বঙ্গবাণী কবিতা- আবদুল হাকিম। বাংলা ১ম পত্র এস এস সি

বঙ্গবাণী কবিতা

এই পোস্টে বঙ্গবাণী কবিতা টি দেওয়া হয়েছে। কবিতাটি লিখেছেন আব্দুল হাকিম। এই কবিতা থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন করা হয়। তাই কবিতাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিচের দিকে এই কবিতার একটি পিডিএফ ফাইল দেওয়া আছে। তো যারা কবিতা টি পিডিএফ সংগ্রহ করতে চান তারা নিচে থেকে করে নিবেন। তাহলে চলুনবঙ্গবাণী কবিতা টি শুরু করা যাক।

বঙ্গবাণী কবিতা

বঙ্গবাণী
– আবদুল হাকিম

কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস।
সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ।।
তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন।
নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন।।

আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।
দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ।।
আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত।
যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত।।

যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।।
সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী।
বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।।

মারফত ভেদে যার নাহিক গমন।
হিন্দুর অক্ষর হিংসে সে সবের গণ।।
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।।
মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।।

বঙ্গবাণী কবিতার ব্যাখ্যা

নিচে এই কবিতাটি ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে। অনেক কবিদের লেখা গুলো কে বুঝতে পারেন না। তাই এখানে সহজ ভাবে কবিতা টি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ কবিতাটি ব্যাখ্যা পড়ে নিন।

সাধারণত বই-পুস্তক পড়া যাদের অভ্যাস নয়, এমন লােকেরা কবিকে তাদের মনের প্রবল ইচ্ছার কথা জানালেন। তাদের কথা শুনে কবি বুঝতে পারলেন, কেন তারা পড়তে পারেন না। যে ভাষায় বই-পুস্তক লেখা হয়, তা সাধারণের বােধগম্য ভাষা নয়, সেই ভাষায় তারা একে অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময় করেন না। তারা স্বাভাবিকভাবেই মাতৃভাষায় কথা বলে থাকেন। কাজেই মাতৃভাষাতেই বই-পুস্তক রচনা করা উচিত; তা হলে তারা তা পড়তে পারবেন। এ কারণে তাদের কথা বিবেচনা করে, তাদের আত্মতুষ্টি এবং পড়ার অভ্যাস গড়ে তােলার মানসে কবি মাতৃভাষায় গ্রন্থ রচনায় মনােনিবেশ করেন।

বঙ্গবাণী কবিতা

অন্য কোনাে ভাষার প্রতি কবির কোনাে রাগ নেই। আরবিফারসি ভাষার প্রতিও তিনি বিদ্বেষী নন। কারণ তিনি জানেন এসব ভাষায় আল্লাহ্ ও মহানবির নানান প্রশংসা, স্তুতি বর্ণিত হয়েছে। এসব ভাষার প্রতি সাধারণ মানুষও শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ঐসব ভাষায় জ্ঞানচর্চা করা সাধারণের পক্ষে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে যদি দেশি ভাষায় অর্থাৎ তাদের নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। তাদের মনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। এতে করে তারা প্রকৃত সত্যকে সহজে অনুধাবন ও গ্রহণ করতে পারবে। তাতে আরবি, ফারসি, হিন্দি প্রভৃতি ভাষার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবােধ আরও বেড়ে যাবে। মাতৃভাষার জ্ঞান দিয়ে তারা অন্য ভাষা বুঝতে পারবে।

বঙ্গবাণী কবিতা ব্যাখ্যা

যারা সাধনা করেনি তারা স্রষ্টাকে পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারেনি। স্রষ্টাকে সম্যকভাবে জানার জন্য মরমি সাধনার প্রয়ােজন, যারা তা করেনি, তারাই আরবি-ফারসি ভিন্ন অন্য ভাষাকে হিংসা করে। তাদের জ্ঞানের দীনতা প্রবল। এক্ষেত্রে কবির চিত্তে তীব্র ক্ষোভ জমে। মারফতে জ্ঞানহীন সেসব ক্ষীণচিন্তার মানুষকে তিনি ভৎসনা করেন। এই বাংলা ভাষাবিদ্বেষীদের বংশ ও জন্ম পরিচয় সম্পর্কে কবি সন্দেহ পােষণ করেন। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, অথচ বাংলা ভাষার প্রতি মমতা নেই, শ্রদ্ধা নেই, তাদের এদেশে থাকার কোনাে অধিকার নেই।

কবি জানতে চান- স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি যাদের কোনাে অনুরাগ নেই তারা কেন এদেশ পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায় না। কবি যুক্তি দেখিয়ে বলেন যে বংশানুক্রমে বহুকাল ধরে এদেশেই তার বসতি, এদেশ তার প্রিয় মাতৃভূমি। এদেশের মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। মাতৃভাষায় বলা কথা তার মর্ম স্পর্শ করে। এ ভাষাতেই এদেশের মানুষের অনুরাগ-অনুভূতির পূর্ণ প্রকাশ ঘটে। এ ভাষার চেয়ে হিতকর আর কোনাে ভাষা নেই। তিনি বলেন বাংলা ভাষায় যত উপদেশ বাণী রচিত হবে, তা আমাদের পুনঃপুন মনকে জাগিয়ে তুলবে। আত্মবিশ্বাসী কবি এ কবিতায় সেটিই প্রত্যাশা করেছেন।

বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা
মাগো তোমার কোলে, তোমার বোলে কতই শান্তি ভালবাসা ।
আ মরি বাংলা ভাষা।
কি জাদু বাংলা গানে, গান গেয়ে দীড় মাঝি টানে,
গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা
বাজিয়ে রবি তোমার বীণে, আনল মালা জগৎ জিনে
তোমার চরণ তীর্থে মাগো জগৎ করে যাওয়া আসা
আ মরি বাংলা ভাষা ।

ক. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় ‘নিরঞ্জন’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
খ. “দেশি ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে “বঙ্গবাণী” কবিতার যে ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের কবির চেয়ে আবদুল হাকিমের অবস্থান সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ- ‘বঙ্গবাণী” কবিতার আলোকে-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর দেখুন

ক) বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

খ) ডেসি ভাষা বুঝিতে লোলাতে ভাভ বলতে কবি নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়াকে বুঝিয়েছে। বঙ্গবাণী কবিতায় কবি মানুষের অনুভূতি প্রকাশের প্রধান মাধ্যমে হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার কাছে মাতৃভাষাই শ্রেষ্ঠ। আরভি ফারসি ভাষায় তার কোনো বিদ্বেষ নেই। কিনতি আরভি ফারসি ভাষায় জ্ঞান চর্চা করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষত্রে নিজের মাতৃভাষায় যদি শিক্ষা ও মজ্ঞান লাভের সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে তাদের ভাগ্য সুপ্রস্নন্ন হবে বলে কবি বলেছেন। কইবি মনে করেন মানুষ তার শিকল আশা আবেগ মাতৃভাষা প্রকাশ করতে ভালোবাসেন। প্রশ্ন উক্ত লাল দ্বারা এটাই বুঝিয়েছেন।

গ) উদ্দীপকের বঙ্গবানী কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও গভীর অনুরাগের কথা বলা হয়েছে। নিচে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।

মানুষের মনের ভাব প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হছে তার নিজস্ব ভাষা। আর আমাদের নিজস্ব ভাষা হচ্ছে বাংলা। তাই আমরা মাতৃভাষা বাংলায় নিজেদের আশা, আবেগ, অনুরাগ ইত্যাদি প্রকাশ করি। পৃথিবীর অনেক জাতি তাদের মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে। দেশের মানুষ দেশ ভালোবাসার পাশা পাশী তাদের মাতৃভাষার প্রতি খুবই আবেগ পূর্ণ।

উদ্দীপকের কবাতাটিতে মাতৃভাষা বাংলারপ্রতি মানুষের অনুরাগের প্রকাশ পেয়েছে। তারা দেশ কে যেমন ভালোবাসে ঠিক তেমনি নিজের মাতৃভাষা কেও অনেক ভালোবাসে। মাতৃভাষায় নিজের মনের ভাব সবার সাথে শেয়ার করতে খুব পছন্দ করে। এই ভাষা হচ্ছে বাগালিদের একমাত্র ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই কবিতায় কবি মাতৃভাষাতেই কবি মনের প্রশান্তি খুঁজে পায়। এই বঙ্গবাণী কবিতায় কই তার নিজ ডেশের ভাষার স্মৃতি রক্ষায় বলেছেন। কবি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার জন্য ও জ্ঞান চর্চার জন্য বিশেষ ভাবে আরোপ করেছেন। কারণ এই ভাষার সঙ্গে বাঙ্গালি জাতির প্রটেক্টই উপাধান জড়িতও।

ঘ) উক্ত ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের কবির চেয়ে আব্দুল হাকিমের অবস্থান সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ। মন্তব্যটি যথার্থ তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।

মাতৃভাষা হছে মায়ের ভাষা। এই ভাষা এক জাতি হতে অন্য জাতিতে বিকাশ ঘটে। আমরা সবাই জন্ম থেকেই মাতৃভাষার সাথে পরিচিত। তাই এই ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারাটা খুবই আনন্দের বিষয়। বাঙ্গালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা ও মায়ের মুখের ভাষা। তাই প্রত্যেকে নিকের ভাষায় অনুরাগ প্রকাশ করে থাকে।

উদিপক থেকে আমরা দেখতে পাই কবি বাংলা ভাষার প্রতি তার গভীর অনুরাগ প্রকাশ করেছে। বাংলাভাষা কবির আশা ও অনুরাগের সাথে মিশে গেছে। কবি এই ভাষায় গান সুনার জন্য অনেক ব্যাকুল। কবির মতে বাংলাভাষার সুরে যে যাদু আছে তা প্রকাশ করা যায় না। উদ্দীপকের কবির সাথে বঙ্গবাণী কবিতার কবির অনুভব একই সুরতে গাথা।

বঙ্গবাণী কবিতায় কবি স্বভাষায় বিরোধ কারিদের এদেশ ছেরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিদেশি ভাষার অনুরাগীদের কবি পছন্দ করেন না। কারণ তিনি মাতৃভাষায় শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার জন্য পরামর্শ দেন। কবি এই কবিতায় মারফতে জ্ঞানহীন দের যে উপদেশ বানী শুনিয়েছেন তা উদ্দীপকে নেই। এই দিক থেকে উদ্দীপক ও বঙ্গবাণী কবিতায় মন্তব্যটি যথার্থও।

বঙ্গবাণী কবিতা জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

প্রশ্ন ১৬। কবি কাদের জন্ম পরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন?
উত্তর: বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে বাংলা ভাষাকে যারা হিংসা করে কবি তাদের জন্মপরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন ১। মধ্যযুগের অন্যতম কবি কে?
উত্তর: মধ্যযুগের অন্যতম কবি হলেন আবদুল হাকিম।

প্রশ্ন ২। আবদুল হাকিম কোন যুগের অন্যতম প্রধান কবি?
উত্তর: আবদুল হাকিম মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান কবি।

প্রশ্ন ৩। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ কবিত কবির ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ৪। মানুষের সব ভাষা বোঝেন কে?
উত্তর: সৃষ্টিকর্তা মানুষের সব ভাষা বোঝেন।

প্রশ্ন ৫। কবি কাদের বিদেশে যেতে বলেছেন?
উত্তর: কবি তাদের বিদেশে যেতে বলেছেন যাদের দেশি ভাষার প্রতি অনুরাগ নেই।

প্রশ্ন ৬। মাতৃভাষা কী?
উত্তর: শিশু প্রথম মায়ের মুখ থেকে যে ভাষায় কথা বলতে শেখে তা-ই তার মাতৃভাষা।

প্রশ্ন ৭। কবি আবদুল হাকিম কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: কবি আবদুল হাকিম ১৬২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন ৮। সৃষ্টিকর্তা কোন কোন ভাষা বুঝতে পারেন?
উত্তর: সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সব ভাষাই বুঝতে পারেন ।

প্রশ্ন ৯। ‘জুয়ায়’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: জুয়ায় শব্দের অর্থ জোগায়।

প্রশ্ন ১০। কারা হিন্দুর অক্ষরকে হিংসা করে?
উত্তর: মারফতে জ্ঞানহীনরা হিন্দুর অক্ষরকে হিংসা করে।

প্রশ্ন ১। ‘হিংসে’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: ‘হিংসে’ শব্দটির অর্থ বিদ্বেষ পোষণ করে।

প্রশ্ন ১২। আরবি-ফারসি ভাষার প্রতি কবির কী নেই?
উত্তর: আরবি-ফারসি ভাষার প্রতি কবির রাগ বা দ্বেষ নেই।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভাললেগেছে। এই পোস্ট টি ভালোলেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন। আশা করছি আপনারা বঙ্গবাণী কবিতা সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।  আজকের মতো এখানেই শেষ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আরও দেখুনঃ

বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর Pdf File সংগ্রহ

বঙ্গবাণী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর