এইচএসসি ২০২২ ভূগোল এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৫ম সপ্তাহ

এইচএসসি ২০২২ ভূগোল এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ৫ম সপ্তাহ

বিভিন্ন ভূমিরূপ এর চিত্রঃ

ভূমিরূপ বলতে ভূপৃষ্ঠের সৃষ্ট নানা ধরনের ভূ-প্রাকৃতিক গঠন অর্থাৎ সমভূমি, মালভূমি, পর্বত ইত্যাদি বোঝায়। এই ভূমিরূপ গুলো কয়েক হাজার মিলিয়ন বছর ব্যাপী নানা প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত, সঞ্চিত, অবনমিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে।ভূমিরূপের এই পরিবর্তন প্রক্রিয়া বর্তমানেও কার্যকর রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও ক্রিয়াশীল থাকবে। সদা পরিবর্তনশীল ভূমিরূপ সমূহ কে গঠন বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে মোট তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলোঃ

১।পর্বত
২। মালভূমি এবং
৩। সমভূমি

১। পর্বতঃ
ভূপৃষ্ঠের অতিউচ্চ, সুবিস্তৃত এবং খাড়া ঢাল বিশিষ্ট শিলাস্তুপকে কে পর্বত বলে। পর্বত সাধারণত 600 মিটার এর অধিক উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। তবে পর্বতের উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। কোনো কোনো পর্বত বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে। যেমন পূর্ব আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বত গঠনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একসঙ্গে কাজ করে। একে ওরোজেনেসিস বলে।গ্রিক শব্দ ‘আরোস’ অর্থ পর্বত, এবং ‘জেনেসিস’ অর্থ সৃষ্টি হওয়া। দুটি শব্দের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে ওরোজেনেসিস শব্দটি,যা বাংলায় পর্বত গঠন প্রক্রিয়া বলা হয়।ভূ অভ্যন্তরস্থ বিপুল শক্তির প্রয়োগ হওয়ার ফলে পর্বতের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবয়বের সৃষ্টি হয়।


নিচে পর্বতের একটি উদাহরণ দেওয়া হলোঃ

ভঙ্গিল পর্বতঃ জার্মান ভূবিজ্ঞানী কোবার এর মতে, প্রাচীন বিশালাকৃতি অবনমিত সমুদ্র খাতকে মহীখাত বলে।তার মতে মহীখাতের দুই পার্শ্বস্ত ভূভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পলির আকারে মহীখাত এর সঞ্চিত হয়ে এইভাবে ভূগর্ভের পলির যে নিম্নমুখী চাপ পড়ে তার প্রভাবে মহীখাত এর দুই পার্শ্বস্ত ভূভাগ পরস্পরের দিকে এগিয়ে এলে সঞ্চিত পাললিক শিলা ভারপ্রাপ্ত হয়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করে।

পর্বতের বৈশিষ্ট্যঃ

১। দুটি পরস্পর মুখি প্লেট সীমানায় সংকোচ জনিত চাপে পাললিক শিলাস্তরে ভাজঁ সৃষ্টি হয়ে ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়ে থাকে।
২। ভঙ্গিল পর্বতের শিলা কাঠামো ভাজঁ ও চ্যুতিযুক্ত।
৩। সাধারণত ভঙ্গিল পর্বত পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত তবে উৎপত্তির বিভিন্ন পর্যায়ে আগ্নিয়ে রূপান্তরিত শিলা ও দেখা যায় ।
২। মালভূমিঃ
সমুদ্র সমতল থেকে 300 মিটার বা আরো কিছুটা ঊর্ধ্বে অবস্থিত খাড়া ঢাল যুক্ত সুবিস্তৃত তরঙ্গায়িত মালভূমি নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত আকৃতিগত ভাবে মালভূমি অনেকটা টেবিলের ন্যায় দেখতে হওয়ায় একে টেবিল ল্যান্ড বলে। যেমন ভারতের দক্ষিণাত্য ছোটনাগপুর মালভূমি,তিব্বতের পামির মালভূমি ইত্যাদি।

 উদাহরণঃ মহাদেশীয় মালভূমি।


মহাদেশীয় মালভূমিঃ

মহাদেশীয় অংশজুড়ে প্রাচীন শিলায় গঠিত মালভূমি কে মহাদেশীয় মালভূমি বলে। পাত সংস্থান তত্ত্ব অনুসারে পাত সঞ্চালনের ফলে পৃথিবীর প্রাচীন ভূখণ্ডকে আঙ্গারাল্যান্ড ও গনডোয়ানাল্যান্ড’ ফেটে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাদেশীয় মালভূমি গঠিত হয়।

৩। সমভূমিঃ
সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে বা সামান্য উঁচুতে তবে 300 মিটারের কম উঁচুতে অবস্থিত প্রায় সমতল বা সমতল বিস্তীর্ণ স্থলভাগকে সমভূমি বলে।যেমন ভারতের গঙ্গা নদী বিধৌত সমভূমি অঞ্চল, রাশিয়ার সাইবেরিয়ান সমভূমি। সমভূমি কে আবার সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছেঃ ক্ষয়জাত সমভূমি।

ক্ষয়জাত সমভূমিঃ নিচু মালভূমি বা পার্বত্য অঞ্চল বহু বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় সমপ্রায় ভূমি সৃষ্টি হয়। যেমন ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমির কিছু কিছু অংশ।


ভূ-অভ্যন্তরের স্তর গভীরতার সহ চিহ্নিতকরণঃ

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন ও বিভিন্ন স্তর বিন্যাস সম্বন্ধে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা খুবই কঠিন ব্যাপার।খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য এ পর্যন্ত সবচেয়ে গভীরতম কূপ মাত্র 10 কিলোমিটার ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে এবং ক্ষয় কার্যের ফলে মাত্র ২০-২৫ কি. মি. গভীরের শিলা উন্মুক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ভূ-অভ্যন্তর সম্পর্কে জানার জন্য তিন ধরনের তথ্যের উপর নির্ভর করে। প্রথমত, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে প্রাপ্ত অভ্যন্তরে শিলার নমুনা।


দ্বিতীয়ত, ভূকম্পন তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য যা এক ধরনের শিলা স্তর থেকে আরেক ধরনের শিলায় প্রবেশের সময় বেগ ও দিক পরিবর্তন করে থাকে।ভূকম্প তরঙ্গের এক বেগ ও দিক পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে ভূ-অভ্যন্তরের শিলাস্তর সমূহের একটি চিত্র পাওয়া যায়।
তৃতীয়ত, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য এর ঘনত্ব সম্পর্কে ধারণা ও ভূ-অভ্যন্তরের গঠন জানার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
এ সমস্ত তথ্য এর ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা ভূ-অভ্যন্তরের কয়েকটি শিলামন্ডলে ভাগ করেন । সবচেয়ে ভারী পদার্থ পৃথিবীর কেন্দ্র ভাগে সঞ্চিত হয়েছে এবং তুলনামূলকভাবে কম ঘনত্ব সম্পূর্ণ হালকা পদার্থ দ্বারা উপরের স্তর সমূহের সঞ্চিত হয়েছে। চিত্রে এ পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের স্তরসমূহ দেখানো হলো।


ভূ-অভ্যন্তর প্রধান স্তর সমূহ হলোঃ

১. অশ্মমন্ডল
২. গুরুমন্ডল ও
৩. কেন্দ্রমন্ডল
ভূ-অভ্যন্তরের গঠন বর্ণনাঃ

ভূ-অভ্যন্তরের প্রধান স্তরসমূহ হলো অশ্মমন্ডল, গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডল।

অশ্মমন্ডলঃ
পৃথিবীর অভ্যন্তরের তিনটি স্তরে বিভক্ত। স্তর তিনটের মধ্যে সবচেয়ে উপরে অবস্থিত সেটিকেই অশ্মমন্ডল বলে। এটাই পৃথিবীর কঠিন বহিরাবরণ। এটি নানা প্রকার শিলা ও খনিজ উপাদান দ্বারা গঠিত। এর গভিরতা ৩০ কি. মি. হতে প্রায় ৬৪ কি. মি.।

গুরুমন্ডলঃ
কেন্দ্রমন্ডলের বহিঃভাগ অশ্ব মন্ডলের (ভূত্বকের) নিম্ন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে গুরুমন্ডল বলে। এটি পৃথিবীর আয়তনের শতকরা 82 ভাগ এবং ওজনের শতকরা 68 ভাগ দখল করে আছে। গুরুমন্ডল স্তরটি প্রায় ২.৮৮৫ কি. মি. পুরু। এর অর্ধাংশের শিলা কঠিন ও ভঙ্গুর যা প্রায় ১০০ কি. মি. পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূত্বক ও গুরুমন্ডল এর বহিঃসীমা পর্যন্ত 100 কিলোমিটার পুরু স্তরকে একত্রে শিলামন্ডল বা অশ্মমন্ডল বলে।

কেন্দ্রমণ্ডলঃ
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৬,৪৩৪ কি. মি.।পৃথিবীর কেন্দ্রের চারদিকে প্রায় ৩,৪৮৬ কি. মি.ব্যাসার্ধের এক গোলক অবস্থিত। এই গোলকটির নাম দেয়া হয়েছে কেন্দ্রমন্ডল। অন্তঃকেন্দ্র ও বহিঃকেন্দ্র কে একত্রে কেন্দ্রমন্ডল বলে। এই স্তরের ঘনত্ব প্রায় ১০,৭৮ গ্রাম বা সে. মি. যা গুরুমন্ডল এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। কেন্দ্রের দিকে ঘনত্ব বাড়তে থাকে। পৃথিবীর আয়তনের দিক থেকে এ স্তর ১৬.২% হলেও এটি মোট ওজনের শতকরা প্রায় ৩২.০ ভাগ দখল করে আছে। এটি পানি অপেক্ষা ১০/১২ গুণ এবং পৃথিবীর অন্যান্য অংশ অপেক্ষা দ্বিগুনের অধিক ঘন। কিন্তু প্রচণ্ড তাপ ও চাপে এটি সম্ভবত কঠিন অবস্থায় নেই। এর কাঠামো স্থিতিস্থাপক ও চটচটে অবস্থায় আছে বলে ধারণা করা হয়। বহিঃকেন্দ্রের পুরুত্ব আনুমানিক ২,২৭০ কিলোমিটার এবং অন্তঃকেন্দ্রের পুরুত্ব ১,২১৬ কিলোমিটার। কেন্দ্রমন্ডলের বাইরের অংশ এবং ভেতরের অংশ কঠিন অবস্থায় আছে বলে অনুমান করা হয়।


ভূ-অভ্যন্তরের উপাদান বিশ্লেষণঃ

অশ্মমন্ডল : অশ্মমন্ডল যেসকল উপাদানে গঠিত তারমধ্যে সিলিকন, এলুমিনিয়াম, লৌহ, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, অক্সিজেন প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য।

গুরুমন্ডল : সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি ভারী ধাতু গুলোর সংমিশ্রণে এই মন্ডল টি গঠিত। ঘনত্ব অনুসারে ধাতু গুলোর সংবিন্যাস নিচ থেকে উপরের দিকে ক্রমশ শুরু থেকে লঘু। এর উপরাংশের ১৪৪৮ কি. মি. (৯০০ মাইল) ব্যাসল্ট জাতীয় উপাদানে গঠিত। এই জন্যই এই স্তরকে ব্যাসল্ট অঞ্চল (Basalt Zone) বলা হয়। সিলিকন ও ম্যাগনেসুয়াম দ্বারা এই মন্ডলটি গঠিত বলে একে সিমা (sima)ও বলা হয়।

কেন্দ্রমন্ডল : বৈজ্ঞানিকদের মতে, কেন্দ্রমন্ডল লোহা, নিকেল, পারদ, সীসা প্রভৃতি কঠিন পদার্থ দ্বারা গঠিত। এই স্তরে নিকেল ও লৌহের পরিমাণ বেশি থাকায় একে নাইফ (Nife)বলা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *