এসএসসি ২০২১ ব্যবসায় উদ্যোগ এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ১ম সপ্তাহ

এসএসসি ২০২১ ব্যবসায় উদ্যোগ এ্যাসাইনমেন্ট ১ম সপ্তাহ

এসএসসি ১ম সপ্তাহের ব্যবসায় উদ্যোগ এসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১-বাংলাদেশে ব্যবসায় সম্প্রসারণে ব্যবসায় পরিবেশের প্রভাব বিশ্লেষণ

এসএসসি ২০২১ ব্যবসায় উদ্যোগ এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ১ম সপ্তাহ

শিরোনাম: ব্যবসায় সম্প্রসারণে ব্যবসায় পরিবেশের প্রভাব বিশ্লেষণ

 
বাংলাদেশে ব্যবসায় সম্প্রসারণে ব্যবসায় পরিবেশের প্রভাব বিশ্লেষণ:


ব্যবসায়ের ধারণা: অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায় ব্যবসা এক ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড (বিজ্ঞান) যেখানে নির্দিষ্ট সৃষ্টিশীল ও উৎপাদনীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে বৈধভাবে সম্পদ উপার্জন বা লাভের উদ্দেশ্যে লােকজনকে সংগঠিত করা হয় ও তাদের উৎপাদনীয় কর্মকাণ্ড রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

ব্যক্তির মুনাফা পাওয়ার আশায় পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদনের মাধ্যমে উপযােগ সৃষ্টি এবং মানুষের বস্তুগত ও অবস্তুগত অভাব পূরণের লক্ষে সেগুলাে বণ্টন এবং এর সহায়ক সবরকম বৈধ, ঝুঁকিবহুল ও ধারাবাহিক কার্যকে ব্যবসায় বলে।

ক. শিল্প:
যে কার্য প্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং এতে উপযােগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযােগী পণ্য প্রস্তুত করা হয় তাকে শিল্প বলে।

প্রজনন শিল্প: অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্বাচিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর বংশবিস্তারকরণ প্রচেষ্টাকে প্রজনন শিল্প বলে।

নিষ্কাশন শিল্প: যে শিল্প প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভূগর্ভ, পানি বা বায়ু হতে সম্পদ উত্তোলন করা হয় তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে।

নির্মাণ শিল্প: রাস্তা, ঘাট, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত শিল্পকে নির্মাণ শিল্প বলে।

সেবামূলক শিল্প: সেবা প্রদান কাজের সাথে জড়িত শিল্পকে সেবামূলক শিল্প বলে।

উৎপাদন শিল্প: উৎপাদন কাজের সাথে জড়িত শিল্পকে উৎপাদন শিল্প বলে।

খ. বাণিজ্য:
শিল্পে উৎপাদিত পণ্য প্রকৃত ভােগকারী বা ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছানাের ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে তা দূরীকরণের জন্য গৃহীত যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে বাণিজ্য বলে।

গ. প্রত্যক্ষ সেবা:
ডাক্তারি, আইন বৃত্তি, প্রকৌশলী ইত্যাদি সেবা কাজের সাথে জড়িত কাজকে প্রত্যক্ষ সেবা বলে।

ব্যবসায় পরিবেশের ধারণা:
পরিবেশ হলাে কোনাে অঞ্চলের জনগণের জীবনধারা ও অর্থনৈতিক কার্যাবলীকে প্রভাবিত উপাদানের সমষ্টি। পরিবেশ দ্বারা মানুষের জীবনধারা, আচার-আচরণ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং ব্যবসা প্রভাবিত হয়। যে সব প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা ব্যবসায়িক সংগঠনের গঠন, কার্যাবলি, উন্নতি ও অবনতি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলাের সমষ্টিকে ব্যবসায়িক পরিবেশ বলে। কোনাে স্থানের ব্যবসায় ব্যবস্থার উন্নতি নির্ভর করে ব্যবসায়িক পরিবেশের উপর।

ব্যবসায় পরিবেশের উপাদানসমূহ:

১. প্রাকৃতিক পরিবেশ
২. অর্থনৈতিক পরিবেশ
৩. সামাজিক পরিবেশ
৪. রাজনৈতিক পরিবেশ
৫. প্রযুক্তিগত পরিবেশ
৬. আইনগত পরিবেশ

ব্যবসায় পরিবেশের উপাদন সমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নরূপ:

১. প্রাকৃতিক পরিবেশ: একটি দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, সাগর, নদ-নদী, আয়তন, অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদির সমন্বয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। ” ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করার আগে প্রাকৃতিক বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত। কারণ ব্যবসায় প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন: বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি ইত্যাদি ব্যবসায়ের পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে।

২. অর্থনৈতিক পরিবেশ: কোনাে দেশে জনগণের আয় ও সঞ্চয়, অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, বিনিয়ােগ, মূলধন ও জনসম্পদ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক নীতি, বাণিজ্য চক্র, অর্থনৈতিক সম্পদ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে যে পরিবেশের গঠিত হয় তাকে অর্থনৈতিক পরিবেশ বলে। অর্থনৈতিক পরিবেশ একটি দেশের ব্যবসায়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিটি দেশে আলাদা আলাদা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র এবং মিশ্র অর্থনীতি অন্তর্ভুক্ত বা জাতির।

৩. সামাজিক পরিবেশ: একটি দেশের সমাজের বা জাতির মানুষের সংখ্যা, ধর্ম, বিশ্বাস, চিন্তা চেতানা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, জীবন শৈলী ও দেশীয় ঐতিহ্য এসব মিলিয়ে যে পারিপার্শ্বিকতা গড়ে ওঠে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে। সামাজিক পরিবেশ বলতে আর্থ-সাংস্কৃতিক পরিবেশকে বােঝায়। একটি সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা, ইচ্ছা, অভ্যাস, রীতিনীতি ইত্যাদির ব্যবসায়কে প্রভাবিত করে থাকে।

৪. রাজনৈতিক পরিবেশ: রাজনৈতিক পরিবেশ হলাে একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন: দেশের সার্বভৌমত্ব, সরকারের স্থিতিশীলতা, দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও তাদের চিন্তা-ভাবনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইত্যাদি মিলিত হয়ে যে পারিপার্শ্বিকতার সৃষ্টি হয় তাকে রাজনৈতিক পরিবেশ বলে।

ব্যবসায়ের উপর রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব রয়েছে বহুগুণে। একটি দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সেই দেশের ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপগুলি: সিদ্ধান্ত, প্রচার, উৎসাহ, অবস্থান, নির্দেশ এবং নিয়ন্ত্রণ করে। দক্ষ ও গতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেয়। এটি অর্থনৈতিক বিকাশের একটি প্রাথমিক উপাদান।

৫. প্রযুক্তিগত পরিবেশ: ব্যবসায়ের পরিবেশের প্রযুক্তিগত উপাদানগুলি যেমন: বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা, গবেষণা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রযুক্তি আমদানির সুযােগ ইত্যাদি মিলিয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে প্রযুক্তিগত পরিবেশ বলে। মানসম্মত পণ্য ও পরিষেবা, পণ্যগুলির গুণমান, উৎপাদনশীলতা এবং প্যাকেজিংয়ের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন: যন্ত্রপাতি এবং অটোমেশন ইত্যাদি। একটি প্রতিযােগিতামূলক ব্যবসায় পরিবেশে প্রযুক্তি উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। প্রযুক্তি ব্যবসায়কে আরও উন্নত ও দ্রুত চালাতে সহায়তা করে। নতুন প্রযুক্তি গ্রাহকদের কাছে নতুন পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

৬. আইনগত পরিবেশ: একটি দেশের বাণিজ্যিক আইন, শিল্প আইন, পরিবেশ সংক্ষরণ আইন, আন্তর্জাতিক আইন, ভােক্তা আইন, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা আইন ইত্যাদি মিলিত হয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে আইনগত পরিবেশ বলে। অবৈধ ও বেআইনি ব্যবসায়িক কার্যক্রম রােধ করতে সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে সাধরণ জনগণকে রক্ষা করার জন্য। একজন ব্যবসায়ীকে সরকারের প্রদত্ত সকল আইন মেনেই ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সুতরাং আইনগত পরিবেশ ব্যবসায়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *