এইচএসসি ২০২১ পৌরনীতি ও সুশাসন এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৪র্থ সপ্তাহ

এইচএসসি ২০২১ পৌরনীতি ও সুশাসন এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৪র্থ সপ্তাহ


ক) মূল্যবােধ ও নৈতিকতার ধারণা

যে চিন্তাভাবনা , লক্ষ্য , উদ্দেশ্য ও সংকল্প মানুষের সামগ্রিক আচার – ব্যবহার ও কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে, তাকেই আমরা সাধারণত মূল্যবােধ বলে থাকি। সমাজজীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার – ব্যবহার ও কর্মকাণ্ড যে সকল নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের সমষ্টিকে সামাজিক মূল্যবােধ বলে স্টুয়ার্ট সি . ডড ( Stuart c . Dodd ) বলেন , ” সামাজিক মূল্যবোেধ হলাে সে সব রীতিনীতির সমষ্টি , যা ব্যক্তি সমাজের নিকট হতে আশা করে এবং যা সমাজ ব্যক্তির নিকট হতে লাভ করে | ” অন্যদিকে নৈতিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Morality। ইংরেজি Morality শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Moralitas ‘ থেকে যার অর্থ সঠিক আচরণ বা চরিত্র । গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল সর্বপ্রথম নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করেন। সক্রেটিস বলেছেন , সৎ গুণই জ্ঞান। নৈতিকতা বা ন্যায়নীতিবােধের ধারণা বা এর প্রতি যে দেশের জনগণের শ্রদ্ধাবােধ বেশি, যারা জীবনের চলারপথে নীতিবােধ দ্বারা পরিচালিত হন, তারা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে লিপ্ত হন।


মূল্যবোধের ধারণাঃ

মূল্যবোধ হচ্ছে সমাজ কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য উপাদান। শাব্দিক অর্থে values বা মূল্যবোধ অর্থ তুলনামূলক অর্থমূল্য বা দাম বা অন্তর্নিহিত গুণাবলী। মূল্যবোধ হল মানুষের সমাজ স্বীকৃত এমন কার্যক্রম বা আচরণ, যা সামগ্রিকভাবে প্রশংসিত হয়।এটি স্থায়ী কোনো বিষয় নয়। স্থান এবং সময়ভেদে মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ মূল্যবোধ হল আপেক্ষিক। যেমন- আমাদের দেশের প্রচলিত মূল্যবোধ অনুযায়ী ধূমপান করা, বিশেষত বড়দের সামনে ধূমপান একটি অন্যায় কাজ । কিন্তু অনেক দেশে এটি একটি সাধারণ ব্যাপার। সুতরাং বলা যায়-


১. মূল্যবোধ হল ভালো বা মন্দ সম্পর্কে সামাজিক ধারণা
২.কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় সম্পর্কে সমাজের বিশ্লেষণমূলক রায়।
৩.সমাজের মানুষের সাধারণ আচরণ যাতে আবেগ বিদ্যমান।


নৈতিকতার ধারণাঃ

সাধারণ অর্থে নৈতিকতা হলো নীতি মূলক নীতি সম্বন্ধীয়। নৈতিকতা মূলত একটি সামাজিক ব্যাপার। যে সমাজের বাইরে বাস করে তার কোনো নৈতিকতার প্রয়োজন নেই। তাই নৈতিকতাকে বুঝতে হলে এর সামাজিক প্রেক্ষিতটিকে আগে বুঝতে হবে।

সমাজ মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে তার অনুমোদন কিংবা অনুমোদনকে সাধারণত ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত, সঠিক বেঠিক, সৎ অসৎ, মূল্যবান মূল্যহীন প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে প্রকাশ করে থাকে। এসব শব্দগুলি এবং তাদের সংযোগে গঠিত বাক্য বা অবধারণের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা চেতনার প্রকাশ ঘটে তাকে এক কথায় বলা হয় মূল্যবোধ।আর মানুষের এ মূল্যবোধের আরেক নাম হচ্ছে নৈতিকতা।

নৈতিকতা বলতে আমরা এমন এক আদর্শকে বুঝি, যা নৈতিক অর্থে ভালো বা ন্যায়কে বোঝায়। নৈতিকতা বিকাশের লালন ক্ষেত্র হলো সমাজ। নৈতিকতা মূলত ব্যক্তি মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও পছন্দ থেকে উদ্ভূত। নৈতিকতা অভ্যাস ও চর্চার ব্যাপার এবং এ নৈতিকতা গঠনে ব্যক্তির নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে।


খ) আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা


আইনের ধারণাঃ

আইন ফারসি শব্দ।আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ law,যা মূলত টিউটনিক মূল শব্দ leg থেকে এসেছে। উৎপত্তি অনুসারে এর অর্থ হল স্থির, অপরিবর্তনীয় অথবা সর্বক্ষেত্রে সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। আইন হলো এমন কতগুলো বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী যা কেবল মানুষের বাহ্যিক আচরণ কে নিয়ন্ত্রণ করে। আইন সমাজে বেশিরভাগ লোক কর্তৃক স্বীকৃত, যা সার্বভৌম কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে নিঃসৃত এবং ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান আছে।সর্বোপরি বলতে পারি আইন হচ্ছে ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিয়ম এর সমষ্টি যার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত।

★ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টোটল বলেন, law is the passionless reason.(পক্ষপাতহীন যুক্তি হল আইন)

★ জন অস্টিন এর মতে, law is the command of the Sovereign.(আইন হচ্ছে সার্বভৌম শাসকের আদেশ)
আইনের উৎসঃ

অধ্যাপক হল্যান্ড আইনের ৬ টি উৎসের কথা বলেছেন। যথা-
১. প্রথা,
২.ধর্ম,
৩. বিচারকের রায়,
৪.বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা বা আইনবিদদের গ্রন্থ,
৫.ন্যায়বোধ,
৬.আইনসভা

স্বাধীনতার ধারণাঃ

ল্যাটিন শব্দ ‘Liber’ থেকে ইংরেজি Liberty শব্দটি এসেছে। যার অর্থ স্বাধীনতা।শাব্দিক অর্থে স্বাধীনতা বলতে বোঝায় যা খুশি তা-ই করার ক্ষমতা। স্বাধীনতা হচ্ছে নিজের কাজ নিজের মতো করে করা, যেখানে কেউ কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসনে স্বাধীনতা শব্দটি একটু অন্য অর্থে ব্যবহার করা হয়। পৌরনীতি ও সুশাসনে স্বাধীনতা বলতে অপরের কাজে কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি না করে নিজের ইচ্ছা মত কাজ করা অধিকারকে বোঝায়।

★ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সিলির মতে,Liberty is the opposite of over government. (অতি শাসনের বিপরীত অবস্থায় হলো স্বাধীনতা।
সাম্যের অধিকারঃ

পৌরনীতির সাম্যের অর্থ হচ্ছে সুযোগ-সুবিধাদির দিয়ে সমতা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থাকে সাম্য বলে। অধ্যাপক লাস্কির মতে, সাম্য অর্থ- বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি, যথার্থ ও যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও দ্রব্যের সমভাবে বন্টন।


গ) আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক ও গুরুত্ব

আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। এদের মধ্যে সম্পর্কটি অনেকটা সামগ্রিক। আইন স্বাধীনতার রক্ষক ও অভিভাবক। আইন না থাকলে স্বাধীনতা থাকতে পারে না। আইনের নিয়ন্ত্রণ আছে বলে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করা যায়। আইন স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করে।আইন সাম্যকেও সার্থক করে তোলে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অসাম্যকে দূর করা যায়। সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অসামান্য দূর করতে আইনই মানুষকে সহায়তা করে আসছে যুগ যুগ ধরে। ভারতের আইন করে সতীদাহ প্রথা দূর করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলো আইনের মাধ্যমে বর্ণবাদ নিষিদ্ধ করা।

অন্যদিকে,সাম্য ও স্বাধীনতা একটি অন্যটি ছাড়া অচল। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতা প্রয়োজন। স্বাধীনতার শর্ত পূরণ না করা হলে সাম্য কেবল মরীচিকায় থেকে যায়। আবার স্বাধীনতাকে ভোগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা এর পূর্বশর্ত। তা না হলে দুর্বলের সাম্য সবলের সুবিধার হাতিয়ারে রূপান্তরিত হবে। সাম্য উঁচু-নিচুর পার্থক্য দূর করে, আর স্বাধীনতা সমাজের সুযোগ-সুবিধাগুলোকে সবার ভোগ করার অধিকার দান করে।কোল এজন্যই বলেন, অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন । আইন স্বাধীনতা ও সাম্য এত ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কযুক্ত যে এর একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে কল্পনা করা যায় না।

লাস্কি বলেন, আইনের দ্বারা রাষ্ট্র যত বেশি সমতা বিধান করবে, স্বাধীনতার উপভোগ তত বেশি নিশ্চিত হবে। আইন না থাকলে সাম্য থাকেনা, সাম্য না থাকলে স্বাধীনতা থাকতে পারে না। আইন সাম্য ও স্বাধীনতার সম্মিলিত প্রয়াসই নিশ্চিত করতে পারে আইনের শাসন এবং সত্যিকারের সুশাসন। এদের সম্পর্ক পরস্পরের পরিপূরক ও সম্পূরক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *