বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব, কবিতার ব্যাখ্যা জেনেনিন পিডিএফ সহকারে

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সবারই বিদ্রোহী কবিতাটি জানার পাশা-পাশি এর মূলভাব ও ব্যাখ্যা গুলো জানতে হবে। এই কবিতার মূলভাব হচ্ছে কবি অত্যাচারী ও শাসকদের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। কাজী নজরুল ইসলামের সকল কবিতার মধ্যে এই কবিতা টি অধিক জনপ্রিয়। এই কবিতায় কবি অসহায় মানুষদের পাশা দাঁড়ানোর আস্থা দিয়েছে।

যেহেতু কবিতার মূলভাব টি সবার জানা জরুরি, তাই আপনাদের জন্য কবিতাটি বিশ্লেষণ করে দেওয়া হয়েছে। এই পোস্ট থেকে বিদ্রোহী কবিতার ব্যাখ্যা, মূলভাব, কবিতা পীডিএফ সংগ্রহ করতে পারবেন। তো আজকের পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং কবিতার মূলভাব গুলো জেনেনিন। তাহলে চলুন আজকের পোস্ট টি শুরু করা যাক।

বিদ্রোহী কবিতার  ব্যাখ্যা

কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি পূর্বের তুলনায় অনেক গুন বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বিদ্রোহী কবিতাটি পাঠকের মনে উৎসাহ, উদ্দীপনা জাগায়। বিদ্রোহী কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে এরকম আর কোনে প্রতিবাদমূখর কবিতা প্রকাশিত হয় নি। এই কবিতাটির মাধ্যমে কবি তৎকালীন শাসকের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তুলে ধরেছেন এবং ভারতবর্ষের মানুষদের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলেছেন।

এই কবিতায় তিনি নিজেকে বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে, পৌরাণিক বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে নিজেকে বীর বা সাহসী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।তিনি এই কবিতায় বার বার ‘আমি’ শব্দটি ব্যবহার করে প্রত্যেকের মধ্যে যে আমিত্বের শক্তি রয়েছে তা বের করার চেষ্টা করেছেন। এই কবিতাটি প্রকাশিত হলে তৎকালীন ইংরেজ শাসকের টনক নড়ে চড়ে বসে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ একজন এত প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারে তা তারা কল্পনাও করতে পারে নি।

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব

কবি ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় যে বিদ্রোেহ উপস্থিত করেছেন এবং ‘আমি’ বলে যে শক্তিকে মূর্ত করে তুলেছেন তার প্রকৃতি সম্বন্ধে বিরোধী ব্যাখ্যাই কবিতাটি সম্পর্কে এই মিশ্র প্রতিক্রিয়ার কারণ। সুতরাং প্রথমেই কবি ‘আমি’ বলতে কী বলতে চেয়েছেন তা বোঝবার চেষ্টা করা দরকার।

‘আমি’ বলতে প্রাথমিকভাবে কবি নিশ্চয়ই তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয়ই তুলে ধরতে চাইছেন, কিন্তু এই পরিচয়কে কবির প্রাত্যহিক জীবনের ধূলি-মলিন পরিচয় ভাবলে অবিচার করা হবে। প্রত্যেক আত্মসচেতন ব্যক্তির মধ্যে থকে দুটি সত্তা—একটি তার প্রতিদিনের পরিচয় বহন করে, আর একটি তার বিরাটত্বের পরিচয়বাহী। প্রাত্যহিক সত্তার থাকে অহংকার, বৃহত্তম সত্তার থাকে অহংবোধ । রবীন্দ্রনাথ এই দুটি সত্তাকেই বোঝাতেই চেয়েছেন ‘ক্ষুদ্র-আমি’ ও ‘বিরাট আমি’ বলে। দর্শনের ভাষায় বলা যায় এই ‘বিরাট-আমি’ মানুষের এক ধরনের ‘ego’ বা আত্মব্যক্তিত্ব । এই অহংবোধ মানুষের মধ্যে অকস্মাৎ জাগ্রত হয়ে তাকে এক বিরাট মানসিক শক্তি দান করে। রবীন্দ্রনাথ নিজেও একদিন এই শক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘প্রভাত সংগীতের’ কবিতাগুলি রচনা করেন। নজরুল ইসলাম মনের মধ্যে সেই শক্তির প্রেরণাতেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং নিজের সেই বৃহত্তর সত্তাকে প্রকাশ করেছেন ‘আমি’ হিসাবে।

কিন্তু ‘আমি’ বলতে শুধুই ব্যক্তিগতভাবে কবিকে মনে করা ঠিক হবে না—এ ‘আমি’ কোনো বিশেষ ‘আমি’ নয়, এর পরিচয় আরও বিস্তৃত। কবি এখানে নতুন যুগের মানুষের চিত্তজাগরণের অগ্রদূত, তিনি শুধু নিজের মুক্তিই অনুভব করেননি—তাঁর মনে প্রাণে জেগেছে নিপীড়িত মানুষদের মুক্তির স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ করার নেশা। কবি কেবলমাত্র নিজে স্বাধীন, একথা উচ্চারণ করেননি, তিনি সদ্য জাগ্রত মানুষের অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে তাদেরও চিত্তজাগরণের মন্ত্রপাঠ করিয়েছেন। কবিতার প্রথমেই তিনি ওই সব জাগ্রত চেতনায় মানুষকে আহ্বান করে বলেছেন—

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব

“বল বীর

চির উন্নত মম শির।”

সুতরাং এর পর ‘আমি’ হিসাবে যে কথা তিনি বলতে চেয়েছেন সে আমি কেবল কবি হতে পারেন না—সে আমি আসলে মুক্তি পাগল প্রতিটি মানুষ। কবির সংকল্প প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেকটি মানুষেরই সংকল্প। সুতরাং আমি বলতে শুধুমাত্র কবি নিজে নন, তিনি যাদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন তাদেরও বোঝানো হয়েছে।

কবি এখানে যে বিদ্রোহের কথা শুনিয়েছেন তার সঠিক প্রকৃতি বোঝা সহজ নয়, কারণ কবি সমগ্র কবিতাতেই উচ্ছ্বসিত। কখনো তিনি ধ্বংসের কথা বলেছেন, কখনো বলেছেন ত্রাস সঞ্চারের কথা, কখনো পৌরাণিক ঋষির সঙ্গে নিজের তুলনা করেছেন, কখনো বা অন্তরের অন্তঃস্থলে হয়েছেন রোমাতি। বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করলে বলা যায়, কবির বিদ্রোহ ঘন ঘন দিক পরিবর্তন করেছে–কখনো তিনি দৈব-প্রভাব ক্ষুণ্ণ করতে চেষ্টা করেন, কখনো তিনি পৃথিবীর সমস্ত নিয়মকানুন ধ্বংস করার চেষ্টা করেন, কখনো সৃষ্টিকেই করতে চান ধূলিসাৎ, আবার কখনো তাঁর বিদ্রোহ পৃথিবীর ক্ষত্রিয় জাতির প্রতি, রণদুর্মদ শক্তির প্রতি, যে-কোনো অত্যাচারী প্রভুত্বের প্রতি।

কবির এই বিদ্রোহকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে এক কথায় প্রকাশ করতে গেলে বলতে হবে, তাঁর এই বিদ্রোহ মানুষের যে কোনো ধরনের পরাধীনতার বিরুদ্ধে। মানুষকে সর্বক্ষেত্রে স্বাধীন করবার জন্যই তাঁর এই উদার আহ্বান। মানুষের পরাধীনতা শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়–নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সব ক্ষেত্রেই তার বশ্যতা এবং অবসাদ থাকতে পারে; সেই সর্বক্ষেত্রের অবসাদ ও অধীনতা দূর করার জন্যই কবি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তাই ক্ষত্রিয়কে নির্মূল করার কথাও যেমন কবি বলেন, তেমনি একথা বলতেও তাঁর বাঁধে না—

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব

“আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান্ বুকে এঁকে দেবো পদ–চিহ্ন।”

সুতরাং কবির এই বিদ্রোহকে অবসন্ন ও পরাধীন মানুষকে সর্বক্ষেত্রে উন্নত চিত্ত স্বাধীন করার এক বলিষ্ঠ আহ্বান মনে করা যেতে পারে।

কবির বিদ্রোহের প্রকৃতি সঠিকভাবে বুঝতে পারলে বিদ্রোহের লক্ষ্যবস্তু কে, সে কথা বোঝাও কঠিন হবে না। মানুষকে যেসব শক্তি অবদমিত করে রেখেছে, উৎপীড়নের চাপে তার স্বাধীন সত্তা বিকাশের পথ রুদ্ধ করেছে—তারই বিরুদ্ধে কবির বিদ্রোহ। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষের মানুষের স্বাধীনতা গুঁড়িয়ে দিয়েছে উৎপীড়নের চাপে, তাই কবি সগর্বে বলেছেন—

“যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন–রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,

অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ–ভূমে রণিবে না–

বিদ্রোহী রণ–ক্লস্ত

আমি সেই দিন হব শাস্ত।”

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব

কিন্তু মানুষের অধীনতা শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, ধর্মীয় অত্যাচারও মানুষের চিত্তকে অবসাদগ্রস্ত করে রাখে, তাই কবি দেবতার বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহের কথা ঘোষণা করেছেন, বলেছেন তিনি বিশ্ব-বিধাত্রীর বিদ্রোহী সূত-গোলক ভেদ করে তাঁর উন্নত শির মহাকাশের ওপরে গিয়ে পৌঁছবে।

এই পৃথিবীতে সামাজিক সংস্কারও পদে পদে মানুষকে শৃঙ্খলিত করছে। তাই কুসংস্কারের অন্ধতায় ভরা এই পৃথিবীর বিরুদ্ধেও তাঁর বিদ্রোহ। তিনি বলেন—

“আমি দাবানল দাহ, দাহন করিব বিশ্ব।”

অন্যত্র তিনি বলেছেন—

“আমি উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।”

বিদ্রোহী কবিতা পিডিএফ

নিচে আপনাদের জন্য বিদ্রোহী কবিতা পিডিএফ সহ দেওয়া আছে। আপনারা চাইলে কবিতাটি পড়েনিতে পারবেন। এবং প্রয়োজন হলে এটি পিদিএফ ফাইল সংগ্রহ করতে পারবেন। নিচে থেকে কবিতাটি দেখুন ব্যাখ্যা সহ।

বিদ্রোহী কবিতা
কাজী নজরুল ইসলাম।

বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি,
নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!

বল বীর –
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

বল বীর –
আমি চির-উন্নত শির!
আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!

সম্পূর্ণ কবিতা পড়ুন 

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব পিডিএফ সংগ্রহ

অনেকে বিদ্রোহী কবিতার ব্যাখ্যা মূলভাব পিডিএফ সংগ্রহ করতে চায়।  নিচের দিকে পিডিএফ সংগ্রহ করার জন্য একটি ফাইল দেওয়া আছে। এই ফাইলে ক্লিক করে আপনারা বিদ্রোহী কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করেনিন। আপনারা বিদ্রোহী কবিতা  ব্যাখ্যা  গুলোও  এই পোস্ট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। তার জন্য একটি পীডেফ ফাইল দেওয়া আছে।

পিডিএফ ফাইল 

শেষ কথা

আজকের মত এখানেই শেষ। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।  আশা করছি এই পোস্ট থেকে আপনারা  বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব  সংগ্রহ করতে পেরেছেন।এই পোস্ট টি ভালোলেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন।  এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। নিচে আপনাদের জন্য শিক্ষামূলক কিছু পোস্ট দেওয়া আছে দেখেনিতে পারেন। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।  আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।