বৃষ্টি কবিতা-ফররুখ আহমদ। বাংলা ১ম পত্র নবম-দশম শ্রেণি

বৃষ্টি কবিতা

প্রকৃতিতে বর্ষা আসে প্রাণস্পন্দন নিয়ে। আর বৃষ্টিই বর্ষার প্রাণ। এ সময় নদীর দুধারে প্লাবন দেখা দেয়, ফলে পলিমাটির গৌরবে ফসল ভালো হয়। বৃষ্টির সময় আকাশের সর্বত্র মেঘের খেলা দেখা যায়, বর্ষার ফুল ফুটে সর্বত্র মোহিত হয়, রুক্ষ মাটি বৃষ্টিতে প্রাণ জুড়ায়। বৃষ্টিকালে সংবেদনশীল মানুষও রসসিক্ত হয়ে ওঠে। তার মনে পড়ে সুখময় অতীত, পুরোনো স্মৃতি, আর সে ভালোলাগার আলপনা আঁকে মনে মনে। এ বৃষ্টি কখনো বিষন্ন ও করে মন, একাকী জীবনে বাড়ায় বিরহ। নিচে থেকে বৃষ্টি কবিতা টি পড়ে নিন অথবা পিডিএফ সংগ্রহ করুন।

বৃষ্টি কবিতা

এখানে বৃষ্টি কবিতা টি দেওয়া আছে। সম্পূর্ণ কবিতা এই অংশ থেকে পড়তে পারবেন। এই কবটা টি ফররুখ আহমদ লিখেছেন। এই কবিতা টি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা পদ্য অংশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কবিতা টি নিচে থেকে পড়ুন।

বৃষ্টি এলো … বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি ! – পদ্মা মেঘনার
দুপাশে আবাদী গ্রামে, বৃষ্টি এলো পুবের হাওয়ায়,
বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়;
বিদ্যুৎ-রূপসী পরি মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার।

দিকদিগন্তের পথে অপরূপ আভা দেখে তার
বর্ষণমুখর দিনে অরণ্যের কেয়া শিহরায়,
রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ তার স্পর্শ পেতে চায়,
নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার।

রুগ্ণ বৃদ্ধ ভিখারীর রগ – ওঠা হাতের মতন
রুক্ষ মাঠ অসমান শোনে সেই বর্ষণের সুর,
তৃষিত বনের সাথে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন,

পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর,
যেখানে বিস্মৃত দিন পড়ে আছে নিঃসঙ্গ নির্জন
সেখানে বর্ষার মেঘ জাগে আজ বিষন্ন মেদুর।

বৃষ্টি কবিতার কবি পরিচিতি

ফররুখ আহমদ ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জুন মাগুরা জেলার মাঝআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খান সাহেবের সৈয়দ হাতেম আলী ।ফররুখ আহমদ কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আই.এ. পাস করেন এবং কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শনে অনার্স ও সেন্টপল কলেজে ইংরেজীতে অনার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কর্মজীবনে তিনি নানা পদে নিয়োজিত হন এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারে স্টাফ রাইটার পদে নিয়োজিত ছিলেন। ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্য তাঁকে কাব্যসৃষ্টিতে প্রেরণা যুগিয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম্ মুনীরা, নৌফেল ও হাতেম, মুহূর্তের কবিতা, পাখির বাসা, হাতেমতায়ী, নতুন লেখা, হরফের ছড়া, ছড়ার আসর ইত্যাদি। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরুস্কার,আদমজী পুরস্কার,একুশে পদকসহ (মরণোত্তর) অনেক ডুরুস্কারে ভূষিত হন । ১৯৭৪ সালের ১৯শে অক্টোবর তিনি পরলোকগমন করেন।

বৃষ্টি কবিতার শব্দার্থ ও টীকা

এই কবিতায় অনেক গুলো জটিল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকেই কবিতার শব্দের অর্থ গুলো বুঝতে পারেননি। তাদের জন্য এখানে বৃষ্টি কবিতার শব্দার্থ গুলো দেওয়া হয়েছে। যেগুলো কঠিন শব্দ ছিলো, সেই শব্দের অর্থ নিচের অংশ থেকে জেনে নিন।

বিদ্যুৎ রূপসী পরী- বিদ্যুৎ চমকানোকে লোকজ ধারণা অনুযায়ী সুন্দরী পরির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যে মেঘে মেঘে ঘুরে বেড়ায়;
সওয়ার – আরোহী;
রুগ্‌ণ বৃদ্ধ ভিখারীর … তৃষ্ণাতপ্ত মন – দীর্ঘ বর্ষণহীন দিনে মাঠঘাট শুকিয়ে যে রুক্ষ্ মূর্তি ধারণ করেছে কবি তাকে রুগ্ণ বৃদ্ধ ভিখারীর রগ ওঠা হাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখন বর্ষণের শুরুতে তৃষ্ণা কাতর মাঠ-ঘাট ও বনে দেখা দিয়েছে প্রাণের জোয়ার;
তৃষ্ণাতপ্ত – পিপাসায় কাতর;
বিষন্ন মেদুর – বৃষ্টিবিহীন প্রকৃতির রুক্ষ্মতা বৃষ্টির আগমনে দূরীভূত হয়েছে। প্রকৃতি এখন স্নিগ্ধকোমল আকার প্রাপ্ত হয়ে  চারিদিকে করে তুলেছে প্রাণোচ্ছ্বল।

বৃষ্টি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

পাঠ্য বইয়ে এই কবিতা থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া আছে। কিন্তু উত্তর টি দেওয়া নেই। গাইড বই থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। কিন্তু যাদের গাইড নেই, তারা কিভাবে এই উত্তর টি পাবেন। তাদের জন্য এখানে অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর টি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্নঃ 

কেউবা রঙিন কাঁথায় মেলিয়া বুকের স্বপনখানি,
তারে ভাষা দেয় দীঘল সূতার মায়াবী আখর টানি।
আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন ছলছল জলধারে
বেণু-বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।

ক. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় কোন কোন নদীর কথা উলে−খ রয়েছে?
খ. রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায় কেন ?
গ. ‘বেণু-বনে বায়ু নীড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।’ – উদ্দীপকের এ বক্তব্যের সাথে ‘বৃষ্টি’ কবিতার সাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধরো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বৃষ্টি’ কবিতার একটা বিশেষ ভাব প্রকাশ করে মাত্র, সমগ্র ভাব নয় – তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ 

ক উত্তরঃ বৃষ্টি’ কবিতায় পদ্মা ও মেঘনা নদীর কথা উল্লেখ রয়েছে।

খ উত্তরঃ প্রচণ্ড খরা থেকে বাঁচতে আর ফসলের সম্ভারে ভরিয়ে দিতে রৌদ্রদ্বগ্ধ ধানখেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায়।

ভীষণ রোদে মাঠ, ঘাট, ধানখেত যখন শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় তখন বৃষ্টি আসে আশীর্বাদ হয়ে। মাঠ-ঘাট-ধানখেত শুধু নয়, বৃষ্টির পরশে মানুষের মনও রসসিক্ত হয়ে ওঠে। রুক্ষ প্রকৃতিতে বৃষ্টি আসে প্রাণের শিহরণ নিয়ে। তীব্র রোদে ধানখেত হয়ে ওঠে রুক্ষ ও কঠিন। বৃষ্টির ছোঁয়া পেলে এই র্ক্ষু প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার হবে তাই রৌদ্রদগ্ধ ধানখেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায়।

গ  উত্তরঃ

বেণু-বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে’ উদ্দীপকের এ বক্তব্যের সাথে ‘বৃষ্টি’ কবিতায় উল্লিখিত নিঃসঙ্গ নির্জন জীবনের বিরহী চেতনার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর বর্ষার প্রবল বৃষ্টি প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে তোলে। বৃষ্টির হিমেল পরশে বন-বনানীর মতো মানুষের মনও সংবেদনশীল ও রসসিক্ত হয়ে ওঠে। মনে জেগে ওঠে সুখময় অতীতের নানা স্মৃতি। ভালো লাগা ভালোবাসার আলপনা মনে মনে আঁকতে থাকে। আবার নিঃসঙ্গ নির্জন মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে বিরহের সুর।

উদ্দীপকে বর্ষার দিনের একটি রূপচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। বর্ষার দিনে পল্লিবধূরা নিবিষ্ট মনে নকশিকাঁথায় ফুল তোলে। বাইরে অঝোর ধারায় চলে বর্ষণ। গৃহবধূরা যেন সুতার টানে টানে মনের স্বপ্ন বুনতে থাকে। এমন দিনে প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে যায়। প্রিয়জনের অনুপস্থিতি তখন মনকে বিষণ্ণ করে। বিরহ বেদনা আরো বাড়িয়ে দেয়। কাজেই বৃষ্টির প্রবল বর্ষণের সময় মানুষের মনে কল্পনার ডানা মেলে। মনে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি জাগে। উদ্দীপকে যেভাবে বলা হয়েছে ‘মন যেন চায় কারে’। অর্থাৎ প্রিয়জনের বিরহ মনকে আবিষ্ট করে। তাই ‘বেনু-বনে বায়ু নাড়ে, এলোকেশ, মন যেন চায় কারে’ উদ্দীপকের এ বক্তব্য ‘বৃষ্টি’ কবিতায় উল্লিখিত নিঃসঙ্গ নির্জন জীবনের বিরহী চেতনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ উত্তরঃ

‘বৃষ্টি’ কবিতায় উল্লিখিত পুরনো দিনের স্মৃতি ও বিরহী হৃদয়ের ভাবটি উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার সমগ্র ভাবটি প্রকাশিত হয়নি।

গ্রীষ্মের কঠিন দাবদাহে প্রকৃতি অনেকটা বিবর্ণ হয়ে পড়ে। বর্ষার বৃষ্টিধারা বিবর্ণ পল্লি প্রকৃতিকে সজীব করে তোলে। টানা বর্ষণে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, নদী-নালা ভরে যায়। তৃষ্ণাকাতর মাঠ-ঘাট ও বনে দেখা দেয় প্রাণের জোয়ার। বৃষ্টি কবিতায় অঙ্কিত হয়েছে বাংলার সামগ্রিক জীবন ও প্রকৃতি। বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি আবাদি জমিতে আনে গৌরবের ফসল। এ সময় মেঘ ও বিদ্যুতের চমক যেন আকাশে খেলা করে। মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে পুরনো স্মৃতি। মনকে কখনও করে বিষণ্ণ। একাকী জীবনে বাড়ায় বিরহ।

উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি বর্ষণমুখর দিনে গৃহবধূরা তাদের অবসর কাটাতে নকশীকাঁথা সেলাই করে। এই সেলাইয়ের মধ্য দিয়ে যেন তারা স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি পড়ে। আশপাশের সবকিছু মিলে যেন জলাধারে পরিণত হয়। এমনি দিনে মনে পড়ে প্রিয়জনের কথা। মন যেন প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভে ব্যাকুল হয়ে উঠে।

আলোচ্য ‘বৃষ্টি’ কবিতা পর্যালোচনা করলে আমরা পাই, কবিতায় বর্ষণের সৌন্দর্য, এর ব্যাপকতা, বর্ষার কল্যাণকামিতা, মানবমনে বর্ষার প্রভাবসহ যাবতীয় বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে কেবল বর্ষণসিক্ত দিনে মানবমনের অনুভূতির দিকটি আলোচনা করা হয়েছে। কাজেই উদ্দীপকে ‘বৃষ্টি’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশিত হয়নি বরং বিশেষভাব প্রকাশিত হয়েছে মাত্র।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট থেকে বৃষ্টি কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়।  আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

আশা কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ। এস এস সি

আশা কবিতা সিকান্দার আবু জাফর পিডিএফ- এস এস সি

আমার দেশ কবিতা- সুফিয়া কামাল। বাংলা ১ম পত্র নবম-দশম শ্রেণি

একটি কাফি কবিতা-বিষ্ণু দে বাংলা ১ম পত্র এস এস সি- পিডিএফ