এসএসসি ২০২১ পৌরনীতি ও নাগরিকতা এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১

এসএসসি ২০২১ পৌরনীতি ও নাগরিকতা এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১

বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো (কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসন) বিশ্লেষণ


ক) বাংলাদেশে প্রশাসনিক কাঠামাে বিশ্লেষণ :


রাষ্ট্রের শাসন কার্য পরিচালনার দায়িত্ব প্রশাসনের। রাষ্ট্রের ভিতরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সুস্থ প্রশাসনের কোনো বিকল্প নেই। প্রশাসনকে তাই বলা হয় রাষ্ট্রের হৃদপিন্ড। প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। নিচে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর ছকের সাহায্যে তুলে ধরা হলোঃ

উপরের ছকের লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর স্তর ভিত্তিক। এর দুটি প্রধান স্তর আছে। প্রথম স্তরটি হল কেন্দ্রীয় প্রশাসন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে দ্বিতীয় স্তরটি হল মাঠ প্রশাসন। মাঠ প্রশাসনের প্রথম ধাপ হলো বিভাগীয় প্রশাসন। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার পর আছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশের সব ধরনের প্রশাসনিক নীতি ও সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গ্রহণ করা হয়। আর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্ত মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে সারাদেশে বাস্তবায়িত হয়।

মাঠ প্রশাসন মূলত কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত আছে বিভিন্ন বিভাগ বা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের/ দপ্তরের প্রধান হলেন মহাপরিচালক /পরিচালক। মন্ত্রণালয়ের অধীনে আরো আছে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, বোর্ড ও কর্পোরেশন। এসব দপ্তর ও অফিসের কোনো কোনোটির কার্যকলাপ আবার বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। দপ্তর /অধিদপ্তর গুলো সচিবালয়ের লাইন সংস্থা হিসেবে বিভিন্ন সরকারি কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন।
খ) বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসন বিশ্লেষণ :

সচিবালয় কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। দেশের সকল প্রশাসনিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সচিবালয় কয়েকটি মন্ত্রণালয় নিয়ে গঠিত। এক একটি মন্ত্রণালয় এক একজন মন্ত্রীর অধীনে ন্যস্ত। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব আছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান এবং মন্ত্রীর প্রধান পরামর্শদাতা। মন্ত্রণালয়ের সকল প্রশাসনিক ক্ষমতা সচিবের হাতে। মন্ত্রীর প্রধান কাজ প্রকল্প প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণ। আর মন্ত্রীকে নীতি-নির্ধারণেও শাসনকার্য সহায়তা করা এবং এসব নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সচিবের।


অতিরিক্ত সচিব মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি সচিবকে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে সহায়তা করেন। কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিব না থাকলে তিনি সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিটির অণুবিভাগ জন্য একজন করে যুগ্মসচিব থাকেন। তিনি সচিবকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী এবং অফিস ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়ের এক বা একাধিক শাখার দায়িত্বে থাকেন একজন উপসচিব। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে নীতিনির্ধারণে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবকে পরামর্শ দেন ও সহযোগিতা করেন।

প্রতি শাখায় একজন সিনিয়র সহকারী সচিব ও একজন সহকারী সচিব রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপসচিবের সাথে পরামর্শ করে তারা দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়ের আরও বিভিন্ন ধরনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। তারাও মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে চালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, সরকারের কয়টি মন্ত্রণালয় থাকবে এবং একটি মন্ত্রণালয় কতজন অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারি সচিব থাকবেন তার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি অনুযায়ী তাদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়ে থাকে।


বিভাগীয় প্রশাসনের গঠন ও কার্যাবলী :

বাংলাদেশ আটটা বিভাগ আছে। প্রতিটি বিভাগে প্রশাসনিক প্রধান হলেন একজন বিভাগীয় কমিশনার। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বিভাগে প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর কাজের জন্য দায়ী থাকেন। বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসকদের কাজ তদারক করেন বিভাগের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধান করেন। ভূমি রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা হলেও খাসজমি তদারক করেন। তিনি জেলা প্রশাসকদের বদলি করতে পারেন। বিভাগের ক্রিয়া উন্নয়ন, শিল্পকলা, সাহিত্য, সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করেন। জনকল্যাণ মূলক কাজ পরিচালনা করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন করেন।

জেলা প্রশাসকদের কাজ তদারক, পর্যবেক্ষণ, ও নিয়ন্ত্রণ করা বিভাগীয় কমিশনারের প্রধান কর্তব্য। তিনি তাঁর অধিক্ষেত্রাধীন জেলাসমূহের কাজের সমন্বয় সাধন করেন । বিভাগীয় কমিশনার বিভাগীয় প্রশাসনের মূল নিয়ন্ত্রক। কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কার্যাবলী বিভাগীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনার তত্ত্বাবধান করেন।

বদলি, পদায়ন সংক্রান্তঃ


বিভাগীয় কমিশনার তাঁর বিভাগাধীন সকল জেলা এবং উপজেলায় সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভুমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বদলি এবং পদায়ন করেন। তাছাড়া, ভূমি অফিসে কর্মরত ভূমি উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ারদের বিভাগাধীন আন্তঃজেলা বদলি করেন।

প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকিঃ


বিভাগীয় পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কার্যাবলী সমন্বয় সাধন বিভাগীয় কমিশনারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব । এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার বিভাগাধীন জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের কার্যক্রম তদারকি করেন, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং এ সংক্রান্ত অগ্রগতি, মূল্যায়ন সময়ে সময়ে সরকারকে অবহিত করেন।

রাজস্ব সংক্রান্তঃ


বিভাগের ভূমি রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত কার্যাবলী পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন । তিনি বিভাগের প্রধান রাজস্ব অফিসার হিসেবে রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করন । রাজস্ব বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের আদেশের বিরুদ্ধে তিনি আপিল শুনানী গ্রহন করে থাকেন ।

মাসিক সভা সংক্রান্তঃ


বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতি মাসে টাস্ক ফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন শৃঙ্খলা সভা, বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলন, বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভা এবং ত্রৈমাসিকভাবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনী বোর্ড সংক্রান্তঃ
বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকার বলে বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ডের সভাপতি। এ বোর্ড তাঁর কার্যালয়, ডিআইজির কার্যালয়, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, বিভাগাধীন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে তৃতীয় এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন।

পরিদর্শন সংক্রান্তঃ


তিনি নিয়মিতভাবে বিভাগাধীন সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয় পরিদর্শন করেন। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারী কার্যালয়, প্রতিষ্ঠান. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দর্শন ও পরিদর্শন করেন।

আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্তঃ


পুলিশ রেগুলেশনস অফ বেঙ্গল (পিআরবি) ১৮৬১ অনুযায়ী পুলিশের উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্ব পালন।

প্রটোকল সংক্রান্তঃ


বিভাগীয় কমিশনার বিভাগীয় পর্যায়ের প্রোটকল প্রধান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে তিনি প্রধান প্রটোকল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।

আপিল আদালত পরিচালনা সংক্রান্তঃ


বিভাগীয় কমিশনার রাজস্ব মামলা, নামজারি মামলার আপিলেট কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত আপিল তিনি নিষ্পত্তি করেন।

অভিযোগ তদন্ত বিষয়কঃ


বিভাগীয় কমিশনার বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ছাড়াও যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তকার্য পরিচালনা করে থাকেন।

ত্রাণ ও দুর্যোগ সংক্রান্তঃ


বিভাগাধীন জেলা এবং উপজেলায় ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দের বিষয় তদারকি করেন। তাছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ে তিনি উদ্ধার কার্য মনিটরিং করেন।

রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয়াদিঃ


রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত কার্যাদি। সাইফার ও ডি-সাইফার সম্পর্কিত পুস্তকাদির সংরক্ষণ এবং প্রাপ্ত সাইফার বার্তা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ। গোপনীয় পুস্তকাদির নিরাপদ হেফাজত সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রেরণ। KPI এর নিরাপত্তা এর তদারকি। বিভাগীয় সার্বিক অবস্থার পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন সরকারের কাছে প্রেরণ।


গ) জেলা প্রশাসনের কার্যাবলী :

জেলা প্রশাসন মাঠ বা স্থানীয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন জেলা প্রশাসক। দেশের সব জেলায় একজন করে জেলা প্রশাসক আছেন। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে একজন অভিজ্ঞ সদস্য। তাকে কেন্দ্র করে জেলার সকল সরকারি কাজ পরিচালিত হয়। নিচের কাজগুলো সম্পর্কে জানবো।

১। প্রশাসনিক কাজঃ জেলা প্রশাসক কেন্দ্র থেকে আসা সকল আদেশ-নির্দেশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। জেলার বিভিন্ন অফিসের কাজ তদারক ও সমন্বয় করেন। জেলার বিভিন্ন শূন্য পদে লোক নিয়োগ করেন।

২। রাজস্ব সংক্রান্ত ও আর্থিক কাজঃ জেলা প্রশাসক জেলা কোষাগারের রক্ষক ও পরিচালক। জেলার সব ধরনের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব তার সে কারণে তিনি কালেক্টর নামে পরিচিত। এছাড়া তিনি ভূমি উন্নয়ন,রেজিস্ট্রেশন ও রাজস্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন মীমাংসা করে থাকেন।

৩। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত কাজঃ জেলার মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণের জীবনের নিরাপত্তা প্রধানের দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত। তিনি পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

৪। উন্নয়নমূলক কাজঃ জেলা প্রশাসক জেলার সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি বাস্তবায়নের দায়িত্ব তার। তিনি জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন।

৫। স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত কাজঃ জেলা প্রশাসক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলোর (উপজেলা পরিষদ পৌরসভা, ইউনিয়ন) কাজ তত্ত্বাবধান করেন। তিনি জেলার অধীনস্থ সকল বিভাগ ও সংস্থার কাজের সমন্বয় করেন।

জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে তিনি আরো অনেক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেলার সংবাদপত্র ও প্রকাশনা বিভাগ কে নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন জিনিসের লাইসেন্স দেওয়ার বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং সে সম্পর্কে সরকারের অবহতি করে। জেলা প্রশাসকের ব্যাপক কাজের জন্য তাকে জেলার ‘মূল স্তম্ভ’ বলা হয়। তিনি শুধু জেলা প্রশাসক নন। জেলার সেবক, পরিচালক এবং বন্ধুও বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *