পৃথ্বীতে সকল দেশ মিলে ঘরে তুলেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা। যাকে জাতিসংঘ বলে। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি সদস্য দেশ। জাতিসংঘের অধীনে বেশ কয়েকটি সংগঠন আছে। যাদের আলাদা আলাদা কাজ আছে। জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল বা United Nations International Children’s Emergency fund (UNICEF) জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা যা বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের সেবা প্রদান করে। আজকের পোস্টে ৮ম শ্রেণি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ১৩ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হয়েছে।
৮ম শ্রেণি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ১৩ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন
এখানে ৮ম শ্রেণি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ১৩ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন শেয়ার করেছি। এগুলো বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা পাঠ্যসূচির আলোকে তৈরি করা হয়েছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন ১
কোভিড–১৯ বা করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব যখন থমকে যায়, তখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা আপ্রাণ চেষ্টা করছে তা মোকাবিলা করার জন্য। অন্যদিকে আরেকটি সংস্থা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খাদ্য সংকট দেখা দিলে তা মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ ও সাহায্য করে থাকে।
ক. ইউনিসেফ কোন লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল?
খ. বাংলাদেশ UNDP-র কার্যক্রম ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের প্রথমাংশে কোন সংস্থার কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বাক্যে যে সংস্থার কথা বোঝানো হয়েছে তা কি বাংলাদেশকে প্রাধান্য দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২
সীমান্ত নিয়ে ‘ক’ ও ‘খ’ রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছিল। ‘ক’ রাষ্ট্র তার সামরিক বাহিনী নিয়ে ‘খ’ রাষ্ট্রের ভ‚খণ্ডে আগ্রাসি তৎপরতা চালায়। ‘খ’ রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সাহায্য চাইলে বিবাদমান রাষ্ট্রের বিরোধ মীমাংসায় সংস্থাটি এগিয়ে এসে সমাধান করে দেয়। এই সংস্থাটি বিশ্ব থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা নিরসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা পালন করছে।
ক. ইউনেস্কোর মূল কাজের ক্ষেত্র কয়টি?
খ. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কোনটি? এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘ক’ ও ‘খ’ রাষ্ট্রের বিবাদ মীমাংসায় কোন সংস্থাটি কাজ করেছেÑ ব্যাখ্যা কর।
ঘ.বিশ্ব শান্তি রক্ষায় উক্ত সংস্থাটি প্রশংসনীয় ভ‚মিকা পালন করছে-এই প্রস্তাবনার পক্ষে যুক্তি দাও।
৮ম শ্রেণি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ১৩ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
এই অংশে উপরের দেওয়া ৮ম শ্রেণি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ১৩ অধ্যায় সৃজনশীল পপ্রশ্নের উত্তর গুলো তৈরি করে দেওয়া আছে। যারা নিজে নিজে উত্তর গুলো লিখতে পারবেন না এখান থেকে দেখেনিবেন।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের ত্রাণ সাহায৵ প্রদানের লক্ষ্যেই ইউনিসেফ গঠিত হয়েছিল।
খ. UNDP ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতিসংঘের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন ও তদারকি করে থাকে। বাংলাদেশেও এর কার্যক্রম বিস্তৃত।১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ UNDP-র সহায়তা পেয়ে আসছে। UNDP-র কাজের ক্ষেত্র ৬টি, তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ, সংকট মোকাবিলা, পরিবেশ উন্নয়ন, গ্রামাঞ্চলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাহায৵ ও সহযোগিতা করে আসছে।
গ.
উদ্দীপকের প্রথমাংশে করোনাভাইরাসের প্রভাব মেকাবিলায় যে সংস্থা কাজ করছে তা হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO–এর পূর্ণ রূপ হলো The world Health organization.
১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল গঠিত হয় WHO। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে। মূলত বিশ্বের সব অংশের মানুষের জন্য সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এর ব্যাপক কার্যক্রম বিস্তৃত। বিশেষ করে শিশুদের টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করে ৬টি মারাত্মক রোগের হাত থেকে রক্ষা করছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যপী সংক্রমণরোধে উক্ত সংস্থা ভূমিকা রাখছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখি কোভিড–১৯ বা করোনাভাইরাস একটি সংক্রামক ব্যাধি। এ ধরনের রোগ একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ বাড়াতে থাকে। WHO এ ধরনের সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য কাজ করে থাকে। বিশ্বব্যাপী জনগণের স্বাস্থ্য ঝঁুকি মোকাবিলার জন্য WHO সতর্ক করাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থাও করে থাকে। তাই উদ্দীপকের প্রথমাংশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO কে বোঝানো হয়েছে।
ঘ.
উদ্দীপকের শেষ বাক্যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা FAO এর কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশকে প্রাধান্য দিয়ে করে, বিষয়টি যথার্থ নয়।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বা FAO এর পূর্ণরূপ Food and Agriculture Organization. সংস্থাটি সারা বিশ্বে ক্ষুধার বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাই পৃথিবীর যেকোনো স্থানের ক্ষুধা অপুষ্টি দূর করে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এ সংস্থার অন্যতম কাজ।বাংলাদেশ FAO এর সদস্যরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ সংস্থার সদস্য সংখ্যা ১৯৪টি দেশ। এর সদর দপ্তর ইতালির রাজধানী রোমে। স্বাধীনতার পর থেকেই উক্ত সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।ফলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য FAO প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সাহায্য দেয়। এ ছাড়া FAO খাদ্যদ্রব্য সরবরাহে সহায়তা ও কৃষির উন্নয়নে পরামর্শ দিয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেয় উক্ত সংস্থা।
এ ধরনের কার্যক্রম FAO শুধু বাংলাদেশের জন্যই করে থাকে না। বিশ্বব্যাপী যেখানেই এ ধরনের সমস্যা হয়, সেখানেই উক্ত সংস্থা পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে থাকে। FAO কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করে থাকে। তাই FAO আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হওয়ায় FAO বাংলাদেশের খাদ্য ও কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ইউনেস্কোর মূল কাজের ক্ষেত্র চারটি।
খ. ২১শে ফেব্রæয়ারি বা শহিদ দিবস হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র“য়ারি পুলিশের গুলিতে শহিদ হন রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে। তাদের এ আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা লাভ করে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। মাতৃভাষার জন্য সংগ্রামের এমন অনন্য ইতিহাসের কারণে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও সম্মানের চেতনাবোধ জাগ্রত করতে এ দিনটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
গ.
‘ক’ ও ‘খ’ রাষ্ট্রের বিবাদ মীমাংসায় জাতিসংঘ কাজ করেছে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জাতিসংঘের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বিবদমান রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করে সকল রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করা। জাতিসংঘ বিশ্ব থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা নিরসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ‘ক’ ও ‘খ’ রাষ্ট্রের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছিল। ‘ক’ রাষ্ট্র তার সামরিক বাহিনী নিয়ে ‘খ’ রাষ্ট্রের ভ‚খণ্ডে আগ্রাসি তৎপরতা চালায়। এর প্রেক্ষিতে ‘খ’ রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সাহায্য চাইলে সংস্থাটি বিবদমান রাষ্ট্রের বিরোধ মীমাংসায় এগিয়ে আসে এবং তা সমাধান করে দেয়। এছাড়া এ সংস্থাটি বিশ্ব থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা নিরসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা পালন করছে। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির কাজের সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের কাজের সাদৃশ্য রয়েছে। কাজেই বলা যায়, ‘ক’ ও ‘খ’ রাষ্ট্রের বিবাদ মীমাংসায় জাতিসংঘ কাজ করেছে।
ঘ.
বিশ্বশান্তি রক্ষায় উক্ত সংস্থাটি তথা জাতিসংঘ প্রশংসনীয় ভ‚মিকা পালন করছেÑ এই প্রস্তাবনার পক্ষের যুক্তি নিচে দেওয়া হলো :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা অনুধাবন করে বিশ্বব্যাপী শান্তি আনয়নের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতিসংঘ। এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলোÑ আন্তর্জাতিক শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করা, আন্তর্জাতিক আইনের সাহায্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিশ্বের সকল বিরোধ নিষ্পত্তি করা।
বিশ্বের কোথাও যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাত বাধলে জাতিসংঘ তা বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়। কখনও কখনও যুদ্ধ বন্ধে বা যুদ্ধের পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য জাতিসংঘ তার শান্তিরক্ষী বাহিনীকেও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় পাঠায়। এছাড়াও বিশ্ব থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা দূর করা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ দূষণজনিত সমস্যা মোকাবিলা, জনসংখ্যা বিস্ফোরণরোধ, নারী ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমেও জাতিসংঘ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে।
শেষ কথা
আশা করছি এই পোস্ট আপনাদের ভালোলেগেছে এবং এখান থেকে ৮ম শ্রেণি বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ১৩ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই ওয়েবসাইটে শিক্ষা সংক্রান্ত পোস্ট শেয়ার করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণির প্রশ্ন সমাধান ও উত্তর পেতে আমার সাথেই থাকুন।
আরও দেখুনঃ
বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর। ৮ম শ্রেণি