এসএসসি ২০২১ পৌরনীতি এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৮ম সপ্তাহ
ক) নং প্রশ্নের উত্তর:
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন: বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট, অধস্তন আদালত এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে গঠিত। সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালতের নাম সুপ্রিম কোর্ট। এর রয়েছে দুটি বিভাগ, যথা:
১। আপিল বিভাগ ও
২। হাইকোর্ট বিভাগ।
সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রধান বিচারপতি রয়েছেন, যাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বলা হয়। রাষ্ট্রপতি তাকে নিযুক্ত করেন। প্রত্যেক বিভাগের জন্য যতজন বিচারক প্রয়ােজন ততজন বিচারককে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত।
প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ােগ দেন। প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিগণ বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে হলে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে কমপক্ষে ১০ বছর এডভােকেট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা বাংলাদেশে বিচার বিভাগীয় পদে ১০ বছর বিচারক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ ৬৭ বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে কর্মরত থাকতে পারেন।
খ) নং প্রশ্নের উত্তর:
বিচার বিভাগের ক্ষমতা: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের পৃথক কার্যের এখতিয়ার আছে। এ দুটি কোর্টের ক্ষমতা ও কাজ নিয়েই সুপ্রিম কোর্ট। নিচে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে:
আপিল বিভাগের ক্ষমতা ও কাজ:
আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে শুনানির ব্যবস্থা করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি আইনের কোনাে ব্যাখ্যা চাইলে আপিল বিভাগ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনাে ব্যক্তিকে আদালতের সামনে হাজির হতে ও দলিলপত্র পেশ করার আদেশ জারি করতে পারে।
আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘােষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য অবশ্যই পালনীয়।
এভাবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আইনের ব্যাখ্যা, ন্যায়বিচার সংরক্ষণ ও পরামর্শ দান করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ও কাজ:
নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
কোনাে ব্যক্তিকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোনাে কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে ধরনের কোনাে কাজ করাকে বেআইনি ঘােষণা করতে পারে।
অধস্তন কোনাে আদালতের মামলায় সংবিধানের ব্যাখ্যাজনিত জটিলতা দেখা দিলে উক্ত মামলা হাইকোর্টে স্থানান্তর করে মীমাংসা করতে পারে।
অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে। সকল অধস্তন আদালতের কারণ কার্যবিধি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে।
গ) নং প্রশ্নের উত্তর:
বিচার বিভাগের কার্যাবলী:
উপরে (খ এর উত্তরে) বর্ণিত কাজগুলাে ছাড়াও বিচার বিভাগ যে সমস্ত কাজ কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে তা নিম্নে আলােচনা করা হলাে,
ক) বিচার সংক্রান্ত: দেশের প্রচলিত আইনের সাহায্যে বিচার মাধ্যমে বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে শাস্তি না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিচার বিভাগকে বিচারকাজ সম্পাদন করতে হয়।
খ) নাগরিক অধিকাররক্ষা সংক্রান্ত: স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকার রক্ষার অন্যতম রক্ষাকবচ। বিনা অপরাধে গ্রেফতার ও বিনা বিচারে আটক রেখে কেউ যাতে কাউকে হয়রানি করতে না পারে সেদিকে বিচার বিভাগ নজর রাখে।
গ) আইনের ব্যাখ্যাদান সংক্রান্ত: আদালতে কোনাে মামলা পরিচালনার যখন বিচারকের নিকট অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবােধক মনে হয় তখন বিচারক উক্ত আইনের ব্যাখ্যা করে সঠিক অর্থ নির্ধারিত করেন এবং মামলা পরিচালনা করেন।
ঘ) আইন প্রণয়নমূলক: কোনাে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বিচারকগণ যদি দেখেন যে, সেই মামলা সংক্রান্ত আইনের অভাব রয়েছে তখন বিচারকগণ আইন তৈরি করে উক্ত মামলা পরিচালনা করেন।
ঙ) সংবিধান রক্ষা সংক্রান্ত: যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে বিরােধ মীমাংসা করে এবং সংবিধানকে সমুন্নত রাখে। কোনাে পক্ষ সংবিধানের ধারা লঙ্ঘন করলে বিচার বিভাগ তাকে উক্ত ধারা মানতে বাধ্য করে। আইন পরিষদ কোনাে আইন তৈরি করলে বিচার বিভাগ সেই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা যাচাই করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি হিউজেস (Hughes)’ বুলে, আমরা তার অধীনে বাস করি।
ঘ) নং প্রশ্নের উত্তর:
আইনের শাসন ও বিচার বিভাগ:
বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, অপরাধীর শাস্তিবিধান এবং দুর্বলকে সবলের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম।
সঠিক ও নির্ভুল আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করে থাকে বিচার বিভাগ। প্রয়ােজন হলে পুরাতন আইনের সংশােধন ও যুগােপযােগী নতুন আইন সৃষ্টি করে বিচার বিভাগ।
বিচার বিভাগ আইনের ব্যাখ্যা, ন্যায়বিচার সংরক্ষণ ও পরামর্শ দান করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিচার বিভাগ আইনের অনুশাসন ও দেশের সংবিধানকে অক্ষুন্ন রাখে। এভাবে বিচার বিভাগ দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।