নবম শ্রেণীর অর্থনীতি এসাইনমেন্ট ২০২১
‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অর্থনীতির দশটি মৌলিক নীতি কার্যকর ভূমিকা রাখে। উপরােক্ত বিষয়ে অনাধিক ৩০০ শব্দের একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
নবম শ্রেণীর অর্থনীতি এসাইনমেন্ট উত্তর
উত্তর : অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথ এর মতে- অথনাতি হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা জাতিসমূহের সম্পদের উৎস, ধরণ ও কারণ অনুসন্ধান করে । অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শাল এর মতে- অর্থনীতি এমন একটি বিষয় যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কার্যাবলি নিয়ে আলােচনা করে। অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের কল্যাণ সাধন।
অর্থাৎ, মানুষ কিভাবে অর্থ উপার্জন করে এবং তা বিভিন্ন অভাব মােচনে ব্যয় করে তাই অর্থনীতির আলােচ্য বিষয় । অর্থনীতির দশটি মােলিক নীতি আমাদের সমাজে সম্পদ স্বল্পতার পরিপ্রেক্ষিতে অসীম অভাব মােকাবেলা করতে হয় ।
অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ম্যানকিউয়ের মতবাদ অনুসারে অর্থনীতির দশটি মােলিক নীতি নিম্নে উল্লেখ করা হলাে :
১. মানুষকে পেতে হলে ছাড়তে হয় ।
২. সুযােগ ব্যয় ।
৩. যুক্তিবাদী মানুষ প্রান্তিক পর্যায় নিয়ে চিন্তা করে ।
৪. মানুষ প্রণােদনায় সাড়া দেয়।
৫. বাণিজ্য সবাই উপকৃত হয় ।
৬. অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংগঠিত করার জন্য সচরাচর বাজার একটি উত্তম পন্থা।
৭. সরকার কখনাে কখনাে বাজার নির্ধারিত ফলাফলের উৎকর্ষ সাধন করতে পারে ।
৮. একটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে সে দেশের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ক্ষমতার উপর ।
৯. যখন সরকার অতি মাত্রায় মুদ্রা ছাপায়, তখন দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।
১০. সমাজে মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের মধ্যে স্বল্পকালীন বিপরীত সম্পর্ক বিরাজ করে।
আমাদের জীবনে অর্থনীতির মৌলিক নীতিগুলাের প্রভাব যদি বাণিজ্য না থাকত তাহলে প্রতিটি পরিবারকে নিজেদের মৌলিক চাহিদা মেটানাের জন্য নিজেদেরকেই খাদ্য উৎপাদন করতে হতাে , বস্ত্র তৈরি করতে হতাে , তেমনি বসবাসের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করতে হতাে । কিন্তু এটা কখনই একটি পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয় । এ কারণেই সমাজে মানুষ আদান – প্রদানের মধ্যে বিকল্প অবস্থা বাছাই করে।
পরিবারের মতই বিভিন্ন দেশ তাদের মধ্যে উৎপাদিত বিশেষায়িত দ্রব্য বিনিয়ােগ করে। ফলে বাণিজ্যে প্রতিটি দেশেই লাভবান হয়। মানুষের দ্রব্য ব্যবহারের পরিবর্তন তখনই ঘটে যখন খরচ বা সুবিধা সংক্রান্ত কোনাে পরিবর্তন ঘটে । চাহিদা ও যােগানের মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নিজে নিজেই নির্ধারিত হয় , যাকে অর্থনীতিতে অদৃশ্য হাত বলা হয়।
যখন এই অদৃশ্য হাত সঠিকভাবে কাজ করে না তখন সরকারের দৃশ্যমান হাতের হস্তক্ষেপের প্রয়ােজন হয় । আবার, অর্থনীতিতে যখন দাম স্তর বৃদ্ধি পায় তখন সেখানে মূল্যস্ফীতি ঘটে । অর্থাৎ, অর্থনীতিতে অর্থের যােগান বেশি হলে মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে । আর এই অর্থের যােগান নিয়ন্ত্রণ করে যেকোনাে দেশের সরকার । একটি দেশের সরকার যখন অধিকমাত্রায় মুদ্রা ছাপায় তখন ঐ দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয় ।
ফলে সে দেশের অর্থের মূল্য বা মান কমে যায় ।তাছাড়া , প্রতিটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে সে দেশের উৎপাদন ক্ষমতার উপর । যে দেশের দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি সেদেশের মানুষের উন্নত খাবার ব্যবস্থা, উন্নত স্বাস্থ্য সেবা ও নাগরিক সুবিধা বেশি এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত । কাজেই বলা যায়- আমাদের জীবনে অর্থনীতির। মৌলিক নীতিগুলাের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
আমার জীবন-যাপনে অর্থনীতির মৌলিক নীতিগুলাের ভূমিকা:
আমার জীবনে অর্থনীতির মৌলিক উপাদানগুলাের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেন: একটি পণ্য ক্রয়ের বেলায় বেশি অর্থ খরচ হয়ে গেলে; অন্য পণ্য ক্রয়ে স্বল্প অর্থ ব্যয় করতে পারব। আবার, একটি পণ্য ক্রয় করলে অন্য আরেকটি পণ্য ক্রয়ের সুযােগ ত্যাগ করতে হবে ।
বাজারে পণ্যের দামাদামি করার মাধ্যমে ক্রয় – বিক্রয় করতে পারি । ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপে নির্ধারিত দামে পণ্য ক্রয় করতে হয়। অন্যদিকে, প্রান্তিক পণ্য থেকে প্রান্তিক উপযােগ সর্বোচ্চ আদায়ের চেষ্টা করি। এছাড়া অন্যান্য উপাদানগুলােও আমার জীবনে নানানভাবে প্রভাব ফেলে। অর্থনীতির মৌলিক উপাদানগুলােও ব্যক্তিক, ব্যবসায়িক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মানবজীবনে অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। স্বল্পমেয়াদে বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি কমলে বেকারত্ব বাড়ে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে বেকারত্ব কমে । আবার, যে দেশের মানুষের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি তাদের জীবনযাত্রার মানও তত উন্নত । তাই- অর্থনীতির মৌলিক উপাদানগুলাে সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের সঠিক ধারণা রাখা উচিত ।