বোশেখ কবিতা – আল মাহমুদ। বাংলা ১ম পত্র এস এস সি

বোশেখ কবিতা

এটি নবম-দশম শ্রেণির একটি কবিতা এই পোস্টে আল মাহমুদ এর বোশেখ কবিতা টি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের একটি পরাক্রমশালী মাস বৈশাখ। ঋতুপরিক্রমায় বার বার সে রুদ্র সংহারক রূপে আবির্ভুত হয়। বৈশাখের নিষ্ঠুর করাল গ্রাসে এবং আগ্রাসী থাবায় কখনও কখনও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় এক-একটা জনপদ।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর শিকার হয় দুঃখী দরিদ্র মানুষ বা অসহায় কোন প্রাণী। ছিঁড়ে যায় গরিব মাঝির পালের দড়ি, উড়ে যায় দরিদ্র চাষীর ঘর। ছোট্ট টুনটুনির বাসাও রেহাই পায় না।  এই কবিতায় বৈশাখের বিধ্বংসী প্রতীকের মধ্য দিয়ে অত্যাচারীর অবসান কামনা করছেন কবি। নিচে থেকে কবিতার ব্যাখ্যা, পাঠ পরিচিতি ও কবি পরিচিতি জেনেনিন।

বোশেখ কবিতা

এখানে বোশেখ কবিতা শেয়ার করেছি। এটি এস এস সি শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এখান থেকে আপনারা সম্পূর্ণ কবিতা টি সংগ্রহ করতে পারবেন। যাদের কবিতাটি প্রয়োজন তারা এখান থেকে পড়ুন অথবা পিডিএফ সংগ্রহ করে নিন।

বোশেখ
– আল মাহমুদ

যে বাতাসে বুনোহাঁসের ঝাঁক ভেঙে যায়
জেটের পাখা দুমড়ে শেষে আছাড় মারে
নদীর পানি শূন্যে তুলে দেয় ছড়িয়ে
নুইয়ে দেয় টেলিগ্রাফের থামগুলোকে।

সেই পবনের কাছে আমার এই মিনতি
তিষ্ঠ হাওয়া, তিষ্ঠ মহাপ্রতাপশালী,
গরিব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কী লাভ?
কী সুখ বলো গুঁড়িয়ে দিয়ে চাষির ভিটে?

বেগুন পাতার বাসা ছিঁড়ে টুনটুনিদের
উল্টে ফেলে দুঃখী মায়ের ভাতের হাঁড়ি
হে দেবতা, বলো তোমার কী আনন্দ,
কী মজা পাও বাবুই পাখির ঘর উড়িয়ে?

রামায়ণে পড়েছি যার কীর্তিগাথা
সেই মহাবীর হনুমানের পিতা তুমি?
কালিদাসের মেঘদূতে যার কথা আছে
তুমিই নাকি সেই দয়ালু মেঘের সাথী?

তবে এমন নিঠুর কেন হলে বাতাস
উড়িয়ে নিলে গরিব চাষির ঘরের খুঁটি
কিন্তু যারা লোক ঠকিয়ে প্রাসাদ গড়ে
তাদের কোনো ইট খসাতে পারলে নাতো।

হায়রে কতো সুবিচারের গল্প শুনি,
তুমিই নাকি বাহন রাজা সোলেমানের
যার তলোয়ার অত্যাচারীর কাটতো মাথা
অহমিকার অট্টালিকা গুঁড়িয়ে দিতো।

কবিদের এক মহান রাজা রবীন্দ্রনাথ
তোমার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন করজোড়ে
যা পুরানো শুষ্ক মরা, অদরকারি
কালবৈশেখের একটি ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে।

ধ্বংস যদি করবে তবে, শোনো তুফান
ধ্বংস করো বিভেদকারী পরগাছাদের
পরের শ্রমে গড়েছে যারা মস্ত দালান
বাড়তি তাদের বাহাদুরি গুঁড়িয়ে ফেলো।

বোশেখ কবিতার কবি পরিচিতি

আল মাহমুদ ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি দীর্ঘকাল সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে যোগদান করেন এবং পরিচালকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তাঁর কবিতায় লোকজ শব্দের সুনিপুণ প্রয়োগ যেমন লক্ষণীয় তেমনি রয়েছে ঐতিহ্যপ্রীতি। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া ইত্যাদি। কথাসাহিত্য : পানকৌড়ির রক্ত, পাখির কাছে ফুলের কাছে তাঁর শিশুতোষ কবিতার বই।

বোশেখ কবিতার শব্দার্থ

এই কবিতায় কিছু কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যার অর্থ আপনারা বুঝতে পারেননি। তাই এই অংশে বোশেখ কবিতার শব্দার্থ গুলো শেয়ার করেছি। কঠিন শব্দের ব্যাখ্যা এখান থেকে জেনেনিন।

বুনোহাঁস- যে হাঁস গৃহপালিত নয়,বনে থাকে;
জেট- দ্রুতগতি সম্পন্ন উড়োজাহাজ;
টেলিগ্রাফ- সংকেতের সাহায্যে দূরে বক্তব্য প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে আধুনিক এই যন্ত্র বিদ্যুতের সাহায্যে পরিচালিত হয়। (এখন এ ধরনের যন্ত্র আর ব্যবহার হয় না।);
তিষ্ঠ- স্থির হও;
রামায়ণ- পৃথিবীর হাতেগনা জাত মহাকাব্যের একটি।
রচয়িতা- বাল্মীকি;
মহাবীর হনুমান- রামায়ণে বীর হনুমানের বীরত্বপূর্ণ বহু কর্মের কথা উল্লেখ আছে। রামায়ণোক্ত হনুমানকে মহাবীর হনুমান বলা হয়।
কালিদাসের মেঘদূত- সংস্কৃত ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবি কালিদাস। সংস্কৃত ভাষায় তাঁর অমর রচনা মেঘদূতম্ কাব্য। মেঘদূতম্ কে বাংলায় মেঘদূত বলা হয়;
রাজা সোলেমান- ডেভিডের পুত্র এবং ইসরাইলের তৃতীয় রাজা। তিনি বীর ও দক্ষ যোদ্ধা ছিলেন;
রবীন্দ্রনাথ – বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি। (তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখিত যে কোনো রচনার লেখক-পরিচিতি দ্রষ্টব্য।);
অদরকারি- যার প্রয়োজন নেই।

বোশেখ কবিতার সৃজনশীল ও কর্ম-অনুশীলন

বন্যার্ত মানুষের জন্য এাণের আয়োজন করা হয়। এাণ কমিটি খুবই কঠোরভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখে। হতদরিদ্র রাসুর পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি থাকায় দুইবার এান নিতে এলে অনিয়মের দয়ে তার কার্ড বাতিল করা হয়। বরাদ্দের চেয়ে কম চাল দেয়ার প্রতিবাদ করলে রহম আলীতে বেদম প্রহার করে রিলিফ ক্যাম্প থেকে বের করে দেওয়া হয় । এমন সময় যতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও শমশের আলী চেীধুরী এলে তাদের প্রত্যেককে এক মনচাল,আধা মন ডালসহ অন্যান্য এাণসামগ্রী নেীকায় পেীছে দিয়ে আসেন এান কমিটির প্রধান কর্তাব্যক্তি

ক.তিষ্ঠ অর্ধ কী ?
খ.পবনের কাছে কবি কী মিনতি করেছেন ? বুঝিয়ে লেখ।
গ.উদ্দীপকের বর্ণিত দরিদ্র শ্রেণির সাথে রিলিফ কমিটির আচরণের মাধ্যমে ফুটে উঠা দিকটি ‘বোশেখ’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ.‘বাড়তি তাদের বাহাদুরী গুঁড়িয়ে ফেলো’ কবির এই ভাবনা উদ্দীপকে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি – মূল্যায়ন কর।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট থেকে বোশেখ কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়।  আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আরও দেখুনঃ

 পিডিএফ আমার পরিচয় কবিতার mcq ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

আমার পরিচয় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ

আমার পরিচয় কবিতা – সৈয়দ শামসুল হক। বাংলা ১ম পত্র