৮ম শ্রেণির ৮ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ চারু ও কারুকলা এর উত্তর

৮ম শ্রেণির ৮ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ চারু ও কারুকলা

এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজঃ সার্বজনীন উৎসব হিসাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য তােমার পরিবার/এলাকায় কী ধরনের উৎসবের আয়ােজন করতে পারবে। তার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন কর।

সংকেত: ০১। বাংলা নববর্ষকে কেন সার্বজনীন উৎসব বলতে পারি-ব্যাখ্যা কর। ০২। বাংলা নববর্ষ কীভাবে উদযাপন কর? ০৩। তােমাদের এলাকায় বৈশাখী মেলা হয় কী? হলে কী ধরনের পণ্য মেলায় বিক্রি হয়?

নির্দেশনাঃ বিগত বছরগুলােতে তােমার পরিবার/এলাকায় কীভাবে দিনগুলাে উদযাপন করা হত তার আলােকে লিখ।

৮ম শ্রেণির ৮ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ চারু ও কারুকলা এর উত্তর

বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনটি পুরাতন বছরের তিরোধান এবং একটি নতুন বছরের আবির্ভাব নির্দেশ করে। দিনটিতে যে বছরটি প্রকৃতি থেকে বিদায় নিল একদিকে তার সুখ-দুঃখের স্মৃতি মাখা চিত্র বিলীয়মান, অন্যদিকে যে বছর প্রকৃতির রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হলো তার ভাবী অথচ অনিশ্চিত সম্ভাবনা সুনিশ্চিত রুপে বিদ্যমান। নববর্ষ এর ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় বাংলার হাটে-মাঠে-ঘাটে, গ্রামে-শহরে -বন্দরে মহা আনন্দময় পরিবেশের সূচনা করে।


বাংলা নববর্ষকে সার্বজনীন উৎসব বলতে পারার কারণ-
এই উৎসবটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পালন করে থাকে। পহেলা বৈশাখে বাঙালিরা অতীতের সুখ-দুঃখ ভুলে নতুন আহ্বানে সাড়া দেয়। নতুনকে গ্রহণ করার জন্য উদ্দীপ্ত হয়। ১৯৭০ সালের ১২ ই ফেব্রুয়ারি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় “নবান্ন প্রদর্শনী” যা জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই উৎসবটি পালন করেছিল। তারপরই অনুষ্ঠিত হয় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে “কালবৈশাখী” নামে একটি চিত্র-প্রদর্শনী। এটিও মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিল।

সেই প্রদর্শনী থেকে পরবর্তীকালে কিছুটা পরিবর্তন হয়ে রূপ নেয় বর্তমান পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান ও মেলা। বর্তমানে নিয়মিতভাবেই বাংলা নববর্ষ বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ পালন করে যাচ্ছে। এই নববর্ষ উৎসব বাংলার মানুষকে নিজের দেশের প্রতি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালবাসায় স্নিগ্ধ হতে ও গর্ববোধ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং চর্চার মাধ্যমে সব সময়ই করে যাচ্ছে। আর এই উৎসবটি দেশের সর্বস্তরের মানুষ জাতি ধর্ম সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পালন করে থাকে বলেই একে সার্বজনীন উৎসব বলা হয়।


বাংলা নববর্ষ যেভাবে উদযাপন করা হয়–
বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর মধ্য দিয়ে দুটি করে বারটি মাস আবর্তিত হয়। নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। নববর্ষ বলে বরণ করে নেয়া হয় এ দিনটিকে। পহেলা বৈশাখ আমাদের যাত্রা শুরু লগ্ন। আমাদের নববর্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে ফসল বোনার আনুষ্ঠানিকতা। পহেলা বৈশাখের উৎসবের মধ্য দিয়েই বাঙালি হৃদয়ের নতুন করে জাগ্রত হয় কর্মপ্রেরণা।

মধ্যযুগ থেকেই এ দেশে নববর্ষ উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে মোগল সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণ করার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেন আমির ফতেউল্লা সিরাজী। এরপর থেকেই এদেশের মানুষ তাদের চাষাবাদের খাজনা পরিশোধ, বছরের হিসাব, বিয়ের তারিখ নির্ধারণ সবকিছুই বাংলা নব বর্ষপঞ্জী অনুসারে করে আসছে। ব্যবসায়ীরা নববর্ষে হালখাতা করে। এদিন দোকানিরা বাকি বকেয়া উসুল করে সব হিসাব চুকিয়ে ফেলে এবং ছোট বড় অনুষ্ঠান করে দিনটি উদযাপন করে।


আমাদের এলাকায় বৈশাখী মেলা –
নববর্ষ উপলক্ষে পল্লী অঞ্চলে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের এলাকায়ও নববর্ষ উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এসব মেলায় রংবেরঙের জিনিসের সমাবেশ ঘটে। বিশেষত কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর প্রচুর সমাবেশ ঘটে। মেলা থেকে শিশুরা নানা রকম খেলনা সামগ্রী কিনে, বিচিত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনন্দে মেতে ওঠে। দেশীয় খাবার-দাবার, ছোটদের মনভোলানো পণ্য, সেইসাথে বিনোদনের নানা উপকরণ মেলাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। আনন্দ কোলাহলে মুখরিত হয় মেলা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা দেশে হস্তশিল্পজাত যেসব পণ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে সেসব পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের জন্য বিশেষ মেলার আয়োজন করা হয়। এসব মেলায় ছোটদের জন্য বিভিন্ন মাটির খেলনা সামগ্রী, নাগর দোলায় চড়া, মুখরোচক খাবার দাবার পাওয়া যায়।

মেলায় আসা, সদলবলে ঘুরে ফিরে দেখা, বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসপত্র কেনাকাটা করা, দেশীয় খাবার উপভোগ করা, ছোট ছেলে মেয়েদের হাতে তাদের সকল জিনিস তুলে দেওয়া এসবই মেলার আকর্ষণ। আর এভাবেই আনন্দময় পরিবেশে আমরা পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে থাকি। এছাড়াও শহরাঞ্চলে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও বইমেলার আয়োজন করা হয়।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে সারা বৈশাখ মাস ধরে ছোট-বড় মেলা বসে। এসব মেলায় বিচিত্র উপকরণ মানুষের চিত্তবিনোদন করে থাকে। পহেলা বৈশাখ আমাদের সামাজিক অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমারোহ আর প্রকৃতির নব অভিষেক। তাই এ উৎসবকে যথাযথ উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের বরণ করে নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *