এসএসসি ২০২২ পৌরনীতি ও নাগরিকতা এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ১১তম সপ্তাহ

এসএসসি ২০২২ পৌরনীতি ও নাগরিকতা এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ১১তম সপ্তাহ

আদর্শ পরিবার ও সমাজ গঠন এবং আধুনিক রাষ্ট্র ও সরকারের বিনির্মাণে তুমি কিভাবে পৌরনীতি ও নাগরিকতা জ্ঞান প্রয়োগ করবে।
পৌরনীতির ইংরেজি শব্দ সিভিক্স (Civics)। সিভিক্স শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ সিভিস (Civis) এবং সিভিটাস (Civitas) থেকে এসেছে। সিভিস (Civis) শব্দের অর্থ নাগরিক (Citizen) আর সিভিটাস শব্দের অর্থ নগর-রাষ্ট্র (City State)।

পৌরনীতি ও নাগরিকতা:

প্রাচীন গ্রিসে নাগরিক ও নগররাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। ওই সময় গ্রিসে ছোট ছোট অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে নগর-রাষ্ট্র। যারা নগর রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করতো, তাদের নাগরিক বলা হতো। শুধু পুরুষশ্রেণি রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পেত বিধায় তাদের নাগরিক বলা হতো।

বর্তমানে নাগরিকের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। পাশাপাশি নগর-রাষ্ট্রের স্থলে বৃহৎ আকারের জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন- বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক অধিকার ভোগের পাশাপাশি আমরা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকি।

তবে আমাদের মধ্যে যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে, তারা ভোটদান কিংবা নির্বাচিত হওয়ার মতো রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে না। তাছাড়া বিদেশিদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করার সুযোগ নেই। যেমন- নির্বাচনে ভোট দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। মূলত রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের মর্যাদা কে নাগরিকতা বলে।

পরিবার:

সমাজ স্বীকৃত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীর একত্রে বসবাস করাকে পরিবার বলে। অর্থাৎ বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক বা একাধিক পুরুষ ও মহিলা তাদের সন্তানাদি, পিতামাতা এবং অন্যান্য পরিজন নিয়ে যে সংগঠন গড়ে ওঠে- তাকে পরিবার বলে।

ম্যাকাইভারের মতে, সন্তান জন্মদান ও লালন পালনের জন্য সংগঠিত ক্ষুদ্র বর্গকে পরিবার বলে।

আমাদের দেশে সাধারণত মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা চাচি ও দাদা-দাদির সমন্বয়ে পরিবার গড়ে ওঠে। তবে শুধু একজন মহিলা বা একজন পুরুষকে পরিবার বলা হয় না। মূলত পরিবার হলো স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গঠিত ক্ষুদ্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

আমরা সবাই পরিবারে বাস করি। কিন্তু সব পরিবারের প্রকৃতি ও গঠন কাঠামো একরকম নয়। কতগুলো নীতির ভিত্তিতে পরিবারের শ্রেণীবিভাগ করা যায়। যেমন-

(ক) বংশ গণনা ও নেতৃত্ব,
(খ) পারিবারিক কাঠামো ও
(গ) বৈবাহিক সূত্র।

নাগরিকতা পরিবার সমাজ রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ব্যাখ্যা
সমাজ:


সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত হয়। অর্থাৎ একদল লোক যখন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সঙ্গবদ্ধ হয়ে বসবাস করে, তখনই সমাজ গঠিত হয়।

সমাজের এ ধারণাটি বিশ্লেষণ করলে এর প্রধান দু’টি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যথা-

ক) বহুলোকের সংঘবদ্ধভাবে বসবাস এবং
খ) ঐ সংঘবদ্ধতার পেছনে থাকে সাধারণ উদ্দেশ্য।

তাছাড়া সমাজের সদস্যদের মধ্যে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়-

ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা,
নির্ভরশীলতা,
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া,
সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য ইত্যাদি।


সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানুষকে নিয়ে সমাজ গড়ে উঠে। আর সমাজ মানুষের বহুমুখী প্রয়োজন মিটিয়ে উন্নত ও নিরাপদ সামাজিক জীবন দান করে।

সমাজের মধ্যেই মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের আদর্শ স্থান মনে করে বলে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই সমাজ গড়ে তোলে।

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল যথার্থই বলেছেন, মানুষ স্বভাবগত সামাজিক জীব। যে সমাজে বাস করে না, সে হয় পশু, না হয় দেবতা।

বস্তুত মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমাজে বসবাস করে এবং সামাজিক পরিবেশেই সে নিজেকে বিকশিত করে।

রাষ্ট্র:

রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের মানুষ কোনো না কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করে। আমাদের এই পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ টি রাষ্ট্র আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রেরই আছে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং জনসংখ্যা। এ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আরও আছে সরকার এবং সার্বভৌমত্ব। মূলত এগুলো ছাড়া কোনো রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না।

অধ্যাপক গার্নার বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী, সুসংগঠিত সরকারের প্রতি স্বভাবজাতভাবে আনুগত্যশীল, বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত স্বাধীন জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে।’

এ সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্রের চারটি উপাদান পাওয়া যায়। যথা-

১। জনসমষ্টি,
২। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড,
৩। সরকার ও
৪। সার্বভৌমত্ব।

রাষ্ট্র কখন ও কীভাবে উৎপত্তি লাভ করেছে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা অতীত ইতিহাস ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে কতগুলো মতবাদ প্রদান করেছেন।

তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১। ঐশী মতবাদ,
২। বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদ,
৩। সামাজিক চুক্তি মতবাদ ও
৪। ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ।

সরকার:

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে লোক প্রশাসনের সম্পর্ক পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোক প্রশাসন সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত দুটি পৃথক শাখা। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিক ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকে। অন্যদিকে লোক প্রশাসন সরকারের কার্যাবলি ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য জনশক্তি এবং সম্পদের সুষ্ঠু সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা করে থাকে। সেজন্য উভয় শাস্ত্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোক প্রশাসনের মধ্যে সাদৃশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

১। উৎপত্তিগত সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোক প্রশাসনের মধ্যে উৎপত্তিগত সাদৃশ্য রয়েছে। উভয় শাস্ত্রই অতীতে সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত ছিল। একপর্যায়ে সমাজবিজ্ঞান থেকে পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোক প্রশাসন পৃথক হয়ে যায়।

২। পরস্পর নির্ভরশীল: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোক প্রশাসন পরস্পর নির্ভরশীল। নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা পৌরনীতি ও সুশাসনের মূল লক্ষ্য। তবে লোক প্রশাসন জ্ঞান ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা যায় না। আবার লোক প্রশাসন সরকারের বিভিন্ন বিধি-বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিকের জীবনমান উন্নত করে। আর এক্ষেত্রে পৌরনীতি ও সুশাসন শাস্ত্রে পরামর্শ একান্ত আবশ্যক।

৩। আলোচ্য বিষয়ে সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোক প্রশাসনের মধ্যে আলোচ্য বিষয়গত সাদৃশ্য বিদ্যমান। পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের উৎপত্তি, সংগঠন, ব্যবস্থাপনা, আমলাতন্ত্র ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে লোক প্রশাসন রাষ্ট্রের এসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নিয়ে আলোচনা করে থাকে।

৪। আবশ্যকতায় সাদৃশ্য: পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোক প্রশাসনের আবশ্যকতায় সাদৃশ্য রয়েছে। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের জন্য লোক প্রশাসনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যেমন দরকার তেমনি দরকার পৌরনীতি ও সুশাসনের পরামর্শ। তাই পৌরনীতি ও সুশাসন এবং লোক প্রশাসন সুশাসন বাস্তবায়ন ও জনকল্যাণের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *