আজকের পোস্টে মানব ধর্ম কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন শেয়ার করা হয়েছে। এই প্রশ্ন গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাস পরীক্ষার জন্য এখান থেকে প্রশ্ন ও উত্তর পড়ে নিন। সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’ গানটি ‘মানবধর্ম’ কবিতা হিসেবে এ গ্রন্থে গৃহীত হয়েছে। এ কবিতায় লালন ফকির মানুষের জাত-পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
নিজে কোনো ধর্মের বা জাতের এমন প্রশ্ন লালন সম্পর্কে আগেও ছিল এখনো আছে। লালন বলেছেন, জাতকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। মনুষ্যধর্মই মূলকথা। জন্ম-মৃত্যু কালে কী কোনো মানুষ তসবি বা জপমালা ধারণ করে থাকে? সে-সময় তো সবাই সমান। মানুষ জাত ও ধর্মভেদে যে ভিন্নতার কথা বলে লালন তা বিশ্বাস করেন না। নিচে প্রশ্ন দেওয়া আছে পিডিএফ সংগ্রহ করুন।
মানব ধর্ম কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
এখানে মানব ধর্ম কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া আছে। মূল বইয়ে এই সৃজনশীল গুলো দেওয়া নেই। তাই অনুশীলনের জন্য গাইড বই ফলো করতে হবে। যাদের কাছে গাইড নেই তারা এখান থেকে সংগ্রহ করবেন।
সৃজনশীল ১ঃ
মহাত্মা গান্ধী অহিংস আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। জাত-ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সব মানুষকে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন। মানুষকে তিনি সবার উপরে স্থান দিতেন। তাই তিনি মানবতাবাদী মহান নেতা।
ক. জগৎ জুড়ে লােকে কী নিয়ে গৌরব করে?
খ. তসবি’ ও ‘মালা’ দিয়ে জাত ভিন্ন করা যায় না, কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে মানবধর্মী কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক বিচার করাে।
ঘ. “উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর চেতনা যেন মানবধর্ম’ কবিতার কবির চেতনারই অনুরূপ” -এ বক্তব্যের সত্যতা নিরূপণ করো।
সৃজনশীল ২ঃ
মার্গারেট ম্যাতিউ প্যারিসের অধিবাসী। খ্রিষ্টান হওয়া সত্ত্বেও সব ধর্মের মানুষের সাথেই তিনি প্রাণ খুলে মেশেন। দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানােকেই তিনি মানুষের ধর্ম বলে জানেন। তাঁর কাছে সাদাকালাে, ধনী-দরিদ্রের কোনাে পার্থক্য নেই। মানুষের সেবা করতে পারলে তিনি নিজেকে খুব সুখী মনে করেন।
ক. কবি লালন শাহ্ কত খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?
খ. জগৎ বেড়ে জেতের কথা বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
গ. মানবধম কবিতা ও উদ্দীপকের মধ্যে সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. ‘মানবধর্ম’ কবিতার সমগ্রভাব উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে কি? যুক্তিপূর্ণ মতামত দাও।
মানব ধর্ম কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
এখানে উপরের দেওয়া সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে। যারা নিজে নিজে উত্তর লিখতে পারবেন না। এখান থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
উত্তর ১ঃ
ক। জিগৎ জুড়ে লােকে জাত নিয়ে গৌরব করে।
খ। মানুষ জন্ম ও মৃত্যুর সময় তসবি ও মালা ধারণ করে আসে না বলে, তা দিয়ে জাত ভিন্ন করা যায়না।
‘মানবধর্মী কবিতায় লালন ফকির মানুষের জাত-পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। তাঁর মতে, মানুষ বৃথাই জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। পৃথিবীতে কেউ তসবি, কেউ মালা ধারণ করে জাতের ভিন্নতা নির্ণয়ের চেষ্টা করে। আদতে জন্ম ও মৃত্যুর সময় কেউ তসবি ও মালা ধারণ করে আসে । তাই তসবি ও মালা দিয়ে জাত ভিন্ন করা যায় না।
গ।
মানুষকে সবার ওপরে স্থান দেওয়ার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের সাথে মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালন ফকির মানুষের জাতভেদে বিশ্বাসী ছিলেন। তার কাছে মানুষের জাত-পরিচয়ের চেয়ে মানুষ পরিচয়ই বড়। কে কোন ধর্মের, কে কোন বর্ণের তাকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন না। মনুষ্যধৰ্মই তার কাছে মূলকথা। জাত ও ধর্মভেদের ভিন্নতায় তিনি বিশ্বাস করতেন না। সব মানুষই তাই লালনের কাছে সমান। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটিই আলােচ্য কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।
উদ্দীপকে মহাত্মা গান্ধী অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। তিনি জাতধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সব মানুষকেই আপন করে নিয়েছিলেন। তার কাছে মানুষের জাত-পরিচয়: বড় ছিল না। মানুষকেই তিনি সবার ওপরে স্থান দিতেন। মহাত্মা গান্ধীর এই মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক দিকটি মানবধর্ম’ কবিতার কবির মাঝেও দৃশ্যমান। আর এ দিকটিই উদ্দীপকের সাথে কবিতার সাদৃশ্য রচনা করেছে।
ঘ।
উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধী এবং “মানবধর্ম’ কবিতারমকবি মানুষের জাতভেদে বিশ্বাসী না থাকার কারণে প্রশ্নোত মন্তব্যটি যথার্থ।
‘মানবধর্ম’ কবিতায় কবি মানুষের জাতপাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মানুষের মানুষ পরিচয়টাকেই মুখ্য মনে করতেন। তাঁর কাছে মানুষের জাত-ধর্মের কোনাে মূল্য নেই। কেননা, মানুষের জন্ম এবং মৃত্যুর সময় কোনাে জাত থাকে না। লালন ফকির তাই মনুষ্য ধর্মকেই মুখ্য বলে বিবেচনা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে কবির অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি প্রকট হয়ে উঠেছে।
ঘ। উদ্দীপকে মহাত্মা গান্ধীর কাছে মানুষের সাম্প্রদায়িক দিকটি মুখ্য নয়।
তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। আর সে কারণেই তিনি সব ধর্মের মানুষকে আপন করে নিতে পেরেছিলেন। তিনি মানুষকে সবার ওপরে স্থান দিতেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার লালন করেছেন বলেই তার কাছে মানুষ পরিচয়টাই আসল।
মানবধর্ম’ কবিতার লালন ফকির যেমন মনুষ্যধর্মকেই প্রধান মনে করেছেন, উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীও তেমনি মনুষ্যধর্মকেই প্রধান মনে করেন। তাঁরা জাতপাতের উর্ধ্বে মানুষকেই আপন করে নিতে চেয়েছেন। ধর্ম-বর্ণের বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে তাঁরা উভয়ই মানবতাবাদী চেতনাকে ধারণ করেছেন। সার্বিক বিচারে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর চেতনা যেন ‘মানবধর্ম’ কবিতার লালন অসাম্প্রদায়িক চেতনারই প্রতিফলন।
উত্তর ২ঃ
ক। কবি লালন শাহ ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
খ। আলােচ্য পঙক্তি দ্বারা কবি জগৎ জুড়ে জাত-ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করার দিকটি নির্দেশ করেছেন।
জগতে মানুষ জাত-ধর্মের দিকটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সমাজে জাত-ধর্মের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি ও ধর্ম তৈরি হয়েছে। একই সাথে সৃষ্টি করে শ্রেণিবৈষম্যও। জাতের ভিত্তিতে কেউ নিজেকে উঁচু ভাবে। আবার কাউকে করে তুচ্ছজ্ঞান কবির প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা এ বিষয়টি বােঝানাে হয়েছে। এ জাত-ধর্মের উর্ধ্বে মনুষ্যত্ববােধকে স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে মানবধর্ম কবিতা ও উদ্দীপকের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
গ।
মানবধর্ম কবিতায় মরমি কবি লালন শাহ মনুষ্যধর্মের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তার কাছে জাত-ধর্মের কোনাে বিশেষ গুরুত্ব নেই। মানুষ পরিচয়কেই তিনি সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ জাতির ধর্ম, গােত্র, শ্রেণি বা পেশা নির্বিশেষে সকল মানুষই শ্রদ্ধা ও সম্মান পাওয়ার যােগ্য।
উদ্দীপকের মার্গারেট মতিউ একজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি। কিন্তু তিনি সব ধর্মের মানুষের সাথেই প্রাণ । মানুষের জাত-ধর্ম, উঁচু-নিচু ভেদাভেদ তার কাছে কোনাে গুরুত্বই বহন করে না। তিনি জাতি-ধর্ম-শ্রেণি নির্বিশেষে সকল মানুষের দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়ান। মনুষ্যত্ববােধের এই বিষয়টিও রয়েছে কবি লালন শাহ জাত ও ধর্মভেদে মানুষের ভিন্নতায় বিশ্বাস করেন না। তাই ধর্ম-জাতিভেদে কারাে উঁচু কারাে নিচু হওয়ার বিষয়টি তার কাছে অর্থহীন। মনুষ্যত্ববােধই তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বের বিষয়, যা উদ্দীপকেও দৃশ্যমান।
ঘ।
বিষয় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উদ্দীপকে মানবধর্ম’ কবিতার সমগ্রভাব প্রকাশিত হয়নি।
মানবধর্ম’ কবিতায় মানবতার জয়গান করা হয়েছে। মানুষ পরিচয়কেই এখানে সবার উর্ধ্বে তুলে ধরা হয়েছে। কবির কাছে জাত-ধর্মের পরিচয় কোনাে গুরুত্বই বহন করে না। তিনি ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের পরিবর্তে মানবধর্মের কথা বলেছেন।
উদ্দীপকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মার্গারেট ম্যাতিউর কথা বলা হয়েছে। তিনি খ্রিষ্টান হলেও সব ধর্মের মানুষের সাথেই প্রাণ খুলে মেশেন। সাদাকালাে, ধনী-দরিদ্র পরিচয়ের উর্ধে গিয়ে মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ান। জাত-ধর্মের উর্ধ্বে মানবতাকে স্থান দেওয়ার দিকটি আলােচ্য কবিতায় উঠে এসেছে। তবে এটিই কবিতার একমাত্র দিক নয় ।
‘মানবধর্ম’ কবিতায় মরমি কবি লালন শাহের অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী মনােভাবের প্রকাশ ঘটেছে। একই সাথে এখানে ফুটে উঠেছে সমাজের মানুষের প্রচলিত জাত-ধর্মের ধারণা ও হীন মানসিকতা। কবির কাছে আতখুলে মেশেন আলােচ্য কবিতায় ধর্ম কোনাে গুরুত্বই বহন করে না, মনুষ্য ধর্মই তার মূল ধর্ম। লালন যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন একই জল গর্তে গেলে কূপজল হয় আর গায় গেলে গাজল হয়। শুধু পাত্রের ভিন্নতা এদের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ করেছে, মূলত তা একই। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। তাই লালন শাহ্ মনে করেন, কথিত ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে মানবতাবাদকে মানুষের মূল ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। জাত-ধর্ম বিষয়ে সমাজের মানুষের এই যে
মানসিকতা তা উদ্দীপকের ক্ষুদ্র পরিসরে উঠে আসেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি মানবধর্ম’ কবিতার সমগ্রভাব প্রকাশ করতে পারেনি।
শেষ কথা
আশা করছি এই পোস্ট থেকে স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমার সাথেই থাকবেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল শ্রেণির শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করা হয়। আমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোথাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আরও দেখুনঃ