আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০২৪

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

ফেব্রুয়ারি মাস, এটি একটি অমূল্য মুহূর্ত। এই মাসে, আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের মাস, একুশে ফেব্রুয়ারি, আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অমর পৃষ্ঠা। ১৯৫২ সালের এই দিনে, লাখো শহীদের তাজা রক্তে আমরা মাতৃভাষা বাংলা হিসেবে পেয়েছি। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলতে পারি, তাদের স্মরণে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদান করি।

এই দিনটি আমাদের জাতীয় চেতনার একটি অমূল্য সম্পদ। এ ২১ ফেব্রুয়ারি, আমাদের জাতিসত্তা ও জাতির ইতিহাসের একটি গৌরবময় দিন, একটি উজ্জ্বল চিহ্ন। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা প্রথম মাইলফলক অর্জন করেছি, যা আমাদের স্বাধীনতার প্রথম পথিক।  এই দিনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রচনা প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা লিখতে হবে। নিচে এই ধরনের রচনা গুলো দেওয়া আছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

২০২৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রোজ মঙ্গলবার সারা দেশ জুড়ে এবং বিশ্বের অনেক দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান বা জনসভামূলক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মাতৃভাষা দিবস রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। রচনা প্রতিযোগিতায় অনেক সময় এক হাজার শব্দের বা ১০ বা ২০ পয়েন্টে রচনা লিখতে বলা হয়। আপনি যদি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে রচনা নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।

ভূমিকাঃ

মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি, তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমে গড়তে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ। মানুষের পরিচয় এর সেরা নির্ণায়ক হল মাতৃভাষা। এই মাতৃভাষা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাকে বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় কথা বলে সেটাই তাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা, আকাঙ্ক্ষ, আবেগ ও অনুভূতি। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম, যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

পটভূমিঃ

পৃথিবীতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে তার মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, পৃথিবীর মানচিত্রে এই ঘটনা বিরল। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। এরপরই পাকিস্তান সরকার কর্তৃক উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলায় ভাষার দাবিতে প্রথম বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়।এই বিক্ষোভ এর কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হয়। ২১শে মার্চ ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। এর সাথে আরও ঘোষণা করা হয়” পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম হতে হবে উর্দু”। তখন থেকে শুরু হয় মহাপ্রতিবাদ, আন্দোলন ও বিক্ষোভ এর।

সময় ঘনিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি অনেক উত্তাল হয়ে দাঁড়ায়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ২০শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে সমগ্র ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় শুরু হয় মিছিল ও আন্দোলন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সভা আর মিছিলে মিছিলে ভরে গেলে চালানো হয় গুলি, শহীদ হয় গুলির আঘাতে সালাম, রফিক, জব্বার ও বরকত সহ আরো অনেক তাজা প্রাণ। এরই প্রেক্ষাপটে মাওলানা ভাসানী এর নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

স্বীকৃতির উদ্যোক্তাঃ

কানাডান প্রবাসী বাঙালির সংগঠন “Mother Language of the World” সর্বপ্রথম এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু জাতিসংঘের পরামর্শ মতে তারা বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কে এ ধরনের উদ্যোগের অনুরোধ করে। পরবর্তীতে ইউনেস্কো এর সাধারণ পরিষদে শিক্ষামন্ত্রী একুশে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস” ঘোষণা করার প্রস্তাবকে উপস্থাপন করেন এবং প্রস্তাবে ২৭ টি দেশ সমর্থন দেয়। ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ৩১ তম সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে পালনের স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকে পৃথিবীর সর্বমোট ১৮৮ টি দেশে পালিত হয় এই দিনটি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভাষামেলাঃ

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করার প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয় বিশ্ব ভাষামেলার। মেলায় বিশ্বের ১৮০ টি দেশের পতাকা, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার ১৫০ প্রকারের বর্ণমালার নমুনা,বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা, লেখক পরিচিতি, দেশ পরিচিতি, মানচিত্র, মুদ্রা, ব্যাংক নোট ও আনুষঙ্গিক তথ্য ভাষামেলায় উপস্থাপন করা হয়। এতে আরও উপস্থাপন করা হয় বাংলা ভাষার হাজার বছরের ইতিহাস, পান্ডুলিপি, শিলালিপি, ফলকচিত্র, টেরাকোটার প্রামাণ্য দলিল- ছবি।

স্বাধিকার চেতনাঃ

ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে যে চেতনার উন্মেষ হয়, তার চরম বিস্ফোরণ ঘটে ঊনসত্তর থেকে একাত্তরে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাৎপর্য শহীদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি; তা বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের সমস্ত আন্দোলনের মূল চেতনা একুশে ফেব্রুয়ারি। তখন থেকেই বাঙালি উপলব্ধি করেছিল তার বাঙালি জাতীয়তাবোধ, তার সংস্কৃতির অতন্দ্র প্রহরী। এই সংগ্রামী চেতনাই বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক আন্দোলন এই দু’ধারাকে একসূত্রে গ্রথিত করে মুক্তিসংগ্রামের মোহনায় এনে দিয়েছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে।

উপসংহারঃ

প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা ভাষা শহীদের স্মরণ করে তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনারে ফুল অর্পণ করে থাকি। আমরা গর্বিত আমাদের মাতৃভাষার জন্য, গর্বিত বাঙালি জাতি হিসেবে। শহীদরা আমাদের পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বের সম্মানজনক এক স্থানে। সার্থক হয়েছে তাদের রক্তদান। আজ বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম মধুর তম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্ব দরবারে সহস্র প্রাণে আজ বেজে ওঠে “ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি

শেষ কথা

একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে, বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান বিশেষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন করে। এই দিনে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আয়োজন করা হয় এবং শিক্ষার্থীদেরকে এই উপলক্ষে রচনা লেখতে উৎসাহিত করা হয়। প্রতি জেলায় এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে তাদের ভাষা প্রতি বছরের মতো বিশেষ করে সাজানো হয়। আশা করছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা  পড়ে নিয়েছেন।

আরও দেখুনঃ

একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা

One Comment on “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ২০২৪”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *