জাগো তবে অরণ্য কন্যারা সৃজনশীল ও উত্তর। পিডিএফ

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা সৃজনশীল

এই পোস্টে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা সৃজনশীল উত্তর দেওয়া আছে। মৌসুমি ফুলের গান মোর কণ্ঠে জাগে নাকো আর চারিদিকে শুনি হাহাকার।} ফুলের ফসল নেই, নেই কারও কণ্ঠে আর গান ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন সব মুখ ম্লান । মাটি অরণ্যের পানে চায় সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়ায়। জাগো তবে অরণ্য কন্যারা! জাগো আজি, মর্মরে মর্মরে ওঠে বাজি। নিচে থেকে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ সংগ্রহ করুন।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ঃ 

দোয়েল পাখি বাসা বেঁধেছে জবা গাছে। সোহেল তার নতুন ঘর তোলার জন্য আঙিনার অন্যান্য গাছের সাথে জবা গাছও কেটে ফেলে। দোয়েলের চোখে-মুখে বাসা হারানোর বেদনা। দোয়েল আর গান গায় না। ফুলের সাথে খেলা করে না। অন্যদিকে নিলয় তার বাড়ির আঙিনার খালি জায়গায় ফুল, ফল ও অন্যান্য গাছ লাগায়। গাছগুলোকে সে নিজের মতো ভালোবাসে। তার বাগান দেখে সকলের চোখ জুড়ায়। পাখিরা তার বাগানে চলে আসে। তারা গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন ফলের গাছ থেকে খাদ্য জোগাড় করে, ফুলের সাথে খেলা করে, গান গায়। দিনের শেষে নিশ্চিন্ত মনে বাসায় ফিরে ঘুমায়। নিলয়কে দেখে অনেকেই গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ হয়।

ক. গাছের নতুন পাতাকে কী বলে?
খ. বৃক্ষরে বক্ষরে বহ্নিজ্বালা বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
গ. দোয়েলের অভিব্যক্তিতে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.উদ্দীপকের নিলয়ের কর্মকান্ডের মধ্যেই কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে- বক্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ঃ 

গ্রামে একসময় বলা যায় কোনো গাছই ছিল না। সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত গ্রামবাসী বিশ্রামের জন্য কোনো গাছের ছায়া পাচ্ছে না দেখে কিশোর আফাজ উদ্দিন রাস্তার ধারে, বাজারের আশপাশে, খোলামাঠসহ আরও অনেক জায়গায় গাছ লাগাতে শুরু করেছিলেন। কিশোর বয়সের সে কাজটি বৃদ্ধ আফাজ উদ্দিন আজও করে যাচ্ছেন। তার ফলে বৃক্ষ গ্রাম নামে পরিচয় পেয়েছে আফাজ উদ্দিনের নাগরপুর।

ক. মাটি কীসের পানে চায়?
খ. মৌসুমি ফুলের গান কবির কণ্ঠে আর জাগে না কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আফাজ উদ্দিনের গ্রামের প্রথম অবস্থা জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার কোন দিক নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.“ আফাজ উদ্দিন যেন কবি সুফিয়া কামালের প্রত্যাশা পূরণে তৎপর।”-জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার আলোকে মন্তব্যটির বিশেস্নষণ কর।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

উত্তর ১ঃ 

ক. গাছের নতুন পাতাকে পলস্নব বলে।

খ. বৃক্ষরে বক্ষরে বহ্নিজ্বালা বলতে প্রকৃতিজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় বৃক্ষরে বুকের যন্ত্রণাকাতর অভিব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।মানুষ প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষপে করায় বন উজাড় হচ্ছে। নানা কারণে মানুষ বৃক্ষনিধন করছে। দিনের পর দিন তা বেড়েই চলেছে। এসব দেখে কবির মনে ধারণা জন্মেছে যে, এভাবে বৃক্ষ নিধনের কারণে বৃক্ষরে বুকে যন্ত্রণার আগুন জ্বলছে। বৃক্ষরে বক্ষরে বহ্নিজ্বালা বলতে কবির কল্পিত বৃক্ষরে বুকের এই যন্ত্রণার আগুনকেই বোঝানো হয়েছে।

গ.

দোয়েলের অভিব্যক্তিতে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় অস্তিত্ব বিপন্ন মানুষের দুঃখ ভারাক্রান্ত ব্যথিত হৃদয়ের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় বেগম সুফিয়া কামাল বৃক্ষ নিধনের নিদারুণ চিত্র তুলে ধরেছেন। তার রচনায় প্রকাশ পেয়েছে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রকৃতির বৃক্ষহীন, প্রাণহীন, মরুপ্রায় অবস্থা। আরও ফুটে উঠেছে, এভাবে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে পৃথিবীর মানুষ যারা খাদ্যের জন্য বৃক্ষরে ওপর নির্ভরশীল তাদের ভীতি ও শঙ্কিত মলিন মুখাবয়ব। তাই কবির কণ্ঠে আজ আর বসন্ত ফুলের গান বেজে ওঠে না। তার যন্ত্রণাকাতর হৃদয়ে আজ শুধু অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান।

উদ্দীপকে দোয়েল পাখির অভিব্যক্তিতেও কবির মতো একই বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কেননা সে সোহেলদের আঙিনার জবা গাছে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু নতুন ঘর তোলার জন্য সোহেল আঙিনার অন্যান্য গাছের সঙ্গে জবা গাছও কেটে ফেলেছে। দোয়েলের চোখে-মুখে আজ তাই বাসা হারানোর বেদনা। কবির মতো সেও আজ আর গান গায় না। খেলা করে না ফুলের সঙ্গে।

সামগ্রিক আলোচনায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আশ্রয়হীন দোয়েলের অভিব্যক্তিতে “জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় মানুষের অনিশ্চিত জীবনের বিপর্যয়ের দিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ.

উদ্দীপকে নিলয়ের কর্মকান্ডের মধ্যেই কবির প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।Ñবক্তব্যটি যথার্থ।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় দেখা যায়, পৃথিবীর মানুষের নির্বিচার বৃক্ষ নিধনে প্রকৃতি হয়ে পড়ছে প্রাণশূন্য। তাই কবি অত্যন্ত ব্যথিত ও ভারাক্রান্ত। তার কণ্ঠে আজ আর বসন্ত ফুলের গান জাগে না। চারপাশে সবুজ প্রকৃতির বিলীন হওয়া দেখে তার মন হাহাকার করে ওঠে। তাই আজ তার কণ্ঠে শুধু অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান। যাতে পৃথিবী নতুন করে আবার সবুজে শ্যামলে, ফুলে-ফলে ভরে ওঠে। আর এভাবে তারা ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করে বিপন্নতার হাত থেকে।

উদ্দীপকের নিলয় তার বাড়ির আঙিনায় ফুল, ফল ও অন্যান্য গাছ লাগায়। পাখিরা তার বাগানে ঘুরে বেড়ায় গাছ থেকে গাছে খাদ্য সংগ্রহ করে, ফুলের সঙ্গে খেলা করে, গান করে। দিন শেষে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়। তার বাগান দেখে সকলের চোখ জুড়ায়। বিপন্ন মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় কবির এ রূপ জগৎই ছিল প্রত্যাশিত। অর্থাৎ কবি বৃক্ষ নিধনের ভয়াবহতা অনুধাবন করে ব্যথিতচিত্তে যে উদ্দেশ্যে অরণ্য কন্যা বৃক্ষদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন, নিলয়ের কর্মকান্ডের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়েছে।

উত্তর ২ঃ  

ক. মাটি অরণ্যের পানে চায়।

খ. কবির কণ্ঠে গান না জাগার কারণ হলো অবাধে বৃক্ষনিধনের ফলে চারদিকের হাহাকার আর শুষ্ক পরিবেশ।

পরিবেশের দৈন্যের কারণে কবির কণ্ঠে মৌসুমি ফুলের গান আর জাগে না। মানুষ প্রতিনিয়ত বৃক্ষনিধন করছে। দিনের পর দিন এ বৃক্ষনিধন বেড়েই চলছে। চারদিকে অবাধ বৃক্ষনিধনের কারণে পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। সবুজের সমারোহ ¤স্নান হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু রুক্ষতা আর শূন্যতা। কোথাও প্রাণের চিহ্ন নেই। এসব দেখে কবির মন হাহাকার করে ওঠে। তাই মৌসুমি ফুলের গান আর কবির কণ্ঠে জাগে না।

গ.

প্রকৃতির থেকে সবুজের বিলীন হয়ে যাওয়ার যে দিকটি জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্দীপকেও বিদ্যমান।

আধিপত্যবাদী মানুষের লোভের কারণে প্রকৃতি আজ শ্রীহীন। প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল মানুষও আজ বিপন্ন।

এ চিত্রই প্রকাশিত হয়েছে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় এবং উদ্দীপকে। জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার কবি প্রকৃতির রূপহীনতা দেখে মর্মাহত। বৃক্ষ নিধনের ফলস্বরূপ গোটা জীবজগতের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে।

উদ্দীপকেও জীবজগৎ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যস্ত অবস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়। কবিতার মতো উদ্দীপকেও বৃক্ষ নিধনই বিরূপ বাস্তবতা সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। উদ্দীপক ও কবিতা উভয় ক্ষেেত্র প্রকৃতি ধ্বংসের বিরূপ প্রতিক্রিয়াকেই তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ উদ্দীপকে আফাজউদ্দিনের গ্রামের প্রথম অবস্থা প্রকৃতি থেকে সবুজের বিলীন হয়ে যাওয়ার দিকটিকেই নির্দেশ করে।

ঘ.

আফজাল উদ্দিন যেন কবি সুফিয়া কামালের প্রত্যাশা পূরণে তৎপর।” -এ মন্তব্যটি সঠিক।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় কবি সুফিয়া কামাল অরণ্য কন্যাদের জাগরণ তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের বিস্তত্মৃতির পরিবর্ধন কামনা করেছেন। এই প্রেরণাই অনুপ্রাণিত হয়ে কিশোর আফাজ উদ্দীন রাস্তার ধারে, বাজারের আশপাশে, খোলা মাঠসহ আরও অনেক জায়গায় গাছ লাগাতে শুরু করেছিলেন। কিশোর বয়সের সে কাজটি বৃদ্ধ আফাজ উদ্দিন আজও করে যাচ্ছেন। তার ফলে বৃক্ষগ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে নাগরপুর।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় কবি আশা প্রকাশ করেছেন সবুজের বৃক্ষরে সমারোহের। ফুলে ও ফসলে পুনরায় পৃথিবী ভরে উঠলেই পৃথিবীতে জীবজগতের অস্তিত্বকে হুমকির মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক পরিবেশ প্রদান করা সম্ভব হবে। উদ্দীপকের আফাজ উদ্দিনও কবির মতো প্রাকৃতিক বিরূপ বাস্তবতা লড়্গ্য করে এর সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। কবিতার মতোই সবুজের মাঝে সমাধান খোঁজার বাসনায় বনায়নের কাজে আত¥নিয়োগ করেন আফাজ উদ্দিন।

PDF জাগো তবে অরণ্য কন্যারা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য অপরিহার্য। প্রাণী মাত্রই খাদ্যের মুখাপেক্ষী। মানুষের খাবারে বিভিন্নতা আছে। যেমন : মাছ, মাংস, শাকসবজি। এই তিন প্রকার খাদ্যের সঙ্গেই গাছের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষভাবে এসব খাদ্য গাছের ওপর নির্ভরশীল, যাকে খাদ্যচক্র বলা হয়। গাছের সংখ্যা যত কমবে, খাদ্যের পরিমাণও তত কমবে। কিন্তু চাহিদা কমবে না বরং বাড়তে থাকবে। খাদ্য যত কমবে, পরিবেশের ভারসাম্য তত খারাপ হবে, যা বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। সুতরাং প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ও বিশ্বশান্তি রক্ষা করতে হলে পৃথিবীতে বৃক্ষরে সংখ্যা আরও অনেক বাড়াতে হবে।

ক. ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি কেমন?
খ. ফুলের ফসল নেইÑ চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ.“উদ্দীপকে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার সমগ্রভাব প্রকাশ পায়নি” – উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।

উত্তরঃ 

ক. ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন।

খ. ফুলের ফসল নেই- চরণটি দ্বারা বৃক্ষরে দৈন্য অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।

ফুল-ফসলের জন্য শক্তির প্রয়োজন। সবুজের প্রাচুর্যের প্রয়োজন। কিন্তু পারিপার্শ্বকি নির্মম আঘাতে সবুজ প্রাচুর্য হারাচ্ছে, বৃক্ষ নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। বৃক্ষ যদি সতেজ হয়, তবে ফুল এবং ফসলও ভালো হয়। আর বৃক্ষ যদি জীর্ণ কাতর হয়, তবে ফুল-ফসল হয় না। আলোচ্য চরণ দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।

গ.

উদ্দীপকে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা বৃক্ষকে জেগে ওঠার যে আহ্বান সে দিকটিই মিল রয়েছে।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় পৃথিবীর মুমূর্ষু অবস্থা দেখে কবি ব্যথিত। প্রকৃতির প্রাচুর্য কমে যাওয়ায় পৃথিবী নিরানন্দ হয়ে পড়েছে। মানুষের মনে সুখ নেই। ফুলের ফসল নেই। পাখির গান নেই। চারদিকের হাহাকার শুনে কবি স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। পৃথিবীর এ বিষণ্ণ অবস্থার জন্য একমাত্র পরিবেশের দৈন্যই দায়ী। কবি মুমূর্ষু পৃথিবীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে বৃক্ষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা আবার জেগে ওঠে। মূলত এর দ্বারা কবি মানুষকেই সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের অপরিহার্যতা উদ্দীপকে আলোচিত হয়েছে। কারণ পৃথিবীর সর্বপ্রকার খাদ্যই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে গাছপালার ওপর নির্ভরশীল। গাছপালা যত কমবে, খাদ্যের উৎপাদন তত কমবে। আর খাদ্য যত কমবে, মানুষের মধ্যে চাহিদা তত বাড়বে। ফলে সৃষ্টি হবে দুর্ভিক্ষ, যা বিশ্বশান্তির জন্য প্রবল হুমকিস্বরূপ। মূলত মানুষের জীবন রক্ষার্থে ও বিশ্বশান্তি ঠিক রাখতে গাছপালা অপরিহার্য। অর্থাৎ উদ্দীপকে মূলত জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার পরিবেশ রক্ষায় মানুষের সচেতনতা তথা বৃক্ষরোপণে মানুষের উদ্যোগী হওয়ার দিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ.

উদ্দীপকে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশ পায়নি”- উক্তিটি যথার্থ।

গাছের অভাবে চারপাশের প্রকৃতি আজ বিপন্ন। বৃক্ষরে অন্তরে আজ দুর্বিষহ জ্বালা। কবিতায় এসব বিষয় উঠে আসলেও উদ্দীপকে কেবল বৃক্ষরে অভাবে বিপন্ন পরিবেশের দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে।

খাদ্যের অভাবে প্রাণের বিপন্নতা ছাড়াও আরও অনেক ভাবের প্রকাশ ঘটেছে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায়। মাটি জীবনরস সঞ্চয়ের জন্য গাছের পানে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। কারণ গাছ থাকলেই মাটিতে প্রাণের আবাদ ঘটবে। এছাড়া বৃক্ষরে অন্তরের দুর্বিষহ যন্ত্রণাও প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ পৃথিবীর গাছ বিনা প্রয়োজনে নিধন করে। কিন্তু বৃক্ষরে অভাব, তা পূরণ করে না, এই কারণে বৃক্ষরে মনে অনেক জ্বালা রয়েছে।

বিশ্বশান্তি রক্ষায় বৃক্ষরে প্রয়োজনীয়তা উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ গাছপালার মুখাপেক্ষী। পৃথিবীর গাছ যত বিনাশ হবে, খাদ্য তত কমবে, খাদ্য যত কমবে, চাহিদা তত প্রকট হবে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। খাদ্য সংকট প্রাণিকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন করবে এবং বিশ্বশান্তিতে চরম আঘাত হানবে। তাই, প্রাণিকুলের জীবন রক্ষার্থে ও বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে গাছের পরিমাণ বাড়াতে হবে। উদ্দীপকে বৃক্ষরে অভাবে প্রাণিকুল ও বিশ্বশান্তি পরিস্থিতি কেমন হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলেও জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় আলোচিত বৃক্ষরে মর্মজ্বালা ও পরিবেশের হাহাকারের ভাবটি প্রকাশ পায়নি।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

লো ঢাকা পথ, ধূসর আলোয় পাড়ি দিতে দিতে
আমার দৃষ্টি ধূসর হয়ে আসে
কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাগরে
আমার ফুসফুস এক টুকরো অক্সিজেন খোঁজে।
ইটভাটার কালো পৃথিবীতে
আমার দুচোখ কুয়াশা চায়।
আমায় সবুজ পৃথিবী দাও, আমায় আরও অক্সিজেন দাও
আমায় একটু কুয়াশা দাও
না হয় তোমাদের ধূসর পৃথিবী
আমায় হারিয়ে ফেলবে।

ক. কার জন্য খাদ্য আনতে বলা হয়েছে?
খ. জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণÑ কথাটা বলা হয়েছে কেন।
গ. আমায় সবুজ পৃথিবী দাও আমায় আরও অক্সিজেন দাও- উদ্দীপকের এ চরণ দুটির সাথে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা- কবিতার সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.প্রমাণ কর যে, উদ্দীপক ও জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতা একই যন্ত্রণার ফসল।

ক. ক্ষুধার্তের জন্য খাদ্য আনতে বলা হয়েছে।

খ. জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ- চরণটি দ্বারা মুমূর্ষু পৃথিবীতে পুনর্জাগরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।পৃথিবীতে আগের মতো ফুলের ফসল হয় না। কবির কণ্ঠে গান জাগে না। খাদ্যের অভাবে মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে। তাদের দৃষ্টি প্রাণহীন, বৃক্ষরে বুকে বহ্নিজ্বালা। পৃথিবীর এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে কবি বৃক্ষদের কাছে আহ্বান করেছেন, তারা যেন জাগরণের মাধ্যমে ধরার মুমূর্ষু প্রাণের জাগরণ ঘটায়। প্রশ্নে উলিস্নখিত চরণ দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।

গ.

আমায় সবুজ পৃথিবী দাও, আমায় আরও অক্সিজেন দাও- উদ্দীপকের এ চরণ দুটির সাথে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার অরণ্য কন্যাদের জেগে ওঠার আহ্বানের বিষয়টির সাদৃশ্য রয়েছে।

গাছ পরিবেশের প্রধান নিয়ামক। কিন্তু মানুষ নিত্যপ্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছ কেটে বন উজার করে ফেলছে। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সবুজ পৃথিবীকে ফিরে পেতে পারি। জাগো তবে অরণ্য কবিতার এ সুর যেন উদ্দীপকেও ফুটে ওঠেছে।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায় কবি অরণ্য কন্যাদের নতুনভাবে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। মুমূর্ষু পৃথিবীকে ফুলে ফলে সুশোভিত করে তোলার জন্য কবি মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। মানুষ প্রতিনিয়ত বৃক্ষ কেটে পৃথিবীকে মরুময়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে বাড়ছে বৈষ্ণিক উষ্ণতা, যা সৃষ্টি করছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই এ বিশ্বকে বৃক্ষময় করে তোলার জন্য কবি মানুষের প্রতি পরোক্ষভাবে আহ্বান জানিয়েছেন বৃক্ষ কন্যাদের জেগে ওঠার মাধ্যমে।

উদ্দীপকের আলোচ্য চরণ দুটি পরোক্ষভাবে বৃক্ষরোপণকেই ইঙ্গিত করছে। কারণ গাছই আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছই পৃথিবীকে সবুজ সমারোহে ভরে দিতে পারে। তাই উদ্দীপকের লেখক পৃথিবীকে সবুজ করে তোলার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন। তিনি অক্সিজেন পাওয়ার আকাক্সক্ষা করেছেন। এখানে তিনি বৃক্ষময় পৃথিবীর আকাক্সক্ষাই ব্যক্ত করেছেন। পরিশেষে বলা যায় উদ্দীপকের সবুজ পৃথিবী গড়ার আহ্বান জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতার মূল স্তরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ.

উদ্দীপক ও জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতা একই যন্ত্রণার ফসল”-এ মন্তব্যটি প্রাসঙ্গিক।

উদ্দীপক ও জাগো তবে অরণ্য কন্যারা একই বোধ থেকে উচ্চারিত হয়েছে। কারণ সবুজ প্রাচুর্যের অভাবে পরিবেশের দৈন্যে দিশেহারা দেখে কবি সুফিয়া কামাল জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতা রচনা করেছেন। উদ্দীপকেও একই দৃশ্যের অবতারণা লক্ষ করা যাচ্ছে।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা কবিতায়ও হতাশার সুর আর বেদনার চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। কবি পৃথিবীতে হাহাকার আর বেদনা শুনেছেন। প্রকৃতিতে ফুল নেই, ফুলের ফসল নেই, পাখির কণ্ঠে গান নেই, মানুষের মনে আনন্দ নেই। ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির মানুষ। মাটি অরণ্যের পানে করুণ আকুতি জানায়। গাছের প্রাণে দুঃখের জ্বালা, এসব দেখে কবির মনেও মৌসুমি ফুলের গান জাগে না। দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে আসে কবির কণ্ঠ।

উদ্দীপকের কবির কণ্ঠে চরম মানসিক যন্ত্রণা ও হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। ধুলো ঢাকা পথ আর ধূসর আলোয় পাড়ি দিতে দিতে কবির দৃষ্টি ধূসর হয়ে গেছে। পৃথিবীর পরিসর কার্বন ডাইঅক্সাইডে ভর্তি হওয়ায় কবি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। ইট ভাটায় ঢাকা পৃথিবীতে কবির চোখ এক টুকরো সাদা কুয়াশার খোঁজ করে। কিন্তু এসব কবির ভাগ্যে জোটে না। বর্তমানের নিষ্ঠুর নিরানন্দ পরিবেশ কবিকে এসব থেকে বঞ্চিত করে। কবির হৃদয় কুয়াশা চায়, ফুসফুস অক্সিজেন চায়, দৃষ্টি সবুজ চায়। এসব না পেলে একদিন প্রকৃতি কবিকে হারাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভালোলেগছে এবং এই পোস্ট থেকে জাগো তবে অরণ্য কন্যারা সৃজনশীল ও উত্তর সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম শিক্ষামূলক আরও পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকুন। অষ্টম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের অনেক পোস্ট এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হয়েছে। পোস্ট টি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আরও দেখুনঃ

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা- সুফিয়া কামাল। ৮ম শ্রেণি

নদীর স্বপ্ন কবিতা- বুদ্ধদেব বসু। বাংলা ১ম পত্র ৮ম শ্রেণি