এইচএসসি ২০২১ অর্থনীতি এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৫ম সপ্তাহ

এইচএসসি ২০২১ অর্থনীতি এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৫ম সপ্তাহ

(ক) কৃষি ও পরিবেশঃ

কৃষির সংজ্ঞা ও মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রথম স্ত্র হচ্ছে কৃষি- যা চাষবাস সহ পশুপালন, বনায়ন, ফলমূল সংগ্রহ, মৎস্য চাষ ও উৎপাদন ইত্যাদি প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ্যাগার (Ager) এবং কালচার (Culture) নামক দুটি ল্যাটিন শব্দ থেকে ইংরেজী Agriculture শব্দটি এসেছে যার আভিধানিক অর্থ ভূমি কর্ষণ অর্থাৎ ভূমি কর্ষণের মাধ্যমে শস্যাদি উৎপাদন বা উত্তোলন কে বুঝায়। সাধারণভাবে নিক্তে তিনটি পর্যায়ের মাধ্যমে কৃষির উৎপত্তি ঘটেছে, যেমন * খাদ্য সংগ্রহ (জীবিকা নির্বাহের জন্য কোন একক জনগােষ্ঠীর দৈহিক চাহিদার তাগিদে ফল-মূল সংগ্রহসহ অন্যান্য কর্মকান্ডের শুরু), * পশু পালন (বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উদ্ধৃত্ত প্রজন্মের জন্য স্থায়ীভাবে নানা রকম পশু পালন প্রক্রিয়া শুরু হয়)


কৃষিকাজে পরিবেশের প্রভাবঃ

ভূপ্রকৃতিঃ ভূপ্রকৃতির তারতম্যের জন্য কৃষিকাজের ধরন পরিবর্তিত হয়। পার্বত্য অঞ্চলের ঢালু জমিতে কৃষিকাজ সহজে করা যায় না। তবে চা, কফির জন্য পাহাড়ের ঢালু জমিই উপযুক্ত। অন্যদিকে, সমভূমির উর্বর পলিমাটি কৃষিকাজের পক্ষে বিশেষ উপযােগী।

মৃত্তিকাঃ মাটির উর্বরা শক্তির ওপর ফসল উৎপাদন নির্ভর করে। মাটির নানারকম বৈশিষ্ট্যের ওপর ফসলের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। যেমন, কৃয় মৃত্তিকায় তুলাে, লােহা-মিশ্রিত মাটিতে চা ও কফির ফলন ভালাে হয়। . তাপমাত্রাঃ গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কমপক্ষে 6°সে. উয়তা প্রয়ােজন। এ ছাড়া সব শস্য একই উয়তায় জন্মায় না। তাই বিভিন্ন ফসলের জন্য বিভিন্ন রকম তাপমাত্রার প্রয়ােজন হয়। যেমন—গম চাষের জন্য বার্ষিক 14°সে. থেকে 16°সে. তাপমাত্রা আদর্শ অথবা চা চাষের ক্ষেত্রে 27°সে. উত্তাপ আদর্শ।


(খ) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবঃ

তাপমাত্রাঃজলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সম্ভবত: তাপমাত্রা শস্যের সার্বিক বৃদ্ধি সাধনে অধিকতর প্রভাব বিস্তার করে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা মােটামুটি উষ্ণ। দক্ষিণে সমুদ্র, উত্তরে হিমালয় পর্বত এবং বিশাল সমভূমির জন্য বাংলাদেশে শীত ও গ্রীষ্মের আধিক্য অনুভূত হয়না। গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা শীতকালের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশী। তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন শস্যকে গ্রীষ্মকালীন বা খরিপ শস্য এবং শীতকালীন বা রবিশস্য এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। আউশ ধান, পাট, সয়াবিন, প্রভৃতি গ্রীষ্মকালীন শস্য। এসব শস্যের অধিক তাপমাত্রার প্রয়ােজন। আমনধান, বােরােধান, গম, যব, সরিষা, তিল, মটর, মসুর তামাক প্রভৃতি শীতকালীন আমনধান, বােরােধান, গম, যব, সরিষা, তিল, ফসল। তিল, তুলা, ভূট্টা প্রভৃতি উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়। তবে আখ রবি ও খরিপ দুই মৌসুমেরই অন্তগর্ত।


আর্দ্রতাঃ

বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে আর্দ্রতা বলে। কোন স্থানের আর্দ্রতা সেই স্থানের বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। যে বায়ুতে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি, সে বায়ু জলবায়ুকে অধিক প্রভাবিত করে। ফলে সেই এলাকায় দিনে খুবই গরম পড়ে এবং রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে। বায়ুর আর্দ্রতা সূর্যকিরণকে ভূপৃষ্ঠে আসতে অধিক বাঁধা সৃষ্টি করে বলে এ অবস্থা হয়। বর্ষাকালে অধিক আর্দ্রতার কারণে রােগবালাই এবং পােকামাকড় দ্বারা ফসল সহজেই আক্রান্ত হয়। শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকে অর্থাৎ বাতাসে আদ্রর্তা অনেক কম থাকে। শীতকালে বাতাসের গড় আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৭২% থেকে ৮৫% হয় থাকে। অপরদিকে গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে এই আর্দ্রতা হয় ৮৩% থেকে ৯০% পর্যন্ত।


বৃষ্টিপাতঃ

বৃষ্টিপাতের উপরও আবহাওয়া ও জলবায়ু নির্ভর করে। কোন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশী হলে সে অঞ্চলের তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং বৃষ্টিপাত কম হলে সে অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে দক্ষিন-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অপরপক্ষে শীতকালে উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। উদ্ভিদের জন্য পানির প্রয়ােজন। উদ্ভিদ এই পানি মাটি থেকে গ্রহণ করে। মাটিতে পানির প্রধান উৎস বৃষ্টিপাত। ফসল উৎপাদনের জন্য বৃষ্টিপাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ফসল জন্মে। বাংলাদেশের মােট বৃষ্টিপাতের ৮০% বৃষ্টিপাত হয় বর্ষাকালে।

এই বৃষ্টিপাতের পরিমান পূর্বদিক হতে পশ্চিমদিকে ক্রমশ্যই কমতে থাকে। সিলেটের লালাখালে সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত (৬৪৯.৬ সে.মি.) হয় এবং রাজশাহী জেলার লালপুরে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত (১১৯.৮ সে.মি) হয়। দেশের বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের গড় ২৩০ সে:মি:। গাছের সাবলীল বৃদ্ধি ও অধিক ফলন সঠিক মাত্রার পানি সরবাহের ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। এই পরিমিত পানির প্রাপ্যতা বিভিন্ন এলাকায় এবং বিভিন্ন ঋতুতে শস্য বন্টনে তাপমাত্রার মত প্রভাব বিস্তার করে । কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে যে বৃষ্টিপাত হয় তা ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় জমি চাষ এবং খরিফ শস্য বােনা শুরু হয়। বৃষ্টিপাত প্রয়ােজনের বেশী হওয়া সত্ত্বেও সময়মত এবং পরিমাণমত না হওয়ার কারণে প্রতি বছরই মাটিতে প্রয়ােজনীয় পানির অভাবে শস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়।


(গ)কৃষি উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থাদিঃ

বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে পারমানবিক শক্তি বায়ােটেকনােলজি পদ্ধতি এবং আইসিটি ব্যবহারের গুরুত্ব কৃষিতে পারমানবিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে তার মধ্যে পারমানবিক ও বায়ােটেকনােলজি প্রযুক্তি অন্যতম।

কৃষিতে পারমানবিক প্রযুক্তিঃ কৃষিক্ষেত্রে পারমানবিক শক্তি বিকিরণকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে কাজে লাগানােই হলাে পারমানবিক কৃষি প্রযুক্তি। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, পারমানবিক প্রযুক্তির অধীনে তেজস্ক্রিয় আইটোপ ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণীর গুনগত, পরিমাণগত বা রূপগত পরিবর্তনকে ও পারমানবিক প্রযুক্তি বলে পরিচিত।

বায়ােটেকনােলজি পদ্ধতি বা জৈব প্রযুক্তিঃ উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অনুজীবের পরিমিত রূপান্তর ও মান উন্নীতকরণে যে বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল ব্যবহার করা হয় তাই হলাে বায়ােটেকনােলজি পদ্ধতি বা জৈব প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির সাহায্যে বিদ্যমান উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে উন্নততর ও অধিক উৎপাদনক্ষম ধরনের উদ্ভিদ উৎপাদন ও প্রাণীর প্রজনন সম্ভব।


কৃষিতে পারমানবিক পদ্ধতির গুরুত্বঃ

১। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিঃ বর্তমানে বাংলাদেশে অতীতের তুলনায় কৃষি উৎপাদন বাড়লেও এখনও তা আশানুরূপ নয়। এ অবস্থায় সনাতন বীজের পরিবর্তে পারমানবিক বিকিরণের সাহায্যে প্রাপ্ত বীজের চাষ করা উচিত। এ বীজ অধিক উৎপাদনক্ষম হওয়ায় এর সাহায্যে চাষ করলে ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট পরিমানে বাড়বে বলে আশা করা যায়।

২। মানসম্মত বীজ উৎপাদনঃ বাংলাদেশে যেসব বীজের সাহায্যে চাষ করা হয় সেগুলাে রােগ ও কীটপতঙ্গ প্রবণ; তাছাড়া সেগুলাে লবণাক্ত মাটিতে এবং বন্যায় ও খরায় চাষ করা যায় না। এ অবস্থায় পারমানবিক পদ্ধতিতে এমন বীজ উদ্ভাবন করা সম্ভব যা লবণাক্ততা বন্যা ও খরা সহিষ্ণু। এরকম বীজের সাহায্যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যথেষ্ট পরিমান উৎপাদন করা সম্ভব।

৩। শস্য রােগ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ রােধঃ বাংলাদেশে প্রতিবছর শতকরা প্রায় ১০ ভাগ শস্য রােগ ও পােকামাকড়ের আক্রমনে বিনষ্ট হয়। এ অবস্থায় গামা রশ্মির সাহায্যে পরিশােধিত রােগ ও কীটপতঙ্গ প্রতিরােধী বীজের চাষ করলে তা শস্যরােগ ও কীটপতঙ্গ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে পারবে।

৪। পানি ও সারের সুষ্ঠুব্যবহারঃ কৃষি কাজে যতটুকু সার ও পানির প্রয়ােজন ততটুকু ব্যবহার করলে তার অপচয় রােধ হয় ও উৎপাদন ব্যয় কম থাকে। এ ক্ষেত্রে পারমানবিক পদ্ধতির সাহায্যে জমিতে প্রয়ােজনীয় সার ও পানির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারলে একদিকে সার ও পানির অপচয় রােধ এবং অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় কম হবে। হবে।

৫। বীজ সংরক্ষণঃ সনাতন পদ্ধতিতে শস্যবীজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় ; পারমানবিক বিকিরণের সাহায্যে উদ্ভিাবিত উন্নতমানের শস্যবীজ যথাযথ ভাবে কয়েক বছর সংরক্ষণ করা যায়। তাই এমন বীজের সাহায্যে চাষাবাদ করলে ভবিষ্যতে বীজাভাবে কৃষিকাজ বিঘ্নিত হবে না। ১। রােগ-প্রতিরােধী উদ্ভিদ উৎপাদন ও গবাদি পশু প্রজনন: বাংলাদেশে প্রায়ই কীট-৪ -পতঙ্গ ও শস্য-রােগের দরুন ফসল বিনষ্ট হয় এবং বিভিন্ন রােগে আক্রান্ত হয়ে গবাদি পশুর মৃত্যু ঘটে।

এ অবস্থায় জৈব প্রযুক্তির সাহায্যে নিয়ে রাগ ও কীটপতঙ্গ বিরােধী উদ্ভিদ উৎপাদন ও রােগ-প্রতিরােধী গবাদি পশু প্রজনন করা যায়। এমনটি হলে কৃষি উৎপাদনে ঝুঁকির মাত্রা কমবে এবং কৃষকরা হঠাৎ করে এ সমূহ ক্ষতির সম্মুখিন হবে না। ২। অধিক উৎপাদনক্ষম প্রজাতির উদ্ভিদ উৎপাদন ও গবাদিপশু প্রজননঃ বাংলাদেশে উৎপাদিত অনেক ফসল নিম্নমানের; গবাদি পশু দুর্বল; মাংশ ও দুধ কম দেয়। এ অবস্থায় জৈব প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এমন উদ্ভিদ উৎপাদন করা যায় যা অধিক ফসল/ফল দেয় এবং এমন গবাদি পশু প্রজনন করা যায় যা অধিক মাংস ও দুধ দেয়। এমনটি হলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন শস্য, ফসল, দুধ ও মাংসের যােগান যথেষ্ট পরিমাণে বাড়বে।


(ঘ) কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গুরুত্বঃ

বাংলাদেশের কৃষিতে উন্নত বীজের উদ্ভাবনের প্রভাব: উন্নত ধরনের উদ্ভাবিত বীজ সম্পর্কিত প্রযুক্তি কোনাে একক বা বিচ্ছিন্ন প্রযুক্তি নয়,বরং এটি কয়েকটি প্রযুক্তির সমন্বয়ের প্রকাশ। এ প্রযুক্তির পাঁচটি প্রয়ােজনীয় উপাদান হলাে

(১) উন্নত বীজ,

(২) আধুনিক সেচ সুবিধা,

(৩) রাসায়নিক সার,

(৪) কীটনাশক ও

(৫) প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি ঋণ।


বাংলাদেশে উন্নত ধরনের উদ্ভাবিত বীজ সম্পর্কিত প্রযুক্তির ফলাফলঃ

বাংলাদেশে উন্নত ধরনের উদ্ভাবিত বীজ সম্পর্কিত প্রযুক্তির ফলাফল যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। উন্নত উদ্ভাবিত বীজ এর প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শস্য উৎপাদনে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসছে। আগের চেয়ে কম পরিমান জমিতে পূর্বের তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে খাদ্যোৎপাদন বাড়ায় তা দেশের বিশাল জনােগষ্টীর বর্ধিত খাদ্য-চাহিদা পূরণ তথা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়ক হচ্ছে। উন্নত ধরনের উদ্ভাবিত বীজ ব্যবহারের ফলে চাষের নিবিড়তা বেড়েছে ও শস্যের বহুমুখীকরণ ঘটছে। এখন উত্তম উপায়ে ভূমি কর্ষণ,উপযুক্ত পরিমানে পাণি সেচ ও সার প্রয়ােগ করে একই সঙ্গে একাধিক ফসল আবাদ করা যাচ্ছে।দীর্ঘ বিরতি ছাড়া একর পর এক শস্য আবাদ কিংবা একের সঙ্গে অন্য শস্য চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।

তাছাড়া পরিবেশ দূষণ,বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও ঝরবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মােকাবেলায় অর্থাৎ অভিযােজনের কাজে উন্নত উদ্ভাবিত বীজ যথেষ্ট সহায়ক হচ্ছে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যবহৃত লবনাক্ততা সহিষ্ণু বিনা-৮ ও ব্রি৪৭,লবণাক্ততা প্রবণ এলাকার জন্য ব্রি-ধান-৫৩ ও ৫৪,বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য ব্রি ধান৫১ ও ৫২ ইত্যাদি উন্নত বীজের কথা উল্লেখ করা যায়। উন্নত ধরনের উদ্ভাবিত বীজ ব্যবহারের ফলে সামগ্রিক কর্মসংস্থানের উন্নতি হয়েছে। কেননা উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপণা,গভীরভাবে ভূমি কর্ষণ,সার প্রদান,পাণি সেচ এবং আনুষঙ্গিক প্রতিটি কাজের বর্ধিত শ্রমের প্রয়ােজন হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান বেড়েছে।

উফসি প্রযুক্তির ফলে কৃষিতে অবিরাম চাষ পদ্ধতি প্রবর্তিত হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে মৌসুমি বেকারত্ব হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া বছরে পূর্বের একবারের জায়গায় দুই/তিন বার উপকরণ ও ফসল আনা নেওয়া কারনে গ্রামে রাস্তা ঘাট নিৰ্মাণ ও ঘন ঘন সংস্কার করতে হচ্ছ। এ সব কাজে অনেক লােক নিয়ােজিত হতে পারছে। নতুন ধরনের উদ্ভাবিত বীজের সাহায্যে চাষাবাদের ফলে কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আয় বাড়ায় গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। উন্নত ধরনের উদ্ভাবিত বীজ সম্পর্কিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষিতে অবশ্য কিছু নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। উন্নতমানের বীজ, সার, কীটনাশক, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ইত্যাদি দরিদ্র ।

কৃষকের চেয়ে ধনি কৃ কৃষকরায় বেশি সংগ্রহ করতে পারায় তারাই তুলনামূলক ভাবে বেশি লাভবান হচ্ছে। এর ফলে গ্রামঞ্চলে ধনী ও দরিদ কষকদের মধ্যে আয় বৈষম্য বেড়েছে। তাছাড়া উন্নত বীজ চাষাবাদের দরুন শস্যের দেশীয় প্রজাতিসমূহের বিলুপ্তি ঘটছে। রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জমি ক্রমেই শক্ত ও অনুর্বর হয়ে পরছে। গভির নলকূপের সাহায্য ব্যপকভাবে পাণি সেচের ফলে ভূগর্ভস্থ পাণির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। এসব ছাড়াও নতুন উদ্ভাবিত বীজচাষের কারণে কৃত্রিম সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে নদ- নদী,পুকুর-পুষ্করিনী ও খালবীলের পাণি ক্রমেই দূষিত হওয়ায় মাছ চাষ কঠিন হয়ে পড়েছে এবং যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শস্যের অবাঞ্ছিত রােগবালাই বাড়ছে। সামগ্রিক বিচারে অবশ্য এ কথা বলা যায়, নতুন উদ্ভাবিত বীজের চাষাবাদের দরুণ সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে পারলে এর সাহায্যে চাষাবাদ আগামীতে সুফল বয়ে নিয়ে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *