এইচএসসি ২০২১ অর্থনীতি ১ম পত্র এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ১ম সপ্তাহ

এইচএসসি ২০২১ অর্থনীতি ১ম পত্র এ্যাসাইনমেন্ট ১ম সপ্তাহ

একজন ভোক্তা মােট ৭ একক দ্রব্য ভােগের ক্ষেত্রে প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম একক ভোগের ক্ষেত্রে মােট উপযােগ যথাক্রমে ১২, ৩০, ৪০ ও ৪২ একক এবং দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ একক ভােগের ক্ষেত্রে প্রান্তিক উপযােগ যথাক্রমে ১০, ৬ 2 একক হয়। প্রদত্ত তথ্য ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রণয়ন সাপেক্ষে পাঠ্যপুস্তকের সংশ্লিষ্ট বিধিটি ব্যতিক্রমসহ রেখাচিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন।

এইচএসসি ২০২১ অর্থনীতি ১ম পত্র এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ১ম সপ্তাহ

উপযােগের ধারণা:

সাধারণত ‘উপযােগ বলতে কোনাে জিনিসের উপকারিতাকে বােঝায়। কিন্তু উপযােগ | শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। কোনাে দ্রব্যের মানুষের অভাব মােচনের ক্ষমতাকে উপযােগ বলা হয়। যে কোনাে দ্রব্য তা বস্তুগত হােক বা অবস্তুগত হােক, ভালাে বা মন্দ | হােক, মানুষের প্রয়ােজন মিটাতে পারলেই বুঝতে হবে যে তার উপযােগ আছে: যেমন| খাদ্য, বস্ত্র, ঘর-বাড়ি ইত্যাদির উপযােগ আছে। কারণ খাদ্য মানুষের ক্ষুধা মিটায়, বস্ত্র মানুষের লজ্জা নিবারণ করে, ঘর-বাড়ি মানুষকে আশ্রয় প্রদান করে। অনুরূপভাবে মদ, আফিম, সিগারেট প্রভৃতি দ্রব্যেরও উপযােগ রয়েছে। কারণ, এসব দ্রব্যও মানুষের অভাব মিটিয়ে থাকে। বস্তুত, অর্থনীতিতে উপযােগের সাথে ভালাে-মন্দ বা ন্যায়অন্যায়ের প্রশ্ন জড়িত থাকে না। যে কোনাে দ্রব্য মানুষের কোনাে অভাব পূরণ করতেসক্ষম হলেই বুঝতে হবে তার উপযােগ আছে।

অধ্যাপক মেয়ার্স- এর মতে, “উপযােগ হলাে কোনাে দ্রব্যের ঐ বিশেষ গুণ বা ক্ষমতা যা মানুষের অভাব পূরণ করতে পারে। কোনাে দ্রব্য ভােগের উপর ভিত্তি করে উপযােগের ধারণাসমূহ নিম্নরূপভাবে ব্যাখ্যা করা যায় :

১. প্রাথমিক উপযােগ (Initial Utility)

২. প্রান্তিক উপযােগ (Marginal Utility)

৩. মােট উপযােগ (Total Utility)

অতএব বলা যায়, বিভিন্ন প্রকার বস্তুগত ও অবস্তুগত পণ্যদ্রব্য ও সেবার মধ্যে মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদা বা অভাব পূরণের যে ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে, তাকে উপযােগ বলে।
উদাহরন ও সূত্রসহ মােট উপযােগ ও প্রান্তিক উপযােগের মধ্যে সম্পর্ক:

মােট উপযােগ ও প্রান্তিক উপযােগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কোনা দ্রব্যের বিভিন্ন একক হতে যে বিভিন্ন পরিমাণ উপযােগ পাওয়া যায় তাদের সমষ্টিকে মােট উপযােগ বলা হয়। পক্ষান্তরে, কোনাে দ্রব্যের এক একক পরিবর্তনের ফলে মােট উপযােগের, যে পরিবর্তন হয় তাকে প্রান্তিক উপযােগ বলা হয়। মােট উপযােগ ও প্রান্তিক উপযােগের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। মােট উপযােগ ওপ্রান্তিক উপযােগের মধ্যে সম্পর্ক নিম্নরূপ :

(১) মােট উপযােগ হচ্ছে প্রান্তিক উপয়ােগের সমষ্টি।

অর্থাৎ, TU = MU1+ MU2 +MU3+….. + MUn আবার উপযােগের পরিবর্তন ( TU) এবং ভােগের পরিবর্তনের (AQ) ভাগফল হলাে প্রান্তিক উপযােগ। অর্থাৎ, MU = (TU +Q)।

(২) কোনাে ভােক্তা যখন একটি দ্রব্যের বিভিন্ন অতিরিক্ত একক ক্রয় করতে থাকে তখন মােট উপযােগ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রান্তিক উপযােগ ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।

(৩) দ্রব্যটির বিভিন্ন একক ক্রয়ের সাথে সাথে মােট উপযােগ বৃদ্ধি পায়; তবে তা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি না পেয়ে ক্রমহ্রাসমান হারে বৃদ্ধি পায়।

(৪) যতক্ষণ প্রান্তিক উপযােগ শূন্য অপেক্ষা বেশি থাকে ততক্ষণ মােট উপেেযাগ বাড়তে থাকে।

(৫) যখন প্রান্তিক উপযােগ শূন্যে পৌছায় তখনই মােট উপযােগ সর্বাধিক হয়।

(৬) প্রান্তিক উপযােগ শূন্য হওয়ার পরও দ্রব্যটি ক্রয় করতে থাকলে প্রান্তিক উপযােগ ঋণাত্মক (negative) হবে। তখন মােট উপযােগ বদ্ধি না পেয়ে বরং হাস পায়।


 

ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগ বিধির সূচি, রেখা ও রেখার ব্যাখ্যা :

অন্যান্য অবস্থা স্থির থেকে, কোনাে নির্দিষ্ট সময়ে কোনাে ব্যক্তি যখন একই দ্রব্য ক্রমাগতভাবে ভােগ করতে থাকে, তখন ঐ দ্রব্যের মােট উপযােগ বৃদ্ধি পেলেও প্রান্তিক উপযােগ ক্রমশ হ্রাস পায়। অর্থাৎ ভােগের এককপ্রতি বৃদ্ধি ও প্রান্তিক উপযােগ ক্রমান্বয়ে হ্রাস-এ দুয়ের সম্পর্ককে অর্থনীতিতে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগ বিধি বলে। উদ্দীপকের আলােকে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগ বিধির সূচি তৈরি করা হলাে :

চিত্রে OX অক্ষ বরাবর ভােগের পরিমান (Q) ও OY অক্ষ বরাবর মােট উপযােগ (TU) নির্দেশ করা হলাে। এখানে, ভােগের পরিমান যখন ১ম, ২য়,৩য়,৪র্থ,৫ম,৬ষ্ঠ ও ৭ম একক তখন মােট উপযােগ যথাক্রমে ১২,২২,৩০,৩৬,৪০,৪২,৪২ একক। এখানে লক্ষ্য রাখার বিষয় হচ্ছে ৬ষ্ঠ ও ৭ম এককে মােট উপযােগ একই। এই পর্যায় থেকে ভােক্তা যত একক ভােগ বাড়াতে থাকবেন, তার মােট উপযােগ তত হ্রাস পেতে থাকবে।

চিত্রে 0X অক্ষ বরাবর ভােগের পরিমান (Q) ও OY অক্ষ বরাবর প্রান্তিক উপযােগ | (MU) নির্দেশ করা হলাে। এখানে, ভােগের পরিমান যখন ১ম, ২য়,৩য়,৪র্থ, ৫ম,৬ষ্ঠ ও ৭ম একক তখন প্রান্তিক উপযােগ যথাক্রমে ১২,১০,৮,৬,৪,২,০ একক যা যথাক্রমে ১P, ২০, ৩R, ৪S, ৫, ৬U, ৭V দ্বারা নির্দেশ করা হলাে। এখন, P, Q, R, S, T, U, V যােগ করলেই MU রেখা পাওয়া যাবে। এখানে লক্ষ্য রাখার বিষয় হচ্ছে যখন মােট উপযােগ সর্বোচ্চ তখন প্রান্তিক উপযােগ শূণ্য।


ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগ বিধির ব্যতিক্রম :

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বিধিটির ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায় :

(১) দ্রব্যের এককের পরিমাণ : দ্রব্যটির এককগুলাে যদি উপযুক্ত পরিমাণে না হয় তাহলে বিধিটি কার্যকরী হবে না। প্রথম এককটি যদি খুবই ক্ষুদ্র হয় তাহলে দ্বিতীয় | এককের উপযােগ না কমে বরং বৃদ্ধি পাবে। |

(২) অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন: মানুষের অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন হলে বিধিটি কার্যকরী হয় না। কারণ, রুচি বা অভ্যাস পরিবর্তিত হলে অতিরিক্ত এককের উপযােগ হ্রাস না পেয়ে বৃদ্ধি পাবে। যেমন-অনেক সময় অপ্রত্যাশিতভাবে অধিক সম্পদ অর্জন করার ফলে কোনাে ব্যক্তির রুচির পরিবর্তন ঘটে। সে তখন তার পছন্দমতাে কোনাে দ্রব্য যত খুশি ভােগ করতে থাকে।

(৩) সময়ের ব্যবধান :ক্রমহ্রাসমান উপযােগ বিধিটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে কার্যকরী হয়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন হলে বিধিটি কার্যকরী হবে না। কারণ, একটি জিনিস আজ ব্যবহারের ফলে যেউপযােগ পাওয়া যায় আগামীকাল ব্যবহার করলে ঐ একই জিনিসের উপযােগ না কমে বেশিও হতে পারে। এ জন্য দেখা যায় যে, কোনাে ব্যক্তি আজ একটি কমলালেবুর জন্য ৮ টাকা দিতে রাজি থাকলে আগামীকাল উক্ত কমলা | লেবুর জন্য ৮.০০ টাকা না দিয়ে ৭.০০ বা ৯.০০ টাকাও দিতে পারে। সুতরাং সময়ের পরিবর্তন হলে বিধিটি কার্যকরী হয় না। |

(৪) শখের দ্রব্য : এমন কিছু দ্রব্য আছে যা মানুষ শখ করে সংগ্রহ করে। যেমনডাকটিকিট পুরাতন মুদ্রা ইত্যাদি। এসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে উপযােগ কখনও হ্রাস পায় না। এগুলাে মানুষ যতই সংগ্রহ করে ততই তার সংগ্রহের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়।

(৫) নেশার ক্ষেত্রে : নেশার ক্ষেত্রেও বিধিটি কার্যকরী হয় না। যেমনকানাে মদ্যপায়ী যতই মদ পান করে ততই তার নিকট মদ পানের আগ্রহ বাড়তে থাকে।

(৬) বাহ্যাড়ম্বর সম্পন্ন দ্রব্য :সমাজে এমন অনেক দ্রব্যসামগ্রী আছে যা প্রাপ্তির মাধ্যমে বাহ্যাড়ম্বর দেখানাে যায় এবং সামাজিক মর্যাদা লাভ করা যায়। যেমনমহিলাদের স্বর্ণালংকার ব্যবহার। কোনাে মহিলা যত বেশি স্বর্ণালংকার সংগ্রহ করবে সে তত বেশি | গৌরব বােধ করবে। এক্ষেত্রে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগ বিধিটি কার্যকরী হয় না।

(৭) আয় বৃদ্ধি : অনেক দ্রব্য আছে যার উপযােগ আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে যায়। যেমন : কোনাে লােকের আয় বৃদ্ধি পেলে সে তার বাড়িখানা আরও বড় করতে চাইবে। এ জন্য তার নিকট পার্শ্ববর্তী জমির উপযােগ বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে তত্ত্বটি কার্যকরী হয় না।

(৮) বিকল্প বা পরিপূরক দ্রব্য : কোনাে দ্রব্যের উপযােগ কেবল ঐ দ্রব্যের উপর নির্ভর করে না, বরং তা অনেকটা বিকল্প বা পরিপূরক দ্রব্যের উপরও নির্ভরশীল। যেমনগাড়ি পাওয়ার সাথে সাথে পেট্রোলের উপযােগও বেড়ে যায়। অনুরূপভাবে কফির দাম বাড়লে চায়ের উপযােগ বৃদ্ধি পায়। এসবক্ষেত্রে তত্ত্বটি কার্যকরী হয় না।

(৯) কৃপণের ক্ষেত্রে :কৃপণ ব্যক্তির ধন লিন্সার কোনাে শেষ নেই। কৃপণ লাকেরা যতই অর্থ সংগ্রহ করে ততই তার অর্থ লাভের আকাভষা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য কৃপণ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগ বিধিটি প্রযােজ্য হয় না। অর্থশাস্ত্রের অন্যান্য বিধির মত ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উপযােগ বিধিটিরও কিছু কিছুব্যতিক্রম রয়েছে। তবে এ সব ব্যতিক্রম ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে বিধিটি সাধারণভাবে প্রযােজ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *