নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২২

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২২

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার কাজ অনেক সহজ হলেও অধিকাংশ মানুষ আবেদন করার নিয়ম জানে না। একজন মানুষের দেশের জাতীয় পরিচয় পেতে জন্ম নিবন্ধন করার অনেক জরুরি। তাই আপনার সন্তান জন্মের কিছু দিনের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন। আজকের পোস্টে আমরা যেভাবে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হয় তা দেখিয়েছি। আবেদন করার জন্য আপনাকে একটি ফরম পুরন করতে হবে।

এই ফরম টি অনলাইনে bdris.bd ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। এটি বাংলাদেশের একটি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। আপনাকে এই ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করতে হবে। আপনারা মোবাইলে এই কাজ গুলো করতে পারবেন। নিচের দিকে ২০২২ সালের নিয়ম অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় তথ্য এবং কাগজপত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তো চলুন আজকের পোস্ট টি শুরু করা যাক।

See Also: ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম

নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন

আগের সময়ে জন্ম নিবন্ধন অফলাইনে করা হতো। তখন কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগত না। যার কারণে বেশির ভাগ জন্ম নিবন্ধনের নাম, তারিখ, পিতা-মাতার নাম, জন্মসাল ইত্যাদি ভুল থাকতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনলানের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার জন্য নির্ভুল জন্ম নিবন্ধন তৈরি কারতে পারবেন। তবে আপনি যদি আবেদন পত্রে আপনার কোনো ভুল তথ্য প্রদান করেন, তাহলে আপনার নতুন জন্ম নিবন্ধন টি সেই তথ্য অনুযায়ী তৈরি হবে। যার ফলে আপনার জন্ম নিবন্ধন টি ভুল হবে। এর পর আপনাকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর জন্য আবেদবন করতে হবে। আপনার শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন। তবে দেরি তে করলেও কোনো সমস্যা নেই।

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে কি কি লাগে

আপনি যদি নতুন জন্ম নিবন্ধন বানাতে চান তাহলে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র লাগবে। আপনারা অনেকে জানেন না কি কি লাগবে? তাই নিচের দিকে যেসক্ল তথ্য বা কাগজ পত্র লাগবে তা আলোচনা করা হয়েছে। বয়স এর পার্থক্য অনুযায়ী ডকুমেন্ট এর পরিবর্তন দেখা যাবে। যেমন ০ থেকে ৪৫ দিনের শিশুর জন্য যেসকল কাগজ পত্র লাগবে, ৫ বা ১০ বছরের ছেলে-মেয়ের জন্য সেগুলো লাগবে না। নিচে বিস্তারিত বলা হয়েছে দেখানিন।

০ থেকে ৪৫ এবং ৪৫ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর জন্য

  1. আপনার সন্তানের ইপিআই বা টিকা কার্ড লাগবে।
  2. পিতা ও মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কপি  বাংলা অথবা ইংরেজি (যদি থাকে)
  3. সন্তানের বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটো কপি (লাগবেই)
  4. আপনার বাসার ট্যাক্সের রশিদ।
  5. আবেদনকারী মোবাইল নম্বর। যেকোনো একটি নাম্বার দিলেই চলবে।
  6.  এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৪৫ থেকে ৫ বছর এর জন্য)

৫ বছরের উপর হলে যা যা লাগবে

  1. হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন থাকলে সেটি লাগবে।
  2. ৫/৮/ ১০ বা তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সার্টিফিকেট বা রেজিস্ট্রেশন কার্ড।
  3. পিতা-মাতার ভোটার আইডি ফটো কপি।
  4. পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ( যদি না থাকে তাহলে প্রথমে পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধ বানাতে হবে)
  5. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  6. বাসার ট্যাক্সের রশিদ

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম

উপরের অংশে বয়স অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধন বানাতে যা যা লাগবে তা বলা হয়েছে। যদি আপনি উপরের অংশ টুকু না দেখে থাকেন তাহলে উক্ত অংশ টুকু দেখেনিন। তো জন্ম নিবন্ধনের আবেদন এর জন্য প্রথমে গুগল বা যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনে প্রবেশ করবেন। সেখানে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট টি লিখে সার্চ দিবেন। www. bdris.gov.bd  অথবা জন্ম নিবন্ধনের আবেদন লিখে সার্চ করবেন। তারপর তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে চলে যাবেন।

জন্ম নিবন্ধনের আবেদন

  1. আপনার ঠিকানা বেছেনিন।
  2.  নামের প্রথম অংশ ও শেষ অংশ বাংলা এবং ইংরেজিতে লিখুন। ইংরেজির ক্ষেত্রে সকল অক্ষর বড় হাতের লিখবেন। নাম গুলো সার্টিফিকেট অনুযায়ী লিখবেন। জেনো কোনো ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  3. আপনার সার্টিফিকেট অনুযায়ী জন্মসাল লিখুন।
  4. লিঙ্গ নির্ধারন করুন।
  5. পিতা-মাতার কততম সন্তান তা লিখুন।
  6. এখন আপনার জন্মস্থান এর সকল তথ্য লিখুন।
  7. আপনার দেশ নির্বাচন করুন। এখানে আপনি বাংলাদেশি হলে বাংলাদেশ সিলেক্ট করুন।
  8. ডাকঘর বাংলা এবং ইংরেজিতে লিখুন। ইংরেজিতে লিখার জন্য বড় হাতের লিখতে হবে।
  9. গ্রাম/ পাড়া/ মহল্লাহ বাংলা এবং ইংরেজিতে লিখুন।
  10. বাসা এবং সড়ক নাম্বার বাংলা এবং ইংরেজিতে লিখুন।
  11. এরপর পরবর্তিতে ক্লিক করুন।
  12. এখন আপনারা নতুন একটি পেজে চলে যাবেন। এখানে যে আবেদন করছে তা সিলেক্ট করুন (নিজ)
  13. আবেদন কারির নাম লিখুন।
  14. একটি মোবাইল নাম্বার দিন।
  15. একটি ইমেইল নাম্বার দিন ( না দিলেও চলবে)
  16. আবার পরবর্তিতে ক্লিক করুন।
  17. এখন আপনি আবেদন পত্র টি প্রিন্ট করে বের করেনিন।

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রিন্ট

আপনার আবেদন পত্র টি প্রিন্ট করতে হবে। কারণ আপনার এই আবেদন ফর্ম টি আপনার ইউনিয়ন পরিষদে/ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিতে হবে। নিচে থেকে যেভাবে আবেদন পত্র প্রিন্ট করতে হয় দেখেনিন।

আবেদন পত্রে একটি আইডি নাম্বার থাকবে। তাই কাগজ টি প্রিন্ট করার সময় উপরের এবং নিচের অংশ টি রাখতে হবে।

Paper সাইজ সিলেক্ট করুন।

Paper Sheet নির্বাচন করুন।

Margin/ Scale দিন। এটি Default রাখতেও পারেন।

Header ও Footer অপশনে টিক মার্ক দিন।

কীবোর্ড থেকে Ctrl+ Shift+P  চাপ দিন অথবা নিচের print বাটনে ক্লিক করে প্রিন্ট করুন।

আবেদনপত্র কোথায় জমা দিবেন

সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে এখন আপনার আবেদন পত্র টি আপনি গ্রামে থাকলে আপনার ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিবেন। আর শহরে থাকলে পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিবেন। আবেদন পত্র টি জমা দেওয়ার জন্য সাথে দরকারি কাগজ বা ডকুমেন্ট গুলো সংযুক্ত করতে হবে। উপরে যেগুলো বলা হয়েছে বয়স অনুযায়ী সেগুলো জমা দিবেন। যেমন বাবা-মায়ের ভোটার আইডি, আপনার সার্টিফিকেট, ছবি ইত্যাদি।

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফি

জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য আপনাকে কিছু ফি দিতে হবে। আপনারা হয়তো জানে না যে কত টাকা করে লাগবে। বয়স এর ভেদা ভেদে জন্ম নিবন্ধনের ফি নেওয়া হয়। যেমনঃ বয়স ৫ বছরের কম হলে নতুন জন্ম নিবন্ধন ফি ২৫ টাকা এবং বয়স ৫ বছরের বেশি হলে ফি ৫০ টাকা।

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম সংগ্রহ pdf

আপনি চাইলে আপনার আবেদন পত্রের এক কপি পিডিএফ সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। পরবর্তিতে এটি কাজে লাগবে। আপনি আবেদন পত্রের উপরের ডান দিকের অংশে একটি কোড নাম্বার দেখতে পারবেন। এই কোড টি আপনার প্রয়োজন হবে। আপনি যখন জন্ম নিবন্ধন টি বের করতে যাবেন তখন এই কোড টি ব্যবহার করা হবে। এজন্য আপনারা সম্পূর্ণ আবেদন পত্র টি একটি পিডিএফ সংগ্রহ করে রাখবেন। আবেদন করার শেষ হলে পিডিএফ সংগ্রহ করার অপশনে ক্লিক করে সংগ্রহ করে নিবেন।

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন অবস্থা

আপনি নিজেই মোবাইলে আবেদন পত্রের অবস্থা টা দেখতে পারবেন। এজন্য আপনাকে সেই একই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদপত্রের অবস্থা নামে একটি লিঙ্ক দেখতে পারবেন। সেই লিঙ্কে ক্লিক করবেন। তারপর নিচের মতো নিয়ম অনুসরণ করুন।

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন অবস্থা

  1. আবেদন পত্রের ধরনের সিলেক্ট করুন। (নতুন নিবন্ধন আবেদন)
  2. আবেদন পত্রের উপরের অংশে অ্যাপলিকেশন আইডি আছে। সেই আইডি টি অ্যাপলিকেশন আইডি তে লিখুন।
  3. আপনার আবেদন পত্রে যে জন্ম তারিখ লিখেছেন, সেই জন্ম তারিখ টি জন্ম তারিখ অপশনে প্রদান করুন।
  4. এখন দেখুন নামক বাটনে ক্লিক করুন।

এই কাজ গুলো সঠিক ভাবে করলে আপনার আবেদন পত্রের ধরনে দেখতে পারবেন।

নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন

আমরা আপনাকে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন যেভাবে করতে হয় তা দেখিয়েছি। আপনি যদি এই কাজ গুলো করতে পারেন তাহলে মোবাইল বা পিসি তে আবেদন করতে পারবেন অনলাইন থেকে। যর আপনার যদি মনে হয় এই কাজ টি আপনি নিজে করতে পারবেন না, তাহলে যেকোনো কম্পিউটার দোকানে থেকে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন পত্র টি প্রিন্ট করে অফিয়ে নিয়ে জমা দিবেন। আর তাছাড়া আপনারা সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদের কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে আবেদন করাতে পারবেন। এবং সরাসরি তাদের কাছে থেকে জন্ম নিবন্ধন টি সংগ্রহ করতে পারবেন।

নতুন জন্ম নবন্ধন পেতে কত দিন সময় লাগে

আপনার জন্ম নিবন্ধন পেতে হলে প্রথমে আবেদন করতে হবে। তারপর এই আবেদন টি আপ্রুভ হতে হবে। সাধারণত ১ দিনের মধ্যেও জন্ম নিবন্ধন করা যায়। তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে কর্মরত অপারেটর এর উপর। তবে সাধারণ ভাবে আপনার জন্ম নিবন্ধন টি পেতে ৭ থকে ১৪ দিন লাগবে। আপনার নতুন জন্ম নিবন্ধন টি ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসের উপর সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করবে।

আবেদন কখন শুরু হবে

অনেক আগের সময়ে হাতে লিখ জন্ম নিবন্ধন করা হতো। তাও তখন বছরের একটি সঠিক সময়ে আবেদন করা হতো। তখন বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ায়ি মাসের সিকে জন্ম নিবন্ধন বানানো হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনলানে জন্ম নিবন্ধ করা হয়। তাই আপনাই চাইলে সরকারি ছুটি ব্যাতিত বছরের যেকোনো দিনে নতুন জন্ম নিবন্ধন বানানোর জন্য আবেদন করতে পারবেন। জন্ম নিবন্ধ আবেদন বা বানানোর জন্য এখন কোনো ধারাবাহিক সময় নেই।

শেষ কথা

আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি এই পোস্ট থেকে আপনারা নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম জানতে পেরেছেন। এবং জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে তা বুঝতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধান জানতে আমাদের ওয়েবসাইট টি ভিজিট করতে পারেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ।

See More:

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম অনলাইনে- ২০২২

স্মার্ট কার্ড চেক করার নিয়ম অনলাইনে মোবাইল দিয়ে।। Smart card Check 2022