জীবন সঙ্গীত কবিতা লিখেছেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পিডিএফ

জীবন সঙ্গীত কবিতা

আমাদের জীবন কেবল নিছক স্বপ্ন নয়। কাজেই এ পৃথিবীতে স্বপ্ন ও মায়ার জগৎ বলে দেওয়া যায় না। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা এবং পরিজনবর্গ কেউ কারও নয়, একথাও ঠিক নয়। মানব-জন্ম অত্যন্ত মূল্যবান। মিথ্যা সুখের কল্পনা করে দুঃখ বাড়িয়ে লাভ নেই, তা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যও নয়। সংসারে বাস করতে হলে সংসারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কেননা বৈরাগ্যে কোন মুক্তি নেই।

আমাদের জীবন যেন শৈবালের শিশর বিন্দুর মতো ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং মানুষকে এ পৃথিবীতে সাহসী যোদ্ধার মতো সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হবে। মহাজ্ঞানী ও মহান ব্যক্তিদের পথ অনুসরণ করে আমাদেরও বরণীয় হতে হবে। কেননা জীবন তো একবারই। ‘জীবন সঙ্গীত’ কবিতাটি কবি ‘Henry Wordworth Longfellow এর A Paslm of life’ ইংরেজী কবিতার ভাবানুবাদ।

জীবন সঙ্গীত কবিতা

এখনানে জীবন সঙ্গীত কবিতা টি দেওয়া আছে। এই জনপ্রিয়য় কবিতাটি কবি জীবন সঙ্গীত কবিতা প্রকাশনা করেছেন। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এই কবিতা টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিচে থেকে কবিতাটি পড়ে নিন অথবা পিডিএফ সংগ্রহ করুন।

বলো না কাতর স্বরে বৃথা জন্ম এ সংসারে
এ জীবন নিশার স্বপন;
দারাপুত্র পরিবার তুমি কার কে তোমার
বলে জীব করো না ক্রন্দন।

মানব-জনম সার এমন পাবে না আর
বাহ্য দৃশ্যে ভুলো না রে মন।
কর যত্ন হবে জয় জীবাত্মা অনিত্য নয়
অহে জীব কর আকিঞ্চন।

করোনা সুখের অাশ পরো না দুখের ফাঁস
জীবনের উদ্দেশ তা নয়;
সংসারে সংসারী সাজ করো নিত্য নিজ কাজ
ভবের উন্নতি যাতে হয়।

দিন যায় ক্ষণ যায় সময় কাহারো নয়
বেগে ধায় নাহি রয় স্থির;
হয় সম্পদ বল্ সকলি ঘুচায় কাল
আয়ু যেন শৈবালের নীর।

সংসার সমরাঙ্গনে যুদ্ধ কর দৃঢ় পণে
ভয়ে ভীত হইও না মানব;
কর যুদ্ধ বীর্য্যবান যায় যাবে যাক্‌ প্রাণ
মহিমাই জগতে দুর্ল্লভ।

মনোহর মূর্ত্তি হেরে অহে জীব অন্ধকারে
ভবিষ্যতে করো না নির্ভর;
অতীত সুখের দিনে পুনঃ আর ডেকে এনে
চিন্তা করে হইও না কাতর।

সাধিতে আপন ব্রত স্বীয় কার্য্যে হও রত
এক মনে ডাক ভগবান;
সঙ্কল্প সাধন হবে ধরাতলে কীর্ত্তি রবে
সময়ের সার বর্ত্তমান।

মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন
হয়েছেন প্রাতঃ স্মরণীয়,
সেই পথ লক্ষ্য করে স্বীয় কীর্ত্তি ধ্বজা ধরে
আমরাও হবো বরণীয়।

সময়-সাগর তীরে পদাঙ্ক অঙ্কিত করে
আমরাও হব হে অমর;
সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে অন্য কোন জন পরে
যশোদ্বারে আসিবে সত্বর।

করো না মানবগণ বৃথা ক্ষয় এ জীবন
সংসার-সমরাঙ্গন মাঝে;
সংকল্প করেছ যাহা, সাধন করহ তাহা
রত হয়ে নিজ নিজ কাজে।

জীবন সঙ্গীত কবিতার ব্যাখ্যা

এখানে জীবন সঙ্গীত কবিতার ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। অনেকে কবিতার অর্থ পড়ে বুঝতে পারেন না। কিন্তু আমার দেওয়া এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে জীব সঙ্গীত কবিতার প্রতি লাইন সম্পর্কে জানতে পারবেন। কবিতার মাধ্যমে কবি কি বুঝাতে চেয়েছেন তা এই ব্যাখ্যা পড়ে বুঝতে পারবেন। কবিতার ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া আছে পড়ে নিন।

জীবন-সঙ্গীত’ কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনের প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন। তিনি মানবজীবনের কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন করেছেন এই বলে যে, মানুষের জীবন নিছক কোনাে স্বপ্ন নয়। পৃথিবীও মায়ার জগৎ নয়, মানুষ তা ভেবে শুধু কষ্ট পায়। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, পরিবার-পরিজন কেউ কারও নয়- এমন ধারণা মিথ্যা। কারণ প্রত্যেকেরই পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। কাজেই নিজের জন্মকে দোষ দেওয়া, অসার মনে করা উচিত নয়। জগতের চাকচিক্যে ডুবে থাকলেও চলবে না। আবার মৃত্যুকে অনিবার্য জেনে জীবনবিমুখ হলেও চলবে না। জীবনের প্রতি যত্নবান। হতে হবে। কারণ মানব-জন্ম অত্যন্ত মূল্যবান।

মানুষের জীবনে সুখের পাশাপাশি থাকে দুঃখ। মিথ্যা সুখের আশায় জীবনে দুঃখ বাড়িয়ে লাভ নেই। অধিক সুখে গা ভাসিয়ে চলা বা দুঃখে বিষাদগ্রস্ত হওয়া জীবনের উদ্দেশ্য নয়। সুখ-দুঃখকে পাশ কাটিয়ে জীবনের উন্নতিকল্পে কাজ করাই জীবনের উদ্দেশ্য। কাজেই সংসারের দায়দায়িত্ব যথাযথ পালনের মাধ্যমে জগতের উন্নতি সাধন করতে হবে।

ব্যাখ্যা

সময় কারও জন্যই অপেক্ষা করে না। মুহূর্তের জন্যও সে থামে না, স্থির থাকে না, আপন নিয়মে প্রবাহিত হয়। মহাকালের সেই প্রবাহে ক্ষণবিন্দু মানুষের জীবন। অনন্ত প্রবাহিত সময়-ধারা থেকে যে সময়টুকু মানুষ তার জীবন রচনার জন্য পায় তা শৈবালের শিশরবিন্দুর মতাে ক্ষণস্থায়ী। জগতে যত সম্পদ, নাম, যশ, খ্যাতি সবই এই কালের হাতে বন্দি হয়ে পড়ে।

জগৎসংসারে সাহসী যােদ্ধার মতাে জীবনসংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। ভয়ে আড়ষ্ট হলে চলবে না। বাঁচার মতাে বাঁচতে হবে, বাঁচার সংগ্রামে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। তাতে প্রাণ গেলেও ক্ষতি নেই। কারণ জগতে ক্ষুদ্রকায়, হীন, দুর্বল হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মহিমান্বিত হওয়া উচিত। তাতে জীবনের প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা লাভ হয়। কারণ মহিমাই জগতে সবচেয়ে মূল্যবান।

মানুষ বর্তমানকে অতিক্রম না করে ভবিষ্যতে যেতে পারে না। আর বর্তমানকে যদি ভালােভাবে কাজে লাগানাে না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়। কাজেই বর্তমানকে কাজে না লাগিয়ে ভবিষ্যতের আশায় বসে থেকে ভালাে কিছু পাওয়ার চেষ্টা বৃথা । কারণ ঐরকম অপেক্ষা বােকামি এবং তা জীবনে দুঃখ বয়ে আনে। তারপরও মানুষ অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশি কাতরতা প্রকাশ করে। প্রকৃতপক্ষে তা এক ধরনের বােকামি। মানুষের উচিত অতীতের সুখ আর ভবিষতের স্বপ্ন পরিহার করে জীবনকে বর্তমানমুখী করে তােলা।

জীবন সঙ্গীত কবিতার মূলভাব

‘জীবন-সঙ্গীত’ কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মানবজীবনের প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান দান করেছেন। তিনি কবিতায় আমাদের জীবনের কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন করে অনুবাদ তুলতে চেয়েছেন। আমাদের জীবনের নানা স্বপ্ন, প্রেম-ভালােবাসা, পরিবার গঠন, সংসারের নানা যন্ত্রণায় কাতরতা, হতাশা-নিরাশায় ভােগা, জীবনবিমুখ হয়ে ওঠা ইত্যাদি সম্পর্কে তার মতামত তুলে ধরেছেন। আর তা থেকে পরিত্রাণের জন্য মহাজ্ঞানীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, আপন কর্তব্য, যথাযথভাবে পালন করে জীবন সার্থক করে গড়ে তুলতে বলেছেন। কারণ মানব-জন্ম অত্যন্ত মূল্যবান।

মিথ্যা সুখের কল্পনা করে জীবনের দুঃখ বাড়ানাে ঠিক নয়, জীবনের উদ্দেশ্যও তা নয়। কাজেই পদ্মপাতার শিশিরবিন্দুর মতাে ক্ষণস্থায়ী জীবনকে যত বেশি স্বপ্ন, সাধ, কর্মে, হাসি-আনন্দে, সাহসে-সংগ্রামে ভরে তােলা যায় ততই তা সার্থকতা লাভ করে। মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সার্থক করে তােলা যায় জগতের কল্যাণকর কাজের মাধ্যমে। মানুষকে এ পৃথিবীতে সাহসী যােদ্ধার মতাে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হবে। মহাজ্ঞানী ও মহান ব্যক্তিদের পথ অনুসরণ করে আমাদেরও বরণীয় হতে হবে। ‘জীবন-সঙ্গীত’ কবিতার এই মৌলিক বিষয়টিই শাশ্বত।

জীবন সঙ্গীত কবিতার সারমর্ম

মানুষের জীবনে সুখের পাশাপাশি থাকে দুঃখ। মিথ্যা সুখের আশায় জীবনে দুঃখ বাড়িয়ে লাভ নেই। অধিক সুখে গা ভাসিয়ে চলা বা দুঃখে বিষাদগ্রস্ত হওয়া জীবনের উদ্দেশ্য নয়। সুখ-দুঃখকে পাশ কাটিয়ে জীবনের উন্নতিকল্পে কাজ করাই জীবনের উদ্দেশ্য। কাজেই সংসারের দায়দায়িত্ব যথাযথ পালনের মাধ্যমে জগতের উন্নতি সাধন করতে হবে।

জীবন সঙ্গীত কবিতার কবি পরিচিতি

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৩৮ সালের ১৭ই এপ্রিল হুগলি জেলার গুলিটা রাজবল্লভহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা কৈলাশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার খিদিরপুর বাংলা স্কুলে পড়াশোনাকালে আর্থিক সংকটের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।অতপর কলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারীর আশ্রয়ে তিনি ইংরেজী শেখেন।পরবর্তীতে হিন্দু কলেজে সিনিয়র স্কুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।পরে তিনি ১৮৫৯ সালে সলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবনের তিনি সরকারি চাকরি, স্কুল শিক্ষকতা এবং পরিশেষে আইন ব্যবসায় নিয়োজিত হন।মাইকেল মধুসূদন দত্তের পরে কাব্য রচনায় তিনিই ছিলেন সবচেয়ে খ্যাতিমান।স্বদেশপ্রেমের অনুপ্রেরণায় তিনি‘বৃত্রসংহার’ নামক মহাকাব্য রচনা করেন।এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ:চিন্তাতরঙ্গিনী,বীরবাহু,আশাকানন,ছায়াময়ী ইত্যাদি।২৪শে মে ১৯০৩ সালে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

জীবন সঙ্গীত কবিতার কবি কে

জীবন সঙ্গীত কবিতার কবি হচ্ছে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বাংলাদেশের এক জন জনপ্রিয় কবি ও লেখক। তিনি কবিতা লেখার পাশা-পাশী অনেক গল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৩৮ সালের ১৭ই এপ্রিল হুগলি জেলার গুলিটা রাজবল্লভহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২৪শে মে ১৯০৩ সালে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

শেষ কথা

আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভাললেগেছে। এই পোস্ট টি ভালোলেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন। আশা করছি এই পোস্ট থেকে জীবন সঙ্গীত কবিতা, কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা জানতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।  আজকের মতো এখানেই শেষ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

কপোতাক্ষ নদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর Pdf File সংগ্রহ

কপোতাক্ষ নদ কবিতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা পদ্য

কপোতাক্ষ নদ কবিতার বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ও উত্তর-পিডিএফ

বঙ্গবাণী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর