এইচএসসি ২০২১ সমাজকর্ম এ্যাসাইনমেন্ট ২য় সপ্তাহ
ডব্লিউ এ ফ্রিল্যান্ডার এবং এনসাইক্লোপিডিয়া অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক প্রদত্ত সমাজকর্মের সংজ্ঞা আলোকে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার পক্ষে যৌক্তিকতা।
এইচএসসি ২০২১ সমাজকর্ম এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২য় সপ্তাহ
উত্তরঃ
সমাজকর্মের সংজ্ঞাঃ
প্রকৃতি ও পরিধি সমাজকর্মের সংজ্ঞা সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কৌশলনির্ভর একটি পেশাগত কর্মকাণ্ড ও প্রক্রিয়া, যা সামাজিক কল্যাণ (Social Betterment) আনয়নে প্রয়াস চালায়।
আমেরিকার National Association of Social Workers (NASW)ঃ এমন এক প্রকাশিত সমাজকর্ম অভিধানের (১৯৯৫) সংজ্ঞানুযায়ী, “সমাজকর্ম হলাে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে সাহায্য করার এক পেশাগত কর্মকাণ্ড, যা তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করে এবং সামাজিক পরিবেশকে এই লক্ষ্যের উপযােগী করে গড়ে তােলে।” (Social work is the professional activity of helping individual, groups or communities to enhance or restore, their capacity for social functioning and creating societal conditions favourable to this goal.) বর্তমানে | NASWর্তৃক প্রদত্ত এই সংজ্ঞাটি বহুল প্রচলিত।
ডব্লিউ এ. ফ্রিডল্যান্ডার (Walter A. Friedlander) (১৯৯৬) তাঁর “Introduction to Social Welfare” গ্রন্থে বলেন, “সমাজকর্ম হলাে মানবীয় সম্পর্ক বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক এমন এক পেশাদার সেবাকর্ম, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সন্তুষ্টি এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একক বা দলীয়ভাবে ব্যক্তিকে সহায়তা করে।” (Social work is a professional service, based upon scientific knowledge and skills in human relations, whcih assists individuals, alone or in groups, to obtain social and personal satistaction and independence.)
সমাজকর্মের সংজ্ঞার তুলনামূলক উপস্থাপন :
উপরে আলােচিত ওয়াল্টার এ-ক্রিডল্যান্ডার এর ও সমাজকর্ম বিশ্বকোষ এর সংজ্ঞা দুটিতে সমাজকর্ম কে একটি পেশাগত কর্ম বলা হয়েছে। উভয় সংস্কাতে দেখা যায় যে সমাজকর্ম একটি পেশাদার সেবাকর্ম যা স্বতন্ত্র ব্যক্তি, দল কিংবা সামাজিক সন্তুষ্টি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ক্রিডল্যান্ডারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে সাজকর্ম এ স্বাধীনতা অর্জনে এককভাবে বা দলীয়ভাবে ব্যক্তিকে সহায়তা করে। তেমনিভাবে সমাজকর্ম বিশ্বকোষ – এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে সমাজকর্ম সামাজিক অসুবিধা গ্রস্থ যেমন দারিদ্রমানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা বা অক্ষমতা এবং জনগণের স্বাধীনতা ও দূর করে। অর্থাৎ ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা পালন করে।
সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হলাে সমাজস্থ প্রতিটি স্তরের মানুষকে তার সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্রিয় ও সক্ষম করে গড়ে তােলা এবং অনুকূল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করে সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। একটি মানবােচিত পেশাগত কর্মকাণ্ড (humanizing professional activity) হিসেবে সমাজকর্ম মানুষের যথাযথ সামাজিক ভূমিকা পালন (social functioning) এবং পরিবেশের সঙ্গে কার্যকর সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার (social interaction) ক্ষমতা উন্নয়নে সক্ষম করে তােলে।
এ প্রসঙ্গে সমাজকর্ম বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য হলাে ব্যক্তি, পরিবার, দল, সংগঠন এবং সমষ্টিকে কর্মসম্পাদান, দারিদ্র বিমােচন, প্রতিরােধ ও সম্পদ ব্যবহারে সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার উন্নয়ন, পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ এবং শক্তিশালীকরণ। W. A. Friedlander এর মতে, বিজ্ঞান, কলা ও পেশা হিসেবে সমাজকর্মের লক্ষ্য হলাে মানুষকে এমনভাবে সাহায্য করা যাতে প্রতিটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি সামাজিক, মানসিক এবং দৈহিক কল্যাণের অধিকারী হতে পারে।
মনীষী A. T. Morales এবং B.W. Sheafor (১৯৮৬) এর মতে, সমাজকর্মের আবির্ভাব হয়েছে সমাজস্থ অপেক্ষাকৃত অসহায় (more helpless) ও অসুবিধাগ্রস্ত (vulnerable) জনগােষ্ঠীকে সাহায্য প্রদানের জন্য। তাঁদের মতে, সমাজকর্ম যত্ন (caring), নিরাময় (curing) এবং পরিবর্তন (changing) এই তিনটি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হয়। এক্ষেত্রে প্রতিকার, প্রতিরােধ এবং উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমাজকর্মের উদ্দেশ্য। সমাজকর্ম একটি গতিশীল পেশা (dynamic profession) হিসেবে সময়ের প্রয়ােজনে এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পরিবর্তন এসেছে। National Association of Social Workers (NASW) ১৯৮১ সালে সমাজর্মের নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যসমূহ নির্ধারণ করেছে :
১. জনগণের সমস্যা সমাধান, উপযােজন এবং ক্ষমতার উন্নয়ন সাধন (To enhance problem solving, coping and developmental capacities);
২. সম্পদ, সেবা ও সুযােগের সাথে মানুষের সংযােগ ঘটানাে (To link people with resources, services and opportunities);
৩. কার্যকর মানবসেবা ব্যবস্থা গড়ে তােলা (To promote an effective human service system);
৪. সামাজিক নীতির বিকাশ ও উন্নয়ন (To develop and improve social policy) । 491767 Brenda DuBois 972 Karla Krogsrud Miley (1992: 4-5) VIGNE DE “Social Work: An Empowering Profession”-এ উল্লেখ করেন, সামাজিক সমস্যা মােকাবেলা (addressing social problems), পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসন (resolving interpersonal conflicts), বিচার্য বিষয়সমূহকে মােকাবিলা (confronting issues) এবং মানবীয় চাহিদা পূরণ করা (meeting human needs) হচ্ছে সমাজকর্মের উদ্দেশ্য।
তারা আরাে বলেন, সমাজকর্ম পেশার সুস্পষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে মানবীয় অবস্থায় জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি করা (improvement of the quality of life in the human condition is envisioned as an explicit goal of the profession) । তারা নিম্নোক্ত চিত্রের মাধ্যমে সমাজকর্মের উদ্দেশ্যসমূহ তুলে ধরেছেন :
সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তাঃ
সমাজকর্ম হচ্ছে মানুষকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তােলার অভিপ্রায়ে প্রতিশ্রুতিশীল একটি বহুমুখী পেশা। মানবজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা হতে অর্জিত জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, পেশাগত মূল্যবােধ ও দক্ষতাভিত্তিক ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। সমাজের জটিল ও বহুমুখী সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরােধ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সমাজকর্ম শিক্ষা ও তার প্রয়ােগ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বর্তমান বিশ্বের বহুমুখী সমস্যার বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি, কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধান করে সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানের গুরুত্ব উল্লেখযােগ্য। সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে সমস্যা মােকাবিলায় বাস্তবমুখী ও যুগােপযােগী নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্মের জ্ঞান বিশেষভাবে উপযােগী।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে অদ্যবধি আমেরিকা, ইউরােপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রায় দুই হাজারের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মে উচ্চ শিক্ষা চালু রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রতি বছর পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী সমাজকর্মে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। সমাজকর্মে উচ্চ শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা বিবেচনা করে জাপানের টোকিওতে কলেজ অব সােশ্যাল ওয়ার্ক নামে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চীনে ২০০৯ সালে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগ খােলা হয়েছে এবং ২০১২ সাল থেকে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি প্রােগ্রাম চালু রয়েছে;
যা সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা তুলে ধরছে। বাংলাদেশেও উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এম.ফিল ও পিএইচ.ডি. পর্যায়ে সমাজকর্ম শিক্ষা চালু রয়েছে। বাংলাদেশে পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় একশতটির মতাে কলেজে সমাজকর্মে স্নাতক প্রােগ্রাম চালু আছে। এছাড়া কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সমাজকর্ম শিক্ষা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করে BCSWE নিয়মিত ভাবে সেমিনার, কনফারেন্স ও জার্নাল প্রকাশ করছে।
সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপসংহারঃ
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে সমাজের বহুমুখী ও জটিল সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি নির্ভর দীর্ঘস্থায়ী ও স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের মনাে-সামাজিক সমস্যা এবং উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।