আমার পরিচয় কবিতা এবং কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব [ সৈয়দ শামসুল হক]

আমার পরিচয় কবিতা এবং কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব

আমার পরিচয় কবিতা এবং কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলার বহু প্রচিলিত কবিতা হচ্ছে আমার পরিচয়য়। এই কবিতায় বাংলার  পরিচয় ফুটে উঠেছে। আমার পরিচয় কবিতা টি লিখেছেন  সৈয়দ শামসুল হক। তিনি এই কবিতার মাধ্যমে তার পরিচয় বাংলার মানুষকে জানিয়েছেন। তো আপনাদের কে এই কবিতার ব্যাখ্যা, মূলভাব ও ভূমিকা নিচের দিকে আলোচনা করা হয়েছে। তাই আপনারা নিচে থেকে এই মনোরমময় কবিতা টি পড়তে চাইলে নিচে থেকে পড়ে নিতে পারেন।

এই পোস্টে আমি চেষ্টা করেছি এই কবটা টি সুন্দর করে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য। এই কবিতা টি পড়ে আপনারা বাংলার অপরূপ পরিচয় ও লেখক পরিচিত জানতে পারবেন। তাহলে আর দেরি না করে আজকের পোস্ট টি শুরু করা যাক। আমার পরিচয় কবিতা টি বিস্তারিত জানতে এই পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকুন।

আমার পরিচয় কবিতা

এখানে আমার পরিচয় কবিতা কবিতা টি সম্পূর্ণ দেওয়া আছে। আমার পরিচয় কবিতাটির লেখক সৈয়দ শামসুল হক। তো আপনারা তার এই বিখ্যাত কবিতা টি পড়ে নিন।

আমার পরিচয় কবিতা
সৈয়দ শামসুল হক

আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি,
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, ‘কোথা থেকে তুমি এলে ?’

আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে
আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।

এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে
এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে
এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।
আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে
আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’ ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে
আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।
এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে
এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।

আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?

তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবই-
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবই।

আমার পরিচয় কবিতার কবি পরিচিতি

কবিতাতির লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ শে ডিসেম্বর, কুড়িগ্রাম জন্মগ্রহণ করেন।   তাঁর পিতার নাম ডা. সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন এবং মাতার নাম সৈয়দা হালিমা খাতুন। তিনি ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পশ করেন এবং তার পর  জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডেয়েট শেষ করেন। ১৯৫৪ সালে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করেন কিন্তু তার পড়াশুনার শেষ করেন নি। তিনি জীবনের কিছু সময় সাংবাদিকতাকে বেছে  নেন।  তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটক রচনা করেছন।  তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ অনেক সাহিত্য-পুরস্কার লাভ করেছেন। ২৯ বছর বয়ছে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা, অগ্নি ও জলের কবিতা, রাজনৈতিক কবিতা; গল্প : শীত বিকেল, রক্তগোলাপ, আনন্দের মৃত্যু, জলেশ্বরীর গল্পগুলো; উপন্যাস: বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ; নাটক : পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নূরুলদীনের সারাজীবন, ঈর্ষা; শিশুতোষ গ্রন্থ : সীমান্তের সিংহাসন।

আমার পরিচয় কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব

‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি সৈয়দ শামসুল হক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও আত্মমর্যাদাবোেধসম্পন্ন জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পটভূমি তুলে ধরেছেন। কবিতায় কবি আত্মপরিচয় নির্দেশ করতে গিয়ে বাঙালির বহু পুরনাে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস আমাদের সামনে এনেছেন। এতে তাঁর আত্মমর্যাদাবােধ জাগ্রত হয়েছে। হঠাৎ করে পাওয়া বা রাতারাতি গড়ে ওঠা কোনাে বিষয় কবির এই আত্মপরিচয়ের পেছনে কাজ করেনি। তার আত্মপরিচয় এদেশের ঋদ্ধ, সমৃদ্ধ সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ঘেরা একটি সমৃদ্ধ পরিচয়।

তাঁর আত্মপরিচয়ের সঙ্গে চর্যাপদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য যাত্রা, পালযুগের চিত্রকলা, বৌদ্ধবিহারের জ্ঞানচর্চা, মুসলিম ধর্ম ও সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ, জমিদারি প্রথা, মৈমনসিংহ গীতিকার জীবন, কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে শুরু করে তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ, সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম প্রমুখের বিপ্লব-বিদ্রোহ একাকার হয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথের বিশাল সৃষ্টি, নজরুলের সমস্ত বিদ্রোহী চেতনা ও সাম্যবাদের মুক্তির চেষ্টার সঙ্গেও একাত্ম হয়ে আছে কবির আত্মপরিচয়। তিনি বাঙালির ভাষা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যােগ্য নেতৃত্বে মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জনের সঙ্গে আত্মপরিচয়টি জুড়ে দিয়েছেন। আমার পরিচয়’ কবিতায় মূলত ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলাদেশের অনবদ্য রূপটি প্রকাশ পেয়েছে।

আমার পরিচয় কবিতার ভূমিকা

আমার পরিচয় কবিতা টি সৈয়দ শামসুল হকের কিশোর কবিতা সমগ্র থেকে নেওয়া হয়েছে। আত্নসম্মানবোধ স্বাধীন বাংলাদেশের জাতিসত্তা গঠনের পিছনে সমৃদ্ধ ইতিহাস, ও সংস্কৃতির পটভূমি। কবিতাটির মাধ্যমে লেখক বাঙ্গালি জাতির বর্তমান অবস্থার পিছনের বর্ণিল ইতিহাসের কথা তুলেধরেছেন। ইতিহাসের ধারাবাহিক বিবর্তনের বাঙ্গালি জাতি সেই সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস, সংস্কৃতির ইতিহাস এবং কৃতি সন্তানদের যেন ভুলে না যায় সেই শ্রদ্ধাোবোধ  থেকে কবিতা টি রচনা করেন। সর্বোপরি তিনি বাংলার জন্ম ভূমির ভালোবাসার অসম অবধান রেখেছেন এই কবিতার মাধ্যমে।

শেষ কথা

আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধনবাদ। আশা করছি এই কবিতা টি আপনাদের কাছে অনেক ভালোলেগেছে। এই কবিতা টি আপনাদের ভালোলেগে থাকলে শেয়ার করতে পারেন। আপনারা বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও শিক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের পয়েবসাইত টি ভিজিট করতে পারেন। শিক্ষামূলক ও বিভিন্ন ধরনের পোস্ট আমাদের ওয়েবসাইটএ দেওয়া আছে। আশা মকরছি নতুন কোনো বিষয়ে আবার আপনাদের সাথে দেখা হবে। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।

See More: 

ভালোবাসার ফেসবুক স্ট্যাটাস, ক্যাপশন এবং মনিষীদের উক্তি

স্মার্ট ফেসবুক স্ট্যাটাস, বাংলা ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং উক্তি

হাতের লেখা সুন্দর করার পদ্ধতি

এসএসসি পরিক্ষা ২০২২ শর্ট সিলেবাস সংগ্রহ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *