এসএসসি ২০২১ পৌরনীতি ও নাগরিকতা সংশোধিত এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান

এসএসসি ২০২১ পৌরনীতি ও নাগরিকতা সংশোধিত এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ২য় সপ্তাহ

শিরোনাম: বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিবার ব্যবস্থা ও একটি আদর্শ পরিবারের

কার্যাবলি বিশ্লেষণঃ


ক. উত্তর: পরিবার ও পরিবারের ধারণাঃ

পরিবারঃ

পরিবার একটি আদিম সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মানুষ একা বসবাস করতে পারে না। সঙ্গকামী মানুষ স্বভাবতই পরস্পর মিলেমিশে একত্রে বসবাস করতে চায়। মানুষের এই আকাংখার অভিব্যক্তি হল পরিবার। পরিবারের ভিত্তি হল জৈবিক যৌনতা। কারণ নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং সন্তান-সন্ততি জন্ম দান করে। নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ ও সন্তান বাৎসল্য তাদেরকে পারিবারিক জীবন যাপনে অনুপ্রাণিত করে। স্নেহ, মায়া-মমতা ও নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষা পরিবারের ভিত্তি। পরিবারের বিকল্প চিন্তা করা যায় না। বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিবার ব্যবস্থা ও একটি আদর্শ পরিবারের কার্যাবলি বিশ্লেষণপূর্বক আলােচনা করা হল –
পরিবারের ধারণাঃ

পরিবার একটি ক্ষুদ্র সামাজিক বর্গ। পরিবার বলতে সেই সামাজিক ক্ষুদ্র সংস্থাকে বুঝায় যেখানে এক বা একাধিক পুরুষ তার বা তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও অন্যান্য পরিজন নিয়ে একত্রে বসবাস করে। অধ্যাপক আ র এম ম্যাকাইভার পরিবারের সংজ্ঞা দিয়ে বলেন, “পরিবার হল ক্ষুদ্র ও স্থায়ী বর্গ, যার উদ্দেশ্য সন্তান-সন্ততির জন্মদান ও লালন পালন করা।” পরিবারের প্রকারভেদ বংশ পরিচয় ও নিয়ন্ত্রণের ধারা বংশ পরিচয় ও নিয়ন্ত্রণের ধারার ভিত্তিতে পরিবারকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা

(ক) পিতৃতান্ত্রিক

(খ) মাতৃতান্ত্রিক পরিবার।

(ক) পিতৃতান্ত্রিক পরিবার; যখন পিতা পরিবারের কর্তা অথবা পিতার দিক হতে পরিবার পরিচিত হয় তখন তাকে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে। সমাজবিজ্ঞানী হেনরি মেইন এই পরিবার ব্যবস্থাকে আদি ও অকৃত্রিম বলে উল্লেখ করেছেন।

(খ) মাতৃতান্ত্রিক পরিবার : যখন মাতার দিক হতে বংশ পরিচয় দেওয়া হয় এবং মাতা পরিবারের প্রধান হন তখন তাকে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে। প্রাচীনকালে মিশর ও তিব্বতে এই ধরনের পরিবার-ব্যবস্থা বিরাজমান ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ ও আসামের খাসিয়া গারাে নৃ-তাত্ত্বিকগােন্তীর মধ্যে, গারাের মধ্যে এই ধরনের পরিবার দেখা যায়।

বিবাহ প্রথা বিবাহ প্রথার উপর ভিত্তি করে পরিবারকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন

(ক) একপত্নীক – যদি একজন স্বামী একজন স্ত্রী গ্রহণ করে পরিবার গঠন করে তবে তাকে একপত্নীক পরিবার বলে। এটি বর্তমান কালের প্রচলিত পরিবারব্যবস্থা।

(খ) বহুপত্নীক– যখন একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী বিবাহ করে পরিবার গঠন করে তখন তাকে বহুপত্নীক পরিবার বলে। অর্থনৈতিক কারণে এ ধরনের পরিবারব্যবস্থা কমে যাচ্ছে।

(গ) বহুপতি পরিবার– যখন একজন স্ত্রী একের অধিক স্বামী গ্রহণ করে পরিবার গঠন করে তখন তাকে বহুপতি পরিবার বলে। হিন্দু ধর্মে মহাভারতে পঞ্চ পান্ডবের এক স্ত্রী দ্রৌপদির কথা উল্লেখ আছে।

পারিবারিক কাঠামাে ও আকৃতির ভিত্তিতে পরিবারকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

ক) একক পরিবার -যখন স্বামী-স্ত্রী তাদের উপর নির্ভরশীল সন্তান-সন্ততি নিয়ে পরিবার গঠন করে তখন তাকে একক পরিবার বলে।

(খ) যৌথ পরিবার – যে পরিবারে পিতামাতা তাদের নিজেদের সন্তান-সন্ততি এবং সন্তান-সন্ততিগণের সন্তান-সন্ততি নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করে তাকে যৌথ পরিবার বলে।


খ. উত্তর : যৌথ পরিবার হ্রাস ও এককপরিবার বৃদ্ধি। [কারণঃ

সীমিত অর্থনৈতিক যােগানদাতাঃ একটি যৌথ পরিবার। অনেকগুলাে মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে,যার লােক সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জন অথবা তার উর্ধ্বে থাকলেও অনেক যৌথ পরিবারে অর্থনৈতিক যােগানদাতা মাত্র ২ থেকে ৪ জন থাকেন আবার তাদের আয়ের পরিমাণও সমান না। এ অবস্থায় যৌথ পরিবারে থেকে পরিবার চালনা অত্যান্ত কষ্টসাধ্য হয় এমনকি তারা নিজের এবং নিজের স্ত্রী সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই যৌথ পরিবার ভেঙ্গে মা বাবা দাদা দাদী অন্যান্য সদস্যদের ছেড়ে এককপরিবার গঠনের চিন্তা করেন।

ব্যক্তি স্বার্থপরতাঃ যৌথ পরিবারের অর্থনৈতিক যােগানদাতা ব্যক্তিগণ অনেক সময় সবার সাথে মিলেমিশে যৌথ সম্পত্তি গড়ে তােলার পাশাপাশি যৌথ পরিবারের সদস্যদের অজান্তে নিজের থাকে, যার স্ত্রী অথবা সন্তানের নামে আলাদা সম্পত্তি গড়ে তুলেন।পরবর্তীতে তা পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণের মধ্যে জানাজানি হলে ঝগড়ার হয় আরযৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

কর্মজীবীদের সংখ্যা বৃদ্ধিঃ পরিবারের কর্মজীবী সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে থাকে, যার কর্মজীবী সদস্যগণ চাকুরীর সুবাদে দীর্ঘদিন তাদের যৌথ পরিবারের বাহিরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকতে হয়। ফলশ্রুতিতে একসময় তাদের মধ্যে যৌথ পরিবারে থাকার আগ্রহ কমে যায় বা তাদের সন্তানাদি ও মা বাবার সাথে এককপরিবারে থাকতে অভ্যস্ত থাকায় তারা আরযৌথ

পরিবারে ফিরে আসতে চায় না। এমনকি তাদের মধ্যে একটি স্বাধীনচেতা মনােভাব সৃষ্টি হয় তখন তারা তাদের পরিবারের কর্তাব্যক্তির বিভিন্ন মানতেও নারাজ। ফলে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যেতে থাকে।

ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তারঃ বর্তমান সমাজে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলাে ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তার। পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তি চান পরিবারের সকলসদস্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এতে পরিবারের অন্যদের মধ্যে পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার গঠনের প্রবণতা দেখা যায়।


গ. উত্তর: আদর্শ পরিবারের কার্যাবলিঃ

পরিবারের কাজের দিকে খেয়াল করলেই বুঝা যায় পরিবারের কাজের গুরুত্ব কতখানি এবং পরিবার কি কাজ করে। পরিবার সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলাে করে থাকে :

(১) জৈবিক কাজ: পরিবারের অন্যতম কাজ সন্তান-সন্ততির জন্মদান এবং লালন-পালন। এই কাজটি পরিবারের ভিত্তি। কেননা যৌনতা, নারী-পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ ও সন্তান-বাৎসল্যের কারণেই মানুষ পরিবার গঠন করে। অনেক উন্নত দেশে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে লালন-পালনের নানা দায়িত্ব শিশু-সদন বা শিশুমঙ্গল প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলাে পালন করে থাকে। তবে পরিবারের মধ্যে যে আদরস্নেহ ও মায়া-মমতায় শিশু বিকশিত হয় তার বিকল্প কিছুই সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

(২) শিক্ষামূলক কাজ: পরিবারকে সমাজ জীবনের শাশ্বত বিদ্যালয় বলা হয়। শিশুরা প্রথম শিক্ষা, বর্ণ পরিচয় ও যােগ-বিয়ােগ পরিবারেই শিখে। এমনকি বড় হয়ে স্কুলে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তাও পরিবারের নিয়ন্ত্রণে পূর্ণতা পায়। যেমন- পরিবারে মাতাপিতার সাহায্য ও সহযােগিতায় স্কুলের শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হয়। শুধু তাই নয় শিশুরা ধর্মীয় শিক্ষা, আদবকায়দা, শিষ্টাচার, বড়দের প্রতি সম্মান ও ছােটদেরকে ভালবাসার শিক্ষা পরিবার থেকে লাভ করে। তাই শিশুশিক্ষার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্ডেন প্রভৃতি থাকলেও নৈতিক মূল্যবােধ ও মানবতাবােধের শিক্ষা পরিবারের মত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না।

(৩) অর্থনৈতিক কাজ : অতীতে পরিবারের মধ্যেই অর্থনৈতিক কার্যাবলী সম্পাদিত হত। শিকার, মৎস্য চাষ ও সংগ্রহ কুটির শিল্প প্রভৃতি কাজ পরিবারের সদস্যরা সম্পাদন করে জীবন ধারণ করত। তখন তাদের চাহিদা কম ছিল বলে পরিবার সদস্যদের সকলচাহিদা পূরণ করতে পারত। কিন্তু বর্তমানকালে অর্থনৈতিক চাহিদা বৃদ্ধি ও আয়ের ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ফলে পরিবারের সদস্যগণ অফিসআদালত, কলকারখানা ও নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় করে থাকে।

তবে আজকাল আবার পরিবারমুখী আয়ের পথ উন্মােচিত হয়েছে। হাঁস-মুরগী পালন, মাছ চাষ, ফলও ফুলের বাগান | তৈরি, বাঁশ ও কাঠের কাজ, সেলাই ও বুনন কাজ করে পরিবারের সদস্যগণ আয় বাড়িয়ে সুখ-শান্তি ও স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করছেন। পরিবারের সদস্যগণের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে অর্জিত আয় পরিবারের মধ্যে খরচ করে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কাজ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *