৯ম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিয় এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১ – ১১তম সপ্তাহ
রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াস ব্যতীত নাগরিক জীবনের কোনাে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আলােকে এ বিষয়ে আমার মতামত নিম্নে যুক্তিসহ তুলে ধরা হলাে-
দুর্যোগ মােকাবিলা/নাগরিক জীবনের সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রের করণীয়
নাগরিক অধিকার একরকমের অধিকারের শ্রেণী যা সরকার, সামাজিক সংগঠন ও বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারা লঙ্ঘনের থেকে একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা করে। একজন যাতে বৈষম্য বা নিপীড়ন ছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্রের বেসামরিক ও রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করে। নাগরিক অধিকার অন্তর্ভুক্ত করে জনগণের শারীরিক ও মানসিক সততা, জীবন ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, জাতি, লিঙ্গ, জাতীয় মূল, রঙ, বয়স,রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, জাতিভুক্তি, ধর্ম বা অক্ষমতার ভিত্তিতে বৈষম্য থেকে সুরক্ষা এবং একক অধিকার যেমনঃ- গােপনীয়তা এবং চিন্তার স্বাধীনতা, বাকশক্তি, ধর্ম, প্রেস, সমাবেশ, এবং আন্দোলনের স্বাধীনতা থেকে সুরক্ষা।
| একটি দেশের যেকোনাে নাগরিক সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিকদের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। কেননা রাষ্ট্র হয়তাে কিছু নীতিমালা জারি করতে পারে। কিন্তু নাগরিকরা যদি তা অমান্য করে তাহলে সে সমস্যার সমাধান হবে না। নাগরিক যদি রাষ্ট্রের নীতিমালাগুলাে মেনে চলে রাষ্ট্রকে সাহায্য করে, তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়। একইভাবে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মােকাবিলায় রাষ্ট্র ও নাগরিকদের একসাথে এর মােকাবেলা করা অত্যাবশ্যক।
নাগরিকদের যেকোনাে সমস্যা মহামারী/দুর্যোগে সরকারকে পূর্ব প্রস্তুতি এবং পরবর্তী অবস্থার ব্যাপারে আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। কোভিড ১৯ এর কারণে সারা বিশ্বে একভীতি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। করােনা এখন বৈশ্বিক সমস্যা।
করােনার বিস্তার রােধে রাষ্ট্রের কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। যেমন:
- মহামারী দুর্যোগ সমস্যাটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট সচেতন ও সতর্ক করা এবং এর মােকাবেলায় রাষ্ট্রের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া।
- নাগরিকদের যেকোনাে সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পাশে থাকা।
- ত্রাণ অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি বা আন্তর্জাতিক সাহায্য ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের কাছে পৌছানাে নিশ্চিত করা।
- জনসাধারণের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজ করা, যাতে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে।
- ক্ষতিগ্রস্ত জনগােষ্ঠীর মানসিক, অর্থনৈতিক ও ভৌত কল্যাণ সাধনসহ তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকায় স্বাভাবিক জীবন, জীবিকা ও কর্ম পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি।
সমস্যা সমাধানে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
যেকোন মহামারী বা দুর্যোগে সরকার ও রাষ্ট্রের যেমন কিছু করণীয় রয়েছে, তেমনি সুনাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যেমনঃ
১) প্রথমত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলাে রাষ্ট্রের যে কোন দুর্যোগ/সমস্যা বা মহামারীতে নাগরিকের দায়িত্ব হলাে নিজে আতঙ্কিত না হওয়া এবং অন্যদের আতঙ্কিত না এরা। পাশাপাশি নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যকে সচেতন করা।
২. রাষ্ট্রকর্তৃক বিধিনিষেধ মেনে চলা এবং অন্যকে মেনে চলতে উৎসাহী করা।
৩. সমস্যার মােকাবিলায় রাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলাে সম্পাদনে যথাসাধ্য সহায়তা করা।
৪. মহামারীতে আক্রান্ত হলে যথাযথভাবে চিকিৎসা নেওয়া।
৫. পরিষ্কার পরিছন্নতা, নিজের ও পরিবারের যত্ন নেওয়া, সঠিক নিয়মে সরকারি সায্য নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া।
৬. এই রকম পরিস্থিতিতে গুজবে কান না দেওয়া এবং গুজব ছড়ানাে থেকে বিরত থাকা। একমাত্র সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সংবাদে বিশ্বাস রাখা।
করােনাকালে রাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ
১. লকডাউন পলিসি: বাংলাদেশে যখন করােনায় আক্রান্ত রােগী ধরা পড়েছে ঠিক তার পরপরই সরকার ও পুরাে দেশের লােকজন লকডাউন পলিসি চালু করেছে। অর্থাৎ জনসাধারণ প্রয়ােজন ছাড়া ঘরবাড়ি থেকে বের না হওয়া এবং অতীব প্রয়ােজনীয় বিষয় যেমন কাঁচাবাজার, খাবার ঔষধের দোকান, হাসপাতাল এবং জরুরী যেসব সেবা আছে তা বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খােলা রাখার নির্দেশ জারি করেছে। ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলােতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনী মােতায়েন করেছে।
২.বাহিরের কার্যক্রম কমিয়ে আনা: এ সময়ে যদি কোন অফিস-আদালতে প্রয়ােজনীয় কাজ কর্ম করতে হয় তাহলে তা অনলাইনে সম্পাদন করা। সরকার কর্তৃক জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং গণপরিবহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে।জনগণের প্রয়ােজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৩. আর্থিক সহায়তা: করােনাভাইরাস জনিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র জনগােষ্ঠীর অন্নসংস্থার অসুবিধা নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা, যােগযােগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা প্রদান করা ইত্যাদি।
৪. স্বাস্থ্য সেবা: করােনা ভাইরাসের (covid-19) শনাক্তের পরীক্ষা সহজ ও দ্রুত করতে পরীক্ষাকেন্দ্র বৃদ্ধির কাজ করছে। সরকার। বর্তমানে দেশের ৬৮ টি স্থানে করােনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় ১০ হাজার ৫০ টি সহ সারাদেশে ১৪ হাজার ৫৬৫ টি আইসােলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর জন্য অ্যালকোহল, করােনা টেস্ট কিট, টেস্ট ইনস্ট্রমেন্ট, জীবানুনাশক, মাস্ক প্রটেক্টিভ গিয়ারসহ মােট ১৭ ধরনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতির ঘােষণা দিয়েছে রাজস্ব বাের্ড এনবিআর।
চলমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও নাগরিক এর ভূমিকা
যদিও করােনা মােকাবেলায় বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের মতাে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবুও আমার মতে এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও নাগরিকের ভূমিকা যথার্থ নয়। নিচে আমার মতামতের ভিত্তিতে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা দেওয়া হলােঃ
১. সব বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরেই স্ক্রিনিং হচ্ছে বলে সরকারের দাবি। তবে বাস্তবে তার প্রমাণ মেলে না। কারণ বিদেশ থেকে আসা কেউ কেউ স্ক্রিনিং ছাড়াই দেশে ঢুকে যাচ্ছেন। এলাকায় গিয়ে ঘুরছেন। স্থানীয় লােকজন আবার সেই কথা জেনে পুলিশে খবর দিচ্ছে। আর শুধুমাত্র শাহজালাল বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং এর জন্য থার্মাল স্ক্যানার থাকলেও তা এখন নষ্ট (সূত্র: ডয়চে ভেল -৩ মার্চ, ২০২০)
২. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গণবিজ্ঞপ্তিতে নাগরিকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে যারা আসছেন, তারা কোয়ারেন্টাইন এর শর্ত সঠিকভাবে মানছেন না। অনেকেই মিথ্যা ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের সবাইকে আইনঅনুযায়ী এবং সংক্রামক রােগ প্রতিরােধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন২০১৮-এর শর্ত পালন করার অনুরােধ করেছে।
৩. চিকিৎসা মন্ত্রণালয়ের বিশাল গাফিলতির প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। বহুসংখ্যক রােগী হওয়ার কারণে অনেক হসপিটালে নতুন রােগীদের ভর্তি করাচ্ছেননা। আবার কিছু কিছু হসপিটাল রােগীদের অসহায়ত্বের সুযােগ নিয়ে বিশাল অঙ্কের টাকা চেয়ে বসছে।
করােনার মত মহামারীতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিকদের সমানভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত। কেননা করােনার বিষয়টি শুধু রাষ্ট্রের নয়; নাগরিকদের অবহেলার কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে করােনার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ বহুসংখ্যক করােনার ভ্যাকসিন আমদানি করেছে, তবুও বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এই করােনার জন্য সতর্ক থাকা উচিত। অন্যথায়, বাংলাদেশের সব দিক থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।