প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর। ৮ম শ্রেণি

প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস সৃজনশীল প্রশ্ন

পৃথিবীতে এ রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীর সংখ্যা আমাদের সঠিক জানা নেই। আজ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ প্রজাতিরপ্রাণী আবিষ্কৃত হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিপুল সংখ্যক প্রাণীর গঠন ও প্রকৃতিসম্বন্ধে জ্ঞান অর্জনের সহজ উপার হলো শ্রেণিবিন্যাস। প্রাণিদেহে বিদ্যমান বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে মিল, অমিল ও পরস্পরের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর বা ধাপে সাজানো হয়। জীবজগৎকে ধাপে ধাপে বিন্যস্ত করার এই পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে। প্রয়োজনের তাগিদে বর্তমানে জীববিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা গড়ে উঠেছে। এর নাম শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা (Taxonomy)। নিচের অংশে প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হয়েছে।

প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস সৃজনশীল প্রশ্ন

অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ১ম অধ্যায় টি হচ্ছে প্রাণিজগতের শ্রেণি বিন্যাস সম্পর্কিতও। এই অধ্যায় থেকে প্রাণীদের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য, জীবন দ্বারা ও প্রজাতি প্রকাশ করা হয়। এই সম্পর্কিত অনেক ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন আছে। নিচে প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো সংগ্রহ করে দিয়েছি।

প্রশ্ন ১ঃ 

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম কী?
খ. পাখি সহজে উড়তে পারে কেন?
গ. চিত্র অ এবং ই এর মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
ঘ.মানব জীবনে অ পর্বের প্রাণীদের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।

প্রশ্ন ২ঃ 

পর্ব-১ পর্ব-২
স্পঞ্জিলা হাইড্রা
স্কাইফা ওবেলিয়া

ক. নিডারিয়া পর্বের প্রাণীদের পূর্বনাম কী ছিল?
খ. কর্ডাটা পর্বের প্রাণীদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
গ. পর্ব-১ প্রাণীদের স্বভাব ও বাসস্থান ব্যাখ্যা কর।
ঘ.পর্ব-১ ও পর্ব-২ প্রাণীদের পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে দেখাও যে, তারা একে অপরের থেকে আলাদা।

প্রশ্ন ৩ঃ

রা একে অপরের থেকে আলাদা।
প্রশ্ন -৫ ল্ফ নিচের চিত্রগুলো লক্ষ কর ও প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

ক. মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম লেখ।
খ. পতঙ্গ প্রাণীদের কীভাবে চেনা যায়?
গ. চিত্র-খ এর প্রাণীটি কোন শ্রেণির? এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ.উপরিউক্ত প্রাণীদুইটির মধ্যে কোনটি সিটার সাহায্যে চলাচল করে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ব্যাখ্যা কর।

প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১ নং প্রশ্নের উত্তরঃ 

ক. মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম :  Homo Sapiens

খ. পাখিদের ফুসফুসের সাথে বায়ুথলি থাকার কারণে পাখিরা সহজে উড়তে পারে।
পাখিরা কর্ডাটা (ঈযড়ৎফধঃধ) পর্বভুক্ত এভিস (আবং) শ্রেণির প্রাণী। এদের দেহ পালকে আবৃত। এদের দুটি ডানা আছে। এরা উষ্ণ রক্তের প্রাণী। এদের হাড় শক্ত, হালকা ও ফাঁপা। তাছাড়া এদের ফুসফুসের সাথে বায়ুথলি আছে। তাই পাখিরা সহজে উড়তে পারে।

গ.

চিত্র অ হলো প্রজাপতি যা অৎঃযৎড়ঢ়ড়ফধ পর্বের প্রাণী ও ই হলো মাছ যা ঈযড়ৎফধঃধ পর্বের ঙংঃবরপযঃযুবং শ্রেণির পর্বের প্রাণী।
এদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ :

অ (অৎঃযৎড়ঢ়ড়ফধ) ই (ঙংঃবরপযঃযুবং)

(১) দেহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত, সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ বিদ্যমান ও ডানা বিশিষ্ট। (১) অস্থি নির্মিত অন্তঃকঙ্কাল বিদ্যমান।

(২) দেহ নরম কাইটিন সমৃদ্ধ শক্ত আবরণী দ্বারা আবৃত। (২) দেহ সাইক্লোয়েড, গ্যানয়েড বা টিনয়েড ধরনের আঁইশ দ্বারা আবৃত ও পিচ্ছিল।

(৩) দেহের রক্তপূর্ণ গহŸর হিমোসিল নামে পরিচিত। (৩) মাথার দুই পাশে চার জোড়া ফুলকা থাকে, এর সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়।

ঘ.

অ পর্বের প্রাণীটি হলো প্রজাপতি যা প্রাণীজগতের আর্থ্রোপোডা (অৎঃযৎড়ঢ়ড়ফধ) পর্বের সদস্য।
মানবজীবনে এই পর্বের প্রাণীদের উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রয়েছে। আর্থ্রোপোডা পর্বের এদের বহু প্রজাতি অন্তঃ ও বহিঃপরবীজী হিসেবে কাজ করে। পোষক হিসেবে এরা মানুষকে ব্যবহার করে। আবার এদের বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করে মানুষ নানাভাবে উপকৃতও হয়।
নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো :

খাদ্যের উৎস : বিভিন্ন আর্থ্রোপোডা প্রাণী যেমনÑ চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং মানবদেহে প্রোটিন ও চর্বির চাহিদা পূরণ করে।

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি : অৎঃযৎড়ঢ়ড়ফধ পর্বের প্রাণী যেমন : কাঁকড়া, চিংড়ি ইত্যাদি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি : অনেক মানুষ চিংড়ি, কাঁকড়া, মৌমাছি, ইত্যাদি চাষে কাজ করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
পরাগায়ন : এই পর্বের প্রাণী যেমনÑ প্রজাপতি ও মৌমাছি ফসলের পরাগায়নে সহায়তা করে ও প্রজাতির বৈচিত্র্য অক্ষুণœ রাখে।
ক্ষতিকারী প্রভাব : এদের বহুপ্রজাতি অন্তঃ ও বহিঃপরজীবী হিসেবে বাস করে মানুষের রোগ সৃষ্টি করে।
এদের মধ্যে উপকারী ও অপকারী উভয়ই দেখা যায়। আরশোলা বিভিন্ন ধরনের রোগ ছাড়ায় ও ফসলের ক্ষতি করে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, মানবজীবনে আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীদের ভ‚মিকা অপরিসীম।

২ নং প্রশ্নের উত্তরঃ

ক. নিডারিয়া পর্বের প্রাণীদের পূর্বনাম ছিল সিলেন্টারেটা।

খ. কর্ডাটা পর্বের প্রাণীদের দু’টি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
র. পৃষ্ঠদেশে একক, ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু থাকে।
রর. সারা জীবন অথবা ভ্রƒণ অবস্থায় পৃষ্ঠীয়দেশ বরাবর নটোকর্ড অবস্থান করে। নটোকর্ড হলো একটা নরম নমনীয়, দÐাকার দৃঢ় অখÐায়িত অঙ্গ।

গ.

পর্ব-১ এর প্রাণী দুটি হলো স্পঞ্জিলা ও স্কাইফা। এরা চড়ৎরভবৎধ পর্বের অন্তর্গত। এদের স্বভাব ও বাসস্থান নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো। পৃথিবীর সর্বত্রই এই প্রাণীদের পাওয়া যায়। সাধারণত এরা দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। এদের অধিকাংশ প্রজাতি সামুদ্রিক। তবে কিছু কিছু প্রাণী স্বাদু পানিতে বাস করে। পরিফেরা পর্বের প্রাণীরা সাধারণভাবে স্পঞ্জ নামে পরিচিত।

ঘ.

পর্ব-১ এর প্রাণীরা হলো স্পঞ্জিলা ও স্কাইফা। এরা মূলত পরিফেরা (চড়ৎরভবৎধ) পর্বের সদস্য এবং পর্ব-২ এর প্রাণীরা হলো হাইড্রা ও ওবেরিয়া, এরা মূলত নিডারিয়া (ঈহরফধৎরধ) পর্বের সদস্য।

এই উভয় পর্বের প্রাণীরা সামুদ্রিক হলেও এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। নিচে সেগুলো চিহ্নিত করে দেখানো হলো।
দৈহিক গঠন : পরিফেরা প্রাণীরা সরলতম বহুকোষী প্রাণী এবং এদের দেহপ্রাচীর অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। নিডারিয়া প্রাণীদের দেহ এক্টোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম দুটি ভ্রƒণীয় কোষস্তর দ্বারা গঠিত।

পরিপাক ও পরিবহন : পরিফেরা প্রাণীদের দেহপ্রাচীরের অসংখ্য ছিদ্রপথে পানির সাথে অক্সিজেন ও খাদ্যবস্তু প্রবেশ করে। অন্যদিকে নিডারিয়া প্রাণীদের সিলেন্টেরন নামক দেহগহŸর একাধারে পরিপাক ও সংবহনে অংশ নেয়।

কলা ও কাজ বিভাজন : পরিফেরা প্রাণীদের পৃথক কোনো সুগঠিত কলা, অঙ্গ ও তন্ত্র থাকে না অথচ নিডারিয়াদের এক্টোডার্মে নিডোবøাস্ট নামে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোষ থাকে যা শিকার ধরা, আত্মরক্ষা, চলন ইত্যাদি কাজে অংশ নেয়।
জীবনযাত্রা : পরিফেরা প্রাণীরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। কিন্তু নিডারিয়া প্রাণীদের কিছু প্রজাতি এককভাবে আবার কিছু প্রজাতি দলবদ্ধভাবে কলোনি গঠন করে বাস করে।

উপরিউক্ত পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে দেখা যায় যে, পর্ব-১ বা চড়ৎরভবৎধ পর্বের প্রাণী ও পর্ব-২ বা ঈহরফধৎরধ পর্বের প্রাণীরা একে অপরের থেকে আলাদা।

৩ নং প্রশ্নের উত্তরঃ 

ক. মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম:    Homo Sapiens

খ. পতঙ্গ প্রাণীরা আর্থ্রোপোডা (অৎঃযৎড়ঢ়ড়ফধ) পর্বের সদস্য। যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে এদের চেনা যায় সেগুলো হলো :

  • পতঙ্গ প্রাণীদের দেহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত ও সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ বিদ্যমান।
  • এদের মাথায় একজোড়া পুঞ্জাক্ষি ও অ্যান্টেনা থাকে।
  • পতঙ্গ প্রাণীদের নরম দেহ কাইটিন সমৃদ্ধ শক্ত আবরণী দ্বারা আবৃত।
গ.

চিত্র ‘খ’ এর প্রাণীটি হলো তারামাছ। এটি একাইনোডারমাটা (ঊপযরহড়ফবৎসধঃধ) পর্বের সদস্য।
নিচে এ পর্বের প্রাণীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হলো :

  •  দেহত্বক কাঁটাযুক্ত।
  • দেহ পাঁচটি সমান ভাগে বিভক্ত।
  •  পানি সংবহনতন্ত্র থাকে এবং নালিপদের সাহায্যে চলাচল করে।
  • পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে, অঙ্কীয় ও পৃষ্ঠদেশ নির্ণয় করা যায় কিন্তু মাথা চিহ্নিত করা যায় না।
ঘ.

উপরিউক্ত প্রাণী দুটি হলো চিত্র-ক তে কেঁচো ও চিত্র-খ তে তারামাছ। এদের মধ্যে কেঁচো নামক প্রাণীটি সিটার সাহায্যে চলাচল করে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

চিত্র-ক এর কেঁচো নামক প্রাণীটি অ্যানেলিডা পর্বের সদস্য।
এদের প্রতিটি খÐে সিটা থাকে (জোঁকে থাকে না)। সিটা চলাচলে সহায়তা করে। এই পর্বের বহু প্রাণী স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বসবাস করে। কিছু প্রজাতি পাথর ও মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বসবাস করে।

মাটিতে গর্ত খোঁড়ার কারণে মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং বায়ুমÐলের সাথে মাটির বিভিন্ন গ্যাসের আদান-প্রদান হয়। মাটির অভ্যন্তরস্থ পুষ্টি উপাদানগুলোও বিভিন্নভাবে মিশ্রিত হয়। ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, উপরিউক্ত প্রাণী দুটির মধ্যে চিত্র-ক এর প্রাণী কেঁচো সিটার সাহায্যে চলাচল করে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট আপনাদের ভালোলেগেছে এবং এখান থেকে প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই ওয়েবসাইটে শিক্ষা সংক্রান্ত পোস্ট শেয়ার করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণির প্রশ্ন সমাধান ও উত্তর পেতে আমার সাথেই থাকুন।

আরও দেখুনঃ

প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস অষ্টম শ্রেণি- ১ম অধ্যায় বিজ্ঞান

3 Comments on “প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর। ৮ম শ্রেণি”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *