সেই দিন এই মাঠ কবিতা ও কবিতার ব্যাখ্যা পিডিএফ- SSC

সেই দিন এই মাঠ

এই পোস্টে সেই দিন এই মাঠ কবিতা টি দেওয়া আছে। সভ্যতা এক দিকে যেমন ক্ষয়িষ্ণু অন্য দিকে চলে তার বিনির্মাণ। মরণশীল ব্যক্তিমানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, কিন্তু প্রকৃতিতে থাকে চিরকালের ব্যস্ততা। মাঠে থাকে চঞ্চলতা, চলতাফুলে পড়ে শীতের শিশির, লক্ষ্মীপেঁচকের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় মঙ্গলবার্তা, খেয়া নৌকা চলে নালানদীতে অর্থাৎ কোথাও থাকে না সেই মৃত্যুর রেশ। ফলে মৃত্যুতেই সব শেষ নয়, পৃথিবীর বহমানতা মানুষের সাধারণ মৃত্যু রহিত করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু এ জগতে সৌন্দর্যের মৃত্যু নেই, মানুষের স্বপ্নেও মরণ নেই। নিচে থেকে সম্পূর্ণ কবিতাটি পড়ুন।

সেই দিন এই মাঠ

সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় প্রকৃতির চিরকালীন সৌন্দর্যের মধ্যে সভ্যতার ধ্বংস ও বিনির্মাণের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। কবি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও প্রকৃতির নিয়মের কোনাে পরিবর্তন হবে না। পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;মানুষ মরণশীল। প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে তার মরণের সম্পর্ক নেই। প্রকৃতি তার নিয়মেই গতিশীল। নিচে সেই দিন এই মাঠ কবিতা সম্পূর্ণ দেওয়া আছে পড়ে নিন।

সেই দিন এই মাঠ কবিতা- জীবনানন্দ দাশ

সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি—
এই নদী নক্ষত্রের তলে

সেদিনও দেখিবে স্বপ্ন–
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!

আমি চলে যাব ব’লে
চালতাফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে

নরম গন্ধের ঢেউয়ে?
লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!

চারিদিকে শান্ত বাতি-ভিজে গন্ধ-মৃদু কলরব;
খেয়া নৌকাগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে;

পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে র’বে চিরকাল;
এশিরিয়া ধুলো আজ-বেবিলন ছাই হয়ে আছে।

সেই দিন এই মাঠ কবিতার ব্যাখ্যা

এই কবিতায় কিছু জটিল কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার বাংলা অর্থ আপনারা বুঝতে পারেননি। এছাড়া অনেকে এই কবিতার ব্যাখ্যা কি তা জানতে চেয়েছেন। তাই আপনাদের জন্য এই অংশে সেই দিন এই মাঠ কবিতার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে দেওয়া হয়েছে। নিচে থেকে এই কবিতার ব্যাখ্যা গুলো জেনেনিন।

‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় প্রকৃতির চিরকালীন সৌন্দর্যের মধ্যে সভ্যতার ধ্বংস ও বিনির্মাণের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। সভ্যতার বিচিত্র বিবর্তনের মধ্যেও আপন রূপ-রস গন্ধ নিয়ে প্রকৃতি টিকে থাকে। পৃথিবীতে প্রাণের যে প্রবাহ ও ঘটনার যে নিয়ত আবর্তন তা চিরন্তন। অসীম শূন্যতার নিচে প্রাণের উৎসব কখনাে থামবে না, শেষ হবে না ঘটনার পরম্পরাও সৃষ্টি আর ধ্বংসের খেলা পৃথিবীতে যেমন চলছে, তেমনি চলবে। পৃথিবীর বুকে সােনার স্বপ্নের মাঠ চিরন্তন, এর কোনাে শেষ নেই।

মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও প্রকৃতির নিয়মের কোনাে পরিবর্তন হবে না। তিনি থাকবেন না বলে চালতাফুলের শিশিরের জলে ভেজা বন্ধ হবে না। বন্ধ হবে না তার নরম গন্ধ ছড়ানাে। প্রকৃতির সবকিছুই আগের মতােই থাকবে। এই অনুভব কবিকে প্রাণিত করে।

কবি জানেন, পৃথিবীতে মানব কল্যাণের বাণী বা কল্যাণকর্ম কোনােকিছুই বিলীন হয় না। শুধু ব্যক্তি হারিয়ে যায়। কবি বা কোনাে করা হলাে। ফলে তােমরা সহজেই যেকোনাে প্রশ্নের উত্তর করতে পারবে। মানুষের মৃত্যুতেই পৃথিবীর গতিময়তা ও প্রকৃতির স্বাভাবিকতার কোনাে ব্যাঘাত ঘটে না। তিনি না থাকলে লক্ষ্মীপেঁচার মঙ্গলকর গান বন্ধ হবে না। পৃথিবীর সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলবে।

সেই দিন এই মাঠ কবিতার ব্যাখ্যা

পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;মানুষ মরণশীল। প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে তার মরণের সম্পর্ক নেই। প্রকৃতি তার নিয়মেই গতিশীল। কারও মৃত্যুতে তার কিছু এসে যায় না। সে জন্যই কোনাে মৃত্যুই প্রকৃতির স্বাভাবিকতায় কোনাে প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই পৃথিবীর চারদিকে প্রকৃতি শান্ত থাকে, ভিজে ফুল গন্ধ ছড়ায়, পাখি সব কলরব করে। খেয়ানৌকা এসে ঘাটে লাগে নদীর তীরে চরের কাছাকাছি। পৃথিবীর এসব ঘটনা চিরন্তন। কখনাে তা হারায় না, বরং হারানাের সব গল্পকে ধরে রাখে।

পুরনাে সভ্যতা ধ্বংস হয়, নতুন সভ্যতা গড়ে ওঠে এশিরিয়া সভ্যতার বিলুপ্তি হয়েছে। নতুন আরেক সভ্যতা গড়ে উঠেছে। এক সময় রাজ্য, প্রশাসন, স্থাপত্য শিল্প, ভাস্কর্য আর কলাশিল্পে পৃথিবীর অদ্বিতীয় হিসেবে চিহ্নিত ছিল এশিরিয়া সভ্যতা। কিন্তু তা আজ আর নেই। বেবিলনীয় সভ্যতাও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতি তার আপন রূপ-রসগন্ধ নিয়ে চিরকাল সতেজ ও প্রাণময় হয়ে আছে। পৃথিবীর বহমানতা মানুষের সাধারণ মৃত্যু রহিত করতে পারে না। জগতে মানুষের মৃত্যু আছে, কিন্তু মানুষের স্বপ্ন ও সৌন্দর্যের মৃত্যু নেই।

সেই দিন এই মাঠ কবিতার মূলভাব কি

সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় কবি প্রকৃতির চিরকালীন সৌন্দর্যের এবং মানুষের স্বপ্নের অমরত্বের দিকটি তুলে ধরেছেন। কবিতায় সভ্যতারধ্বংস ও বিনির্মাণ উভয় দিক প্রতি হয়েছে। বিচিত্র বিবর্তনের মধ্যেও রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে প্রকৃতি টিকে থাকে। জাগতিক নিয়মে নশ্বর মানবজীবনস্রোত চলে অবিনশ্বর প্রকৃতির বিপরীতে টিকে থাকে কেবল মানবীয় কর্ম, চিন্তা আর স্বপ্ন। প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গে এগুলাে মিশে অমরত্ব দাবি করে।

ফলে যুগ-যুগান্তর ধরে চলে আসা মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার গল্প প্রকৃতি চিরভাস্বর করে রাখে। প্রকৃতির চিরকালের ব্যস্ততা, মাঠের চঞ্চলতা, চালতাফুলে পড়ে থাকা শীতের শিশিরবিন্দু, লক্ষ্মীপেঁচার মঙ্গলধ্বনি প্রভৃতি কবির কাছে অমরত্বের প্রতীক। তাই পৃথিবীর বহমানতা মানুষের সাধারণ মৃত্যু ঠেকাতে না পারলেও স্বপ্ন বাঁচাতে পারে। মানুষের স্বপ্ন আর প্রকৃতি তাই এক হয়ে টিকে থাকে অনন্তকাল।

সেই দিন এই মাঠ কবিতার ব্যাখ্যা কবি পরিচিতি

বরিশাল জেলার গাঁওপাড়া গ্রামে ১৮৯৯ সালে ১৭ই ফেব্রুয়ারি জীবনানন্দ দাশ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইংরেজীর অধ্যাপক ছিলেন। তিরিশোত্তর নবীন কবিদের তিনি অন্যতম পথিকৃৎ। এই নবীন কবি গোষ্ঠী প্রথম বিশ্ব-যুদ্ধোত্তর পাশ্চাত্য কাবীরীতি আত্মস্থ করতে চেয়েছিলেন। প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ কবি এই কাব্যান্দোলনের সক্রিয় সৈনিক।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় প্রকৃতি জীবনানন্দের কাব্যে রূপময় হয়ে উঠেছে। একটি চিরকালীন মমতার সঙ্গে সোঁদা মাটি, ঘাসফুল, নদী প্রভৃতির কাছে বারে বারে প্রত্যাবর্তন করেছেন তিন। তাঁর কাব্যে ছড়িয়ে আছে আধুনিক নাগরিক জীবনের হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বিষাদ ও সংশয়। কলকাতায় ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে অক্টোবর ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে । আশা করছি এই পোস্ট থেকে সেই দিন এই মাঠ কবিতা ও কবিতার ব্যাখ্যা পিডিএফ  সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়।  আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

উমর ফারুক কবিতা – কাজী নজরুল ইসলাম। পিডিএফ

মানুষ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

 SSC মানুষ কবিতার বহুনির্বাচনী প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ-

মানুষ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ- SSC

মানুষ কবিতা- কাজী নজরুল ইসলাম।বাংলা ১ম পত্র পিডিএফ

PDF- আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কবিতা ও কবিতার ব্যাখ্যা, মূলভাব