এইচএসসি ২০২১ ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর – ১ম সপ্তাহ

এইচএসসি ২০২১ ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র এ্যাসাইনমেন্ট – ১ম সপ্তাহ

সামাজিক অবক্ষয় রোধে ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্লেষণ

এইচএসসি ২০২১ ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর – ১ম সপ্তাহ

যেহেতু শিক্ষা মানুষের জন্য অতএব, শিক্ষা বিষয়ে ধারণা পেশ করার পূর্বে মানুষের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। ধর্মগ্রন্থের কেন্দ্রিকতা এবং ইসলামী ঐতিহ্যের অধ্যয়নের কারণে কিছুটা প্রাথমিকভাবেই ইসলামে শিক্ষার কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল। আধুনিক যুগের আগে অল্প বয়সেই আরবি ও কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে শিক্ষার সূচনা হত।

আরবিতে তিনটি পদ শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। সবচেয়ে সাধারণ ক্রিয়ামূল ‘আলিম (যার মানে বুদ্ধিমান সচেতন) হতে তা’লিম। আরেকটি পরিভাষা রাব ধাতু ( যা ঈশ্বরের ইচ্ছা উপর ভিত্তি করে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বৃদ্ধি) হতে তারবিয়াহ। তৃতীয় শব্দটি ধাতু আদুব থেকে তা’দাব যার অর্থ সংস্কৃত বা সামাজিক আচরণে পরিশুদ্ধ হওয়া।


ইসলামী শিক্ষার ধারণা:


সৈয়দ মুহাম্মদ নাকিব আল-আত্তাস শিক্ষার ইসলামিক উদ্দেশ্যকে ব্যক্তিত্বের বোধ, বুদ্ধি, যুক্তিযুক্ত আত্মা, অনুভূতি এবং শারীরিক সংজ্ঞার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মোট ব্যক্তিত্বের সুষম বিকাশ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন যে বিশ্বাস সমগ্র ব্যক্তিত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

সাইয়েদ হোসেইন নসর বলেছেন যে, যদিও এই শিক্ষা মানবজীবনকে সুখের জন্য প্রস্তুত করে, “এর চূড়ান্ত লক্ষ্য স্থায়ীত্বের আবাস এবং সমস্ত শিক্ষাই চিরন্তন স্থায়ী বিশ্বের দিকে ইঙ্গিত করে”।

নাহজ আল-বালাগার মতে, জ্ঞান দুটি ধরনের রয়েছে: জ্ঞান কেবলমাত্র শোনা যায় এবং যা শোষিত হয়। শোষণ না করাতে পূর্বের কোনও লাভ নেই। শ্রুত জ্ঞান বাইরে থেকে প্রাপ্ত হয় এবং অন্যটি শোষিত হয় জ্ঞান মানে প্রকৃতি এবং মানুষের স্বভাব থেকে উত্থিত জ্ঞান, যা একজন ব্যক্তির উদ্ভাবনের শক্তিকে বোঝায়।

কুরআন জ্ঞানের সর্বোত্তম উৎস। কুরআনের ঐতিহ্য শেখানোর জন্য মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে মসজিদ, ব্যক্তিগত বাড়ি, দোকান, তাঁবু এবং এমনকি বাইরের অংশে উদ্ভূত হয়েছিল।

ইসলামিক কনফারেন্সের সংগঠন (ওআইসি) ইসলামী শিক্ষার বিষয়ে পাঁচটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে: মক্কা (১৯৭৭), ইসলামাবাদ (১৯৮০), ঢাাাকক (1981), জাকার্তা (1982) এবং কায়রো (1987)।

ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য:

ইসলামে শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো আদম সন্তানকে মানুষরূপে গড়ে তোলা। যে শিক্ষা আত্মপরিচয় দান করে, মানুষকে সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে গঠন করে এবং পরোপকারী, কল্যাণকামী ও আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হতে সাহায্য করে, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে, অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচিত করে, দূরদর্শিতা সৃষ্টি করে।

তাই আল্লাহ তাআলা বাবা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে প্রথমে তাঁর শিক্ষাব্যবস্থা করলেন। কোরআনের বর্ণনায়, ‘আর আল্লাহ তাআলা আদমকে সকল বস্তুর পরিণতি শেখালেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩১)। যে জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের অন্তর হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে মুক্ত হয়ে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়, তা–ই ইসলামি শিক্ষা।

যে শিক্ষা মানুষের কল্যাণে উপকারে আসে না, তা শিক্ষা নয়। যে শিক্ষা দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির সহায়ক, তাই প্রকৃত শিক্ষা। ইসলামি শিক্ষার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মানবকল্যাণ, ত্যাগ ও বিনয়।

যদি কোনো শিক্ষা হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও অহংকার উদ্রেক করে, সে শিক্ষা মূর্খতা ও অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই নয়। সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং আদর্শ গুণাবলিসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্য।


ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সর্বপ্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা হচ্ছে, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে।’-সূরা আলাক : ১-২

আল্লাহ তাআলার আদেশে মানুষ যেমন লাভ করেছে জীবনের আলো তেমনি আল্লাহরই নিকট থেকে সে লাভ করেছে ইলমের নূর। ইলমের মাধ্যমে মানুষ নবজন্ম লাভ করে। আল্লাহর মারিফত যখন মানুষের মধ্যে আসে তখনই সে প্রকৃত মানুষ হয়।

শিক্ষাকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, শিক্ষা মৌলিকভাবে দুই প্রকার : জাগতিক শিক্ষা ও দ্বীনী শিক্ষা। মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির জ্ঞান হচ্ছে দ্বীনী শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল সূত্র ওহী।

জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা:

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব (উপকরণের জগত) বানিয়েছেন। এখানে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য এবং অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মানুষকে দান করা হয়েছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও জ্ঞান-বুদ্ধি। এগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য ইসলাম পূর্ণমাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *