এই পোস্টে কপোতাক্ষ নদ কবিতা। কপোতাক্ষ নদ’ এর লেখক কে মাইকেল মধুসূদন দত্ত. বাংলার বুকে কপোতাক্ষ একটি সুবিশাল নদী। এই কবিতায় কবি এই নদীকে ভালোবাসেন। তার শৈশবের স্মৃতিতে এই নদী এক সম্রাজ্য। কবি এই নদিতে প্রাণ খুঁজে পান। নদীর প্রকৃতির রূপে তিনি মুগ্ধ। তার এই কবি টায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলার কপোতাক্ষ নদ কে বিশেষ ভালো উপস্থাপন করেছে। তার লেখা এই কবিতাটি এই পোস্টে সম্পূর্ণ দেওয়া আছে। নিচে থেকে কপোতাক্ষ নদ কবিতা টি পিডিএফ সংগ্রহ করুন।
কপোতাক্ষ নদ
কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি কবির চতুর্দশ কবিতাবলি থেকে গৃহীত হয়েছে। এই কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। কবি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মধুসূদন এই নদের তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। যখন তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন, তখন জন্মভূমির শৈশব, কৈশোরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা। দূরে বসেও তিনি যেন কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পান।
কত দেশে কত নদ-নদী তিনি দেখেছেন, কিন্তু জন্মভূমির এই নদ যেন মায়ের স্নেহডোরে তাঁকে বেঁধেছে, কিছুতেই তিনি তাকে ভুলতে পারেন না। কবির মনে সন্দেহ জাগে, আর কি তিনি এই নদের দেখা পাবেন ! নদের কাছে তাঁর সবিনয় মিনতি-বন্ধুভাবে তাকে তিনি যেমন স্নেহডোরে স্মরণ করেন, কপোতাক্ষও যেন একই প্রেমভাবে তাঁকে স্বস্নেহে স্মরণ করে। কপোতাক্ষ নদ যেন তার স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীদের নিকট ব্যক্ত করেন-যিনি প্রবাসজীবনেও গানে, কবিতায় শৈশবে-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত নদীর কথা লিখেছেন।
কপোতাক্ষ নদ কবিতা
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে !
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;
সতত যেমতি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া-মন্ত্রধক্ষনি) তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে !
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে ?
দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা ? – যত দিন যাবে,
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি-রূপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে
বঙ্গজ জনের কানে, সখে, সখা-রীতে
নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব
কপােতাক্ষ নদ’ চতুর্দশপদী কবিতায় কবি যশােরের সাগরদাড়ির পাশ দিয়ে কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে যাওয়া কপােতাক্ষের প্রতি তাঁর গভীর প্রেমবােধের পরিচয় দিয়েছেন। বিদেশি সাহিত্যে আত্মপ্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ কবি ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে, স্বজনহীন জীবনযাত্রার মাঝে শৈশবকৈশােরের স্মৃতিবিজড়িত মাতৃরূপ কপােতাক্ষ নদকে স্মরণ করেছেন। তিনি সেখানে এ নদের মায়ামন্ত্র ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। কবি শুনতে পান কপােতাক্ষের কলকল ধ্বনি। তখন জন্মভূমির শৈশব-কৈশােরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তার মনে জাগিয়েছে কাতরতা।
কবির মন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কপােতাক্ষের তীরে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। কবি বহু দেশ ভ্রমণ করে, বহু নদ-নদীর জলে নৌকা ভাসিয়ে, জলে পিপাসা মিটিয়েও দুগ্ধ-স্রোতােরূপী কপােতাক্ষের জলের সেই স্বাদ পাননি। কারণ জন্মভূমির এই নদ যেন মায়ের স্নেহভােরে তাকে বেঁধেছে। কিছুতেই তিনি তাকে ভুলতে পারেন না। তার মনে সন্দেহ জাগে। এই নদের দেখা কি তিনি আর পাবেন? তাই তিনি প্রিয় নদের কাছে মিনতি করে বলেন- যদি কোনােদিন তিনি কপােতাক্ষের তীরে আর ফিরে যেতে নাও পারেন।
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা
সতত, হে নদ, তুমি পড় মাের মনে!
সতত তােমার কথা ভাবি এ বিরলে;
ব্যাখাঃ কপােতাক্ষ নদ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাগরদাড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ। শৈশবের নানা স্মৃতি কবির মনে ভিড় করে। ফলে কবি যখন একান্ত নিরিবিলিতে থাকেন তখন এই নদের কথা ভাবেন। কপােতাক্ষের কথা সবসময় তার মনে পড়ে। প্রবাসে রূঢ় বাস্তবতায় কবি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন। কপােতাক্ষের স্মৃতি তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সতত (যেমতি লােক নিশার স্বপনে
শশানে মায়া-মন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!
ব্যাখাঃ রাতে মানুষ যেমন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে, মায়ামন্ত্র ধ্বনিতে আবেগে আপ্লুত হয়, কবিও অনুরূপভাবে কপােতাক্ষকে নিয়ে স্বপ্নে বিভাের হন। স্বপ্নের মতাে কপােতাক্ষের সব সুখ-স্মৃতি তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তিনি নদের কলকল শব্দে বয়ে চলা অনুভব করেন। তিনি যেন স্বপ্নের ঘােরে কপােতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পান।
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
ব্যাখাঃ প্রবাস জীবনে কবি বহু নদ-নদী দেখেছেন, কিন্তু আর কোনাে নদীর জল কপােতাক্ষের মতাে তৃপ্তি দিতে পারেনি। কারণ শৈশব- কৈশােরে কপােতাক্ষই ছিল তাঁর প্রাণসখা। এই নদের সৌন্দর্য অনুভব করে এর জলেই তার স্নেহের তৃষ্ণা মিটেছে। বিদেশের কোনাে নদ-নদীর জলে কিংবা সৌন্দর্যে কবির সে তৃষ্ণা মেটেনি।
দুগ্ধ-সােতােরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।
ব্যাখাঃ প্রবাস জীবনে কবি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন তাঁর জন্মভূমির রূপসৌন্দর্যকে। কবির স্বদেশানুরাগটি মূলত কপােতাক্ষ নদকে কেন্দ্র করে ফুটে উঠেছে। তিনি জন্মভূমির এই নদীর জলকে মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। প্রবাসজীবনের স্নেহহীন দুঃসময় কবির মনে যখন গভীর বেদনা সৃষ্টি করেছে, কপােতাক্ষ নদের টলটলে স্বচ্ছ স্রোতধারা তখন কবির কল্পনায় ভূমিমাতার দুধের ফোয়ারা হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।
আর কি হে হবে দেখা?- যত দিন যাবে,
ব্যাখাঃ কবি স্বদেশ ছেড়ে প্রবাসে গিয়ে শৈশব-স্মৃতিতে কাতর হয়ে পড়েছেন। বাস্তবতায় ফিরে এসে তার মনে জেগেছে নানা সন্দেহ, সংশয়। হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা কপােতাক্ষ নদের সঙ্গে পুনরায় তার দেখা হওয়া নিয়েও সংশয়ের শেষ নেই। তিনি কি আবার সেই শৈশব-কৈশােরের স্মৃতি জড়ানাে কপােতাক্ষ নদকে দেখতে পাবেন?
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি-রূপ কর তুমি; এ মিনতি, গাবে
বঙ্গজ জনের কানে, সখে, সখা-রীতে
নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে
ব্যাখাঃ কবি জানেন যে তাঁর শৈশবের নদটি আগের মতােই সাগরকে বারিরূপ (জল) কর দিয়ে যাচ্ছে। প্রজা যেমন রাজাকে কর বা রাজস্ব দেয়, তেমনি কপােতাক্ষ নদও সাগরকে জলরূপ কর বা রাজস্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের কানে কানে কররূপ সেই স্রোতধারা কলকল ধ্বনিতে সাগরের বুকে ছুটে চলছে। কপােতাক্ষ নদ যেন কবিকে স্নেহাদরে বন্ধু ভাবে। প্রেমভাবে যেন তাকে স্মরণ করে। কারণ কবি তাকে গভীর আবেগ, ভালােবাসায় স্মরণ করেছেন।
শেষ কথা
আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভাললেগেছে। এই পোস্ট টি ভালোলেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন। আশা করছি এই পোস্ট থেকে কপোতাক্ষ নদ কবিতা সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। আজকের মতো এখানেই শেষ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আরও দেখুনঃ
বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর Pdf File সংগ্রহ
বঙ্গবাণী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
বাংলা গল্প রক্তে ভেজা একুশ-সেলিনা হোসেন। বাংলা ১ম পত্র এস এস সি
বনমানুষ আবু ইসহাক বাংলা গল্প নবম-দশম শ্রেণি- পিডিএফ