বাংলার নিসর্গ প্রকৃতি, এর মাঠ-ঘাট, মানুষ অতুলনীয় এবং বিশেষ আবেদনময়। যে জন এই নিসর্গ প্রকৃতি থেকে নগরের আহ্বানে সেখানে স্থায়ী বসতি গড়েন, তাকেও তার এককালের পল্লিপ্রকৃতি বারবার আকর্ষণ করে; ষড়ঋতু তার মনে আবেগের রংধনু তোলে। এর শাশ্বত কারণ হলো, মানুষ স্বভাবত তার নিজভূমের প্রতি ঋণী হয়। কবি নিজেও তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো তাঁর নিজভূমের পল্লিপ্রকৃতির জন্য অপেক্ষমাণ। নিচে একটি কাফি কবিতা টি সম্পূর্ণ দেওয়া আছে দেখুন।
একটি কাফি কবিতা
এটি একটি ছোট কবিতা। কবিতা টি লিখেছেন বিষ্ণু দে। নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র থেকে কবিতা টি সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকেই সম্পূর্ণ কবিতা পড়তে পারবেন। এছাড়া নিচের অংশে একটি পিডিএফ দেওয়া থাকবে, সেটি সংগ্রহ করে নিবেন। এখান থেকে একটি কাফি কবিতা টি পড়ুন।
একটি কাফি
বিষ্ণু দে
আমারও মন চৈত্রে পলাতক,
পলাশে আর আমের ডালে ডালে
সবুজ মাঠে মাঝবয়সী লালে
দণ্ড দুই মুক্তি-সুখে জিরায় :
মাটির কাছে সব মানুষ খাতক।
বিভােল মনে অবাক চেয়ে থাকে
সারা দুপুর হেলাফেলার হীরায়,
উদাস মন হাওয়ার পাকে পাকে
ঘুঘুর ডাকে গ্রামের ফাকা ক্ষেতে
মিলিয়ে দেয় দুস্থতার পাতক,
বিকাল তাই সন্ধ্যা-রঙে মেতে
শেষ, যে শেষ সারাদিনের পরে
একটি গানে গহন স্বাক্ষরে।
জানাে কি সেই গানের আমি চাতক?
দিনের আলােক-রেখা মিলায়েছ দূরে
নেমে আসে সন্ধ্যা ধীরে ধরণীর পুরে।
তিমির ফেলেছে ছায়া,
ঘিরে আসে কাল মায়া,
প্রান্তর-কানন-গিরি পল্লি বাটমাঠ
একাকার হয়ে আসে আকাশ বিরাট।
একটি কাফি কবিতার কবিপরিচিতি
বিষ্ণু দে ১৯০৯ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলে তাঁর শিক্ষা আরম্ভ হয়। ১৯৩২ সালে সেন্ট পলস কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে বি.এ সম্মান এবং ১৯৩৪ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি রিপন কলেজ, কৃষ্ণনগর কলেজ, মৌলানা আজাদ কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজীর অধ্যাপক ছিলেন। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত ‘কল্লোল’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে যে সাহিত্যিক গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে তিনি ছিলেন তাঁর অন্যতম কবি। অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী বিষ্ণু দে পুরাণ ও ঐতিহ্যের ব্যবহারে তাঁর কবিতাকে ভিন্ন এক মাত্রা দান করেন।
বোধের তীক্ষ্ণতা , তীব্রতা ও জটিলতায় তাঁর কবিতা স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : ঊর্বশী ও আর্টেমিস, চোরাবালি, সাতভাই চ ম্পা, তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ, স্মৃতিসত্তা ভবিষ্যৎ, কবিকরোজ্জ্বল নিজদেশে, উত্তরে মৌন থাকো ইত্যাদি। সাহিত্য একাদেমি ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হন। ৩রা ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে বিষ্ণু দে মৃত্যুবরণ করেন।
কবি বিষ্ণু দের শিক্ষা এবং পেশাগত জীবন
বিষ্ণু দের জন্ম কলকাতার পটলডাঙার বিখ্যাত শ্যামাচরণ দে বিশ্বাসের পরিবারে। আদি নিবাস ছিল হাওড়ায়। তার পিতা অবিনাশ চন্দ্র দে ছিলেন একজন অ্যাটর্নি। বিষ্ণু দে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউট এবং সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল-এ পড়াশোনা করেন । ১৯২৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর বঙ্গবাসী কলেজে আইএ পড়তে যান। ১৯৩২ সালে সাম্মানিক ইংরাজি বিষয়ে স্নাতক হন সেন্ট পল্স কলেজ থেকে। এরপর ১৯৩৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে এম এ করেন।
১৯৩৫ সালে তিনি রিপন কলেজে (অধুনা সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) যোগদান করেন শিক্ষক হিসেবে।
এরপর তিনি ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি কলেজে এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি মৌলানা আজাদ কলেজে পড়ান। এরপর তিনি কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজেও অধ্যাপনার কাজ করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ইংরাজীতে এম.এ.র ছাত্রী প্রণতি রায়চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয় । বেটোফেনের নাইন্থ সিম্ফনির মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় ক্রমে গাঢ় হয়। পরে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২রা ডিসেম্বর তাঁকে বিবাহ করেন ।
সাহিত্যকীর্তি- কবি বিষ্ণু দে
১৯২৩ সালে কল্লোল পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে যে সাহিত্য আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল কবি বিষ্ণু দে তার একজন দিশারী। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতায় তার অবদান বাংলা সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে। ১৯৩০ সালে কল্লোলের প্রকাশনা বন্ধ হলে তিনি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের পরিচয় পত্রিকায় যোগদান করেন এবং সেখানে একজন সম্পাদক হিসাবে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ১৯৪৮ সালে চঞ্চল কুমার চট্টোপাধ্যায়ের সহায়তায় তিনি সাহিত্য পত্র প্রকাশ করেন। তিনি নিরুক্তা নামের একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন।
তার কবিতার মূল উপজীব্য হল মানুষ, তার সংগ্রাম ও রাজনীতি, সেখানে সমকালীন জীবনের, দেশ ও কালের, রাজনীতি ও সমাজের প্রতিধ্বনি। প্রথমদিকে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের দুই সংস্কৃতিরই প্রভাব পড়েছে তার লেখায়। দেশীয় পুরাণ, ইতিহাস, দর্শন, শিল্পসাহিত্য থেকে ইউরোপীয় ক্লাসিক ও আধুনিক শিল্প সাহিত্যের প্রভাব এবং পরে দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানের সময়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, তেভাগা-আন্দোলন ইত্যাদি থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরের ঘটনাবহুল জীবন ও আন্দোলন তার কবিতায় সরাসরি ছায়া ফেলেছে।
একটি কাফি কবিতার শব্দার্থ
এখানে একটি কাফি কবিতার কিছু শব্দার্থ দেওয়া আছে। যারা এই কবিতার কিছু কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে পারেননি, নিচে থেকে সেগুলোর অর্থ জেনে নিবেন। এখানে কয়েক টি শব্দার্থ বিশ্লেষণ সহ কারে দেওয়া আছে।
আমারও মন … মুক্তি সুখে জিরায় – | মানব মনে প্রকৃতির শাশ্বত আবেদন আছে। শহরে নগরে যেখানে সে বসবাস করুক না কেন তার অবচেতনে লুকিয়ে থাকে প্রকৃতির চিরায়ত আহ্বান। আলোচ্য অংশে কবি হৃদয়ও পালিয়ে আনন্দ পায় চৈত্রের ঠা-ঠা রোদের আম-কাঁঠালের ডালে ডালে, সবুজ মাঠে মাঠে; |
মাঝ বয়সী লাল – | গাছ-পালার বয়স্ক পাতার রং বোঝাতে কবি এই চিত্রকল্পটি ব্যবহার করেছেন; |
বিভোল – | অভিভূত, আত্মহারা, মুগ্ধ; |
দুস্থতার পাতক – | শারীরিক ও মানসিক অশান্তি দূর করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে; |
চাতক – | চাতক একপ্রকার পাখি। কবি কল্পনায় চাতক পাখি বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য পানি পান করে না। |
একটি কাফি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
পাঠ্য বইয়ে এই কবিতার একটি সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া আছে। এখানে সেই সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে। এই কবিতার জন্য এই সৃজনশীল প্রশ্ন টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিচে থেকে একটি কাফি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন দেখেনিন।
দিনের আলোক রেখা মিলায়াছে দূরে
নেমে আসে সন্ধ্যা ধীরে ধরনীর পুরে।
তিমির ফেলেছে ছায়া,
ঘিরে আসে কাল মায়া,
প্রান্তর-কানন-গিরি পল্লী বাটমাঠ
একাকার হয়ে আসে আকাশ বিরাট।
ক. কার কাছে সব মানুষ ঘাতক ?
খ. ‘জানো কি সেই গানের আমি চাতক ?’ একথাটি দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটির সাথে ‘একটি কাফি’ কবিতার সাদশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘একটি কাফি’ কবিতার মূলভাব প্রকাশে কতটুকু সফল? যুক্তিসহ প্রমাণ কর।
শেষ কথা
এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। আশা করছি এই পোস্ট থেকেএকটি কাফি কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই পোস্টের সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন গুলো শেয়ার করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়। আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আরও দেখুনঃ
PDF-পল্লিজননী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ
পল্লিজননী কবিতা-জসীম উদ্দীন। বাংলা ১ম পত্র PDF
সেই দিন এই মাঠ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ