এইচএসসি ২০২১ ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৩য় সপ্তাহ

এইচএসসি ২০২১ ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৩য় সপ্তাহ

বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ

 

ব্যাংক (অপর বানান: ব্যাঙ্ক) হল এক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা সাধারণ মানুষের সঞ্চয় বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে পুঁজি গড়ে তোলে এবং সেই পুঁজি উদ্যোক্তাদের ঋণ বা বিনিয়োগ হিসেবে প্রদানের মাধ্যমে লাভ বা মুনাফা অর্জন করে। ব্যাংক আমানত ও ঋণ সেবার বাইরেও বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে।

ব্যাংক ব্যবসায়ের প্রকৃতি:
আমাদের দেশে এখন ব্যাংকিং ব্যবসা অত্যন্ত সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যবসাটি এতই সরল এবং সহজবোধ্য হয়ে গেছে যে ৪০০ কোটি টাকা মূলধন জোগাড় করতে পারলেই যে কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকিং ব্যবসার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন।
ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৫ এর ত উপধারা অনুযায়ী “ব্যাংক ব্যবসা” অর্থ কর্জ প্রদান বা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে জনসাধারণের নিকট হইতে টাকার এইরূপ আমানত গ্রহণ করা, যাহা চাহিবামাত্র বা অন্য কোনভাবে পরিশোধযোগ্য এবং চেক, ড্রাফ্‌ট, আদেশ বা অন্য কোন পদ্ধতিতে প্রত্যাহারযোগ্য।

ব্যাংকের মালিকানাভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ:

  • সরকারি ব্যাংক : সংগঠন, নিয়ন্ত্রক ও মালিক সরকার। যেমন- সোনালী ব্যাংক
  • বেসরকারি ব্যাংক : ব্যক্তি মালিকানায় গঠিত। যেমন- পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক
  • স্বায়ত্বশাসিত ব্যাংক : সরকারি বিশেষ আইনে গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত। যেমন- কৃষি ব্যাংক, শিল্প ব্যাংক
  • সরকারি বেসরকারি যৌথ মালিকানার ব্যাংক : ৫১% বা তার অধিক শেয়ার সরকারের, ৪৯% বা তার কম শেয়ার বেসরকারি। যেমন- রূপালী ব্যাংক

 

ব্যাংকের সংগঠনভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ:

  • একমালিকানা ব্যাংক : যে ব্যাংকের মালিক ১ জন
  • অংশীদারি ব্যাংক : ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন দ্বারা প্রণীত, সদস্য ১-১০ জনের মধ্যে থাকতে হয়
  • যৌথ কোম্পানি ব্যাংক : ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন এবং ১৯৯১ সালের ব্যাংকিং আইন দ্বারা গঠিত। যেমন- বাংলাদেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক
  • সমবায় ব্যাংক : সমবায় আইন দ্বারা গঠিত। যেমন- রাজশাহী কো-অপারেটিভ ব্যাংক
  • রাষ্ট্রীয় ব্যাংক : যে ব্যাংকের মালিক রাষ্ট্র। যেমন- সোনালী ব্যাংক

ব্যাংকের কাঠামোভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ:

  • একক ব্যাংকিং
  • শাখা ব্যাংকিং
  • চেইন ব্যাংকিং
  • গ্রুপ ব্যাংকিং
  • মিশ্র ব্যাংকিং

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ

ব্যাংকিং ব্যবস্থা আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠুক কিন্তু সেটি বাংলাদেশে ৪০ বছরেও হয়নি। যেমন একজন শূণ্য আয়ের বেকার ব্যক্তির সাথে অপর একজন চাকুরীজীবি ব্যক্তির আয়ের গড় করলে তাতে বেকার ব্যক্তির অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না, কে বেকার তা বোঝা যায় না। ‘ট্রিকল ডাউন’ অথবা চুইয়ে পড়া তত্ত্ব দিয়ে নিচের তলার মানুষের উন্নতি করা সম্ভব নয়। লোকসংখ্যার আপেক্ষিক অনুপাতে দারিদ্রের হার গত দুই দশকে নিশ্চয়ই কমেছে, কিন্তু যথেষ্ট কমেনি।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কতটা বাড়লে দারিদ্র কতটা কমবে বলে প্রত্যাশা করা চলে, সে বিষয়ে অর্থনীতিতে একটি তাত্ত্বিক ধারণা ও পরিমাপের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি জাতীয় আয়ে এক শতাংশ বৃদ্ধি হয়, তা হলে দেশে দারিদ্র কি অনেকখানি কমবে, না কি সামান্য কমবে? দেখা গিয়েছে এটা নির্ভর করে দেশের মানুষদের মধ্যে গোড়াতে অসাম্য কতখানি ছিল, তার উপর। যদি বৈষম্য বেশি থাকে, তা হলে আর্থিক বৃদ্ধি হলে গোড়াতে যেটুকু বাড়তি সম্পদ আসে তা বড় মাছেরাই খেয়ে ফেলে দরিদ্রদের কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। প্রবৃদ্ধি না হলে প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান কোথা থেকে আসবে? কিন্তু শুধু প্রবৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। ফলে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুষম উন্নয়ন ও দরিদ্র বিমোচনের অন্তরায় হয়েছে। ব্যাংক হবে আর্থ সামাজিক ইনস্টিটিউশন কিন্তু তা হয়নি।

তাই, আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ক্রেডিটকে কৃষ্টির সাথে যোগ করা হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক খাতে বিশাল সামাজিক পুঁজি উপেক্ষা করা হয়ছে। পাশ্চাত্য অর্থনীতির প্রভাবে ব্যক্তিনীতি ও ব্যক্তিস্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে আমাদের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং কর্মধারা। ব্যক্তি স্বার্থে উপেক্ষিত হয়েছে পরিবার ও সমাজ।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে বিকল্প অর্থনীতির প্রবর্তক সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক তার ত্রিমুখী কর্মকান্ড বাস্তবায়নে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক ও স্বেচ্ছামূলক খাতগুলোর এক অভিনব সমন্বয়ে সবুজ হাট প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ যুগ আগে ব্যাংকের চারশ’ পল্লী শাখা খোলার পরিকল্পনা নেয় তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। পল্লী শাখা লাভজনক করতে হলে কেবল সুদ ভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়।

 

যদি পারস্পরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে পারিবারিক ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীর আওতায় পল্লী শাখা স্থাপন করা যায় তাহলে এগুলো লাভজনক হতে পারে। যারা এই মাইক্রো-ক্রেডিট কার্যক্রমে সফলতা লাভ করবে কেবল তাদেরকেই মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ লোনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পরে তাদের মুক্ত বাজারের সাথে যোগ করে দেয়া যায়। এর জন্য যে পরিকল্পনা ও বিকল্প চিন্তাধারা বা কমিটমেন্ট দরকার তার অভাবেই আজ আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুষম উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেনি।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে রাজস্ব পলিসি, মনিটরী পলিসি ও উন্নয়ন পলিসি অনুধাবনের মতো বিশেষজ্ঞ জ্ঞান খুবই জরুরী। এই জ্ঞান যে কেবল একজন আমলার বা একজন ব্যাংকারের মধ্যে থাকবে তা কিন্তু নয়। অর্থনীতির সঠিক বিশ্লেষণের জন্য বহুমুখী বিশেষ জ্ঞান প্রয়োজন, যা কোন এক ব্যক্তির পক্ষে ধারণ করা সম্ভব নয়। সম্ভব কেবল কাউন্সিল অফ গভর্নরস্ গঠনের মাধ্যমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *