রাসায়নিক বিক্রিয়া অষ্টম শ্রেণি ৮ম অধ্যায়

রাসায়নিক বিক্রিয়া

রাসায়নিক বিক্রিয়া হলো পদার্থ ও বস্তুর মধ্যবর্তী পরিবর্তন বা রূপান্তরের ঘটনা। এই পরিবর্তন ধরনগুলি সাধারণত রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলিতে অবস্থিত হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া বিজ্ঞানের প্রধান বিষয়ের একটি অংশ হিসেবে গণ্য হয়, এবং এটি প্রায় সমস্ত প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় ঘটে। রাসায়নিক বিক্রিয়া নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্ভর করে, যেমন তাপমাত্রা, চাপ, অক্সিজেন সরবরাহ, রাসায়নিক সামগ্রীর উপস্থিতি ইত্যাদি। নিচে অষ্টম শ্রেণির ৮ম অধ্যায় রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া আছে।

রাসায়নিক বিক্রিয়া

আমাদের চারপাশে নানা রকমের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যাচ্ছে। এই সমস্ত রাসায়নিক বিক্রিয়া কখনো শক্তি উৎপন্ন করে, কখনো ব্যবহার উপযোগী নতুন পদার্থ তৈরি করে আবার কখনো বা রোগ নিরাময়েও সাহায্য করে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার গুরুত্ব অনেক, যেন পদার্থগুলির উৎপাদন, রাসায়নিক উৎসর্গ, ইলেকট্রিক ব্যাটারি কাজের চালক শক্তির উৎপাদন, ঔষধ ও পরিবেশের জন্য উপকারিতা উল্লেখযোগ্য। সাথেই অনেক প্রযুক্তিগত উন্নতি ও আবিষ্কার রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব।

প্রতীক, সংকেত ও যোজনী

সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা প্রতীক ও সংকেত সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছ। রসায়নবিদগণ গঠন অনুসারে পৃথিবীর সকল পদার্থকে মৌলিক ও যৌগিক এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এ পর্যন্ত মোট ১১৮ টি মৌলিক পদার্থের কথা জানা গেছে। সাধারণত মৌলের পুরো নাম না লিখে ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের একটি বা দুইটি অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে মৌলটিকে প্রকাশ করা হয়। মৌলের পুরো নামের এ সংক্ষিপ্তরূপকে প্রতীক বলা হয়। যেমন— H (হাইড্রোজেন), O (অক্সিজেন), Ca (ক্যালসিয়াম) ইত্যাদি।

আবার কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্তরূপকে সংকেত বলা হয়। যেমন- হাইড্রোজেন অণুর সংকেত H2, অক্সিজেন অণুর সংকেত O2, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণুর সংকেত HCl ইত্যাদি।

যৌগের সংকেত লেখার সময় আমাদেরকে মৌলের যোজনী সংখ্যা সম্পর্কে ভাবতে হবে। মৌলের যোজনীর সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। মৌলিক পদার্থের যোজনীকে আমরা এক একটি হাতের সাথে তুলনা করতে পারি। যে মৌলের একটি হাত তার যোজনী হবে ১। হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন উভয়ই একহাত বিশিষ্ট মৌল। অর্থাৎ উভয়ের যোজনী ১। তাই হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংকেত হবে HC1। অক্সিজেনের যোজনী ২ অর্থাৎ অক্সিজেনের ১টি পরমাণুর ২টি হাত আছে। এ ২টি হাত দিয়ে অক্সিজেন একযোজী বা ১ হাত বিশিষ্ট ২টি হাইড্রোজেনের পরমাণুকে ধরতে পারে। এ কারণে পানির সংকেত H2O ।

নাইট্রোজেন ও কার্বনের যোজনী যথাক্রমে ৩ এবং ৪। ফলে অ্যামোনিয়ার সংকেত NH3 এবং মিথেনের সংকেত CH। হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, পানি, অ্যামোনিয়া ও মিথেনের অণুকে নিম্নরূপভাবে দেখানো যেতে পারে—

উল্লেখ্য কোনো কোনো মৌলের একাধিক যোজনীও থাকতে পারে। যেমন- সালফার এর যোজনী ২ ও ৪, আয়রন এর যোজনী ২ ও ৩ ইত্যাদি।

অতএব কোনো মৌলের যোজনী হলো ঐ মৌলের একটি পরমাণু কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় তার সংখ্যা। কোনো যৌগ গঠনের সময় সাধারণভাবে লক্ষ রাখতে হবে যেন মৌলের সবগুলো হাত বা যোজনী কাজে লাগে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কৃষির অগ্রগতি

আজকাল বিশ্বের দেশগুলোকে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভাগ করা হয়। এই দেশগুলোকেই আবার শিল্পোন্নত ও কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত করা হয়।

শিল্পোন্নত দেশগুলো কৃষিতেও উন্নত। এ সকল দেশ তাদের কৃষিকে উন্নত করে শিল্পে পরিণত করেছে। অপরদিকে ‘কৃষিনির্ভর’দেশের সরকার বা কৃষক সমাজ শুধু অর্থনৈতিক কারণে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি আত্মস্থ ও ব্যবহার করতে পারছে না। আসল কথা হচ্ছে আজ অনুন্নত দেশগুলো কৃষিতে অনুন্নত এবং উন্নত দেশগুলো কৃষিতেও উন্নত।

স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষির অগ্রগতি : স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রাকালে দেশে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি কৃষি কলেজ, একটি ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও কয়েকটি কৃষি সম্প্রসারণ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ছিল । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃষির প্রতি অসামান্য দূরদর্শিতায় স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষির উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BINA), ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC), ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (BJRI), ১৯৭২ সালে তুলা উন্নয়ন বোর্ড (CDB), ১৯৭৪ সালে ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (SRI), ১৯৭৩ সালে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (FDC) সহ কৃষি বিষয়ক অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয় । পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), ১৯৮৫ সালে কৃষি তথ্য সার্ভিস (AIS), ১৯৮৬ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী (SCA), ১৯৯৬ সালে জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম (NARS) ও ২০০৭ সালে ‘Krishi Gobeshona Foundation’ স্থাপিত হয়। কৃষি ব্যবস্থাপনা ও গবেষণার উন্নয়নকল্পে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে যথাক্রমে ‘Integrated Pest Management (IPM)’ ও ‘National Agricultural Technology Programme (NATP) ‘ উল্লেখযোগ্য । কৃষিকে অধিকতর পরিবেশবান্ধব করার জন্য সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (IPM) সহ উত্তম কৃষি কার্যক্রমে কৃষকগণকে উৎসাহিত ও দক্ষ করে তোলার জন্য বিবিধ কার্যক্রম চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ধানের ১০৫টি জাত এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতালগ্নের তুলনায় প্রায় ৩০% কম আবাদী জমিতে তখনকার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশ আজ উদ্বৃত্ত প্রধান খাদ্য (ধান) উৎপাদনে সক্ষম । কৃষি শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশে বর্তমানে আটটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এর পাশাপাশি প্রায় সকল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ও পশুপালন অনুষদ চালু আছে। বর্তমানে সকল কৃষি ফসলের জন্য বিশেষায়িত গবেষণাগার রয়েছে । প্রতি বছর শহর ও গ্রামাঞ্চলে কৃষি মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কৃত্রিম রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য সবুজ সার এবং কম্পোস্ট সার তৈরি ও ক্ষেতে প্রয়োগ, কেঁচো জাত সার বা ভার্মিকম্পোস্ট প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রযুক্তি কৃষকদের হাতে পৌঁছানো হচ্ছে । গবাদি পশুর খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য উন্নত গো খাদ্য উৎপাদন, ঘাস প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্য তৈরিতে এখন বিপুল অগ্রগতি হয়েছে। দেশে পোল্ট্রি একটি কৃষি শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বাজারে মাছের একটা বড় অংশ এখন আসছে চাষকৃত মাছ থেকে। প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ সরকারিভাবে উৎসাহিত করায় কৃষি বনায়ন ও সামাজিক বনায়নের দিকে কৃষকরা আকৃষ্ট হচ্ছেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষা সম্প্রসারিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী কৃষি স্নাতক ডিগ্রীধারীদের ১ম শ্রেণির পদমর্যাদা দান করেন। বায়োটেকনোলজি বা জীবকৌশল বিজ্ঞানে অগ্রগতি বাংলাদেশের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশি বিজ্ঞানী কর্তৃক পাটের জেনেটিক ম্যাপ আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, অর্থাৎ বাংলাদেশে কৃষির আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে।

এশীয় ও বিশ্ব-প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কৃষির তুলনা

বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম এই চারটি দেশ এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। এই দেশগুলোর মধ্যে ভৌগোলিক দিক থেকে যেমন কিছু সাদৃশ্য আছে তেমনি কিছু বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। এই চারটি দেশের প্রধান কৃষি উৎপাদন হচ্ছে ধান এবং এর জনগণ প্রধানত ভাত খেতে অভ্যস্ত। এদের মধ্যে চীন, ভারত ও বাংলাদেশ অত্যন্ত জনবহুল দেশ । অবশ্য ভিয়েতনাম ততটা নয়।

বাংলাদেশ ও চীন

বাংলাদেশের তুলনায় চীন কৃষিতে অনেক উন্নত। অনেক ক্ষেত্রেই কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে চীন বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে আছে। ধানের বংশগতির পরিবর্তন এমনভাবে ঘটাতে সক্ষম হয়েছে যে চীনের অধিকাংশ ধানের জাত আর মৌসুম নির্ভরশীল নেই। এই জাতগুলো পূর্বের প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে হেক্টর প্রতি সাতগুণ পর্যন্ত ফলন দিচ্ছে। চীনের ধান গবেষকগণ দাবি করছেন আগামী প্রজন্মের ধান জাতগুলো এখনকার চাইতে দ্বিগুণ উৎপাদন দেবে। এই ‘সুপার হাইব্রিড’ ধানের একটি বড় ধরনের অসুবিধা হলো এই সকল অত্যাধুনিক ধানের বীজ সংরক্ষণ করা যায় না। এক প্রজন্মেই বীজের গুণাগুণ শেষ হয়ে যায়। চীনের বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে এই সব ফসল হয়ত সহায়ক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। কারণ ঐতিহ্যগতভাবে ধান বীজের জন্য বাংলাদেশের চাষিদের বীজ ব্যবসায়ীদের মুখাপেক্ষী না হলেও চলে, কেননা দেশের মোট ব্যবহৃত ধান বীজের অন্তত ৮৫% চাষিরা নিজেরাই সংরক্ষণ ও ব্যবহার করে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট Bangladesh Rice Research Institute (BRRI) এ পর্যন্ত যতগুলো উচ্চ ফলনশীল ধান জাত High Yielding Variety (HYV) উদ্ভাবন করেছে সেগুলোর বীজ সঠিক মাঠ ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব ধানক্ষেতেই উৎপাদন করা যায় এবং চাষিরা পরবর্তী ফসলের জন্য বীজ সেখান থেকে সংরক্ষণ করতে পারেন। অর্থাৎ ধান বীজের জন্য বাংলাদেশের চাষিদের এক ধরনের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট সুপার হাইব্রিড ধান উৎপাদনের জন্য জোর গবেষণা চালাচ্ছে। শীঘ্রই হয়ত বাংলাদেশের চাষিরা এই অতি উচ্চ ফলনশীল দেশি ধান বীজ পাবে । তবে এই ধান উৎপাদনের অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশি চাষিরা রপ্ত করেছেন। কারণ কয়েকটি বীজ ব্যবসায়ী কোম্পানি এ ধরনের ধানের বীজ বাংলাদেশে চালু করতে আগ্রহী ছিল। এই প্রেক্ষিতে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত আকারে এ জাতীয় ধান উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছিল এই শর্তে যে, কোম্পানিগুলো দেশেই এই ধান বীজ উৎপাদন করবে।

শেষ কথা

রাসায়নিক বিক্রিয়া বোঝার জন্য প্রাথমিকভাবে আমরা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাধারণ ধারণা প্রাপ্ত করতে হবে। রাসায়নিক বিক্রিয়া হলো পদার্থের মধ্যে ঘটিত পরিবর্তনের পথগুলি। এই পরিবর্তন বিভিন্ন প্রকারের রাসায়নিক বন্ধনের ফলাফলে ঘটে, যেমন ইয়নিক বন্ধন, অণুসংযোগ, অক্সিডেশন-রিডাকশন রিয়েকশন, মোলার এবং মোলার অংশের সংরক্ষণ, প্রোটন অথবা ইলেক্ট্রন সংযোগ, এবং অধিক।

আরও দেখুনঃ

পৃথিবী ও মহাকর্ষ ৮ম শ্রেণি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *