মিছিল কবিতা – রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। নবম দশম শ্রেণি

মিছিল কবিতা

এই পোস্টে মিছিল কবিতা টি দেওয়া হয়েছে। এই কবিতাটি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ লিখেছেন। এটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের একটি কবিতা। এখানে সম্পূর্ণ কবিতা টি শেয়ার করেছি। আপনাদের যাদের কবিতা টি প্রয়োজন, এখান থেকে পড়ুন। অথবা নিচে থেকে পিডিএফ সংগ্রহ করুন।

মিছিল কবিতা

এই অংশে মিছিল কবিতা দয়ে হয়েছে। এটি নবম দশম শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এখান থেকে সম্পূর্ণ কবিতা টি পড়ুন।

মিছিল
_রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

যে যাবে না সে থাকুক, চলো, আমরা এগিয়ে যাই।
যে-সত্য জেনেছি পুড়ে, রক্ত দিয়ে যে-মন্ত্র শিখেছি,
আজ সেই মন্ত্রের সপক্ষে নেবো দীপ্র হাতিয়ার।
শ্লোগানে কাঁপুক বিশ্ব, চলো আমরা এগিয়ে যাই।

প্রথমে পোড়াই চলো অন্তর্গত ভীরুতার পাপ,
বাড়তি মেদের মতো বিশ্বাসের দ্বিধা ও জড়তা।
সহস্র বর্ষের গ্লানি, পরাধীন স্নায়ুতন্ত্রীগুলো,
যুক্তির আঘাতে চলো মুক্ত করি চেতনার জট।

আমরা এগিয়ে যাবো শ্রেনীহীন পৃথিবীর দিকে,
আমাদের সাথে যাবে সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস,
অনার্যের উষ্ণ লহু, সংঘশক্তি, শিল্পে সুনিপুন
কর্মঠ, উদ্যমশীল, বীর্যবান শ্যামল শরীর।

আমাদের সাথে যাবে ক্ষেত্রভূমি, খিলক্ষেত্র, নদী,
কৃষিসভ্যতার স্মৃতি, সুপ্রাচীন মহান গৌরব।
কার্পাশের দুকূল, পত্রোর্ন আর মিহি মসলিন,
আমাদের সাথে যাবে তন্তু-দক্ষ শিল্পীর আঙুল।

দ্বিধাহীন ঋজু মাথা, চলো, আমরা এগিয়ে যাই,
সামন্ত জঞ্জালগুলো ঝেড়ে ফেলি বলিষ্ঠ আঘাতে।
সম্পর্কের বনেদি পোশাক আর বাতিল নিয়ম
ঝেড়ে ফেলি এসো আজ বৈষম্যের সকল ধারনা।

লক্ষ্যস্থির আমাদের, চলো, সামনে এগিয়ে যাই।
আমাদের সাথে যাবে তিতুমীর, সিপাহী বিপ্লব,
আমাদের সাথে যাবে অস্ত্রাগার দখলের হাত,
কাল বোশেখির মতো রক্তবীজ, বিপুল উত্থান।

উত্তাল বাংলার রোষে ছিন্নভিন্ন বেনিয়া বৃটিশ,
বিলুপ্ত নীলের চাষ, পীড়নের দুইশো বছর।
শোষক বদলে যায়, টিকে থাকে শোষনের ফাঁদ,
মসনদে নব প্রভু জন্ম নেয় নতুন শোষক।

চলো, আমরা এগিয়ে যাই, আমাদের সাথে যাবে
বায়ান্নর শহীদ মিনার, যাবে গণ অভ্যুত্থান,
একাত্তুর অস্ত্র হাতে সুনিপুন গেরিলার মতো।
আমাদের সাথে যাবে ত্রিশ লক্ষ রক্তাক্ত হৃদয়।

শোষক বদলে যায়, টিকে থাকে শোষনের ফাঁদ,
টিকে থাকে শ্রেণিভেদ, ঘুনে ধরা জীর্ন সমাজ কাঠামো।
পতাকা বদলে যায়, বদলায় মানচিত্র-সীমা,
টিকে থাকে গৃহহীন, বস্ত্রহীন ক্ষুধার্ত জীবন।

আমরা এগিয়ে যাই শ্রেণিহীন পৃথিবীর দিকে,
চলো যে-হাত শ্রমের হাত, যে-হাত শিল্পের হাত,
যে-হাত সেবার হাত, সে-হাত সশস্ত্র করি, চলো,
আমরা সশস্ত্র হোই সমতার পবিত্র বিশ্বাসে।

মিছিল কবিতার কবি পরিচিতি

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (জন্ম: ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর, মৃত্যু: ১৯৯১ সালের ২১ জুন) একজন প্রয়াত বাংলাদেশী কবি ও গীতিকার যিনি ” প্রতিবাদী রোমান্টিক” হিসাবে খ্যাত। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি বাংলাদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি তাদের অন্যতম।

তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম “যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক, সে মাঠে আজ বসে নেশার হাট”, “বাতাসে লাশের গন্ধ”। এই কবির স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে “রুদ্র স্মৃতি সংসদ”। বিখ্যাত এবং বিতর্কিত বাংলাদেশী নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে তিনি ১৯৮১ সালে বিয়ে করেন এবং ১৯৮৬ সালে তাঁদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তাঁর পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাস করেন।

কাব্যগ্রন্থঃ
উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯)
ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম ১৯৮২
মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪)
ছোবল (১৯৮৬)
গল্প (১৯৮৭)
দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮)
মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট থেকে মিছিল কবিতা পিডিএফ  সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়।  আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

সাহসী জননী বাংলা কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

পিডিএফ সাহসী জননী বাংলা mcq ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর –

সাহসী জননী বাংলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর -PDF