বাংলাদেশের সেরা ১০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদশে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে । এর মধ্য থেকে পড়াশুনার মান, বিগত দিনের রেজাল্ট এবং সুনামের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের সেরা ১০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষনা করা হল ।
সেরা ১০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
১০) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শাবিপ্রবি নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের সিলেটে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজী। এটি এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বড় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
শাবিপ্রবি বাংলাদেশের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি বিশ্ববিদ্যালয়।বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সমন্বিত সম্মান কোর্স চালু করার পাশাপাশি ১৯৯৬-৯৭ সেশন থেকে স্নাতক কোর্সে সেমিস্টার পদ্ধতির (আমেরিকান সেমিস্টার পদ্ধতি) প্রবর্তন করে।এছাড়া বাংলাদেশের একমাত্র অনুসন্ধান ইঞ্জিন “পিপীলিকা” সেটিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান যা ২০১৩ সাল থেকে চালু হয়ে এপর্যন্ত সফল ভাবে তথ্য সেবা প্রদান করছে। এটি দেশের সর্বপ্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষদ ও বিভাগ
শাবিপ্রবিতে ৬ টি অনুষদের অধীনে ২৮ টি বিভাগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন পরিকল্পনা অনুসারে ৮ টি অনুষদের অধীনে আরো একাধিক বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগ খোলার অনুমোদন পেয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।
০৯) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। সালের ৬ জুলাই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার৷ প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে রাজশাহী শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷
অনুষদ ও বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ১০টি অনুষদের অধীনে ৫৯টি বিভাগ রয়েছে এবং অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪১টি; যার মধ্যে সরকারি ১১টি ও বেসকারি ২৪টি।
০৮) বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
(Bangladesh University of Textiles; সংক্ষেপেঃ ‘বুটেক্স’ – ‘BUTEX’) বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি টেক্সটাইল প্রকৌশল শিক্ষায় দেশের প্রথম ও একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে ‘উয়েভিং স্কুল’ নামে ঢাকার নারিন্দায় একটি প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছিল। সময়ের পরীক্রমায় প্রতিষ্ঠানটি আজ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে৷ পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা লাভের পর ১৯৫০ সালে এর নামকরণ করা হয়, ‘ইস্ট পাকিস্তান টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট’৷ পরবর্তিতে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়৷ ১৯৭৮ সাল থেকে এখানে চার বছর মেয়াদী বি.এসসি কোর্স চালু করা হয় এবং নামকরণ করা হয় ‘কলেজ অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি'(CTET)। দেশের চলমান অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১০ সালে টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার প্রস্তাব করা হলে বিলটি জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
০৭) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের কৃষি বিষয়ক একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত। দেশের কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়৷ কৃষিবিজ্ঞানের সকল শাখা এর আওতাভূক্ত। মানসম্পন্ন উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশে কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, প্রাণিবিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলী তৈরি করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য।
০৬) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সরকারী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রাউজান থানায় অবস্থিত। এর পূর্বতন নাম ছিল বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), চট্টগ্রাম এবং তার পূর্বে চট্টগ্রাম প্রকৌশল কলেজ। প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী এখানে প্রকৌশল, স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনা ও বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেন।
অনুষদ ও বিভাগ
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এ বর্তমানে ৫ টি অনুষদের অধীনে ১৩ টি বিভাগ রয়েছে।
০৫) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের একটি অন্যতম এবং একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার অদূরে সাভার এলাকায় প্রায় ৬৯৭.৫৬ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। ১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও সম্পূর্ণরূপে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সালে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানবিকী, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক, সমাজ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও আইন অনুষদ এবং ৪ টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের নাম ড. ফারজানা ইসলাম। উপাচার্য ড.ফারজানা ইসলাম বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে ২০১৪ সালের ২ রা মার্চ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুষদ ও বিভাগ
বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ টি অনুষদের অধীনে ৩৫ টি বিভাগ রয়েছে।
০৪) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে চবি)
চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশের সরকারি বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় স্থাপিত হয়। এটি দেশের তৃতীয় এবং শিক্ষাঙ্গণ আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়।[২] ২০১৯ সালের হিসাবে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৭,৮৩৯ শিক্ষার্থী এবং ৮৭২ জন শিক্ষক রয়েছেন৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল।
অনুষদ ও বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৯টি অনুষদে ৫২টি বিভাগ রয়েছে।
০৩) খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)
বাংলাদেশের একটি অন্যতম সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগের খুলনা জেলায় অবস্থিত। পূর্বে এর নাম ছিল বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি, খুলনা ও তারও আগে, খুলনা প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম। এখানে প্রায় ৬ হাজার জন ছাত্রছাত্রী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রকৌশল ও বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছে। এখানকার শিক্ষক সংখ্যা ৩২০-এরও অধিক। এছাড়া ১৩২ জন কর্মকর্তা ও ২৯২ জন কর্মচারী আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অঙ্গন সম্প্রসারণে নতুন কিছু ভবন তৈরি করা হয়েছে যেমন- একাডেমিক ভবন, অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্স, ছাত্রাবাস, গ্রন্থাগার, শিক্ষক ডরমিটরি ভবন ইত্যাদি এবং আরও কিছু ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খুলনা শহর থেকে ১৪ কি.মি. উত্তরে, যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে ফুলবাড়ীগেটে অবস্থিত।
অনুষদ ও বিভাগ
কুয়েটে ৩টি অনুষদের অধীনে মোট ২০টি বিভাগ আছে। এর মাঝে ১৬ টি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
০২) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে: বাপ্রবি)
হচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল-সম্পর্কিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ঢাকা শহরের পলাশী এলাকায় অবস্থিত।১৮৭৬ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ রাজ ঢাকা সার্ভে স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল সেই সময়কার ব্রিটিশ ভারতের সরকারি কাজে অংশগ্রহণকারী কর্মচারীদের কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা। ১৯০৫ সালে ঢাকার তৎকালীন খাজা আহসানউল্লাহ এ বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী হন এবং মুসলমানদের শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রগতির জন্য বিদ্যালয়ে ১.১২ লক্ষ টাকা দান করেন।
অনুষদ ও বিভাগ
বুয়েটে বর্তমানে ৫ টি অনুষদের অধীনে ১৮ টি বিভাগ রয়েছে।
০১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে ঢাবি)
ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়; যা বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষত্ব হলো বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এর বিশেষ অবদান ছিল। যেখানে দেশের সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে বিশেষ অবদান রেখেছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন। এছাড়া, এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এশিয়া উইকের পক্ষ থেকে শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়।এটি এশিয়ার সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৪তম। এখানে প্রায় ৩৮,০০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ১,৮০৫ জন শিক্ষক রয়েছে৷
বাংলাদেশের সেরা ১০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
০১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে ঢাবি)
০২) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
০৩) খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
০৪) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
০৫) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
০৬) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
০৭) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
০৮) বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
০৯) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১০) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে: https://bn.wikipedia.org