৮ম শ্রেণীল বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ১৬তম সপ্তাহ

৮ম শ্রেণীল বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ১৬তম সপ্তাহ

“কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে জীবনযাপন প্রণালির পরিবর্তন ও নতুন পরিস্থিতিতে খাপখায়ানাে”

পৃথিবী দুটি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে, কোভিড -১৯ মহামারীর আগে আরাে তিনটি মহামারী দেখলাে, সবকিছু চাপিয়ে ইতিহাসে অসহায় সাক্ষী হয়ে এ থাকলাে এই শতাব্দীর তৃতীয় দশকের কোভিড -১৯ সংক্রমণ। যত দিন যাচ্ছে জীবন ধ্বংস হয়েছে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে আর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি , প্রতিকূল হয়ে উঠছে জনজীবন।পেশাদার জীবনের গতিমুখ বদলে বাড়িই হয়ে উঠেছে নতুন অফিস। ইন্টারনেট হল নতুন অফিস কক্ষ। কিছু সময়ের জন্যে সহকর্মীদের সঙ্গে বসে কাজ করা ইতিহাসের বিষয় হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্থানীয়, জাতীয়, দেশি-বিদেশী সকল দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ।

নিজেদের কাজ ও নেতৃত্বের পরিবর্তন এনেছিলেন। বিশ্ব তারা একে অপরের সঙ্গে এখন শুধু ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমেই কথা বলতে হচ্ছে। অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে এর মাধ্যমে কথা বলতে হচ্ছে।বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ এবং গােষ্ঠী সংস্থার সঙ্গে এমনকি রেডিও জকিদের সঙ্গেও আলােচনা ভিডিও বার্তালাপ সীমাবদ্ধ। প্রতিদিন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ তাদের দুরদুরান্তে থাকা পরিবাররের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাদের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।

সামাজিক দূরত্ব , স্টে হােম , লকডাউন , হােম কোয়ারেনটাইন নতুন নতুন শব্দগুলাে মানুষের কাছে অধিক পরিচিত হয়ে উঠলাে। মানুষ বাড়িতে বসে অফিসের কাজ চালিয়ে নিলাে , প্রথম দিকে একটু অদ্ভত বা অসম্ভব মনে করা হলে ও দিন দিন মানুষ অবস্ত হয়ে উঠলাে। ঘরােয়া পরিবেশে অভিনয় শিল্পীরা নিজেদের সৃষ্টিশীল অডিও – ভিডিও বা কনটেন্ট মেকিং এর কাজ চালিয়ে নিলেন।

খেলাদুলার ডিজিটাল প্রতিযােগিতা, অনলাইনবিনােদন মূলক অনুষ্ঠান, ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স, ই-সেবা, ই-লার্নিং, টেলিমেডিসিন, নানা সৃষ্টিশীল উপায়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষেরা কোভিড -১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারি রেখেছেন।বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবতই সবাই মিলে একসাথে বসবাস করতে অভ্যস্ত কিন্তু এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানুষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান এমনকি কি ঘরােয়া পরিবেশে কোন অনুষ্ঠান কিছুই আয়ােজন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

জরুরিপ্রয়ােজনে ঘরথেকে বের হওয়ার সময় মানুষ মুখে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করে কাজ করতে হচ্ছে। হাসপাতলে নেওয়া যখন পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীদের প্রয়ােজন ) হয় মানুষ সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে তাদের সেবা যত্ন ও চিকিৎসা করেছে। যতদিন যাচ্ছে রােগ সম্পর্কে মানুষের পরিষ্কার ধারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জনসাধারণকে মাস্ক পরায় উদ্ধত করার লক্ষে টেলিভিশন পত্রপত্রিকার বিভিন্ন সচেতনতা মুলক ক্যাম্পেইন হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব এবং সরকার নির্দেশিত নিয়ম নীতি গুলাে মেনে চলার জন্য কোথাও কোথাও আইন প্রয়ােগকারীসংস্থা খুব জোরালাে ভূমিকা পালন করছে।কাজের জায়গাগুলির দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তর অগ্রাধিকার এলাে। প্রযুক্তির বুহুমখী ব্যবহার ও রূপান্তরে জীবনও হয়ে উঠলাে ব্যস্তময়।

শিক্ষাক্ষেত্রে এলাে তুমুল পরিবর্তন, আমার ঘর আমার স্কুল এ শ্লোগানের শিক্ষা কার্যক্রম চলতে থাকলাে , ফেসবুক, গুগল মিট, গুগল ক্লাস , জুম , স্কাইপি, হােয়াটস এন্সহ নানান অনলাইন ফ্লাটফর্মে যে খানের নেটওয়ার্ক সমস্যা সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়েও অনেক জাগায় শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে নিলেন। শিক্ষক ও প্রযুক্তিবিদগণ তাদের নিত্যনতুনউদ্ভাবন ও প্রয়ােগে ব্যস্ত রয়েছেন।

সরকার শিক্ষকদের সহায়তা এবং ই – লার্নিংকে উৎসাহ জোগাতে নানানরকম উদ্যোগও হাতে নিয়েছেন। ব্যবহার যােগ্যতা, সাম্য এবং শিক্ষার মান উন্নত করার লক্ষ্যে চালু করা ই-পাঠশালা, টেলিভিশন স্কুল শিক্ষার ধারাবাহিকতা ও শিখন ফল যাচায়ের উদ্যেশে শুরু হলাে সপ্তাহ ভিত্তিক এসাইনমেন্ট কার্যক্রম। এভাবে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ নানান কলাকৌশলের প্রযুক্তির নানান ব্যবহারে নিজেদের কাজকর্মগুলাে চালিয়ে নিলাে বাসা থেকে।সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে করােনাভাইরাস এর সাথে পাল্লা দিয়ে প্রত্যেকটি দেশ নিজ নিজ অবস্থান সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল।

খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান নিত্যপ্রয়ােজনীয় সামান্য কিছু দোকান যদিও খােলা ছিল অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দিনের জন্য বন্ধ ছিল যার। ফলে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা পারিবারিক কোলাহল নানান ভেবে দেখা দিলাে। যদিও সরকার , স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবানরা নানা ভাবে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশের দাঁড়ালাে তথাপি বিদ্যালয়গুলাে বন্ধ এবং করােনাভাইরাসের বিস্তার রােধে সামাজিকীকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিচ্ছিন্ন ও একাকিত্বকে তীব্র করে তুলেছে। অন্যদিকে চাকরি হারিয়ে বা হারানাের ভয়ে অনেকেই মানসিক বিপর্যত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। পাশ্চাত্যের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, হারানাে প্রতি পাঁচটি কাজের মধ্যে দুটি আর ফিরে আসবে না।

বিশ্বজুড়ে নতুন স্নাতক ডিগ্রি , ডিপ্লোমা এবং পেশাদার ডিগ্রিপ্রাপ্ত যুবকরা মহামারীটি বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেয়ার কারণে চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য লড়াই করছে। একটি [বৈরী চাকরির বাজার শিক্ষাক্ষেত্রে যে বিঘ্ন ঘটেছেতার সঙ্গে মিলিত হয়েছে, যা ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে শিক্ষিত তরুণদের সম্ভাবনার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। কোভিড -১৯ প্রথম চাকরিপ্রাপ্ত যুবকদের চাকরিতে উন্নতি করার আশা ব্যর্থ করে দিয়েছে। আস্তে আস্তে এসব সমস্যা একটি বড় সামাজিক অশান্তির রূপ নিতে পারে। আশাকরি কোভিড -১৯ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় শিক্ষা পদ্ধতিতে এবং ব্যবসার ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে। সর্বোপরি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থাই হবে আগামীর দুর্যোগ মােকাবেলার কার্যকর পন্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *