বাবুরের মহত্ত্ব কবিতা- কালিদাস রায়। অষ্টম শ্রেণি

বাবুরের মহত্ত্ব কবিতা

এই পোস্টে বাবুরের মহত্ত্ব কবিতা টি দেওয়া হয়েছে। বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতাটি কালিদাস রায়ের পর্ণপুট’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। এটি অষ্টম শ্রেণির বইয়ে থেকে সংগ্রহ করে এই পোস্টে শেয়ার করেছি। নিচে কবিতার মূলভাব, ব্যাখ্যা ও কবি পরিচিতি দেওয়া আছে। এজন্য সম্পূর্ণ পোস্ট টি পড়ুন।

বাবুরের মহত্ত্ব কবিতা

এখানে বাবুরের মহত্ত্ব কবিতা টি সম্পূর্ণ দেওয়া আছে। যারা যারা কিতা টি পড়তে চান, নিচের অংশে চলে যান। সেকানে সম্পূর্ণ কবিতা পিডিএফ সহ দেওয়া আছে।

বাবুরের মহত্ত্ব কবিতা
কালিদাস রায়

পাঠান-বাদশা লোদি
পানিপথে হত। দখল করিয়া দিল্লির শাহিগদি,
দেখিল বাবুর এ-জয় তাঁহার ফাঁকি,
ভারত যাদের তাদেরি জিনিতে এখনো রয়েছে বাকি।

গর্জিয়া উঠিল সংগ্রাম সিংহ, ‘জিনেছ মুসলমান,
জয়ী বলিব না এ দেহে রহিতে প্রাণ।
লয়ে লুন্ঠিত ধন
দেশে ফিরে যাও, নতুবা মুঘল, রাজপুতে দাও রণ।’

খানুয়ার প্রান্তরে
সেই সিংহেরো পতন হইল বীর বাবুরের করে।
এ বিজয় তার স্বপ্ন-অতীত, যেন বা দৈব বলে
সারা উত্তর ভারত আসিল বিজয়ীর করতলে।

কবরে শায়ীত কৃতঘ্ন দৌলত,
বাবুরের আর নাই কোনো প্রতিরোধ।
দস্যুর মতো তুষ্ট না হয়ে লুন্ঠিত সম্পদে,
জাঁকিয়া বসেছে মুঘল সিংহ দিল্লির মসনদে।

মাটির দখলই খাঁটি জয় নয় বুঝেছে বিজয়ী বীর,
বিজিতের হৃদি দখল করিবে এখন করেছে স্থির।
প্রজারঞ্জনে বাবুর দিয়াছে মন,
হিন্দুর-হৃদি জিনিবার লাগি করিতেছে সুশাসন,
ধরিয়া ছদ্মবেশ
ঘুরি পথে পথে খুঁজিয়ে প্রজার কোথায় দুঃখ ক্লেশ।

চিতোরের এক তরুণ যোদ্ধা রণবীর চৌহান
করিতেছে আজি বাবুরের সন্ধান,
কুর্তার তলে কৃপান লুকায়ে ঘুরিছে সে পথে পথে
দেখা যদি তার পায় আজি কোনো মতে
লইবে তাহার প্রাণ,

শোণিতে তাহার ক্ষালিত করিবে চিতোরের অপমান।
দাঁড়ায়ে যুবক দিল্লির পথ-পাশে
লক্ষ করিছে জনতার মাঝে কেবা যায় কেবা আসে।
হেন কালে এক মত্ত হস্তী ছুটিল পথের পরে
পথ ছাড়ি সবে পলাইয়া গেল ডরে।
সকলেই গেল সরি

কেবল একটি শিশু রাজপথে রহিল ধুলায় পড়ি।
হাতির পায়ের চাপে
‘গেল গেল’ বলি হায় হায় করি পথিকেরা ভয়ে কাঁপে।
‘কুড়াইয়া আন ওরে’

সকলেই বলে অথচ কেহ না আগায় সাহস করে।
সহসা একটি বিদেশি পুরুষ ভিড় ঠেলে যায় ছুটে,
‘কর কী কর কী’ বলিয়া জনতা চিৎকার করি ওঠে।
করি-শুণ্ডের ঘর্ষণ দেহে সহি
পথের শিশুরে কুড়ায়ে বক্ষে বহি
ফিরিয়া আসিল বীর।

চারি পাশে তার জমিল লোকের ভিড়।
বলিয়া উঠিল একজন ‘আরে এ যে মেথরের ছেলে,
ইহার জন্য বে-আকুফ তুমি তাজা প্রাণ দিতে গেলে?
খুদার দয়ায় পেয়েছ নিজের জান,

ফেলে দিয়ে ওরে এখন করগে স্নান।’
শিশুর জননী ছেলে ফিরে পেয়ে বুকে
বক্ষে চাপিয়া চুমা দেয় তার মুখে।
বিদেশী পুরুষে রাজপুত বীর চিনিল নিকটে এসে,

এ যে বাদশাহ স্বয়ং বাবুর পর্যটকের বেশে।
ভাবিত লাগিল, ‘হরিতে ইহারই প্রাণ
পথে পথে আমি করিতেছি সন্ধান?
বাবুরের পায়ে পড়ি সে তখন লুটে

কহিল সঁপিয়া গুপ্ত কৃপাণ বাবুরের করপুটে,-
‘জাঁহাপনা, এই ছুরি খানা দিয়ে আপনার প্রাণবধ
করিতে আসিয়া একি দেখিলাম! ভারতের রাজপদ
সাজে আপনারে, অন্য কারেও নয়।

বীরভোগ্যা এ বসুধা এ কথা সবাই কয়,
ভারত-ভূমির যোগ্য পালক যেবা,
তাহারে ছাড়িয়া, এ ভূমি অন্য কাহারে করিবে সেবা?
কেটেছে আমার প্রতিহিংসার অন্ধ মোহের ঘোর,

সঁপিনু জীবন, করুন এখন দণ্ডবিধান মোর।’
রাজপথ হতে উঠায়ে যুবকটিরে
কহিল বাবুর ধীরে,
‘বড়ই কঠিন জীবন দেওয়া যে জীবন নেওয়ার চেয়ে;

জান না কি ভাই? ধন্য হলাম আজিকে তোমারে পেয়ে
আজি হতে মোর শরীর রক্ষী হও;
প্রাণ-রক্ষকই হইলে আমার, প্রাণের ঘাতক নও।’

বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার মূলভাব

বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতাটি কালিদাস রায়ের পর্ণপুট’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।এ কবিতায় মুঘল সম্রাট বাবুরের মহানুভবতা বর্ণিত হয়েছে। এতে তার মহৎ আদর্শ ও মানবিক মূল্যবােধকে তুলে ধরা হয়েছে। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবুর। রাজ্য বিজয়ের পর তিনি প্রজাসাধারণের হৃদয় জয়ে মনােযােগী হলেন।

রাজপুতগণ তাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। রাজপুত বীর তরুণ রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দিল্লির রাজপথে ঘুরছিল। এমন সময় বাবুর নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে রাজপথে পড়ে-থাকা একটি মেথর শিশুকে উদ্ধার করেন। রাজপুত যুবক বাবুরের মহত্ত্বে বিস্মিত হয়। সে বাবুরের পায়ে পড়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে। মহৎপ্রাণ বাবুর তাকে ক্ষমা করেন এবং তাকে নিজের দেহরক্ষী নিয়ােগ করেন।

বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রচণ্ড বন্যায় ডুবে যায় টাঙ্গাইলের ব্যাপক অঞ্চল। অনেকেরই ঘর-বাড়ি ডুবে যায়। নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে অগণিত মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এমনি একটা পরিবার নৌকায় চড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে। তীব্র স্রোতের টানে নৌকাটি উল্টে গেলে সবাই সাঁতার কেটে উঠে এলেও জলে ডুবে যায় একটি শিশু। বড় মিয়া নামের এক যুবক এ দৃশ্য দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধার করেন শিশুটিকে। কূলে উঠে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ডাক্তার এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন বড় মিয়া আর বেঁচে নেই

ক. রণবীর চৌহান কে ছিলেন?
খ. বড়ই কঠিন জীবন দেওয়া যে জীবন নেওয়ার চেয়ে’— কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বড় মিয়ার আচরণে ‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় ফুটে ওঠা দিকটি ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘বাবুরের মহত্ব’ কবিতার একটা বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটলেও সমভাব ধারণ করে না’ যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখাে।

 প্রশ্নের উত্তর

ক। রণবীর চৌহান ছিলেন এক স্বদেশপ্রেমিক রাজপুত যুবক।

খ। কোনাে মানুষকে হত্যা করা যতটা কঠিন তার জীবন রক্ষা করা এর চেয়েও অনেক বেশি কঠিন।

কোনাে মানুষকে হত্যা করা সহজসাধ্য বিষয় নয়। অনেক ক্ষেত্রেই হত্যাকারীকে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। তবে কোনাে মানুষের প্রাণ বাঁচানাে আরও কঠিন। প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের থাকলেও প্রাণ দেওয়ার ক্ষমতা কারাে নেই। তাছাড়া কারাে প্রাণ বাঁচানাের জন্য যেমন মানসিকতার প্রয়ােজন হয় তা খুব বেশি মানুষের মাঝে লক্ষ করা যায় না। তাই জীবন কেড়ে নেওয়া যত কঠিন জীবন দান করা তার চেয়েও বেশি কঠিন।

গ।

উদ্দীপকে বর্ণিত বড় মিয়ার আচরণে বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সম্রাট বাবুরের মহানুভবতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় কালিদাস রায় মুঘল বাদশাহ বাবুরের মানবপ্রেমের কথা তুলে ধরেছেন। এক মেথরের শিশুকে বাঁচানাের জন্য তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করেন। মত্ত হাতির কবল থেকে শিশুটির জীবন রক্ষা করেন তিনি।

উদ্দীপকে বর্ণিত বড় মিয়া একজন মহৎপ্রাণ মানুষ। স্রোতের তােড়ে ডুবে যাওয়া অসহায় শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধার করতে সমর্থ হলেও নিজে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সম্রাট বাবুরের মতােই উদ্দীপকের বড় মিয়াও মহানুভবতার অনুপম দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন।

ঘ।

উদ্দীপকে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার একটি বিশেষদিক ফুটে উঠলেও কবিতা ও উদ্দীপকের প্রেক্ষাপট এক নয়, ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় কালিদাস রায় মুঘল সাম্রাজ্যের মহান শাসক বাবুরের মহত্ত্বের পরিচয় তুলে ধরেছেন। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরে বাবুর প্রজাদের মন জয় করতে ব্রতী হন। এই লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে দিল্লীর পথে পথে ঘুরে বেড়াতে থাকেন তিনি।

উদ্দীপকে বড় মিয়া নামক এক নিঃস্বার্থ মানসিকতার ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া শিশুটিকে বাচাতে তিনি নিজের জীবনের পরােয়া করেননি। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনের বিনিময়ে শিশুটিকে বাঁচাতে সক্ষম হন তিনি।

বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় সম্রাট হিসেবে বাবুরের মহত্ত্বের পরিচয় ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে তার আদর্শ ও মানবিক মূল্যবােধও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার মাধ্যমে আমরা কেবল বড় মিয়ার উদার মানসিকতারই প্রমাণ পাই। আলােচ্য কবিতায় ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের গােড়াপত্তনের ইতিহাস এবং বাবুরের সংগ্রামী অভিযাত্রার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এ ধরনের কোনাে প্রসঙ্গ উদ্দীপকে নেই। কবিতায় বাবুরের যে মহত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় তার সঙ্গে উদ্দীপকের রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। কিন্তু উদ্দীপকের ঘটনায় তেমন কোনাে বিশেষ পটভূমির ইঙ্গিত নেই। তাই সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথাযথ।

শেষ কথা

আশা করছি এই পষ্ট টি আপনাদের অনেক ভালোলেগছে এবং এই পোস্ট থেকেবাবুরের মহত্ত্ব কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম শিক্ষামূলক আরও পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকুন। অষ্টম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের অনেক পোস্ট এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হয়েছে। পোস্ট টি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আরও দেখুনঃ

প্রার্থনা কবিতা কায়কোবাদ। বাংলা ১ম পত্র অষ্টম শ্রেণি- PDF