কোষ বিভাজন কাকে বলে? কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ এবং গুরুত্ব

কোষ বিভাজন কাকে বলে

কোষ বিভাজন কাকে বলে? জীব দেহের গঠন ও কাজের এককে কোষ বলে। আর যে প্রক্রিয়ায় জীব কোষের বিভক্তির মাধ্যমে একটি থেকে দুটি বা চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে। কোষ এবং কোষ বিভাজনের সংজ্ঞার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। একটি জীব দেহে কেমন হবে বা কিভাবে হবে তা নির্ধারন হয় কোষ দিয়ে। আর কোষ  বার বার বিভাজিত হয়ে একাধিক কোষে পরিণীত হয়। এবং নতুন একটি জিবের সৃষ্টি করে।

কয়েক টি প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজিত হয়। কোষ বিভাজনে আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কোষ বিভাজন সাধারণত বৃহত্তর কোষ চক্রের অংশ হিসাবে ঘটে। কশ বিভাজন কিভাবে ঘটে এবং এর প্রকার ভেদ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কোষ বিভাজনের গুরুত্ব জানতে সম্পূর্ণ পোস্ট টি পড়ুন।

কোষ বিভাজন কাকে বলে?

প্রতিটি জীব দেহ কোষ দিয়ে তৈরি। সকল জীব কোষের সমন্বয়ে গঠিতও। একটি কোষ বার বার বিভাজিত হয় এবং নতুন একটি কোষ সৃষ্টি করে। জীব জগতের সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণী দেহে কোষ বিভাজন হয়ে থাকে। যে প্রক্রিয়ায় জীব কোষের বিভক্তির মাধ্যমে একটি থেকে দুটি বা চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে। অর্থাৎ যখন কোষ বিভাজন ঘটে, তখন একটি মাত্র কোষ বার বার বিভাজিত হয় এবং নতুন নতুন কোষের উকপত্তি ঘটায়। এই কোষ থেকে নতুন দেহের সৃষ্টি হয়।

কোষ বিভাজন কাকে বলে

কোষ বিভাজনের সাথে সাথে নিক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে। এই বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বিভাজন বলা হয়। আবার এই ক্যারিওকাইনেসিস কোষ বিভাজিত অপত্য কোষ তৈরি করে যাকে সাইটোকাইনেসিস বলে।  ১৮৮২ সালে সামুদ্রিক সালামান্ডার কোষে ১ম কোষ বিভাজন লক্ষ্য করেন Walter flemming।

কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ

এক কোষ বিভাজন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। যে বিভাজনের মাধ্যমে নতুন জীব বা নতুন দেহের সৃষ্টি করে। কোষ বিভাজনের সময় মাতৃ কোষ বিভাজিত হয় এবং অপত্য কোষের সৃষ্টি করে। যে প্রক্রিয়ায় মাতৃ কোষ বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে কোষ বিভাজন বলে। সাধারণত কোষ বিভাজন তিন প্রকার। কোষের প্রকার ভেদ যথাক্রমেঃ

  • মাইটোসিস।
  • মিয়োসিস।
  • অ্যামাইটোসিস।

নিচের অংশে মাইটোসিস, মিয়োসিস এবং অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে। এই তিন কোষ বিভাজন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে নিচের অংশ টুকু দেখুন।

মাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে

কোষ বিভাজনের একটি হচ্ছে মাইটোসিস। যে প্রক্রিয়ায় মাতৃ কোষের নিউক্লিয়াস একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে সমআকৃতি, সমগুন, সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ঠ দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে। মাইটোসিসে নিউক্লিয়াস একবার বিভাজিত হয় সমান ভাবে। নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোমও একবার ভিবাজিত হয়।

মাতৃ কোষ থেকে অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় মাইটোসিস কোষ বিভাজনে । মাইটোসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ থেকে সৃষ্ট অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও সাইটোপ্লাজম এর পরিমান একই থাকে। তাই মাইটোসিস কোষ বিভাজন কে সমবিভাজন বা সদৃশ বিভাজন  বলা হয়। প্রাণীর দেহকোষে এবং উদ্ভিদের বর্ধশিল অংশের ভাজক টিসু, যেমনঃ কান্ড, মুলের অগ্র ভাগ, মুকুল ইত্যাদিতে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়।

মাইটোসিস কোষ বিভাজনের পর্যায় সমূহ

মাইটোসিস কোষ বিভাজন একটি অবিচ্ছিন্ন বা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিভাজনের আগে কোষের নিউক্লিয়াসে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ হয়। এই অবস্থাকে ইন্টারফেজ পর্যায় বলে। মাইটোসিস কোষ বিভাজন ৫ ভাগে হয়ে থাকে। নিচ প্রক্রিয়া গুলো চিত্র সহকারে দেওয়া আছে দেখেনিন।

১ প্রোফেজ (Prophase)

এটি মাইটোসিসের প্রথম পর্যায়। এ পর্যায়ে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয় এবং ক্রোমোজোম থেকে পানি হ্রাস পেতে থাকে।  এর ফলে ক্রোমোজোমগুলো আস্তে আস্তে  সংকুচিত হয়ে মোটা এবং খাটো হতে শুরু করে। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে তখন এদের দেখা সম্ভব হয়। এ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত লম্বালম্বি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড উৎপন্ন করে। ক্রোমোজোমগুলো কুণ্ডলিত অবস্থায় থাকায় এদের সংখ্যা গণনা করা যায় না।

২ প্রো-মেটাফেজ(pro-metaphase)

এ পর্যায়ের একেবারে প্রথম দিকে উদ্ভিদ কোষে কতগুলো তন্তুময় কিন্তু প্রোটিনের সমন্বয়ে মেরু বি দুই মেরু বিশিষ্ট স্পিন্ডল যন্ত্রের সৃষ্টি হয়। স্পন্দন যন্ত্রের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানকে বিষুবীয় অঞ্চল বলা বলা হয়। এ পর্যায়ে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার স্পিন্ডল যন্ত্র কিছু নির্দিষ্ট তন্তুর সাথে সংযুক্ত হয়।

৩ মেটাফেজ (Metaphase)

এ পর্যায়ের প্রথমেই সব ক্রোমোজোম স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থান করে। ক্রোমোজোম গুলো সর্বাধিক মোতা এবং খাত হয়। প্রতি ক্রোমোজোমের ক্রমাটিড দুটির আকর্ষণ কমে যায় এবং বিকর্ষণ শুরু হয়।

৪ অ্যাানাফেজ (Anaphase)

প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ত্রমিয়ার দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ফলে ক্রমাটিড দুটি আলাদা হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রমাটিডকে অপত্য ক্রোমোজোম বলে এবং এতে একটি করে সেন্টিমিয়ার থাকে। অপত্য ক্রোমোজোম গুলো বিষুবীয় অঞ্চল থেকে বিপরীত মেরুর দিকে সরে যেতে থাকে।

৫ টেলোফেজ (Telophase)

এটি মাইটোসিসের শেষ পর্যায়। এখানে প্রোফেজের ঘটনা গুলো পর্যায়ক্রমে বিপরীত ভাবে ঘটে। ক্রোমোজোম গুলোতে পানি যোজন ঘটতে থাকে এবং সরু ও লম্বা আকার ধারণ করতে থাকে।

অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে

যে প্রক্রিয়ায় কোনো মাতৃকোষ তার নিউক্লিয়াসের সরাসরি বিভাজন ঘটিয়ে অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে। ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট অ্যামিবা এককোষী জীব দেহের এই প্রকার কোষ বিভাজনে পরিলক্ষিত হয়। অ্যামাইটোসিস যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম কোনো জটিল মাধ্যমিক পর্যায় ছাড়াই সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য(শিশু) কোষের সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে”। অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের জটিলতা ছাড়াই সরাসরি মাতৃকোষের বিভাজন ঘটে।

মিয়োসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে

যে বিভাজন পদ্ধতিতে কোন মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি পরপর দুবার বিভাজিত হয়ে মাতৃকোষের অর্ধসংখ্যক ক্রোমোজোম সমন্বিত চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে মিয়োসিস কোষ বিভাজন বলে। মিয়োসিস বিভাজনে নিউক্লিয়াস দুই বার বিভাজিত হয়। প্রথ বারে নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়, ২য় বারে তার প্রতিটি আবার দুটি কোষে বিভাজিত হয়। মিয়োসিস কোষ বিভাজনে একটি মাতৃ কোষ থেকে চারটি অপত্য কোষ পাওয়া যায়।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট থেকে কোষ বিভাজন কাকে বলে? কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ এবং গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। এইচ এস সি বিষয়ক আরও অনেক পোস্ট আমার ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। সেগুলোর পড়ার জন্য নিচে ঠিকানা দিয়েছি দেখেনিতে পারেন।  পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আরও দেখুনঃ

কোষ বিভাজন MCQ HSC প্রশ্ন উত্তর উদ্ভিদ বিদ্যা ২য় অধ্যায়

কোষ ও এর গঠন mcq প্রশ্ন ও উত্তর জীব বিজ্ঞান ১ম পত্র ১ম অধ্যায় এইচ স সি

জীববিজ্ঞান ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ এইচ এস সি

কোষ রসায়ন MCQ প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ উদ্ভিদ বিদ্যা ৩য় অধ্যায়