শবে বরাত পালনের নিয়ম ও করনীয় ২০২৪

শবে বরাত পালনের নিয়ম

আরবি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত, আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ভাগ্য। এই দুইটি শব্দ মিলিয়ে গঠিত শবে বরাত-এর অর্থ ‘ভাগ্য রজনী’ বা ‘ভাগ্যের রাত’ বা ‘ভাগ্য নির্ধারণের রাত’।  আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখে দিবাগত রাতে শবে বরাত পালন করা হয়। নামাজ, রোজা, ইবাদত ও বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে এই দিন পালন করা যাবে। তবে এই উৎসবে কিছু কাজ বর্জন করতে হবে। শবে বরাত পালনের নিয়ম ও করনীয় গুলো এখানে বিস্তারিত শেয়ার করা হয়েছে।

শবে বরাত পালনের নিয়ম

ইসলাম ধর্মে এই রাতকে বরকত পূর্ণ ও ভাগ্য পরিবর্তনের রাত বলা হয়। সাধারণত সাবান মাসের চাঁদ দেখা গেলে ১৪ তারিখে শবে বরাত পালন করা হয়। ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে বাংলাদেশে শোবে বরাত হতে পারে। বিভিন্ন ভাবে শবে বরাত পালন করা যাবে। যেমন নামাজ। দোয়া পাঠ, কুরআন পাঠ, রোজা ও বিভিন্ন আমল। তবে শবে বরাত পালনের নিয়ম গুলো অনুসরণ করতে হবে।

ইবাদত-বন্দেগী:

  • নামাজ পড়া।
  • তাহিয়াতুল ওযু: 2 রাকাত (প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি 1 বার, কুলহু আল্লাহ 3 বার)
  • দু’রাকাত নফল: (প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি 1 বার, কুলহু আল্লাহ 15 বার)
  • 8 রাকাত নফল: (দু’রাকাত করে, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা, কুলহু আল্লাহ 5 বার)
  • শবে বরাতের বিশেষ নামাজ: (12 রাকাত, বিভিন্ন সূরা ও দোয়া)
  • তাশবিহ, তাহলিল, দরুদ শরীফ:
  • কোরআন তেলাওয়াত:
  • দোয়া-মুনাজাত:
  • শবে বরাতের আগের দিন রোজা রাখা
  • শবে বরাত ও শাবান মাসের 13, 14, 15 তারিখ রোজা রাখা
  • গরিব-দুঃখীদের সাহায্য:
  • ক্ষমা প্রার্থনা:
  • পরিবার-পরিজনের জন্য দোয়া:
  • পাপ-অন্যায় থেকে তওবা:
  • নির্দিষ্ট নামাজের বাইরে, নফল নামাজের সংখ্যা ও রাকাত ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
  • কোন নির্দিষ্ট নামাজ বা আমলের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
  • শবে বরাত কেবল রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি আত্ম-পরিশোধন ও নতুন করে জীবন শুরুর রাত।

শবে বরাত পালনের সময় করণীয়

বিভিন্ন হাদিস থেকে পবিত্র শাবান মাসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। শাবান মাসের মধ্যে সময়ে পবিত্র শবে বরাত পালন করা হয়। এ রাতে গোসল করা মুস্তাহাব, গোসলের পর দুই রাকাত তাহিয়াতুল অজুর নামাজ, তারপর দুই রাকাতের নিয়তে প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা ও সুরা ইখলাছ সহকারে ৮ রাকাত নামাজ আদায় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। নফল নামাজের পাশাপাশি আপনি চাইলে পরের দিন নফল রোজা রাখতে পারেন। কারণ রোজা রেখে ইবাদত করা অবশ্যই উত্তম। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করতে হবে। এছাড়াও আমাদেরকে আমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

শবে বরাত পালনে বর্জনীয় কাজ

শবেবরাতকে ঘিরে অনেক মুসল্লিগঞ্জ যেমন এবাদত বন্দেগি করে থাকেন তেমনি আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক আছে যারা এই রাতে বিভিন্ন বিধর্মীদের মত আচরণ করে থাকে। পবিত্র শবে বরাতের যেরকম নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয় ঠিক তেমনি কিছু কাজ থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে খামাখা ঘোরাঘুরি করা, অযাচিত আনন্দ-উল্লাস করা, বেহুদা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা, অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো, হালুয়া-রুটি বা খাবারদাবারের পেছনে বেশি সময় নষ্ট করা, ইবাদতে উদাসীনতা সমীচীন নয়। সুতরাং শবে বরাতের বর্জনীয় কাজ থেকে দূরে থেকে মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদেরকে এবাদত বন্দেগী করতে হবে।

শবে বরাতে যেসব কাজ করা যাবে না

শবে বরাত একটি পুণ্যময় রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি অশেষ রহমত বর্ষণ করেন। তবে এ রাতে কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। শবে বরাতে যেসব কাজ করা যাবে না সেগুলো নিচে দেওয়া আছে। তাই এই কাজ গুলো করা থেকে বিরত থাকবেন।

  • অল্প জ্ঞানের ভিত্তিতে বিদআত আমল করা:
  • বিশেষ পোশাক পরিধান করা
  • বিশেষ খাবার তৈরি করা
  • বিশেষ নামাজ পড়া
  • মসজিদে দলে দলে জড়ো হওয়া
  • রাত জেগে গান বাজনা করা
  • পাপাচার ও অসৎ কাজে লিপ্ত থাকা:
  • মিথ্যা বলা
  • চুরি করা
  • জুয়া খেলা
  • নিন্দা-চোগল করা
  • পরনারী/পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া
  • অন্যের প্রতি ঈর্ষা-বিদ্বেষ পোষণ করা:
  • অন্যের সম্পদ, স্ত্রী-সন্তান, সুখ-সমৃদ্ধির প্রতি ঈর্ষা করা
  • অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা
  • অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করা
  • গাফিল ও অলস থাকা:
  • এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা
  • ইবাদত-বন্দেগী থেকে বিরত থাকা
  • পাপ-অন্যায় থেকে তওবা না করা

শেষ কথা

শবে বরাত একটি পুণ্যময় রাত, যা বান্দাদের জন্য আল্লাহর অশেষ রহমত ও ক্ষমার বার্তা বহন করে। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ভাগ্যলিপি লিখে থাকেন। শবে বরাত পালনের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আন্তরিকতা। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, তাঁর ভয়ে কাঁপা, পাপ-অন্যায় থেকে তওবা এবং নেক আমলের প্রতি আগ্রহ থাকলেই শবে বরাতের পূর্ণ ফায়দা লাভ করা সম্ভব। তাই শবে বরাত পালনের নিয়ম গুলো মেনে চলবেন।

আরও দেখুনঃ

শবে বরাত নামাজের নিয়ম

শবে বরাত কত তারিখে ২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *