ছোটদের জন্য একুশের কবিতা ও একুশের গান- PDF

ছোটদের জন্য একুশের কবিতা

ছোটদের জন্য একুশের কবিতা গুলো সংগ্রহ করতে আমার সাথেই থাকুন। রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ায়ি, আমি কি ভুলিতে পারি। আজকে ফিরে এসেছে ভাষা শহিদদের রক্তে রাঙ্গানো সেই অমর ২১। এই দিনে আমাদের বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃ ভাষাকে রক্ষা করেছে। ভাসগার জন্য শত্রুদের হাতে শহিদ হয়েছে। আমাদের কে এনে দিয়েছে অমর ২১। এই দিনে তাদের কে শ্রদ্ধা জানাই। নিচে ছোটদের জন্য একুশের কবিতা, ২১ শে ফেব্রুয়ারির কবিতা আবৃতি এবং কিছু ২১ শের গান শেয়ার করেছি। যাদের প্রয়োজন তারা পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন। এবং নিচে থেকে কবিতা গুলো সংগ্রহ করুন।

ছোটদের জন্য একুশের কবিতা

কবিতা ১ঃ 

ভুলবোনা কোনোদিন ভাষাশহীদের ঋণ
উনিশ্‌শো বাহান্ন ৮ই ফাল্গুনে
শহীদ সালামকে আছে কারো মনে?
বরকত জব্বার রফিকের প্রাণ
এ ভাষারই তরে তারা দিলো বলিদান।
দস্যুরা চেয়েছিলো কেড়ে নিতে ভাষা
জোরজারি, বাহাদূরী ছিলো নাতো আশা।

মানেনি সে অন্যায় আবদার তারা
নেমেছিলো রাজপথে হয়ে দিশাহারা।
এক দাবী এক চাওয়া ছাড়াছাড়ি নাই
মায়ের ভাষায় মোরা অধিকার চাই।
শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত জনপদ
দস্যু গুলিতে রাঙ্গা হলো রাজপথ।

কাঁধে নিয়ে ভায়েদের মৃত সেই লাশ
থামেনিতো সে মিছিল, ছাড়ে নাই আশ
প্রাণ দিয়ে এনেছিলো যারা এই ভাষা
শ্রদ্ধা তাদের তরে আর ভালোবাসা।
ফেব্রুয়ারী আসে, ফাল্গুনও আসে
আমার ভায়ের খুন আছে তাতে মিশে।

ভুলি নাই ভুলবোনা ভুলতে কি পারি?
৮ই ফাল্গুন বা একুশে ফেব্রুয়ারী।

কবিতা ২ঃ 

ছিটকে পড়ে শিমুল-জবা, ছিটকে পড়ে খেলা
ছিটকে পড়ে ভাটিয়ালি
নদীর ছেলেবেলা–

ছিটকে পড়ে মদনমোহন, ছিটকে পড়ে খুলি
ছিটকে পড়ে নামতা-ভূগোল
ছুড়ল যখন গুলি…

ভিজল বাতাস ডুবল আকাশ
বাংলা ভাষার গ্রাম–
আমার ভাইয়ের রক্ত দিয়ে
একুশ লিখিলাম।

আগুনজ্বলা ফাগুনে
আবিদ আনোয়ার
ফাগুন এলেই আগুন জ্বালে
লাল পলাশের বন–

ফাগুন এলেই আগুন জ্বালে
দুঃখী মায়ের মন।
সেই যে কবে ‘আসছি’ বলে
দুষ্টু খোকা তার

বেরিয়ে গেল নিশান হাতে
ফিরল না সে আর।
ফাগুন এলে সেই মা ডাকে–
“কই গেলি বাপধন?”

“এই তো আমি!”– বলে ওঠে
হাজার পলাশ বন!
শহীদ মিনার বলে মা গো,
দেখ মেলে তোর আঁখি,

এই তো আমি তোর ছেলে মা,
চিনতে পারিস নাকি?
ফুল কুড়াতে গিয়েছিলাম
অন্য কোথাও না–

দৈত্য-দানোর চোখ এড়িয়ে
ফুল এনেছি মা!
প্রিয় বর্ণমালা
স.ম. শামসুল আলম

কাঠ পোড়ানো কয়লা দিয়ে
মাটির ডেরায় লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা
আকাশ থেকে শিশির নিয়ে
ঘাসের ডগায় লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা।

তুলট মেঘের রং ছড়িয়ে
চাঁদের বুকে লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা
উদোম শিশুর হাসি দিয়ে
মায়ের মুখে লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা।

সর্ষে ফুলের হলুদ দিয়ে
ক্ষেতের আলে লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা
ঢেউ তোলানো জল ছিটিয়ে
গাঙের জলে লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা।

পাতার বাঁশির সুর বাজিয়ে
পাখির পাখায় লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা
মাটির ঘ্রাণের ছোঁয়া দিয়ে
মনের খাতায় লিখেছিলাম প্রিয় বর্ণমালা।

সেই থেকে এই বর্ণমালা আমার বুকের ধন
বিশ্বজয়ী বিস্ময়ে তাই নাচে বাউল মন।

কবিতা ৩ঃ 

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।

হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !

প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।

চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?

পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।

প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।

মাতৃভাষা নিয়ে কবিতা

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
– আবদুল গাফফার চৌধুরী

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু ঝরা এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।

জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।

সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।

সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

বাংলা ভাষা
– অতুলপ্রসাদ সেন

মোদের গরব, মোদের আশা,
আ-মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে,
তোমার বোলে,
কতই শান্তি ভালোবাসা!

কি যাদু বাংলা গানে!
গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে,
গেয়ে গান নাচে বাউল,
গান গেয়ে ধান কাটে চাষা!

বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন্‌,
হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন-
ঐ ফুলেরই মধুর রসে,
বাঁধলো সুখে মধুর বাসা!

বাজিয়ে রবি তোমার বীণে,
আনলো মালা জগৎ জিনে!
তোমার চরণ-তীর্থে আজি,
জগৎ করে যাওয়া-আসা!

ঐ ভাষাতেই নিতাই গোরা,
আনল দেশে ভক্তি-ধারা,
আছে কৈ এমন ভাষা,
এমন দুঃখ-শ্রান্তি-নাশা?

ঐ ভাষাতেই প্রথম বোলে,
ডাকনু মায়ে ‘মা, মা’ বলে;
ঐ ভাষাতেই বলবো হরি,
সাঙ্গ হলে কাঁদা হাসা!

মোদের গরব, মোদের আশা,
আ-মরি বাংলা ভাষা!

বাঙলা ভাষা
__হুমায়ুন আজাদ

শেকলে বাঁধা শ্যামল রূপসী, তুমি-আমি, দুর্বিনীত দাসদাসী-
একই শেকলে বাঁধা প’ড়ে আছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।
আমাদের ঘিরে শাঁইশাঁই চাবুকের শব্দ, স্তরে স্তরে শেকলের ঝংকার।
তুমি আর আমি সে-গোত্রের যারা চিরদিন উৎপীড়নের মধ্যে গান গায়-
হাহাকার রূপান্তরিত হয় সঙ্গীতে-শোভায়।

লকলকে চাবুকের আক্রোশ আর অজগরের মতো অন্ধ শেকলের
মুখোমুখি আমরা তুলে ধরি আমাদের উদ্ধত দর্পিত সৌন্দর্য:
আদিম ঝরনার মতো অজস্র ধারায় ফিনকি দেয়া টকটকে লাল রক্ত,
চাবুকের থাবায় সুর্যের টুকরোর মতো ছেঁড়া মাংস
আর আকাশের দিকে হাতুড়ির মতো উদ্যত মুষ্টি।

তোমার দীর্ঘশ্বাসের নাম চন্ডীদাস
শতাব্দী কাঁপানো উল্লাসের নাম মধুসূদন
তোমার থরোথরো প্রেমের নাম রবীন্দ্রনাথ
বিজন অশ্রুবিন্দুর নাম জীবনানন্দ
তোমার বিদ্রোহের নাম নজরুল ইসলাম

শাঁইশাঁই চাবুকের আক্রোশে যখন তুমি আর আমি
আকাশের দিকে ছুঁড়ি আমাদের উদ্ধত সুন্দর বাহু, রক্তাক্ত আঙুল,
তখনি সৃষ্টি হয় নাচের নতুন মুদ্রা;
ফিনকি দেয়া লাল রক্ত সমস্ত শরীরে মেখে যখন আমরা গড়িয়ে পড়ি

ধূসর মাটিতে এবং আবার দাঁড়াই পৃথিবীর সমস্ত চাবুকের মুখোমুখি,
তখনি জন্ম নেয় অভাবিত সৌন্দর্যমন্ডিত বিশুদ্ধ নাচ;
এবং যখন শেকলের পর শেকল চুরমার ক’রে ঝনঝন ক’রে বেজে উঠি
আমরা দুজন, তখনি প্রথম জন্মে গভীর-ব্যাপক-শিল্পসম্মত ঐকতান-
আমাদের আদিগন্ত আর্তনাদ বিশশতকের দ্বিতীয়ার্ধের
একমাত্র গান।

ছোটদের জন্য একুশের গান

মাগো, ওরা বলে
– আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

‘কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,

আর, আমি ডালের বড়ি
শুকিয়ে রেখেছি—
খোকা তুই কবে আসবি!
কবে ছুটি?’
চিঠিটা তার পকেটে ছিল,
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।

‘মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।

বলো, মা, তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরী হচ্ছে।
তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ী ফিরবো।

লক্ষ্মী মা রাগ ক’রো না,
মাত্রতো আর কটা দিন।’
‘পাগল ছেলে’ ,
মা পড়ে আর হাসে,

‘তোর ওপরে রাগ করতে পারি!’
নারকেলের চিঁড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে
এটা সেটা আরো কত কি!

তার খোকা যে বাড়ী ফিরবে!
ক্লান্ত খোকা!
কুমড়ো ফুল

শুকিয়ে গেছে,
ঝ’রে প’ড়েছে ডাঁটা;
পুঁইলতাটা নেতানো,—
‘খোকা এলি?’

ঝাপসা চোখে মা তাকায়
উঠোনে, উঠোনে
যেখানে খোকার শব
শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে।
এখন,

মা’র চোখে চৈত্রের রোদ
পুড়িয়ে দেয় শকুনিদের।
তারপর,
দাওয়ায় ব’সে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,

খোকা তার
কখন আসে! কখন আসে!
এখন,
মা’র চোখে শিশির ভোর,
স্নেহের রোদে
ভিটে ভরেছে।

স্মৃতিস্তম্ভ
– আলাউদ্দিন আল আজাদ

স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার ? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো ! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে

হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার হাঁপর চালাই

সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য ।
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক ! ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চারকোটি পরিবার ।

এ-কোন মৃত্যু ? কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন,
শিয়রে যাহার ওঠেনা কান্না, ঝরেনা অশ্রু ?
হিমালয় থেকে সাগর অবধি সহসা বরং
সকল বেদনা হয়ে ওঠে এক পতাকার রং

এ-কোন মৃত্যু ? কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন,
বিরহে যেখানে নেই হাহাকার ? কেবল সেতার
হয় প্রপাতের মোহনীয় ধারা, অনেক কথার
পদাতিক ঋতু কলমেরে দেয় কবিতার কাল ?

ইটের মিনার ভেঙেছে ভাঙুক । একটি মিনার গড়েছি আমরা
চারকোটি কারিগর
বেহালার সুরে, রাঙা হৃদয়ের বর্ণলেখায় ।
পলাশের আর

রামধনুকের গভীর চোখের তারায় তারায়
দ্বীপ হয়ে ভাসে যাদের জীবন, যুগে যুগে সেই
শহীদের নাম
এঁকেছি প্রেমের ফেনিল শিলায়, তোমাদের নাম ।
তাই আমাদের

হাজার মুঠির বজ্র শিখরে সূর্যের মতো জ্বলে শুধু এক
শপথের ভাস্কর ।

শেষ কথা

আজকের মতো এখানেই শেষ। ভাষা দিবস সম্পর্কে সুন্দর সুন্দর কবিতা গুলো এই পোস্টে শেয়ার করেছি। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এই পোস্ট থেকে ছোটদের জন্য একুশের কবিতা ও একুশের গান পাঠ করতে পেরেছেন। এই রকমা র পোস্ট পেতে এই ওয়েবসাইটের সাথেউই থাকবেন। শেষ পর্যন্ত পোস্ট টি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আরও দেখুনঃ

মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি কবিতা, ছন্দ ও ছোটদের কবিতা আবৃতি

২১ শে ফেব্রুয়ারির সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর এবং সাধারণ জ্ঞান