ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্ন

উদ্ভিদ যে প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে, দেহে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে ঐ রস দেহের নানা অঙ্গে পরিবহন করে ও দেহ থেকে পানি বাষ্প আকারে বের করে দেয় সেই সব প্রক্রিয়া ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ, পরিবহন ও প্রস্বেদনের মাধ্যমে ঘটে। উদ্ভিদ জীবনে ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া আছে।

ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্ন

ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন অধ্যায় টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যায় থেকে অনেক সময় সৃজনশীল প্রশ্ন করা হয়। এই অংশে ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো দেওয়া আছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ঃ 

কাঠবিড়ালির হাত থেকে রক্ষার জন্য কবির গাছের পেয়ারাকে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখে। পরে তিনি লক্ষ করে পলিথিনের মধ্যে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। কিন্তু এতে তার পাকা পেয়ারার মিষ্টি সুবাস পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলো।

ক. কৈলিক পানি কাকে বলে?
খ. অভিস্রবণ ও ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দ্রব ও দ্রাবকের গতিপথ ভিন্ন—ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বিন্দু বিন্দু পানি জমার প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উল্লিখিত প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি জীবজগতে গুরুত্বপূর্ণ—বিশ্লেষণ করো।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ঃ 

মাসরুর স্কুল থেকে এসে দেখল তার টবের সব গাছের পাতা নেতিয়ে পড়েছে। সাথে সাথে মাসরুর টবে পানি ঢালল। কিছুক্ষণ পর সে দেখল পাতাগুলো সতেজ হয়ে উঠেছে।

ক. ব্যাপন কাকে বলে?
খ. অভিস্রবণের জন্য অর্ধভেদ্য পর্দা দরকার কেন?
গ. মাসরুরের গাছগুলো যেভাবে সতেজ হলো তা বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় জড়িত প্রক্রিয়া দু’টি একে অপরকে প্রভাবিত করে মতামত দাও।

ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

এখানে উপরের দেওয়া ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর গুলো দেওয়া আছে। যারা নিজে নিজে উত্তর গুলো লিখতে পারবেন না ।তারা এখানে থেকে উত্তর গুলো সংগ্রহ করে নিবেন।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 

ক. মাটির সূক্ষ্ম কণার ফাঁকে লেগে থাকা পানিকে কৈলিক পানি বলে।

খ. অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় দ্রাবক অণুগুলো কম ঘনত্বের দ্রবণ হতে বেশি ঘনত্বের দ্রবণের দিকে ধাবিত হয়। পক্ষান্তরে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অণুগুলো বেশি ঘনত্ব হতে কম ঘনত্বের দিকে ধাবিত হয়।সুতরাং বলা যায়, অভিস্রবণ ও ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দ্রব ও দ্রাবকের গতিপথ ভিন্ন।

গ.

পলিথিন ব্যাগে বিন্দু বিন্দু পানি জমার প্রক্রিয়াটি প্রস্বেদন। যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ বায়বীয় অঙ্গের (পাতা, কাণ্ড, লেন্টিসেল) মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানি বাইরে বের করে দেয়, তাকে প্রস্বেদন বলে। উদ্দীপকে উল্লিখিত পেয়ারাগুলো থেকে নির্গত জলীয় বাষ্প পলিথিনের সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে বিন্দু বিন্দু পানির কণায় রূপান্তরিত হয়, যা পলিথিন ব্যাগের গায়ে জমে থাকে। সুতরাং প্রস্বেদনের মাধ্যমে নির্গত জলীয় বাষ্পই পলিথিনে বিন্দু বিন্দু পানি আকারে জমা হয়।

ঘ.

উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি ব্যাপন। একই তাপমাত্রা ও একই বায়ুমণ্ডলীয় চাপে কোনো পদার্থের অণুগুলো বেশি ঘনত্ব হতে কম ঘনত্বের দিকে ছড়িয়ে পড়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পাকা পেয়ারার মিষ্টি সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লিখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবের সব রকম শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন হয়। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের সময় বাতাসের কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে।

এই অত্যাবশ্যক কাজ ব্যাপন দ্বারা সম্পন্ন হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় গ্লুকোজ জারণের জন্য অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। ব্যাপন ক্রিয়ার দ্বারা কোষে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড বের হয়ে যায়। উদ্ভিদ শোষিত পানি বাষ্পাকারে প্রস্বেদনের মাধ্যমে দেহ থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়। প্রাণীদের শ্বসনের সময় অক্সিজেন ও কার্বন ডাই–অক্সাইডের আদান-প্রদান ও রক্ত থেকে খাদ্য, অক্সিজেন প্রভৃতি লসিকায় বহন ও লসিকা থেকে কোষে পরিবহন করা ব্যাপন দ্বারা সম্পন্ন হয়। সুতরাং ওপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে উল্লিখিত ব্যাপন প্রক্রিয়াটি জীবজগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. একই তাপমাত্রা ও চাপে কোনো পদার্থের অধিকতর ঘন স্থান হতে কম ঘন স্থানে বিস্তার লাভ করার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।

খ. অভিস্রবণের ক্ষেত্রে দু’টি ভিন্ন ঘনত্ব বিশিষ্ট দ্রবণ প্রয়োজন হয়। এ দুই ঘনত্বের দ্রবণ একটি অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক করতে হয়। অর্ধভেদ্য পর্দার মধ্য দিয়ে শুধু দ্রাবক অণু চলাচল করতে পারে কিন্তু দ্রাব্য অণু চলাচল করতে পারে না। এর ফলেই দ্রাবক অণু অল্প ঘনত্বের দ্রবণ হতে ঘন দ্রবণের দিকে ব্যাপৃত হয়। অর্ধভেদ্য পর্দা না থাকলে ঘন দ্রবণের দ্রাব্য অণু হালকা ঘনত্বের দ্রবণে চলে আসত।

গ.পরবর্তীতে গাছগুলো আবার সতেজতা ফিরে পায়। মাসরুর স্কুল থেকে এসে টবে পানি ঢালল। উদ্ভিদ মূলরোম দ্বারা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে। মাটিতে খনিজ লবণ থাকলেও তা পানি ছাড়া শোষণ করা সম্ভব নয়। গাছের পরিবহন টিস্যু জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাধ্যমে পানি ও খনিজ লবণের পরিবহন ঘটে। জাইলেমের মাধ্যমে পানি পাতায় যায় এবং ফ্লোয়েম পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য সারা দেহে ছড়িয়ে দেয়। এতে গাছগুলো সতেজ হয়ে ওঠে। শোষিত পানির কিছু অংশ প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পাওয়াতে আর ঘাটতি তৈরি হয়নি। এভাবে গাছগুলো সতেজতা ফিরে পায়।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় জড়িত প্রক্রিয়া দু’টি হলো প্রস্বেদন ও অভিস্রবণ। উদ্ভিদ জীবনে এ দুটো ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য প্রক্রিয়া। উদ্ভিদ মূলরোমের সাহায্যে মাটির সূক্ষ্মকণার ফাঁকে লেগে থাকা পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় শোষণ করে। আবার জৈবনিক কার্যাবলি শেষে অতিরিক্ত পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়। প্রস্বেদনের মাধ্যমে উদ্ভিদ যত বেশি পানি বের করে দেবে, অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় তত বেশি পানি সে গ্রহণ করবে। এ কারণে প্রস্বেদন বাড়লে উদ্ভিদ দেহে অভিস্রবণও বাড়ে। একইভাবে, পানির অভাবে অভিস্রবণ কমে গেলে প্রস্বেদন প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে যায়। এভাবেই উদ্দীপকের ঘটনায় জড়িত প্রক্রিয়া দু’টি একে অপরকে প্রভাবিত করে।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট আপনাদের ভাললেগেছে এবং এখান থেকে ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম শিক্ষাসংক্রান্ত পোস্ট পেতে এই ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

আরও দেখুনঃ

ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন – ৮ম শ্রেণি বিজ্ঞান ৩য় অধ্যায়

জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি অষ্টম শ্রেণি বিজ্ঞান ২য় অধ্যায়

One Comment on “ব্যাপন অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন এর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *