কাছে প্রার্থনা করে অশ্রুসিক্ত হয়। বাঁশবনে কানা কুয়াের ডাক, বাদুড়ের পাখা ঝাপটানি, জোনাকির ক্ষীণ আলােয় শীতের শুভ্র কুয়াশা ইত্যাদি মায়ের কাছে অশুভের ইঙ্গিত বলে মনে হয়। মা বালাই বালাই বলে সেগুলাে দূর করতে চায়। দুরন্ত ছেলে রহিম চাচার ঝাড়-ফুকে সুস্থ হয়েই খেলতে গেলে, মা তখন তাকে একটুও বকবে না বলে অনুমতি নেয়। ছেলের এমন কথায় পল্লিমায়ের পুত্রের নানা আবদারের কথা স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। ছেলের ছােটখাটো বায়না না মিটানাের কথা, আড়ঙের সময় পুতুল কেনার পয়সা না দিতে পারার কথা মনে জাগে।

পল্লিজননী কবিতার পাঠ পরিচিতি

মায়ের মতো মমতাময়ী ও আত্মীয় আর নেই। রুগ্ণ পুত্রের শিয়রে বসে রাত জাগা এক মায়ের মনঃকষ্ট, পুত্রের চঞ্চলতা স্মরণ আর দারিদ্র্যের কারণে তাকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও আনন্দ-আয়োজন করতে না পারার ব্যর্থতা এ কবিতায় উল্লেখ করা হয়েছে। পুত্রের শিয়রে নিবু নিবু প্রদীপ, চারি দিকে মশার অত্যাচার, বেড়ার ফাঁক গলে আসে রাতের শীত। রুগ্ণ পুত্রের ঘুম স্বাভাবিকভাবেই আসে না। মা পুত্রের গায়ে আদর করে, তার রোগ ভালো করে দেবার জন্য দরগায় মানত করে।

দুরন্ত ছেলে ভালো হয়েই খেলতে যাবে এবং তখন মা তাকে কিচ্ছু বলতে পারবে না, এমন অঙ্গীকার সে মায়ের কাছ থেকে আদায় করে নেয়। আবদারমুখো পুত্রের দিকে চেয়ে গ্রামীণ মায়ের মনে অনেক কথা জাগে। তার সামর্থ্য নেই বলে রোগীর ঔষধ, পথ্য কিছুই জোটাতে পারে নি। রুগ্ণ পরিবেশে রোগী সামনে নিয়ে এক পল্লিমায়ের মনে পুত্রহারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে। অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণই এ কবিতার মূলকথা।

পল্লিজননী কবি পরিচিতি

জসীম উদ্‌দীন. ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবি তাঁর কবিতায় বাংলাদেশের পল্লীপ্রকৃতি ও মানুষের সহজ স্বাভাবিক রূপটি তুলে ধরেছেন। পল্লীর মাটি ও মানুষের জীবনচিত্র তাঁর কবিতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে। পল্লীর মানুষের আশা-স্বপ্ন-আনন্দ-বেদনা ও বিরহ-মিলনের এমন আবেগ-মধুর চিত্র আর কোনো কবির কাব্যে খুঁজে পাওয়া ভার। এ কারণে তিনি ‘পল্লীকবি নামে খ্যাত। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কিছুকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে সরকারি তথ্য ও প্রচার বিভাগে উচ্চপদে যোগদান করেন।

ছাত্রজীবনেই তাঁর কবিপ্রতিভার বিকাশ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তাঁর রচিত ‘কবর’ কবিতাটি প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভূক্ত হয়। জসীম উদ্‌দীনের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে নকসী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, রাখালী, বালুচর, হাসু, এক পয়সার বাঁশি, মাটির কান্না ইত্যাদি। তাঁর নকসী কাঁথার মাঠ কাব্য বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। চলে মুসাফির তাঁর ভ্রমণকাহিনী। ১৯৭৬ সালের ১৪ই মার্চ কবি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

পল্লিজননী কবিতা pdf

অনেকে এই কবিতা টি পড়ার পাশা-পাশি পিডিএফ সংগ্রহ করতে চান। তাই এখানে একটি পিডিএফ দেওয়া আছে। এখান থেকে আপনারা পল্লিজননী কবিতা pdf সংগ্রহ কপরতে পারবেন। নিচে একটি ঠিকানা দেওয়া আছে। এই ঠিকানায় ক্লিক করে কবিতার পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করুন।

পিডিএফ

শেষ কথা

এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। আশা করছি এই পোস্ট থেকে পল্লিজননী কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়।  আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

সেই দিন এই মাঠ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

সেই দিন এই মাঠ কবিতা ও কবিতার ব্যাখ্যা পিডিএফ- SSC

উমর ফারুক কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম। পিডিএফ

সেই দিন এই মাঠ সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ- SSC

মানুষ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ