রুপাই কবিতা– জসীমউদ্দীন। বাংলা ১ম পত্র অষ্টম শ্রেণি

রুপাই কবিতা

এই পোস্টে রুপাই দেওয়া আছে। এটি অষ্টম শ্রেণির একটি কবিতা। কবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ নামক কাহিনিকাব্যের একটি অংশ রুপাই’ শিরােনামে কবিতাকারে সংকলিত হয়েছে। নিচের অংশে রুপাই কবিতা সম্পূর্ণ দেওয়া আছে। যারা কবিতা টি পড়তে চান, তারা সম্পূর্ণ পোস্ট টি পড়ুন। কবিতা এবং এর মূলভাব জেনেনিন।

রুপাই কবিতা

এখানে রুপাই কবিতা টি দেওয়া হয়েছে। এটি লিখেছেন কবি জসীমউদ্দীন। কবিতা টি অষ্টম শ্রেণির বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিচের অংশে থেকে কবিতা টি পড়ুন অথবা পিডিএফ সংগ্রহ করুন।

রুপাই
– জসীমউদ্দীন

এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া |

জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু,
গা-খানি তার শাঙন মাসের যেমন তমাল তরু |
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল |

কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষী,
মুখে তাহার ছড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি |
কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দাতের কালি দিয়েই কেতাব কোরাণ লেখি |

জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময় ;
চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয় |

সোনায় যে জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার’
রঙ পেলে ভাই গড়তে পারি রামধণুকের হার |
কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারি পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন |

সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ,
কালো-বরণ চাষীর ছেলে জুড়ায় যেন বুক |
যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তার গাঁও!
সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও |

আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী,
খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি |
জারীর গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
‘শাল-সুন্দী-বেত’ যেন ও, সকল কাজেই লাগে |

বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগাল লোহা যেন,
রূপাই যেমন বাপের বেটা, কেউ দেখেছ হেন?
যদিও রূপা নয়কো রূপাই, রূপার চেয়ে দামী,
এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামী |

রুপাই কবিতার মূলভাব

এ কবিতায় কবি গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি, কৃষকের রূপ ও কর্মোদ্যোগ অসাধারণ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির মধ্যে কালাে ভ্রমর, রঙিন ফুল, কাঁচা ধানের পাতা এবং কচি মুখের মায়াবী কৃষককে প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়। কৃষকের বাহু দুইখানি লাউয়ের কচি ডগার মতাে বলে মনে হয়। রােদে পুড়ে কৃষকের শরীরের রং কালাে হয়ে যায়।

এ কালাে কালি দিয়েই পৃথিবীর সমস্ত কেতাব বা গ্রন্থ লেখা হয়ে থাকে। অর্থাৎ কবির মতে, কৃষকের শ্রমেই সভ্যতার ইতিহাস সৃষ্টি হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব কিছুই কৃষকের কালাে। আর এ কালাে কৃষকই পৃথিবীর সবকিছু জয় করেছে। কালাে কৃষকটি আখড়াতে বা জারির গানে যেমন দক্ষ, তেমনি সকল কাজে পারদশী। তাই কবির দৃষ্টিতে এ কৃষক সবার কাছে দামি বলে গণ্য হয়েছে।

রুপাই কবিতা কোন কাব্যগ্রন্থের

নক্সী কাঁথার মাঠ’ নামক কাহিনিকাব্যের একটি অংশ থেকে রি কবিতাটি সংকলিত হয়েছে। তাই এটি  নক্সী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থের। নকশী কাঁথার মাঠ ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যের একটি অনবদ্য আখ্যানকাব্য। বাংলা ভাষায় রচিত এই আখ্যানকাব্যের লেখক বাংলাদেশের পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন। বাংলা কবিতার জগতে যখন ইউরোপীয় ধাঁচের আধুনিকতার আন্দোলন চলছিল তখন প্রকাশিত এই কাব্যকাহিনী ঐতিহ্যগত ধারার শক্তিমত্তাকে পুনঃপ্রতিপন্ন করে। এটি জসীমউদদীনের একটি অমর সৃষ্টি হিসাবে বিবেচিত। কাব্যগ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদিত হয়ে বিশ্বপাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যোপন্যাসটি রূপাই ও সাজু নামক দুই গ্রামীণ যুবক – যুবতীর অবিনশ্বর প্রেমের করুণ কাহিনী। এই দুজনই ছিলেন বাস্তব চরিত্র।

রুপাই কে

এই কাব্যগ্রন্থের রূপাই চরিত্রটি জসীমউদ্দীন রূপায়ণ করেছিলেন বাস্তবের একজন ব্যক্তিকে উপজীব্য করে, যার প্রকৃত নাম রূপা। রূপার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিলাসী গ্রামে৷ বাস্তবের রূপাও কাব্যের রূপাইয়ের মতো বলবান বীর ছিলেন, ছিলেন সেরা লাঠিয়াল।

রুপাই কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন

পল্লিগ্রামের পিতৃহীন এক দুরন্ত বালক ছমির শেখ। ফসল বােনার ওস্তাদিতে দশগ্রামে তার সুনাম আছে। বন্যা-খরা তথা গ্রামের শত বিপদে বৃক্ষের ছায়ার মতাে তাকে সবাই কাছে পায়। যাত্রাপালার অভিনয়ে তার জুড়িমেলা ভার। গ্রামের সবাই তাকে স্নেহ করে; যেমন প্রকৃতি করে গ্রামকে।

ক. চাষির ছেলের ‘গা-খানি” দেখতে কেমন?
খ. “চাষিদের ওই কালাে ছেলে সব করেছে জয়”- চরণটির মাধ্যমে কবি কী বোেঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপক ও রুপাই’ কবিতার আলােকে তােমার দেখা কোননা পল্লিগ্রামের বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকটি রুপাই কবিতার খণ্ডাংশ মাত্র”— যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করাে।

উত্তরঃ 

ক। চাষির ছেলের গাখানি দেখতে শাওন মাসের তমাল তুরুর মতাে।

খ। আলােচ্য চরণটির মাধ্যমে কবি বােঝাতে চেয়েছেন কালাে কৃষকদের শ্রমেই সভ্যতার ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে।রােদে পুড়ে কৃষকের গায়ের রং কালাে হয়ে যায়। এই কালাে কৃষকরাই সভ্যতার মূল হাতিয়ার। তাদের পরিশ্রমের কারণেই পৃথিবী এগিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। কালে কৃষকরাই পৃথিবীর সবকিছু জয় করেছে। এটিই বােঝানাে হয়েছে প্রশ্নোত্ত চরণটি দ্বারা।

গ।

উদ্দীপক ও রুপাই’ কবিতায় আবহমান গ্রাম-বাংলার অসাধারণ চিত্র পল্লিকবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘রূপাই’ কবিতায় গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। কৃষকের জীবনের সাথে ফসলের মাঠ, শস্যসহ প্রকাশ পেয়েছে।

প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। উদ্দীপকেও পল্লির একটি শাশ্বত চিত্র ফুটে উঠেছে। এ গ্রামের প্রকৃতিও নিবিড় মমতায় জড়িয়ে রাখে সবাইকে। মামাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে আমি এমনই একটি পল্লিগ্রামের রূপে মুগ্ধ হয়েছি। গ্রামটির সর্বত্র সবুজের ছড়াছড়ি। মাঠে মাঠে সােনালি ধানের সম্ভার। তাতে অক্লান্তভাবে কাজ করে চাষিরা। গ্রামের ঘরগুলাে যেন এক একটি শান্তির নীড়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে গ্রামটি সত্যিই অনন্য।

ঘ।

উদ্দীপকে রুপাই’ কবিতার সামগ্রিক ভাব প্রকাশ পায়নি।

জসীমউদ্দীন রচিত রুপাই’ কবিতায় গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির অনবদ্য চিত্র বিদ্যমান। প্রকৃতির সাথে কৃষকদের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। কালাে এই কৃষকরা সভ্যতার অগ্রনায়ক। তাদেরই এক প্রতিনিধি রুপাই। নিজের গুণে সে সবার কাছে অমূল্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।

উদ্দীপকে বাংলার একটি পল্লিগ্রামের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। প্রকৃতির নিবিড় স্নেহে গ্রামটি স্নাত। এ গ্রামের পিতৃহীন বালক ছমির শেখ। কৃষিকাজে তার রয়েছে অসামান্য দক্ষতা। যেকোনাে আপদে-বিপদে সবার পাশে থাকে সে। যাত্রাপালার অভিনয়েও তার জুড়ি নেই। রুপাই’ কবিতার সাথে এ দিকগুলাে মিললেও এর বাইরেও কবিতায় আরাে কিছু প্রসজা বিদ্যমান।

রুপাই’ কবিতায় গ্রাম-বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি কৃষকের রূপ ও কর্মোদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। রুপাই এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। কৃষকদের একজন প্রতিনিধি হিসেবে। নিজের কর্মনিপুণতা ও প্রতিভার কারণে সবার কাছে আদৃত হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত ছমির শেখের মাঝে এ দিকটি লক্ষ করা যায়। কিন্তু রুপাই’ কবিতায় সমগ্র কৃষক জাতির জয়গান গাওয়ার যে প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে, তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, আলােচ্য মন্তব্যটি যৌক্তিক।

শেষ কথা

আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের অনেক ভালোলেগছে এবং এই পোস্ট থেকে রুপাই কবিতা পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম শিক্ষামূলক আরও পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকুন। অষ্টম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের অনেক পোস্ট এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হয়েছে। পোস্ট টি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আরও দেখুনঃ

আবার আসিবো ফিরে – জীবনানন্দ দাশ। বাংলা ১ম পত্র