বাংলা কবিতা জুতা আবিষ্কার-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পিডিএফ

জুতা আবিষ্কার

এখানে জুতা আবিষ্কার কবিতাটি দেওয়া আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের‘কল্পনা’ কাব্যগ্রন্থ খেকে জুতা আবিস্কার কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। ধুলাবালী থেকে রাজার পা দুটিকে মুক্ত রাখার জন্য প্রসঙ্গই কবিতাটির মূল উপজীব্য। রাজা তাঁর মন্ত্রীদের রাজ্য থেকে ধুলাবালি দূর করার নির্দেশ দেন। মন্ত্রীগণ রাজ্যের ধুলাবালি ঝাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এতে রাজ্য পরিপূর্ণ হয়ে যায়। রাজার আদেশ মানতে গিয়ে রাজ্যের সভাসদ কোনো উপায় যেন খুঁজে আর পান না । অবশেষে রাজ্যেরই এক বয়স্ক চর্মকার নিজ বুদ্ধিতে রাজার পদযুগল চামড়া দিয়ে ঢেকে দেয়। এভাবে রাজার পা ধুলো স্পর্শ থেকে মুক্তি পায়।

জুতা আবিষ্কার

কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন। এই কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পোস্টের শেষের দিকে জুতা আবিষ্কার কবিতা pdf শেয়ার করা হয়েছে। নিচে থেকে সম্পূর্ণ কবিতাটি পড়েন নিন।

জুতা-আবিষ্কার
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কহিলা হবু, `শুন গো গোবুরায়,
কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র—
মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়
ধরণী-মাঝে চরণ-ফেলা মাত্র!

তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,
রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি।
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,

রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি!
শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার,
নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর।’

শুনিয়া গোবু ভাবিয়া হল খুন,
দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে গাত্রে।
পণ্ডিতের হইল মুখ চুন,
পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে।

রান্নাঘরে নাহিকো চড়ে হাঁড়ি,
কান্নাকাটি পড়িল বাড়িমধ্যে,
অশ্রুজলে ভাসায়ে পাকা দাড়ি
কহিলা গোবু হবুর পাদপদ্মে,
`

যদি না ধুলা লাগিবে তব পায়ে,
পায়ের ধুলা পাইব কী উপায়ে!’

শুনিয়া রাজা ভাবিল দুলি দুলি,
কহিল শেষে, `কথাটা বটে সত্য—
কিন্তু আগে বিদায় করো ধুলি,
ভাবিয়ো পরে পদধুলির তত্ত্ব।

ধুলা-অভাবে না পেলে পদধুলা
তোমরা সবে মাহিনা খাও মিথ্যে,
কেন বা তবে পুষিনু এতগুলা
উপাধি-ধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যে?

আগের কাজ আগে তো তুমি সারো,
পরের কথা ভাবিয়ো পরে আরো।’

আঁধার দেখে রাজার কথা শুনি,
যতনভরে আনিল তবে মন্ত্রী
যেখানে যত আছিল জ্ঞানীগুণী
দেশে বিদেশে যতেক ছিল যন্ত্রী।

বসিল সবে চশমা চোখে আঁটি,
ফুরায়ে গেল উনিশ পিপে নস্য।
অনেক ভেবে কহিল, `গেলে মাটি
ধরায় তবে কোথায় হবে শস্য?’

(কবিতা)

কহিল রাজা, `তাই যদি না হবে,
পণ্ডিতেরা রয়েছ কেন তবে?’

সকলে মিলি যুক্তি করি শেষে
কিনিল ঝাঁটা সাড়ে সতেরো লক্ষ,
ঝাঁটের চোটে পথের ধুলা এসে
ভরিয়ে দিল রাজার মুখ বক্ষ।

ধুলায় কেহ মেলিতে নারে চোখ, ধুলার মেঘে পড়িল ঢাকা সূর্য।
ধুলার বেগে কাশিয়া মরে লোক, ধুলার মাঝে নগর হল উহ্য।

কহিল রাজা, `করিতে ধুলা দূর,
জগত্‍‌ হল ধুলায় ভরপুর!’

তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিক চলে কিস্তি।

জলের জীব মরিল জল বিনা,
ডাঙার প্রাণী সাঁতার করে চেষ্টা—
পাঁকের তলে মজিল বেচা-কিনা,
সর্দিজ্বরে উজাড় হল দেশটা।

কহিল রাজা, `এমনি সব গাধা
ধুলারে মারি করিয়া দিল কাদা!’

আবার সবে ডাকিল পরামর্শে;
বসিল পুন যতেক গুণবন্ত—
ঘুরিয়া মাথা হেরিল চোখে সর্ষে,
ধুলার হায় নাহিক পায় অন্ত।

কহিল, `মহী মাদুর দিয়ে ঢাকো,
ফরাশ পাতি করিব ধুলা বন্ধ।’
কহিল কেহ, `রাজারে ঘরে রাখো,
কোথাও যেন থাকে না কোনো রন্ধ্র।

ধুলার মাঝে না যদি দেন পা
তা হলে পায়ে ধুলা তো লাগে না।’

কহিল রাজা, `সে কথা বড়ো খাঁটি,
কিন্তু মোর হতেছে মনে সন্ধ,
মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি
দিবসরাতি রহিলে আমি বন্ধ।’

কহিল সবে, `চামারে তবে ডাকি
চর্ম দিয়া মুড়িয়া দাও পৃথ্বী।
ধূলির মহী ঝুলির মাঝে ঢাকি
মহীপতির রহিবে মহাকীর্তি।’

কহিল সবে, `হবে সে অবহেলে,
যোগ্যমতো চামার যদি মেলে।’

রাজার চর ধাইল হেথা হোথা,
ছুটিল সবে ছাড়িয়া সব কর্ম।
যোগ্যমতো চামার নাহি কোথা,
না মিলে তত উচিত-মতো চর্ম।

তখন ধীরে চামার-কুলপতি
কহিল এসে ঈষত্‍‌ হেসে বৃদ্ধ,
`বলিতে পারি করিলে অনুমতি,
সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ।

নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’

কহিল রাজা, `এত কি হবে সিধে,
ভাবিয়া ম’ল সকল দেশ-শুদ্ধ!’
মন্ত্রী কহে, `বেটারে শূল বিঁধে
কারার মাঝে করিয়া রাখো রুদ্ধ।’

রাজার পদ চর্ম-আবরণে
ঢাকিল বুড়া বসিয়া পদোপান্তে।
মন্ত্রী কহে, `আমারো ছিল মনে
কেমনে বেটা পেরেছে সেটা জানতে।’

সেদিন হতে চলিল জুতা পরা—
বাঁচিল গোবু, রক্ষা পেল ধরা।

লেখক পরিচিতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ সালে (৭ই মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমী প্রভৃতি শিক্ষালয়ের লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হলেও তিনি বেশিদিন স্কুলের শাসনে থাকতে পারেননি। এমনকি সতর বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথকে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হলেও দেড়বছর পরে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে তিনি দেশে ফিরে আসেন। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি লাভ করেননি, কিন্তু সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণা এক বিস্ময়ের বস্তু। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তি। বাল্যেই তাঁর কবিপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। মাত্র পনের বছর বয়সে তাঁর বনফুল কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বস্তুত তাঁর একক সাধনায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সকল শাখায় দ্রুত উন্নতি লাভ করে এবং বিশ্বদরবারে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুরকার, নাট্য প্রযোজক ও অভিনেতা। কাব্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখাই তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ। তাঁর অজস্র রচনার মধ্যে ‘মানসী’, ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘কল্পনা’, ‘ক্ষণিকা’, ‘বলাকা’, ‘পুনশ্চ’, ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘যোগাযোগ’, ‘শেষের কবিতা’, ‘বিসর্জন’, ‘ডাকঘর’, ‘রক্তকরবী’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ সালে (৭ই আগস্ট ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জুতা আবিষ্কার কবিতার শব্দার্থ

আপনাদের জন্য কবিতা থেকে কিছু শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করে দিয়েছি। এই শব্দ গুলোর বাংলা অর্থ বেশ জটিল। জটিল শব্দের অর্থ না বুঝতে পারলে, নিচে থেকে বুঝেনিন।

  • চরণ – পা;
  • ভিস্তি – পনি বহনের জন্য চর্মনির্মিত এক প্রকার থলি;
  • পাঁক – কাদা, কর্দম;
  • কিস্তি – নৌকা বা জাহাজ, জলযান;
  • প্রতিকার – প্রতিবিধান, সমাধান;
  • মাহিনা – পারিশ্রমিক,বেতন;
  • গুণবন্ত – গুণবান,গুণী;
  • মহী – পৃথিবী, ধরণী;
  • চামার – চর্মকার, মুচি;
  • যোগ্যমতো – উপযুক্ত;
  • কুলপতি – প্রধান, কুলশ্রেষ্ঠ।
  • ফরাশ – মেঝে বা তক্তপোষে পাতবার জন্য কার্পেট বা বিছানা, মাদুর;
  • রন্ধ্র – ছিদ্র, ফাঁকা;
  • পুষিনু পিপে – ঢাক বা ঢোলের আকৃতি বিশিষ্ট কাঠনির্মিত পাত্র;

জুতা আবিষ্কার কবিতার মূলভাব

ধুলাবালি থেকে নিজের পা দুটি মুক্ত রাখার জন্য রাজা তার মন্ত্রীদের ডেকে রাজ্য থেকে ধুলাবালি দূর করার নির্দেশ দেন। এই সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতে ভাবতে খাওয়া-দাওয়া, ঘুম হারাম হয়ে গেল মন্ত্রী ও পণ্ডিতদের। তাদের পরিবারে কান্নাকাটির রােল পড়ে গেল। রাজা তাদের তােষামুদি কথা শুনতে নারাজ। আদেশ অনুযায়ী কাজ তার চাই। রাজ্যের জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শে সাড়ে সতেরাে লক্ষ ঝাঁটার ঝাটের ফলে রাজ্য ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে এবং সর্দি-কাশিতে মরার উপক্রম হলাে লােকজন।

এই ধুলা দূর করতে ভিস্তি ভিস্তি পানি ঢালার ফলে পুকুর, নদী শুকিয়ে গেল আর সর্দি-জ্বরে উজাড় হলাে দেশটা । আবার বসল পরামর্শ সভা। রাজ্য মাদুর দিয়ে ঢেকে দিয়ে রাজাকে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত হলাে। রাজা তাতে বাদ সাধলেন। তখন যােগ্যমতাে চামার খুঁজে আনতে লােকজন ছােটাছুটি শুরু করল। বৃদ্ধ চর্মকার রাজার চরণ দুটি চামড়া দিয়ে ঢাকার পরামর্শ দিলেন এবং বৃদ্ধ সেইমতাে রাজার পদযুগল চর্ম আবরণ দিয়ে ঢেকে দিলেন। ধুলাবালি থেকে রাজার পা দুটি মুক্ত হলাে। এভাবেই জুতার আবিষ্কার হলাে।

জুতা আবিষ্কার কবিতার ব্যাখ্যা

মানুষের মনে হঠাৎ করেই কোনাে একটি চিন্তার উদয় হয়। মানুষ তা নিয়ে রাত-দিন ভাবে। রাজা হবুর মনেও তেমন একটি চিন্তার উদয় হয়। তিনি তার মন্ত্রী গােবুরায়কে ডেকে সে কথা বলেন। তিনি মন্ত্রীকে বলেন, রাজসভার সবাই শুধু শুধু বেতন নেয়, কোনাে কাজের দিকে তাদের নজর নেই। রাজা সারা রাত ধরে ভেবেছেন যদি সবাই রাজার কাজের দিকে দৃষ্টি দিত তাহলে ধরণির মাঝে পা ফেলা মাত্র তার পায়ে মলিন ধুলা লাগত না।

রাজা হবু তার রাজ্যের মালিক। আমার মাটি বলে তিনি তার রাজ্যের মাটিকে বুঝিয়েছেন। ধরণির মাঝে রাজা পা দিলে এ মাটিতে তার পা নােংরা হয় । রাজা এ অনাসৃষ্টির প্রতিকার করতে বলেন মন্ত্রীকে। যদি তা মন্ত্রী বা সভাসদরা করতে ব্যর্থ হন তবে রাজা কাউকেই ক্ষমা করবেন না, সবাইকে শাস্তি দেবেন।

পায়ে ধুলা যাতে না লাগে মন্ত্রীকে সেই ব্যবস্থা করতে বলেছেন রাজা হবু। যদি মন্ত্রী বা সভাসদরা এর প্রতিকার করতে না পারেন তবে রাজা সবাইকে শাস্তি দেবেন বলে ঘােষণা দেন। এই কথা শুনে মন্ত্রী গােবুরায় ভেবে ভেবে খুন হন। ভীষণ ভয়ে তার গা থেকে ঘাম ঝরে পড়ে। রাজার আদেশ শােনার পর রাজ্যের পণ্ডিতের মুখ ভয়ে চুন হয়ে যায়। রাজ্যের পাত্রদের অর্থাৎ সভাসদদের রাতে ঘুম আসে না ভয়ে।

কবিতার ব্যাখ্যা

রাজা হবুর আদেশ শুনে রান্নাঘরে রান্না বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ির মধ্যে স্ত্রী-কন্যারা কান্নাকাটি শুরু করে। মন্ত্রী গােবুর পাকা দাড়ি চোখের জলে ভাসে। তিনি কেঁদে কেঁদে রাজার পায়ের কাছে বসে বলেন, রাজা মশাই, আপনার পায়ে যদি ধুলা না লাগে তবে আমরা আপনার পায়ের ধুলা পাব কীভাবে?  মন্ত্রীর কথা শুনে রাজা দুলে দুলে বলেন, কথাটা অবশ্য সত্য। কিন্তু আগে ধুলা বিদায় করতে হবে। পদধূলির তত্ত্ব পরে ভেবে দেখা যাবে।

রাজা মন্ত্রীকে বলেন, ধুলার অভাবে যদি পদধুলা না পাওয়া যায় তবে তারা কাজের কাজ না করে অযথা বেতন নেয়। এর যদি প্রতিকার রাজ্যের উপাধি-ধরা বৈজ্ঞানিকরা না করতে পারে তবে তিনি এত দিন কেন তাদের পেছনে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করলেন? মন্ত্রীকে তিনি বলেন, আগের কাজ আগে করাে। পরের কথা পরে ভেবাে।

রাজার কথা শুনে মন্ত্রী চারদিকে আঁধার দেখতে লাগলেন। মন্ত্রী তাই যত্ন করে দেশ-বিদেশে যেখানে যত জ্ঞানী-গুণী ও যন্ত্রী ছিল তাদের খুঁজে আনেন, যাতে রাজার আদেশ পূরণ।

রাজার আদেশ পালন করতে মন্ত্রী দেশ-বিদেশ থেকে জ্ঞানীগুণী-যন্ত্রীদের নিয়ে আসেন। তারা চোখে চশমা এঁটে আলোচনায় বসেন। আলােচনা করতে করতে উনিশ পিপে নস্যি ফুরিয়ে যায়। অনেক ভেবে তারা জানতে চান, যদি রাজ্য থেকে ধুলা-মাটি বিদায় করা হয় তবে কোথায় শস্য হবে? উত্তরে রাজা বলেন, যদি মাটির অভাবে শস্য না হয় তাহলে পণ্ডিতেরা রয়েছে কেন? তারা এর প্রতিকার করবে।

কবিতার ব্যাখ্যা

জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিতরা মিলে শেষ পর্যন্ত ধুলামুক্ত করতে যুক্তি  করলেন ঝাঁট দেওয়া হবে রাজ্য। এ জন্য কেনা হলাে সাড়ে সতেরাে লক্ষ ঝাটা। সবাই একসঙ্গে ঝাট দেওয়া শুরু করলে  ধুলা এসে রাজার মুখ, বুক ভরিয়ে দিল। ধুলা এমনভাবে  চারদিকে উড়তে লাগল যে কেউ চোখ মেলে তাকাতে পারল না। ধুলার মেঘের আড়ালে আকাশের সূর্য টাকা পড়ল। লােকে  কাশতে কাশতে অস্থির হয়ে উঠল । অবস্থা দেখে রাজা বলেন,  ধুলা দূর করতে গিয়ে জগৎ হলাে ধুলায় ভরপুর।

ধুলা তাড়াতে গিয়ে যখন সারা রাজ্য ধুলায় পরিপূর্ণ তখন একুশ লাখ ভিস্তি কাখে পুকুর ও নদী থেকে জল নিয়ে আসে ধুলা দূর করতে। এতে সব জল শেষ হয়ে যায়। জলের জীব জল ছাড়া মরে যায়। চারদিকে শুধু পাক আর পাঁক। সর্দি জ্বরে সারা দেশ উজাড় হয়। রাজা বলেন, সবাই এমনি গাধা যে ধুলা দূর করতে গিয়ে সারা দেশ কাদায় পরিণত করল ।

আবার সবাই পরামর্শ করতে বসলেন। রাজ্যের যত জ্ঞানী-গুণীর মাথা ঘুরল, চোখে তারা শর্ষে অর্থাৎ অন্ধকার দেখলেন। কিন্তু ধুলার কী হবে তার কোনাে সমাধান কেউ করতে পারেন না। একজন বলেন পৃথিবী মাদুর দিয়ে ঢাকো, ফরাস পেতে ধুলা বন্ধ করব।

কবিতার ব্যাখ্যা

কেউ কেউ বললেন, রাজাকে ঘরের ভেতর রাখা হােক। সে ঘরের কোথাও কোনাে ছিদ্র যেন না থাকে। রাজা যদি ধুলায় পা না দেন, সব সময় ঘরে থাকেন তবে তার পায়ে ধুলা লাগবে না। রাজা সে কথা শুনে বলেন, এ কথা খাটি, কিন্তু আমার মনে সন্দেহ হচ্ছে মাটির ভয়ে আমি যদি ঘরের বাইরে আসি তবে রাজ্য হবে মাটি। কারণ তিনি রাত-দিন ঘরের মধ্যে বন্ধ থাকলে রাজ্যের কাজ পরিচালনা করবেন কে?

সবাই তখন বলেন, তাহলে চামারকে ডাকি। সে চামড়া দিয়ে সমস্ত পৃথিবী মুড়িয়ে দেবে। ধুলার পৃথিবী চামড়ার ঝুলির মধ্যে ঢেকে রাখি তাহলে ধুলাও দূর হবে আর মহারাজার মহাকীর্তিও রবে। সবাই বললেন, তা হতে পারবে তখন, যদি যােগ্য চামার খুঁজে পাওয়া যায়।

কবিতার ব্যাখ্যা

রাজার চর এখানে সেখানে যায় চামড়া ও চামারের খোঁজে। কিন্তু যােগ্য চামার কোথাও পায় না। এ কাজের জন্য প্রয়ােজনীয় চামড়াও কোথাও মেলে না।যখন চামার আর চামড়ার জন্য চর চারদিকে ছােটাছুটি করছে তখন চামার কুলপতি আসেন। বৃদ্ধ সামান্য হেসে রাজার কাছে কিছু বলার অনুমতি প্রার্থনা করেন। বলেন, সহজে সমাধান হবে যদি রাজা নিজের দুটি চরণ ঢেকে রাখেন। তাহলে আর ঢাকতে হবে না পৃথিবী । রাজা বলেন, এত কি সহজ, অথচ ভেবে মরল দেশের সব মানুষ।

চামার কুলপতির কথা শুনে মন্ত্রী বলেন, বেটাকে শূলে বিধে কারাগারে রুদ্ধ করে রাখাে। বুড়াে চামার তখন রাজার পায়ের কাছে বসে রাজার পা চামড়ার আবরণ দিয়ে ঢেকে দিলেন। মন্ত্রী বললেন, চামারের বুদ্ধিটা তারও মনে ছিল, কেমন করে বেটা চামার তা জানতে পেরেছে। সেদিন থেকে শুরু হলো জুতা পরা । বাচলেন গােবুরায়, রক্ষা পেল পৃথিবী।

শেষ কথা

আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভাললেগেছে। এই পোস্ট টি ভালোলেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন। আশা করছি এই পোস্ট থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জুতা আবিষ্কার বাংলা কবিতাটি সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।   ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

প্রাণ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর বাংলা ১ম পত্র এস এস সি

প্রাণ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এস এস সি

প্রাণ কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১ম পত্র পিডিএফ

জীবন সঙ্গীত কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-PDF

কপোতাক্ষ নদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর Pdf File সংগ্রহ